খুতবা জুমার নামাজের অপরিহার্য অংশ। জুমার নামাজের জন্য দুটি খুতবা দিতে হয়। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উদ্দেশে সাপ্তাহিক নির্দেশনা বা বক্তব্য উপস্থাপনকে খুতবা বলা হয়। যেকোনো খুতবায় বা বক্তব্যের সময় হাতে লাঠি নিয়ে বক্তব্য দেওয়া হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়মিত সুন্নত।
জুমার খুতবার সময় হাতে লাঠি বা ধনুক রাখার কথা হাদিসে আছে। তাই কোনো কোনো ফকিহ একে মোস্তাহাব বলেছেন। তবে লাঠি নেওয়া যেহেতু আবশ্যক নয়, তাই একে জরুরি মনে করা যাবে না এবং খতিবকেও এ ব্যাপারে বাধ্য করা যাবে না।
বিজ্ঞাপন
হাকাম ইবনে হুজন আল কুলফি (রা.) বলেন, ‘আমি সপ্তম অথবা অষ্টম দিনে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গেলাম। অতঃপর বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য এসেছি। আপনি আমাদের কল্যাণের জন্য দোয়া করুন।... আমরা সেখানে কয়েক দিন অবস্থান করলাম।
অবশেষে আমরা একদিন তার সঙ্গে জুমার নামাজে যোগ দিলাম। তিনি লাঠির ওপর ভর দিয়ে খুতবায় দাঁড়ালেন। অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা করে বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! আমি যা আদেশ করছি তোমরা তা পুরোপুরি আদায় করতে সক্ষম নও। কাজেই মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো এবং মানুষকে সুসংবাদ দাও।’-সুনানে আবু দাউদ : ১০৯৬
বিজ্ঞাপন
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) লাঠির ওপর ভর দিয়ে খুতবা দিয়েছেন।’-মুসনাদে আবদুর রাজজাক : ৫২৪৬
অন্যদিকে কোনো কোনো বিদ্বান মিম্বর তৈরির পর হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হাতে লাঠি নেননি বলে মত প্রকাশ করেছেন। -ইবনুল কাইয়িম, জাদুল মাআদ : ১/৪১১
তবে হজরত ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদের মিম্বরে বসে তামিম আদ-দারির প্রত্যক্ষকৃত দাজ্জালের হাদিসটি বর্ণনার সময় স্বীয় লাঠি দিয়ে মিম্বারে আঘাত করে বলেন, ত্বাইয়েবা অর্থাৎ মদিনা শহর...। -সহিহ মুসলিম
এটি ছিল নবম হিজরির ঘটনা। সুতরাং এখান থেকে প্রমাণিত হয়, মিম্বরে বসা অবস্থায়ও তার হাতে লাঠি ছিল। এ ছাড়া সাহাবিদের মধ্যেও মিম্বরে দাঁড়িয়ে হাতে লাঠি নিয়ে খুতবা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন- হিশাম বিন উরওয়া বলেন, আমি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.)-কে খুতবা দিতে দেখেছি। এমতাবস্থায় তার হাতে লাঠি ছিল।’- মুসান্নাফ আবদুর রাজজাক : ৫৬৫৯
অনুরূপ হজরত আবু বকর (রা.), হজরত ওমর (রা.) ও হজরত উসমান (রা.) ও একইভাবে লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। -মারাসিলু আবু দাউদ : ৫৫
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, বই জ্ঞানের বাহক। বইপাঠের মাধ্যমে জ্ঞানের অনুষদ বিস্তৃত হয়।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইমেলায় ড. মুহাম্মদ সাদিক হুসাইনের ‘ওরিয়েন্টালিজম ও ইসলাম’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, জ্ঞানের আলোকচ্ছটায় মানুষের অন্তর আলোকিত হয়, দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হয়। জ্ঞানের আলোয় মানুষের অন্তরের কলুষতা ও মলিনতা বিদূরিত হয়। তিনি অধ্যায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, ওরিয়েন্টালিজমের কেবলই নেতিবাচক দিক আছে এমনটা নয়, এর ইতিবাচক দিকও আছে। তবে নেতিবাচক দিকটাই বেশি। উপদেষ্টা ইসলামি স্কলারদের ধর্মতত্বের ওপর জ্ঞান অর্জনের আহ্বান জানান।
