ইসলামের দাওয়াত সবার কাজ, সবার দায়িত্ব

  • মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মসজিদে হারামের মিনার, ছবি : সংগৃহীত

মসজিদে হারামের মিনার, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আপনি মানুষকে আপনার রবের পথে আহ্বান করুন হেকমত ও সদুপদেশ দিয়ে এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন মিষ্টি কথায়।’ -সুরা নাহল : ১২৫

বর্ণিত আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করার মাধ্যম বলে দিয়েছেন, আমাদের বোঝা দরকার হেকমত কী? হেকমত অর্থ কৌশল। আল্লাহর রাসুল (সা.) সর্বপ্রথম দ্বীন প্রচার করলেন ব্যক্তিগত দাওয়াতের মাধ্যমে। প্রথমেই তিনি হজরত খাদিজা (রা.)-কে দ্বীনের প্রতি আহ্বান জানালেন। তারপর এক এক করে মক্কা ও মদিনার অন্যদের কাছে দ্বীনি দাওয়াত পৌঁছান।

বিজ্ঞাপন

মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর নবী কারিম (সা.) দাওয়াতের নতুন একটি মাধ্যম গ্রহণ করেন, সেটি হলো- পত্র। নবী কারিম (সা.) এক এক করে হাবসার বাদশাহ নাজ্জাশি, রোমের বাদশাহ কায়সার ও পারস্যের বাদশাহ কিসরাসহ সব রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে পত্র পাঠিয়ে দ্বীনের দাওয়াত দিলেন।

আল্লাহর রাসুল দ্বীন প্রচারে যোগাযোগমাধ্যমের সর্বোচ্চ সময়োপযোগী ও বৈপ্লবিক কৌশলটি ব্যবহার করে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে অগ্রসর করেছিলেন। নবীজীর দ্বীন প্রচারের এ নতুন মাধ্যম আমাদের শিক্ষা দেয়, কেয়ামত পর্যন্ত যোগাযোগের যতগুলো পদ্ধতি আবিষ্কার হবে; সব মাধ্যমেই দ্বীনের প্রচার করা মুসলমানদের ওপর অবশ্য কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে আমরা নিতে পারি। তবে সতর্কতা অবলম্বন করা অতীব জরুরি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞানের উন্নতির এই যুগে দাওয়াতের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে- আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্পসময়ে কম কষ্টে অসংখ্য মানুষের কাছে দ্বীনি দাওয়াত দেওয়া খুব সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক মাধ্যমগুলোতে ইসলামের সহিহ আকিদার মানুষ কম আসায় এ ক্ষেত্রে সুযোগ নিয়ে নিচ্ছে ভ্রান্ত একটি দল বা গোষ্ঠী। এদিকে বিজ্ঞ ও দরদি আলেমদের দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যক।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞানের কল্যাণে বিশ্ব এখন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। দ্বীনি দাওয়াতের পদ্ধতি একদিকে যুগোপযোগী উন্নতমানের হওয়া দরকার, অন্য দিকে সমকালীন বাতিল শক্তির মোকাবেলা করার মতো যোগ্যতা, দক্ষতা ও কৌশল প্রয়োগের সক্ষমতা থাকা জরুরি। তাই চাই মিডিয়ার ব্যবহার। এই মিডিয়াগুলো হলো- প্রিন্ট মিডিয়া, অডিও মিডিয়া, ভিডিও মিডিয়া ও ওয়েব মিডিয়া।

আধুনিক বিশ্বে দ্বীনি দাওয়াতের অন্যতম মাধ্যম ওয়েবসাইট, ওয়েব পোর্টাল ও অনলাইনে ফ্রি বই প্রকাশ করে, স্ক্যানিং কপি আপলোড বা বিজ্ঞাপনে ইসলামি ছবি ও কন্টেন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে। তা ছাড়া আরো রয়েছে ব্লগ; যা দ্বীনি দাওয়াত দেওয়ার জন্য অন্যতম একটি মাধ্যম। বর্তমান সময়ে ইসলামের সুমহান বাণী লিখে দ্বীনি দাওয়াতের ব্যাপক ভূমিকা পালন করা যায় এই ব্লগের মাধ্যমে। আরও রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। ফেসবুকে ইসলামের বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্বীনি দাওয়াতের মাধ্যমে সওয়াব হাসিল করা যায়।

দ্বীনি দাওয়াতের ক্ষেত্রে বিশেষ আরও একটি মাধ্যম হলো- ইউটিউব। এখানে নিজস্ব চ্যানেল তৈরি করে জুমার খুতবা, বিভন্ন স্থানের দৃশ্য এবং ধর্মীয় আলোচনা মানুষকে দেখার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। প্রযুক্তির এই দুনিয়ায় আরও রয়েছে টেলিভিশন ও রেডিও; এখানে ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে দ্বীনি দাওয়াত দেওয়া যেতে পারে। অনলাইন পত্রিকা, সমাজ পরিবর্তন ও সমাজের ভালো কিছু প্রচলনের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা স্থায়ী ভূমিকা রাখতে পারা প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামী কলাম লিখে দ্বীনি প্রচারের বিশেষ ভূমিকা পালন করা যায়।

বর্তমানে কোরআন ও হাদিস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে রয়েছে বিভিন্ন সফটওয়্যার, যা যেকোনো বিষয়ে জানতে সহজ করে দেয়। তা ছাড়া বর্তমান বিশ্বে দ্বীনি দাওয়াত দেওয়ার জন্য হাতের মুঠোয় গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল। মোবাইলে ইসলামবিষয়ক অ্যাপসমূহ, বিভিন্ন অনুবাদ, মাসয়ালাসহ বিভিন্ন তথ্য রেখে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিয়ে দ্বীনি দাওয়াত প্রচারে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

আধুনিক প্রযুক্তিতে ইসলামি দাওয়াত প্রদান করা তথা সৎ কাজের আদেশ প্রদান করা ও অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করা সব মুসলমানের ওপর অবশ্য কর্তব্য। উম্মতে মুহাম্মদির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- দাওয়াত, আদেশ-নিষেধ, দ্বীন প্রতিষ্ঠা বা নসিহতের দায়িত্ব। এই দ্বীনি দাওয়াত যে ব্যক্তি পালন করবে, সে সফলতা অর্জন করবে।

দাওয়াতি কাজ শুধু খানকা, মসজিদে, সংগঠনে, ওয়াজ মাহফিলে ও লেখালেখির কাজে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। বর্তমানে ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অন্য ধর্মাবলম্বীরা যেভাবে তাদের ধর্মীয় কাজ সারা বিশ্বে মুহূর্তে প্রচার করছে, তাদের তুলনায় আমরা মোটেও পারছি না। তারা তাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুসলমানদের কাছে তাদের দাওয়াতি কাজ করছে। অমুসলিমদের কাছে দ্বীনি দাওয়াতের কারণে অমুসলিম দেশে ক্রমেই মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কয়েকজন মিলে এলাকায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যান, এমপি ও মন্ত্রী- সবার কাছে দ্বীনি দাওয়াত প্রচার করলে আশা করা যায়, মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেবে। যদি দাওয়াত প্রচারকারীদের তারা কোনোরূপ অবহেলা করে কিংবা গালমন্দ করে তবুও মন খারাপ না করে নবী-রাসুলদের কাজে এগিয়ে যেতে হবে। মুসলিম-অমুসলিম ব্যক্তিকে দাওয়াত দিলে মানুক বা না-ই মানুক, ফায়দা হোক বা না হোক- নিজের ফায়দা হবে। অন্যের ঈমান আমল দোরস্ত করার কাজে সহযোগিতা করলে আল্লাহ নিজের আমল দোরস্ত করে দেন।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একজন বান্দা আরেকজন বান্দার সাহায্য করে থাকলে আল্লাহপাকও তার সাহায্য করে থাকবেন। অন্যের ঈমান আমলের কাজে সাহায্য করলে আল্লাহপাক নিজের ঈমান আমলের ফয়সালা করে দেবেন।’ -সহিহ মুসলিম

দ্বীনি দাওয়াত দেওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তার আওতাধীন সব ব্যক্তির ওপর দেওয়া আবশ্যক। পরিবারের কর্তার জন্য তার স্ত্রী, সন্তানদের দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে শরিয়া মোতাবেক পরিচালনা করা, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও স্কুলের প্রধানরা তার সহকারী ও শিক্ষার্থীদের, মিল-ফ্যাক্টরি বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা তার অধীনস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের, এলাকার শাসকরা যার যার অধীনস্ত সবাইকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয়ের জন্য দাওয়াত দেবেন। কেননা, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই জিম্মাদার এবং তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্তদের ব্যাপারে জিজ্ঞাস করা হবে।’ -সহিহ বোখারি