কবর সংকটে দাফন নিয়ে চিন্তিত জাপানের মুসলিমরা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
এক পাকিস্তানি মুসলিম নাগরিক তার সন্তানের কবরে সামনে দোয়া করছেন, ছবি : সংগৃহীত

এক পাকিস্তানি মুসলিম নাগরিক তার সন্তানের কবরে সামনে দোয়া করছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জাপানে বিভিন্ন দেশের নানা ধর্মের অনুসারী প্রবাসীদের বসবাস বাড়তে থাকায় সমাধিক্ষেত্র নিয়ে সংকট দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে কবর সংকটে মৃত স্বজনদের লাশ দাফন নিয়ে চিন্তিত জাপানের মুসলিমরা।

কর্মসংস্থানের সুবিধা বাড়ায় জাপানে এশিয়ার অনেক মুসলিম দেশ থেকে প্রবাসীদের বসবাস গত কয়েক বছরে বেড়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে বাংলাদেশি আছেন ১৭ হাজারের মতো। ইন্দোনেশিয়ান ৬৬ হাজার। আর পাকিস্তানি আছেন প্রায় ১৮ হাজার। এ ছাড়া জাপানের নাগরিকসহ দেশটিতে লাখ দু’য়েক মুসলিম নাগরিকের বাস।

জাপানের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১২ কোটি, জাপানি নাগরিকদের মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগই লাশ বৌদ্ধ ধর্মীয় বিশ্বাস কিংবা শিন্তো রীতি অনুযায়ী পুড়িয়ে ফেলে। কাজেই মুসলিমরা সেখানে কিছু বিধি-নিষেধের মধ্যে আটকে গেছে। ইসলামে লাশ পোড়ানোর বিধান নেই। মুসলিমরা সাধারণত তাদের লাশ মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাফন করে থাকে।

এমতাবস্থায় জাপানের অনেক পরিবার লাশকে যথাযথভাবে ইসলামি রীতি অনুযায়ী কবর দেওয়ার জন্য শত শত কিলোমিটার দূরে যেতে বাধ্য হয়। আবেগ তাড়িত হয়ে পরিস্থিতির কথা বিবিসিকে বলছিলেন তাহির আব্বাস খান বলছিলেন, ‘তারপরও আমার নিকটাত্মীয় কাউকে হয়তো মৃত্যুর পর পুড়িয়ে ফেলা হতে পারে, এই চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না।’

তাহির আব্বাস ২০০১ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য জাপানে যান। পাকিস্তানের বংশোদ্ভূত এই ব্যক্তি এখন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং জাপানের নাগরিক। তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশ সক্রিয় এবং তিনি বেপ্পু মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি বলেন, ‘শেষকৃত্য হচ্ছে কোনো একটি মানুষের জন্য আপনি সর্বশেষ যা করতে পারেন সেই কাজ। আমি যদি আমার কোনো আত্মীয় বা বন্ধুকে মর্যাদাপূর্ণভাবে দাফন করতে না পারি, আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবো না।’

২০০৯ সালে দক্ষিণাঞ্চলের কিয়ুশু দ্বীপের ওইতা এলাকায় প্রথম মসজিদ স্থাপন করা হয়। কিন্তু সেখানে থাকা প্রায় ২ হাজার মুসলিমের জন্য একটি কবরস্থান বানানোর প্রক্রিয়া এখনও পরিকল্পনা পর্যায়েই আটকে রয়েছে।

মুহাম্মদ ইকবাল খান ২০০৪ সালে পাকিস্তান থেকে তার স্ত্রীর সঙ্গে জাপানে এসেছিলেন। টোকিওর কাছে তিনি একটি গাড়ি রফতানির ব্যবসা গড়ে তোলেন। পরে তিনি তার ব্যবসা পাশের ফুকুয়া শহরে স্থানান্তরিত করেন। যখন তার স্ত্রী ২০০৯ সালে একটি মৃত শিশুকে জন্ম দিলেন, তখন ওই এলাকায় মুসলিমদের জন্য কোনো কবরস্থান ছিল না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে খান বলেন, ‘আমরা লাশটি একটি ছোট বাক্সে ঢুকিয়ে গাড়িতে তুলি। তারপর গাড়ি চালিয়ে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে ইয়ামানাশিতে নিয়ে যাই।’

জাপানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত ইয়ামানাশি সমাধিস্থল খ্রিস্টান ও মুসলিমরা ব্যবহার করে। খ্রিস্টানরাও জাপানের একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। দেশটির জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশের কিছু বেশি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।

তবে অবস্থা পাল্টাতে চলছে নানাবিধ পরিকল্পনা। ড. তাহির আব্বাস খানের সংস্থা বেপ্পুতে খ্রিস্টান সমাধিস্থলের পাশে একটি জমি কেনে। জমির পাশে যাদের জমি ছিল তারা ‘অনাপত্তিপত্র’ দিলেও তিন কিলোমিটার দূরে বসবাসরত একটি সম্প্রদায় এতে আপত্তি জানায়। ড. খান বলেন, ‘তারা বলে যে লাশ কবর দেওয়া হলে তা মাটির নিচের পানিকে দূষিত করে ফেলবে। এ ছাড়া লেকের পানি দূষিত হয়ে যাবে যা সেচকাজে ব্যবহার করা হয়। মূলত কবর দেওয়ার বিরোধিতার পেছনে ‘সাংস্কৃতিক কুসংস্কার’ কাজ করেছে।’

গত সাত বছরে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তাই মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা বিকল্প উপায় খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে। আর মুসলিম অভিবাসীরা পরিবারের সদস্যদের লাশ দেশে পাঠিয়ে দেয়। লাশ পাঠানোর প্রক্রিয়া বেশ জটিল কিন্তু শেষ কথা হলো, লাশ পাঠানো যায়। কিন্তু জাপানি মুসলমি নাগরিকদের জন্য তো তো সেই পথও খোলা নেই।

জাপানে মোট ১৩টি মুসলিম কবরস্থান রয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি একটি হিরোশিমায় গড়ে তোলা হয়েছে একটি। হিরোশিমান কবরস্থানের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুবিধা রয়েছে। সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার জন্য পানির সরবরাহ রয়েছে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা হালাল খাবার পরিবেশন করে।

সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ পার্লামেন্ট সদস্যদের কাছে আবেদন করেছেন তিনি। বর্তমানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বেপ্পুতে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এক টুকরো জমির বরাদ্দ দিয়েছে যেখানে ৭৯টি দাফন করা সম্ভব। বিষয়টি একটি নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তিনি বলেন, ‘এটা শুধুমাত্র ধর্মীয় কোনো বিষয় নয়, এটা মৌলিক মানবাধিকার। আমরা বিনামূল্যে কিছু চাইছি না। আমরা এর জন্য সানন্দে দাম দিতে রাজি আছি। কিন্তু অনুমোদন পাওয়াটাই সবচেয়ে কঠিন বিষয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছোট ছোট অন্যান্য সম্প্রদায় যেমন ইহুদি আর ব্রাজিল থেকে আসা খ্রিস্টানরাও এই সমস্যার মুখে পড়েছে। তাই সহজ সমাধান হচ্ছে, জাপানের প্রতিটি অঞ্চলে বহু ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য একটি করে সাধারণ সমাধিস্থল তৈরি করা।’

   

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাশিয়ার সরকার হিজাব সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা শিথিল করেছে। ফলে এখন থেকে বিদেশি নাগরিকরা রাশিয়ার নাগরিকত্ব আবেদন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাসপোর্ট ও বিভিন্ন সরকারি নথিতে হিজাব পরা ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় এই সংবাদ নিশ্চিত করেছে।

রাশিয়ার বার্তা সংস্থা আরটি জানিয়েছে, আগামী ৫ মে থেকে এই আইন কার্যকর হবে। এর দশ দিন আগে এই আইনের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে জানানো হয়, যেসব মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে অপরিচতদের সামনে মাথা খোলা রেখে আসতে পারেন না, তারা শুধুমাত্র মুখমন্ডলের ছবি দিলেই চলবে।

তবে রাশিয়ায় ইতোমধ্যেই স্থানীয় মুসলিম নারীরা ওয়ার্ক পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা অন্যান্য সরকারি নথিতে হিজাব পরিহিত ছবি ব্যবহার করতে পারেন।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বিইসুলতান খামাজেইভ বলেন, এই নতুন আইনের মাধ্যমে বিশ্বাসীরা তাদের ধর্মীয় অনুশাসন সহজেই মানতে পারবেন। সেই সঙ্গে মুখমন্ডলের ছবির মাধ্যমেই মনিটরিং সিস্টেমে তাদের তথ্য রাখতে পারবে সরকার।

ইউরোপের সব দেশের বিবেচনায় রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলমানের বসবাস। দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে ইহুদি, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি ইসলামকেও রাশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি রুশ নাগরিকের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। শুধু মস্কোতেই ১০ লাখ মুসলমানের বসবাস। বর্তমানে ‘ইসলাম’ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।

বিগত দুই দশক রাশিয়ায় নতুন করে প্রায় আট হাজার মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানী মস্কোতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে চারটি বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স। মস্কো ক্যাথিডাল মসজিদ তো এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এতে রয়েছে গ্রন্থাগার, হল রুম, মুসলিম মিউজিয়াম ও প্রদর্শনী গ্যালারি, যাতে ১০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। এখানে ঈদের নামাজে প্রায় তিন লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।

;

অবৈধ হজযাত্রী ঠেকাতে যে উদ্যোগ নিচ্ছে সৌদি আরব



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বৈধ ও অবৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবারের হজ মৌসুমে প্রত্যেককে আলাদা করে একটি ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হবে। মূলত, অনুমোদন ছাড়া হজপালন নিরুৎসাহিত করতেই দেশটির এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে।

