নামাজের বৈঠকে আঙুল ওঠানো-নামানোর নিয়ম
তাশাহহুদের সময় একবার আঙুল ওঠানো-নামানোই সুন্নত। হজরত আমের আবদুল্লাহ বিন জুবায়ের (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন তাশাহহুদ পড়ার জন্য বসতেন, তখন ডান হাতখানা ডান উরুর ওপর এবং বাঁ হাতখানা বাঁ উরুর ওপর রাখতেন। আর শাহাদত আঙুল দ্বারা ইশারা করতেন। এ সময় তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলিকে মধ্যমার সঙ্গে সংযুক্ত করতেন এবং বাঁ হাতের তালু (বাঁ) হাঁটুর রাখতেন। -সহিহ মুসলিম : ১৩৩৬
হজরত ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ পড়ার সময় যখন বসতেন (বৈঠক করতেন) তখন হাত দুইখানা দুই হাঁটুর ওপর রাখতেন। আর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পার্শ্ববতী (শাহাদাত) আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করতেন এবং বাঁ হাত বাঁ হাঁটুর ওপর ছড়িয়ে রাখতেন। -সহিহ মুসলিম : ১৩৩৭
হজরত ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন তাশাহহুদের জন্য বসতেন, তখন বাম হাতকে রাখতেন বাম হাঁটুর ওপর এবং ডান হাতখানা ডান হাঁটুর ওপর রাখতেন। আর (হাতের তালু ও আঙুলসমূহ গুটিয়ে আরবি) তিপ্পান্ন সংখ্যার মতো করে শাহাদাত আঙুল দ্বারা ইশারা করতেন। -সহিহ মুসলিম : ১৩৩৮
হজরত আবদুল্লাহ বিন জুবায়ের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন দোয়া পড়তেন (তাশাহহুদ), তখন আঙুল দিয়ে ইশারা করতেন, কিন্তু আঙুল নাড়াতেই থাকতেন না।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৯৮৯
আব্বাস হাম্বল সাহল বলেন, আবু হুমায়েদ, আবু উসায়েদ, সাহল ইবনু সাদ এবং মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রা.) কোনো এক মজলিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজ আদায়ের ধরণ সম্পর্কে আলোচনা করেন। এ সময় আবু হুমায়েদ (রা.) বলেন, আমি তোমাদের চাইতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজ সম্পর্কে অধিক অবহিত অতঃপর কিছু অংশ এখানে বর্ণনা করা হল। রাবি (হাদিস বর্ণনাকারী) বলেন, অতঃপর নবী কারিম (সা.) রুকুর সময় স্বীয় হস্ত দ্বারা হাঁটু শক্তভাবে আটকিয়ে ধরতেন। অতঃপর তিনি স্বীয় হস্তদ্বয় তার পার্শ্বদেশ থেকে বিছিন্ন করে রাখতেন। রাবি বলেন, অতঃপর তিনি সিজদার সময় নাক ও কপাল মাটির সঙ্গে মিলিয়ে রাখেন এবং হস্তদ্বয় পাশ হতে দূরে সরিয়ে রাখেন। অতঃপর তিনি এমনভাবে মাথা উঠাতেন যে, শরীরের সমস্ত সংযোগ স্থান নিজ নিজ স্থানে স্থাপিত হত। অতঃপর বসে তিনি তার বাম পা বিছিয়ে দিতেন এবং ডান পায়ের সম্মুখ ভাগ কিবলামুখি করে রাখতেন এবং ডান হাতের তালু ডান পায়ের উরুর ওপর রাখতেন এবং বাম হাত বাম পায়ের ওপর এবং তাশাহহুদ পাঠের সময় শাহাদাত আঙুল দ্বারা ইশারা করতেন। -সুনানে আবু দাউদ : ৭৩৪
উল্লেখিত সবগুলো হাদিস তাশাহহুদের সময় একবার আঙুল উঠানো-নামানোর পক্ষে বড় প্রমাণ। ইমাম আবু হানিফা (রহ)-এর মাজহাব অনুযায়ী একবার আঙুলের ইশারা করাই অধিক যৌক্তিক এবং সুন্নাহসমর্থিত। তাছাড়া শুধু আঙুল নাড়াতেই থাকা আল্লাহর সামনে আদবের খেলাফ। নামাজে খুশুখুজুর (একাগ্রতার) দিকে খেয়াল রাখার জন্য আঙুল না নাড়ানোই হলো অধিক যৌক্তিক। কেননা আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদে আদেশ করেন যে, ‘আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সঙ্গে দাঁড়াও।’ -সুরা বাকারা : ২৩৮
এখন প্রশ্ন হলো, নামাজে তাশাহহুদ পড়ার সময় শাহাদাত আঙুল দ্বারা কখন ইশারা করবে?
নামাজি ব্যক্তি নামাজের মধ্যে যখন মৌখিকভাবে তাওহিদের সাক্ষ্য দেয়, তখন তার আঙুলও এই সাক্ষ্য দেবে। এ জন্য আত্তাহিয়াতু পড়তে পড়তে যখন ‘আশহাদু আল্লা... ইলাহা’ পর্যন্ত পৌঁছবে, তখন বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা দ্বারা গোল বৃত্ত বানাবে এবং শাহাদত আঙুল দ্বারা ইশারা করবে। আর কনিষ্ঠা ও অনামিকা হাতের তালুর সঙ্গে যুক্ত থাকবে। ‘ইল্লাল্লাহ’ বলার পর শাহাদত আঙুল নিচু করবে। তবে অন্য আঙুলগুলো আপন অবস্থায় নামাজের শেষ পর্যন্ত থাকবে।