ব্রাজিলের মুসলমানরা ইসলামফোবিয়ার শিকার

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর, এক সমীক্ষায় তিন শতাধিক মুসলমান নানাভাবে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়, ছবি ; সংগৃহীত

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর, এক সমীক্ষায় তিন শতাধিক মুসলমান নানাভাবে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়, ছবি ; সংগৃহীত

ব্রাজিলের সাও পাওলোয় হাসপাতালের জরুরি কক্ষে রোগীদের রাগ দেখানো অস্বাভাবিক ছিল না, যেখানে চিকিৎসক বাতুল স্লেইমান কাজ করেছিলেন। তিনি প্রতিদিন নতুন চিকিৎসা সংকট, জরুরি সেবার অনুরোধ, সব সামলেছেন। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি যে, ব্যবহার পেয়েছিলেন তা তিনি আশা করেননি।

একজন রোগী তাকে দেখানোর জন্য অপেক্ষা করার সময় হতাশ হয়ে তার পরীক্ষা কক্ষে জোর করে ঢুকে পড়েছিল। লেবানিজ অভিবাসীদের কন্যা স্লেইমান স্মরণ করেন যে, তার সমস্যাটি ‘জরুরি’ ছিল না। তবু সেই রোগী তার সঙ্গে অভদ্র আচরণ করে বলেছিল, ‘আপনি আমার সঙ্গে বেয়াদবি করছেন কারণ আপনি ব্রাজিলের নন, আপনি যদি আপনার দেশে থাকতেন ...।’

বিজ্ঞাপন

স্লেইমান বলেন, তিনি বাকি কথা শোনার আগে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, লোকটি যে জিনিসের কারণে তার সঙ্গে অভদ্র আচরণ করেছিল, সেটি হচ্ছে তার হিজাব।

‘আমি বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ ছিলাম,’ স্লেইমান আল-জাজিরাকে বলেছেন। তবে তিনি যোগ করেছেন, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ব্রাজিলের পরিবেশ আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে, ‘আমি লক্ষ করছি যে অক্টোবর থেকে লোকেরা রাস্তায় আমার দিকে বেশি তাকিয়ে আছে।’ কিন্তু স্লেইমান একা একা নন। গাজা যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে ব্রাজিল এমন অনেক দেশের মধ্যে একটি যা ধর্মীয় বৈষম্য, বিশেষ করে তার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি ক্রমবর্ধমান ভয়ের সম্মুখীন।

বিজ্ঞাপন

সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সংস্থা ইসলামিক এবং আরব প্রসঙ্গগুলোর ওপর নৃবিজ্ঞান গ্রুপ থেকে গত মাসে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মুসলিম ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে হয়রানির খবর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। উত্তরদাতাদের আনুমানিক ৭০ শতাংশ বলেছেন যে, তারা এমন কাউকে চেনেন যিনি ৭ অক্টোবরের পর থেকে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, যখন ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়েছিল।

বিশেষ করে নারীদের প্রতি সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার হার কিছুটা বেশি। ইসলামফোবিয়ার প্রশ্নটি এ মাসে জাতীয় বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে, যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যাতে দেখা যায়, সাও পাওলোর শহরতলির মোগি দাস ক্রুজেসের একজন বাসিন্দা একজন মুসলিম মহিলার দিকে ছুটে আসছেন এবং তার মাথার স্কার্ফ টেনে ধরেছেন। ভিডিওটি এমনকি সিএনএন ব্রাজিলের মতো নিউজ আউটলেটেও সম্প্রচার করা হয়েছিল।

জুলাইয়ের একটি সরকারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ‘আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে তীব্রভাবে ঘটে। তবে এটি আদিবাসী, দক্ষিণ এশীয়, অভিবাসী এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের, মুসলিম ও ইহুদিদের পাশাপাশি নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী ও অধর্মীয় ব্যক্তিদেরও প্রভাবিত করে’।

ব্রাজিল প্রধানত খ্রিস্টান, আনুমানিক ১২৩ মিলিয়ন ক্যাথলিকদের বাসস্থান বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি।