সৌদিতে শুরু হজের প্রস্তুতি, বাংলাদেশে শেষ হয়নি নিবন্ধন

  • শাহীন হাসনাত
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

১৪৪৫ হিজরির পবিত্র হজ মৌসুমের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। কিন্তু বাংলাদেশে দুই দফা সময় বাড়ানোর পরও প্রাপ্ত হজ কোটার মাত্র ৪২ শতাংশ পূরণ হয়েছে। ফলে কোটার ৫৮ শতাংশ অর্থাৎ ৭৪ হাজার ৮৩ জনের আসন রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি মৌসুমের হজের নিবন্ধনের সময় শেষ হয়। হজের চূড়ান্ত নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হবে কিনা সেটা এখনও নিশ্চিত নয়।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার জানিয়েছেন, ‘হজের নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না। সামনের সপ্তাহে আমরা সৌদি আরবকে হজযাত্রীর সংখ্যা জানিয়ে দেব। ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া মিনায় জায়গা করে ফেলেছে। আমরাই একমাত্র দেশ যারা এখনও হজযাত্রীদের সংখ্যা জানাতে পারিনি। জায়গা না পেলে পরে সবাই গালাগালি করবে, সরকার আমাদের দূরে রেখেছে, কষ্ট দিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

হজ নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানো হবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানিয়েছেন, ‘রবিবার এ বিষয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

জানা গেছে, হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিবন্ধনের সময়সীমা বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) শেষ হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী কোটায় ৩ হাজার ৮০২ ও বেসরকারি হজযাত্রী কোটায় ৪৯ হাজার ৩৭১ জন নিবন্ধন করেছেন। ৭৪ হাজারের বেশি কোটা খালি রয়েছে। অথচ হজে গমনেচ্ছুক অপেক্ষমাণ প্রাক-নিবন্ধিতের সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজারের বেশি। সরকারি মাধ্যমে প্রাক-নিবন্ধিতের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৬৮ আর বেসরকারি মাধ্যমে ১ লাখ ২ হাজার ৬৮৫ জন।

বিজ্ঞাপন

হজের কোটা পূরণ না হওয়ায় গত ১৫ জানুয়ারি সব মোবাইল অপারেটিং কোম্পানিকে বিনামূল্যে এ সংক্রান্ত খুদেবার্তা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। খুদেবার্তায় বলা হয়, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪-এর মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করে হজে গমন নিশ্চিত করুন।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে এবারের হজ নিবন্ধন শুরু হয়, সময়সীমা ছিল ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে হজ নিবন্ধনের সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বাড়ায় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

গত ২৮ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মুহা. আবু তাহির স্বাক্ষরিত দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালে হজে গমনেচ্ছুক ব্যক্তি, হজ এজেন্সি, হজ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় হতে হজ চুক্তির আগেই হজযাত্রীর চূড়ান্ত সংখ্যা জানানোর তাগিদ থাকা সত্ত্বেও বিশেষ বিবেচনায় সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমের হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো। এ সময়ের মধ্যে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন বা প্যাকেজের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করে চূড়ান্ত নিবন্ধন করা যাবে। প্রাথমিক নিবন্ধন করা হলে প্যাকেজের অবশিষ্ট মূল্য আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবশ্যিকভাবে একই ব্যাংকে জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় হজে যাওয়া যাবে না এবং প্রদত্ত অর্থ ফেরত দেওয়া হবে না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

একাধিক বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিক জানিয়েছেন, নিবন্ধনের সময়সীমা যৌক্তিক কারণেই বাড়াতে হবে। হজ এজেন্সি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অনেকেই ব্যস্ত ছিল। একই সময়ে বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধসহ টানা কর্মসূচি ছিল। এ ছাড়া বেশিরভাগ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। এ কারণ হজের চূড়ান্ত নিবন্ধনে ধীরগতি চলছে। এ ছাড়া প্রতিবছর হজ নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে। কিন্তু এ বছর সৌদি সরকার হজের কার্যক্রম এগিয়ে এনেছে এবং হজ প্যাকেজ সেভাবেই অনেক আগে ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ হজযাত্রীরা প্রস্তুত না থাকায় চূড়ান্ত নিবন্ধনে এই ধীরগতি। তবে আশার কথা হলো, নির্বাচনের পর জানুয়ারির মাঝামাঝিতে এসে নিবন্ধনের গতি বেড়েছে। তাদের দাবি, ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানো হলে, হজযাত্রীর সংখ্যা লাখের ওপর যাবে।

বাংলাদেশ থেকে এ বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমের কোটায় ১০ হাজার ১৯৮ ও বেসরকারি কোটায় ১ লাখ ১৭ হাজার জন হজ পালন করতে পারবেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আগ্রহী হজযাত্রীরা শুরুতে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন এবং প্যাকেজের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে প্রাথমিক নিবন্ধন করার পর ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবশ্যিকভাবে প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমার মাধ্যমে চূড়ান্ত নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে।

সরকারিভাবে এ বছর হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হবে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম প্যাকেজের (সাধারণ) খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা, যা ২০২৩ সালের সাধারণ হজ প্যাকেজের চেয়ে ৮৩ হাজার ২০০ টাকা কম। আর দ্বিতীয় প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার ৮১৮ টাকা।

গত বছর ৯ দফা বাড়ানো হয় নিবন্ধনের সময়। এর মধ্যে কোটা পূরণ হয়নি, ৬ হাজার ৭০৭ জন বাকি ছিল। তবে হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের বাদ দিয়ে সাড়ে তিন হাজারের কোটা খালি থাকে। নিবন্ধনের কোটা পূরণ না হওয়ার কারণ হিসেবে হজের ব্যয় বেশি বলে ধারণা করা হয়েছিল।

এদিকে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত হজ ও ওমরাহ সম্মেলনে দেশটির হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী ড. তাওফিক আল-রাবিয়াহ জানিয়েছেন, হজযাত্রীদের ধর্মীয় অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে মৌসুমের প্রস্তুতিমূলক সব কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১ মার্চ হজের ভিসা ইস্যু শুরু হবে এবং ২৯ এপ্রিল শেষ হবে। এরপর ৯ মে থেকে সৌদি আরবে হজযাত্রীদের গমন শুরু হবে।

গত বছরের জুনে করোনা-পরবর্তী সময়ের সর্ববৃহৎ হজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫ জন অংশ নেয়, যার মধ্যে ১৬ লাখ ৬০ হাজার ৯১৫ বিদেশি হজযাত্রী ছিল। ২০২৩ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে ১৩ কোটি ৫৫ লাখের বেশি মুসলিম ওমরাহ পালন করে, যা ছিল সৌদি আরবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা।