ইসলামের প্রচার-প্রসারে গণমাধ্যমের গুরুত্ব

  • মাওলানা লিয়াকত আলী, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গণমাধ্যম ইসলাম প্রচার-প্রসারের একটা কার্যকর উপায়, ছবি : সংগৃহীত

গণমাধ্যম ইসলাম প্রচার-প্রসারের একটা কার্যকর উপায়, ছবি : সংগৃহীত

গণমাধ্যম হচ্ছে গণযোগাযোগের একটা টুল বা উপকরণ। গণযোগাযোগ বর্তমান বিশ্বে সম্প্রসারণশীল একটা সাবজেক্ট। বিশ্বের প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সাবজেক্টে অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্স রয়েছে। এই সাবজেক্টে ছাত্রদের যাচাই করে সবচে ভালো ছাত্রদের ভর্তি করা হয়।

গণমাধ্যমে আলেমদের কেন প্রয়োজন, সে বিষয়ে আলোচনার আগে বলছি, উলামায়ে কেরামের কাজ হচ্ছে- ইসলামের প্রচার-প্রসারে ভূমিকা রাখা। গণমাধ্যম ইসলাম প্রচার-প্রসারের একটা কার্যকর উপায় বা মাধ্যম। এতে আলেমদের অংশগ্রহণের একমাত্র কারণ মনে করি ‘ইসলামের প্রচার-প্রসার।’

বিজ্ঞাপন

উলামায়ে কেরাম ওয়াজ করেন, বক্তৃতা করেন, এতে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছানো যায়। কিন্তু আলেমরা যদি গণমাধ্যমে যুক্ত হন, তাহলে অসংখ্য মানুষের কাছে ইসলাম পৌঁছানো যায়।

তাছাড়া, উলামায়ে কেরাম নবীর ওয়ারিস। নবীদের প্রধান কাজ ছিল দাওয়াত। আলেমরা যেহেতু নবীর ওয়ারিস, তাই তাদেরও প্রধান কাজ হবে দাওয়াত। আর এই দাওয়াত সহজে পৌঁছানোর একটা উপযুক্ত কার্যক্রম মাধ্যম হচ্ছে- গণমাধ্যম, সে কারণে আলেমদের এতে অংশগ্রহণ জরুরি। এই তো গেল সাধারণ কথা।

বিজ্ঞাপন

অসাধারণভাবে বললে বলতে হয়, ইসলামের ওপর আগ্রাসন সব যুগেই হয়েছে। হয়তো কেয়ামত পর্যন্ত এই আগ্রাসন হবেই। একসময় এই আগ্রাসন হতো অস্ত্র দিয়ে। তাই তার মোকাবেলা হতো অস্ত্র দিয়েই। এখন আগ্রাসন হচ্ছে- জ্ঞানের মাধ্যমে, সাহিত্যের মাধ্যমে, বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে। তাই তার মোকাবেলাও হওয়া উচিত সে অনুযায়ী।

বর্তমানে ইসলামের ওপর নানা আপত্তি, প্রশ্ন আসছে মিডিয়ার মাধ্যমে। মিডিয়ার মাধ্যমে এসব আপত্তি আর প্রশ্নের জবাব দেওয়া উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব। বিষয়টা সহজভাবে বললে বলতে হয়, জেহাদের মতো বিষয়টা। জেহাদে যেমন আত্মরক্ষামূলক প্রতিরোধ রয়েছে, তেমনি রয়েছে আক্রমণাত্মক জেহাদও রয়েছে। শুধু প্রতিপক্ষের প্রতিরোধ করেই ক্ষান্ত না হয়ে অনেক সময় শত্রুপক্ষের শক্তি খর্ব করার জন্যও জেহাদ রয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামের ওপর আপত্তি, প্রশ্নের জবাব প্রদানে সীমাবদ্ধ না থেকে ইসলামবিরোধীদের খারাপ দিকগুলো তুলে ধরে সমাজ, দেশ-জাতিকে তা হতে বাঁচার আহবানে উলামায়ে কেরামদেরকে মিডিয়ায় অংশগ্রহণ খুবই প্রয়োজন মনে করি।

উলামায়ে কেরামদেরকে মিডিয়ায় অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি আরেকটি কারণে- তা হলো, ইসলামের বিভিন্ন বিষয় জানার আগ্রহ মানুষের জীবনে দৈনন্দিন কাজ করে। মানুষের জানার আগ্রহ পূরণার্থে উলামায়ে কেরামের মিডিয়ায় অংশগ্রহণ প্রয়োজন বলে মনে করি। মিডিয়া যদি একটি মাসিক পত্রিকাও হয়, আর তার পাঠক হয় এক হাজার, তারপরেও একটি বিরাট মসজিদের তুলনায় মিডিয়ার খেদমত অনেক উপকারী।

ইসলাম সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যাদানকারীর কারণে সরল মানুষের মনে অনেক সময় নানান সংশয় দেখা দেয়, কার্যকর মাধ্যম গণমাধ্যম ব্যবহার করে উলামায়ে কেরামদের সেসব সংশয় দূর করাও অন্যতম দায়িত্ব।

একটা বিষয় খুব লক্ষ করছি আজকাল। গণমাধ্যমের যেসব ক্লাসিক্যাল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়, তার সবটাতেই উলামায়ে কেরামদের কাজের খুবই মিল রয়েছে। যেমন গণমাধ্যমের একটি উদ্দেশ্য বলা হয়, মানুষকে তথ্য জানানো। দুই. মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা। তিন. কোনো ভালো কাজে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। চার. কোনো একটা সঠিক বিষয় যুক্তি সঙ্গতভাবে উপস্থাপন করা। এরপরে আরেকটা বিষয় সাধারণভাবে যেটা বলা হয়ে- ‘বিনোদন লাভ করা।’ তো, এর সব কাজের সঙ্গে উলামায়ে কেরামের কাজের মিল রয়েছে।

ইসলাম সম্পর্কে মানুষকে তথ্য জানানো, ইসলামে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, ইসলামের একটা সঠিক বিষয়কে অত্যন্ত যুক্তি সহকারে তুলে ধরা, বিনোদন যদিও উলামায়ে কেরামের কাজ নয়, তবে বিনোদনের সীমা বর্ণনা করে দেওয়া যে, কতটুকু ইসলামসম্মত। এসব কাজ করাও তো উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব। এসব কাজের সঙ্গে উলামায়ে কেরামের কাজের মিল আছে। গণমাধ্যমকে উলামায়ে কেরাম এসব কাজে ব্যবহার করতে পারেন।

গণমাধ্যমের আরেকটি উদ্দেশ্য আছে। তা হলো, যখন নতুন কোনো সমস্যা দেখা দেয়, নতুন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়, সেই ক্ষেত্রে জণগণ কী করবে। সে ক্ষেত্রে যেমন গণমাধ্যম কাজ করে তদ্রুপ সঠিক অবস্থাটা তুলে ধরাও উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব। এই কাজটি গণমাধ্যম ব্যবহার করে সুন্দর করা যায়।