যেসব আমল গোপনে ও প্রকাশ্যে করা উত্তম
একমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ইবাদত ও যাবতীয় কাজ করার নাম হলো- ইখলাস (একনিষ্ঠতা, কাজটি শুধুমাত্র আল্লাহতায়ালার জন্য করা)। কে আমাকে দেখছে আর কে দেখছে না, সেটা না ভেবে আল্লাহ সর্বক্ষণ আমাকে দেখছেন- এই ভয় ও ভাবনা মাথায় রেখে ইবাদত করার নাম ইখলাস।
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তারা মানত পূর্ণ করে এবং সেই দিনকে ভয় করে, যেদিনের অনিষ্ট হবে সুদূরপ্রসারী। তারা আল্লাহকে ভালোবেসে অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিদের আহার দেয়। (তারা বলে) শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের আহার দান করি। তোমাদের কাছে আমরা কোনো প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।’ -সুরা দাহর : ৭-৯
আমল গোপনে করা ইখলাসের অন্যতম নিদর্শন। তবে কখনো কখনো প্রকাশ্যে আমল করা ইসলাম অনুমোদিত। বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা গোপনে করা থেকে প্রকাশ্যে করা উত্তম।
ইবনু কুদামা (রহ.) লিখেছেন, ‘প্রকাশ্যে আমল করলে তা অনুসরণ করার সুযোগ মেলে। মানুষ সৎ কাজে অনুপ্রাণিত হতে পারে। কিছু আমল তো এমন আছে যে ইচ্ছা করলেও তা গোপনে করা যায় না। যেমন হজ ও জিহাদ। সেগুলো তো প্রকাশ্যেই করতে হয়। তবে প্রকাশ্যে আমলকারীর নিজের মন নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট থাকতে হবে, যাতে লোকরঞ্জন লাভের সুপ্ত বাসনা মনে আদৌ জাগ্রত হতে না পারে। বরং ওই প্রকাশ্য আমল দ্বারা সে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণের নিয়ত করবে।’ -ইবনু কুদামা, মুখতাসার মিনহাজুল কাসিদিন, পৃষ্ঠা : ২২৩-২২৪
আমল প্রকাশ্যে ও গোপনে করার কিছু অবস্থা
প্রথম অবস্থা : ইসলামের দৃষ্টিতে আমলটি গোপনে করার কথা। এ ক্ষেত্রে গোপনে আমল করতে হবে। যেমন- তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় ও বিনয়-নম্রতা বজায় রাখা।
দ্বিতীয় অবস্থা : ইসলামের নির্দেশ মোতাবেক আমলটি প্রকাশ্যে করার কথা। এ ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে আমল করতে হবে। যেমন- জুমা, জামাতে নিয়মিত হাজির থাকা, সত্য কথা জোরেশোরে বলা ইত্যাদি।
তৃতীয় অবস্থা : আমলটি প্রকাশ্যেও করা যায়, আবার গোপনেও করা যায়। সে ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে করলে যার মনে রিয়া বা লোক-দেখানোর ভাব জাগ্রত হবে তার জন্য আমলটি গোপনে করা সুন্নত। আর যে মনে করবে তার আমল প্রকাশ পেলে অন্য লোকেরা তার অনুসরণ-অনুকরণ করবে, তার জন্য আমল প্রকাশ্যে করা সুন্নত হবে। যেমন- নফল দান।
এ রকম দানকালে কারো যদি মনে হয় লোকে দেখলে তার মনে প্রদর্শনেচ্ছা জাগবে, তার জন্য গোপনে দান করা আবশ্যক। আর যদি তার মনে হয়, দান করা দেখে অন্যরা তার দানের অনুকরণ-অনুসরণ করবে এবং লোক-দেখানো ভাবের ক্ষেত্রে সে তার মনের সঙ্গে সংগ্রাম করতে পারবে, তাহলে তার জন্য প্রকাশ্যে দান করা সুন্নত। মসজিদের জন্য প্রকাশ্যে টাকা চাওয়া বা দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা। অর্থাৎ অন্যদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে দান করা যাবে।