লেখক সম্পর্কে ড. খালিদ বলেন, ড. মুহাম্মদ সাদিক হুসাইন একজন বিদগ্ধ লেখক। তিনি বাংলা ও আরবি জানেন এবং ইংরেজিতেও তার দখল রয়েছে। তার লেখা ওরিয়েন্টালিজম ও ইসলাম বইটি বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে। বইটি পাঠকপ্রিয়তা পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ রিসার্চ ও লিগ্যাল এইড সেন্টার বহুদিন যাবত ইসলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশ করে আসছে। তাদের গবেষণা পত্রিকাটিও মানোত্তীর্ণ প্রকাশনা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ রিসার্চ ও লিগ্যাল এইড সেন্টার (বিআইএলআরসি) থেকে এ বইটি প্রকাশিত হয়েছে।
বিআইএলআরসির নির্বাহী পরিচালক শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. রইছ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন।
পরে উপদেষ্টা আয যিহান পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত প্রিয় ব্যক্তিত্ব প্রিয় বই, লেখালেখির নিয়মকানুন, মনুষ্যত্বের উন্নত বৈশিষ্ট্য, পজিটিভ প্যারেন্টিং সিক্রেটস, ইসলামের অনন্য আদব ও ভদ্রতা শিরোনামে পাঁচটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
মা-বাবার যদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এবং তাদের নিজস্ব সম্পত্তি না থাকে, তবে সন্তানরা সামর্থ্যবান হলে তাদের ওপর মা-বাবার চিকিৎসা করানো আবশ্যক। কেননা চিকিৎসা ভরণ-পোষণের অন্তর্ভুক্ত। যদি সব সন্তান সামর্থ্যবান না হয়, বরং একজন হয়, তাহলে সামর্থ্যবান সন্তানের ওপর তাদের চিকিৎসার খরচ বহন করা আবশ্যক।
আল্লামা ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন, ‘কারো মা-বাবা, সন্তান; ছেলে হোক, মেয়ে হোক গরিব হলে এবং ওই ব্যক্তির কাছে তাদের ভরণ-পোষণ দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে তাদের ভরণ-পোষণ দেওয়া আবশ্যক। এতে বিচারক (রাষ্ট্র) তাকে বাধ্য করতে পারবে।’ -আল মুগনি : ৮/১৬৮
মা-বাবা ও সন্তানের ভরণ-পোষণ দেওয়া আবশ্যক। এটা কোরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। সন্তানের খরচ নির্বাহের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা তোমাদের জন্য সন্তানকে দুধ পান করালে তাদের পাওনা তাদের দিয়ে দাও।’ -সুরা তালাক : ৬
আর মা-বাবার ব্যয় নির্বাহের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করতে এবং মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে।’ -সুরা বনি ইসরাঈল : ২৩
ইসলামি স্কলাররা বলেন, প্রয়োজনীয় ভরণ-পোষণ সদাচারের অন্তর্ভুক্ত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি সর্বোত্তম যা ভক্ষণ করে তাহলো তার নিজের উপার্জন। নিশ্চয়ই ব্যক্তির সন্তান তার উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত।’ -সুনানে আবু দাউদ
আল্লামা ইবনে মুনজির (রহ.) বলেন, আলেমরা এই মর্মে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, যে দরিদ্র পিতামাতার উপার্জন নেই, সম্পদও নেই, সন্তানের সম্পদ থেকে তাদের ভরণ-পোষণ দেওয়া ফরজ। একইভাবে আলেমরা সবাই একমত হয়েছেন যে যেসব শিশুসন্তানের সম্পদ নেই পিতার ওপর তাদের ভরণ-পোষণ দেওয়া ফরজ। কেননা সন্তান তারই অংশ এবং সে তার পিতারই অংশ। তাই ব্যক্তির নিজের জন্য ও নিজ পরিবারের জন্য খরচ করা যেমন আবশ্যক, তেমনি তার অংশ ও মূলের জন্যও খরচ করা আবশ্যক। -আল মুগনি : ৮/১৭১
মাত্র ১১ বছর বয়সে সৌদি আরবের সর্বকনিষ্ঠ ক্যালিগ্রাফি শিক্ষক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন রমান আসের। ক্যালিগ্রাফির প্রতি তার আগ্রহের শুরু ছিল পঞ্চম শ্রেণীর একটি স্কুল কার্যক্রম থেকে। পরবর্তীতে সে আগ্রহই তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে।
রমান আসেরের ক্যালিগ্রাফি শুরুর দিকে ছিল মৌলিক অনুশীলন, তবে তার সৃজনশীলতা এবং অধ্যবসায় তাকে দ্রুত দক্ষতার দিকে নিয়ে যায়। ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে স্বশিক্ষার মাধ্যমে তিনি ক্যালিগ্রাফি শিখতে থাকেন। পরবর্তীতে কুফিক ক্যালিগ্রাফির প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যায় এবং তিনি পেশাদার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন।
কুফিক ক্যালিগ্রাফি আরবি ক্যালিগ্রাফির অন্যতম প্রাচীন এবং বৈশ্বিক শৈলী, যা তাকে বিশ্বের অন্যান্য দক্ষ ক্যালিগ্রাফারের সঙ্গে তুলনীয় করে তোলে।
রমান তার প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন শহরে গিয়ে কোর্সে অংশ নেন, কারণ তার নিজের শহর আবহায় ক্যালিগ্রাফি শেখানোর জন্য উপযুক্ত ইনস্টিটিউট ছিল না। তবে তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং অধ্যবসায় তাকে সফলতার শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। তার পেশাদার প্রশিক্ষণ শুরুক আল-হারবির তত্ত্বাবধানে এবং তার সাফল্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন প্রফেসর সিরাজ আল-ওমারি, তিনি তাকে প্রেরণা এবং উৎসাহ দিয়েছেন।
প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন রমান। ২০২৩ সালে তিনি সাংস্কৃতিক দক্ষতা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় আরবি ক্যালিগ্রাফি অলিম্পিয়াডে বিজয়ী হন। এছাড়া, তিনি সৌদি আরবের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ও মেলায় ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শন করেছেন। যেমন- লায়ালিনা উৎসব (ওয়াদি আল-দাওয়াসির) এবং আবহা শপিং ও বিনোদন উৎসব।
বর্তমানে ১৫ বছর বয়সী রমান শুধু একটি দক্ষ ক্যালিগ্রাফার নন, তিনি নিজেও আরবি ক্যালিগ্রাফি শেখানোর জন্য বিভিন্ন বয়সী ছাত্রদের কাছে প্রশিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তিনি মক্কার পবিত্র মসজিদ লাইব্রেরিতে ক্যালিগ্রাফি কোর্স পরিচালনা করেছেন এবং স্কুলগুলোতে কর্মশালা আয়োজন করেছেন। তার পাঠদান পদ্ধতি অত্যন্ত সফল এবং তার ছাত্ররা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সফলতা অর্জন করছে।
এটি একটি সাধারণ প্রশ্ন, যা আমি আমার বন্ধুদের কাছ থেকে প্রতিদিনের বার্তায় পাই। কেনিয়ান, নাইজেরিয়ান, তুর্কি, ব্রিটিশ, জর্ডানিয়ান, ইরানি এবং মরক্কোয় আমার বন্ধুরা বার্তা পাঠায়। যদিও এটা বন্ধুদের একে অপরকে জিজ্ঞাসা করা একটি সাধারণ প্রশ্ন বলে মনে হতে পারে, আমি মনে করি তারা এটিকে নিজেদের আশ্বস্ত করার উপায় হিসেবে ব্যবহার করে যে, আমি কি এখনও বেঁচে আছি?
কিন্তু প্রতিবার যখনই আমি এই প্রশ্নের সঙ্গে একটি বার্তা দেখি, তখন উত্তর দেওয়া আমার জন্য কঠিন হয়ে যায়।
আমি কেমন আছি, যখন আমি আমার বাড়ির কথা ভাবি, যা গণহত্যার দ্বিতীয় দিনে আতঙ্কে ফেলে এসেছি? আমি কিভাবে জানবো যে, আমি আমার স্বামীর সঙ্গে যে জায়গাটি নির্মাণে বছরের পর বছর কাটিয়েছি, তা ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে? আমি কেমন আছি, মিডিয়ার রিপোর্টে যে ছবিগুলো দেখেছি, তাতে শুধু ধ্বংসস্তূপের স্তূপ দেখা যাচ্ছে, যেখানে আমার বাড়ি ছিল, যেখানে এত মধুর স্মৃতি তৈরি হয়েছিল?
আমি কেমন আছি, যেমন আমার পিএইচডি শেষ করার স্বপ্ন আমার বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে? আমি কেমন আছি, যখন আমি আমার ছোট মেয়ের কান্না শুনতে পাই এবং সে আমাকে জিজ্ঞাসা করে তার খেলনাগুলোর কী হয়েছে? আমি কেমন আছি, যখন দেখি আমার বড় মেয়ে, যে উচ্চ বিদ্যালয় শুরু করতে চলেছে, শিক্ষার আশা হারিয়ে ফেলেছে? আমি কেমন আছি, যখন দেখি আমার ছেলেরা, যারা প্রতিদিন জিমে যেতেন, হতাশায় ভুগছেন, খেলার তারকা হওয়ার স্বপ্ন হারিয়ে ফেলেছেন?
আমি কেমন আছি, যেমন আমার মনে পড়ে যে আমি আমার বাড়ির ধ্বংসস্তূপে পড়ে থাকা সব গবেষণাপত্র হারিয়ে ফেলেছি? আমি কেমন আছি, আমার বাচ্চাদের জন্য একটি সুন্দর লাইব্রেরি তৈরি করার জন্য আমি কেনা প্রতিটি বই নিয়ে ভাবি? সব এখন হারিয়ে গেছে।
আমি কেমন আছি, যখন আমি এমন একটি তাঁবুতে থাকি যা বারবার বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে এবং পোকামাকড় আক্রমণ করেছে? আমি কেমন আছি, যখন আমি ক্রমাগত আমার বাচ্চাদের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত এমন একটি জায়গায়, যেখানে সবচেয়ে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা এবং সবচেয়ে মৌলিক ওষুধ পাওয়া যায় না? আমার বাচ্চারা পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছে না জেনে আমি কেমন আছি? আমি কেমন আছি, যখন এক বছর ধরে আমরা টিনজাত খাবার খাচ্ছি, মাংস-মাছের স্বাদ ভুলে গেছি?
আমি যখন ঘন্টার পর ঘন্টা কাপড় এবং থালা-বাসন ধোয়ার জন্য ব্যয় করি তখন আমি কেমন আছি? আমি যখন আমার বাচ্চাদের পানির ট্রাকের পেছনে দৌঁড়াতে দেখি তখন আমি কেমন আছি? সাবানের দাম আকাশচুম্বী হয়ে যাওয়ায় কীভাবে জিনিসগুলো পরিষ্কার রাখা যায়, তা নিয়ে ভাবছি? আমি কেমন আছি, যখন আমি ভাবি আমার বাচ্চারা শীতকালে কী পরবে এবং আমি কীভাবে তাদের উষ্ণ রাখব?
আমি কেমন আছি, যখন আমি আমার ফোন চার্জ করার জায়গা খুঁজছি, যাতে আমি আমার কাজ শেষ করতে পারি? আমি কেমন আছি, যখন আমার ফোনে পুরো লেখা লিখতে কষ্ট হচ্ছে? আমি কেমন আছি, যখন একটি গণহত্যার মধ্যে গল্প বলার শক্তি খোঁজার চেষ্টা করছি? আমি কীভাবে করছি, যখন আমি একটি ভালো ইন্টারনেট সংযোগের সন্ধানে দীর্ঘ দূরত্বে হাঁটছি, আত্মীয়দের বিষয় জানতে যে তারা ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে?
আমি কেমন আছি, যখন আমি শহীদ এবং নিখোঁজদের তালিকার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, ভয়ে আছি যে আমি আমার পরিচিত কোনো একটি নাম তাতে আবিষ্কার করতে পারি? আমার এতগুলো আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর ক্ষতি আমি কিভাবে সহ্য করছি? এই সমস্ত যন্ত্রণা এবং আগামীকাল আমাদের কী হবে, এই ভয়ের মধ্যে আমি কেমন আছি? আমি কেমন আছি, যখন আমি আমার চারপাশে তাঁবু শিবিরের শিশুদের গল্প শোনাতে জড়ো করছি, তাদের জন্য এবং নিজের জন্য আশার জানালা খোলার মরিয়া প্রচেষ্টায়?
আমি কেমন আছি? এটি একটি প্রতিদিনের প্রশ্ন যার আমি উত্তর দিতে পারি না। গণহত্যার মধ্যে আমি কেমন অনুভব করি তার সঠিক বর্ণনা খুঁজে পেতে সাহায্য করার জন্য সম্ভবত আমার একটি অভিধান দরকার।
গাজার বাইরে, ‘কেমন আছো?’ একটি সহজ প্রশ্ন যার উত্তর দিতে খুব বেশি চিন্তার প্রয়োজন হয় না, কারণ মানুষের ‘ভালো থাকার’ অধিকার রয়েছে। গাজার অভ্যন্তরে, মানবাধিকার কোথায় গেছে আমরা জানি না।
যেখানেই আমরা ঘুরে দেখি, সেখানেই মৃত্যুর গন্ধ ও দৃশ্য। যেখানেই যাই, সেখানেই ধ্বংসস্তূপ, আবর্জনা ও নর্দমা।
আমি অনেক বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছি আমার সন্তানদের লালন-পালন করতে এবং তাদেরকে শক্তিশালী, স্বাধীন নারীর রোল মডেল দিতে। দুর্ভাগ্যক্রমে, এখন আমি আমার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। এই গণহত্যার মধ্যে, তুমি কেমন আছ, বা আপনি কেমন আছেন? এমন একটি সহজ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।
আল জাজিরা অবলম্বনে
ফাতমা আল জাহরা সেহওয়াইল: সাংবাদিক, গবেষক এবং লেখক।