সংক্ষিপ্ত ইসতিখারার নিয়ম
আগের লেখায় ইসতিখারার যে সুন্নত পদ্ধতিটি বর্ণনা করা হয়েছে, সেটি তখনকার জন্য প্রযোজ্য- যখন এই নিয়মে ইসতিখারা করার সময় ও সুযোগ পাওয়া যায়। অর্থাৎ ইসতিখারার নিয়তে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে ইসতিখারার মাসনুন দোয়াটি পড়া যায়। কিন্তু অনেক সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিংবা দুই রাকাত নামাজ পড়ে দোয়াটি পাঠ করার মতো সময় ও সুযোগ পাওয়া যায় না। তখনকার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত দোয় নবী কারিম (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন। দোয়াটি হলো- (উচ্চারণ) ‘আল্লাহুম্মা খির-লি ওয়াখতার লি।’
হজরত আয়েশা (রা.) তার বাবা হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, নবী কারিম (সা.) যখন কোনো কাজ করার সিদ্ধান্ত নিতেন এই দোয়া পড়তেন। দোয়াটি অর্থ, ‘হে আল্লাহ! আমাকে কল্যাণ দান করুন এবং আমার জন্য আপনিই নির্বাচন করে দিন (কোন্ বিষয়টি আমার অবলম্বন করা উচিত)।’ -জামে তিরমিজি : ৩৫১৬
এক্ষেত্রে পড়ার মতো আরেকটি দোয়া হলো- ‘আল্লাহুম্মাহ্দিনী ওয়া সাদ্দিদ্নী, অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে পথ প্রদর্শন করুন এবং সঠিক পথে অবিচল রাখুন।’ -সহিহ মুসলিম : ২৭২৫
এমন আরেকটি মাসনুন দোয়া হলো- (উচ্চারণ) ‘আল্লাহুম্মা আলহিমনি রুশদি ওয়া আয়িজনি মিন শাররি নাফসি।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আমার অন্তরে সঠিক পথের ইলহাম (প্রেরণা) করুন এবং নফসের মন্দত্ব থেকে আমাকে রক্ষা করুন।’ -জামে তিরমিজি : ৩৪৮৩
এই দোয়াগুলোর মধ্য থেকে যেটা মনে আসবে পড়ে নেবে। এমনকি যদি আরবি দোয়া মুখস্থ না থাকে কিংবা মনে না আসে তাহলে নিজের ভাষায় আল্লাহকে বলবে, হে আল্লাহ! আমি দ্বিধান্বিত। আমাকে সঠিক পথ অবলম্বন করার এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার তওফিক দিন। যদি মুখে বলা সম্ভব না হয় তাহলে মনে মনেই আল্লাহর কাছে আবেদন করবে, হে আল্লাহ! আমি এই সমস্যার সম্মুখীন। আমাকে সঠিক পথ বেছে নেওয়ার তওফিক দিন। যে পথে আমার জন্য কল্যাণ নিহিত এবং যে পথ ধরে অগ্রসর হলে আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারব সে পথে অগ্রসর হওয়ার তওফিক দান করুন।
ইসতিখারা কতবার করবেন
একই বিষয়ের জন্য ইসতিখারা একাধিকবার করার কথা কোনো নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় নাই। সাধারণ নিয়ম হলো, ইসতিখারা একবার করা। তবে যেহেতু বারবার দোয়ার বিষয়টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আর ইসতিখারা তো দোয়ারই একটি প্রকার। সেজন্য ইসতিখারার নামাজ ও দোয়া বারবার করা যায়।
ইসতিখারার সময় এ বিষয়গুলো মনে রাখা
১. ইসতিখারার নামাজে যেকোনো সুরা বা কোরআন মাজিদের যেকোনো জায়গা থেকে তেলাওয়াত করা যায়। তবে আলেমদের কেউ কেউ প্রথম রাকাতে সুরা কাফিরূন দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়ার পরামর্শ দেন। কেউ পরামর্শ দেন প্রথম রাকাতে সুরা কাসাসের ৬৮ নম্বর আয়াত পড়তে, আর দ্বিতীয় রাকাতে সুরা আহজাবের ৩৬ নম্বর আয়াত পড়তে। কিন্তু এ জাতীয় কোনো কথা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
২. যদি সময় ও সুযোগ থাকে এবং বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে একাধিকবার আমল করা যেতে পারে।
৩. ইসতিখারা ও মশওয়ারার পর স্বপ্ন দেখার বিষয়টি আবশ্যকীয় নয়। তাছাড়া স্বপ্নের ব্যাখ্যা খুবই জটিল একটি শাস্ত্র। কখনো বিভিন্ন কারণে একই স্বপ্নের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা হয়, সঠিক ব্যাখ্যা নির্ধারণ করা যথেষ্ট মুশকিল হয়। উপরন্তু স্বপ্ন শরিয়তের কোনো দলিল নয়।
৪. ইসতিখারার পর মন যেদিকে ঝুঁকবে সেই দিকটি শরিয়ত ও আকল-বিবেকের বিচারেও উত্তম হওয়া জরুরি। অন্যথায় নফস বা শয়তানের ধোঁকায় মানুষ এমন কোনো দিক অবলম্বন করতে পারে, যা শরিয়ত ও আকল-বিবেকের দৃষ্টিতে উত্তম নয়। কিন্তু প্রবৃত্তির টানে মানুষ সেই দিকে ঝুঁকে যেতে পারে।
৫. এ কথাও সবসময় মনে রাখা দরকার যে, দুনিয়া ভালো-মন্দ উভয়ের সম্মিলনস্থল। তাই ইসতিখারার পর যে দিকটি অবলম্বন করা হবে তাতে ইনশাআল্লাহ কল্যাণের অংশই বেশি হবে। বাকি অকল্যাণের কিছু অংশ তাতে থাকা বিচিত্র নয়। অর্থাৎ অধিক কল্যাণের বিবেচনাই এখানে কল্যাণ।
৬. ইসতিখারার পর যে পথ ও পন্থা অবলম্বন করা হবে ইনশাআল্লাহ, আল্লাহর পক্ষ থেকেই হবে। অর্থাৎ ইসতিখারার পর বান্দার জন্য কল্যাণের পথই উন্মুক্ত হবে। অকল্যাণের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তারপর এই কল্যাণ ধরে রাখার মেহনত অব্যাহত রাখতে হবে। নিজের বদ আমল, গাফলত কিংবা অন্য কোনো কারণে যেন সেই কল্যাণ বন্ধ হয়ে না যায়- সেই চেষ্টাও করে যেতে হবে।
৭. সর্বোপরি আখেরাতের কল্যাণই মুমিনের প্রকৃত কল্যাণ। সুতরাং দুনিয়ার জীবনে যদি কোনো সমস্যা, সংকট বা পেরেশানী হয় কিন্তু আখেরাতের হিসাবে তা কল্যাণের হয়, তাহলে তো মুমিনের কল্যাণ তাতে আরো বেশি।
সবচেয়ে বড় কথা, ইসতিখারার মাধ্যমে যেহেতু মুমিন আল্লাহর কাছেই কল্যাণ প্রার্থনা করছে, তো নিশ্চয় আল্লাহ কল্যাণ দান করবেনই। সে দানের মাধ্যম কখনো বুঝে আসে কখনো বুঝে আসে না। তাই তো বাহ্যত অকল্যাণ দেখার পর আল্লাহ নির্ধারিত কল্যাণ যখন মুমিন লাভ করে তখন বলে, ‘আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন।’