যে পাঁচ স্বভাবের মানুষ জান্নাতে যাবে

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নরম হৃদয়ের অধিকারী হওয়া জান্নাতিদের গুণ, ছবি : সংগৃহীত

নরম হৃদয়ের অধিকারী হওয়া জান্নাতিদের গুণ, ছবি : সংগৃহীত

জান্নাত অর্থ বাগান, উদ্যান, ঢাকা, আচ্ছন্ন ইত্যাদি। জান্নাত বৃক্ষ তরুলতায় আবৃত হওয়ার কারণে একে জান্নাত বলা হয়। জান্নাত এমন শান্তির জায়গা, যার বর্ণনা দেওয়া কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। জান্নাতে রয়েছে এমন সুখ-শান্তি, যা কোনো হৃদয় কল্পনা করেনি এবং কোনো চোখ দেখেনি। জান্নাতে থাকবে উন্নত মানের আসন। ইরশাদ হয়েছে, ‘জান্নাতিদের তাদের ধৈর্যের প্রতিদানস্বরূপ প্রাসাদ দেওয়া হবে। তাদের সেখানে অভিবাদন ও সালাম দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হবে। তথায় তারা স্থায়ীভাবে থাকবে। আশ্রয়স্থল ও আবাসস্থল হিসেবে তা কতই না উত্তম।’ -সুরা ফুরকান : ৭৫-৭৬

হাদিসে আছে, জান্নাতের সুঘ্রাণ ৫০০ মাইল দূর থেকে পাওয়া যাবে। জান্নাতিরা নানা ধরনের ফলফলাদি ভক্ষণ করবে। তারা হবে ৬০ হাত লম্বা এবং ১৪ তারিখের চাঁদের মতো উজ্জ্বল। তাদের উন্নতমানের পোশাক পরিয়ে দেওয়া হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জান্নাতে জান্নাতিদের জন্য ফলমূল ও কাঙ্ক্ষিত সব কিছু থাকবে।’ -সুরা ইয়াসিন

বিজ্ঞাপন

জান্নাত লাভের সহজ ও ছোট ছোট অনেক আমল রয়েছে। এখানে কয়েকটি আমল উল্লেখ করা হলো-

নরম হৃদয়ের অধিকারী
যাদের হৃদয় নরম হবে, কোমল ও সুন্দর মেজাজের অধিকারী হবে, সর্বদা আল্লাহভীরু হয়, কারও কোনো ক্ষতি করবে না- এমন ধৈর্যশীল লোক জান্নাতি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে প্রবেশ করবে এমন ব্যক্তি- যাদের অন্তর হবে পাখির অন্তরের ন্যায়।’ -সহিহ মুসলিম : ২৮৪০

বিজ্ঞাপন

দুর্বল ও অসহায় হওয়া
জান্নাতে গরিব-মিসকিন, ফকির, পরমুখাপেক্ষী ও দুর্বল লোকদের সংখ্যাধিক্য থাকবে। পক্ষান্তরে যারা তাদের বিপরীত হবে অর্থাৎ অহংকারী, দুশ্চরিত্র ও ঝগড়াটে ব্যক্তিরা জাহান্নামে যাবে। হজরত হারেসা ইবনে ওহাব (রা.) নবী কারিম (সা.) কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতি লোকদের গুণাবলীর কথা বলব না? সাহাবারা বললেন, জ্বী, বলুন। তিনি বললেন, প্রত্যেক দুর্বল, মানুষের চোখে তুচ্ছ বা হেয়, কিন্তু সে যদি কোনো বিষয়ে আল্লাহর নামে কসম করে তাহলে আল্লাহ তার কসম পূর্ণ করবেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামি লোকদের কথা বলব না? তারা বললেন, জ্বী, বলুন। তিনি বললেন, প্রত্যেক ঝগড়াকারী, দুশ্চরিত্র ও অহংকারী ব্যক্তি।’ -সহিহ মুসলিম : ২৮৫৩

নম্র-ভদ্র হওয়া
নম্র-ভদ্র, মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য ও মানুষের কাছের লোক- যাকে মানুষ বিপদ-আপদে কাছে পায়, এমন খোশমেজাজ, পরিচিত ও ভালো লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ ধরনের লোকের জন্য আল্লাহতায়ালা জাহান্নামকে হারাম করে দিয়েছেন। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক নরম দিল ভদ্র এবং মানুষের সঙ্গে মিশুক লোকদের জন্য জাহান্নাম হারাম। যাদের জন্য জাহান্নাম হারাম তারা অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ -আহমদ : ১/৪১৫

নবী কারিম (সা.)-এর অনুসরণকারী জান্নাতে যাবে
যে ব্যক্তি রাসুল (সা.) কে অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে। পক্ষান্তরে যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ করবে না, সে জাহান্নামে যাবে। সুতরাং হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ দ্বারাই জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার সমস্ত উম্মত জান্নাতে যাবে, তবে ওই সব সব লোক ব্যতীত, যারা অস্বীকার করে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার নাফরমানি (অবাধ্যতা) করে সে অস্বীকার করে। -সহিহ বোখারি : ৭২৮০

দৈনিক বারো রাকাত নামাজ আদায়কারী
আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যে ব্যক্তি প্রতি দিন বারো রাকাত নামাজ (ফজরের পূর্বে দুই রাকাত, জোহরের পূর্বে চার রাকাত, পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত, এশার পরে দুই রাকাত সুন্নত) আদায় করে সে জান্নাতে যাবে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রী উম্মে হাবিবা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ফরজ ব্যতীত বারো রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। -সহিহ মুসলিম : ৭২৮