অত্যাধুনিক এ কার্ড ছাড়া হজের পবিত্র স্থানগুলোতে চলাফেরায় কঠোর নিয়ম করা হচ্ছে। মক্কার হজের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে প্রবেশকালে কার্ডটি বহন করা বাধ্যতামূলক। হজবিষয়ক জরুরি দুটি অ্যাপ ‘নুসুক’ ও ‘তাওয়াক্কালনা’-এর মধ্যে কার্ডটির ডিজিটাল ভার্সন পাওয়া যাবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি হজযাত্রীদের প্রথম দলটি সৌদি আরবে পৌঁছাবে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে। ঠিক তার আগেই অবৈধ বিদেশি হজযাত্রীদের রুখতে এই উদ্যোগ নিল দেশটি।

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়া গত ৩০ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নুসুক’ কার্ড দেওয়ার প্রকল্প শুরু করেন। এ সময় তিনি ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকুত কালিল কওমাসকে ‘নুসুক’ কার্ডের একটি কপি তুলে দেন।

এ বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে দুই লাখ ৪১ হাজারের বেশি হজযাত্রী হজপালন করবেন। প্রতিবারের মতো এবারও দেশটির হজযাত্রীরা প্রথম হজ কাফেলা হিসেবে সৌদি আরবে প্রবেশ করবেন।

ডিজিটাল এই নুসুক কার্ডে সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীর প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকবে এবং হজের জন্য পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে চাইলে এই ডিজিটাল কার্ড অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে। এ ছাড়া হজের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনেও বিভিন্ন জায়গায় এই ডিজিটাল কার্ড দেখাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট দেশের হজযাত্রীদের জন্য ভিসা ইস্যুর পর কার্ডটি সংশ্লিষ্ট হজ অফিস বিদেশি হজযাত্রীদের কাছে হস্তান্তর করবেন এবং হজ পারমিট ইস্যুর পর স্থানীয় সৌদি হজযাত্রীরা দেশটির সংশ্লিষ্ট সরকারি কার্যালয় থেকে এই কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

এর আগে গত মাসে এক বিবৃতিতে হজ করার ক্ষেত্রে অনুমোদনকে বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করেছে সৌদি আরবের শীর্ষ আলেমদের একটি সংগঠন। ‘সিনিয়র কাউন্সিল অব উলামা’ নামে সংগঠনটি জানিয়েছে, যারা অনুমতি ছাড়া হজ করতে যাবেন তাদেরকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও যারা হজ করবেন তারা এরমাধ্যমে পাপ করবেন।

এ ছাড়া সৌদি সরকার দেশটির সব হজ পালনকারীদের জন্য ‘সেহাতি’ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কোভিড, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিসের টিকার রেকর্ড উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করেছে।

সরকারি আদেশে বলা হয়, ২০২৪ সালে এই সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনের অন্তত এক ডোজ ও গত ৫ বছরের মধ্যে মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিনের একটি ডোজের রেকর্ড উল্লেখ করতে বলেছে।

আসন্ন হজের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৬ জুনের (২৯ জিলকদ) মধ্যে উমরা যাত্রীদের সৌদি আরব ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষণা অনুসারে, দেশটি গত ১ মার্চ থেকে হজের ভিসা ইস্যু করা শুরু করে গত ২৯ এপ্রিল (২০ শাওয়াল) এ কার্যক্রম শেষ করেছে।

আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

অপরূপ প্রকৃতির মাঝে দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজ বনানী, পাহাড় আর চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এখানে। শ্রীমঙ্গলে অনেকেই দেখতে আসনে পাহাড়ের মাঝে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ।

শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে সামনে দিকে গেলেই দেখা মিলবে মসজিদটির। জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে প্রথমে খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর পর সুযোগ মিলবে তা পরিদর্শনের।

শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ, নেই কোনো কোলাহল। দূর থেকে দেখা যায়, সবুজের মাঝে সিঁড়ির লাল আর সাদা রঙের মিশ্রণ। শতাধিক সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে। চারদিকে সবুজ পাহাড়ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ। রয়েছে সারি সারি চা বাগান। গুনে গুনে ১৫০ সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে তবেই পৌঁছতে হবে মসজিদে।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামে পরিচিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)। ‘মসজিদটি নিয়ে মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে, এর স্থাপত্যশৈলী আর অবস্থান।

প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি। সমতল থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদটি। চারপাশে রয়েছে, নানা রকমের গাছগাছালি। আছে লেবু ও আনারস বাগান। সবুজের সমারোহ চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে মসজিদ ঘিরে। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর নাম না-জানা পাখিদের কিচিরমিচির এক অন্যরকম পরিবেশের তৈরি করেছে।

খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এই মসজিদটিতে প্রায় ৮০০ লোক একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনে এর চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। এর গঠনশৈলীও চমৎকার। তুর্কি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক ঝাড়বাতি, যা আনা হয় সুদূর চীন থেকে।

মসজিদের সামনের অংশ

দর্শনীয় এই মসজিদটি নির্মাণ করেন খাজা টিপু সুলতান। টিপু সুলতান ছিলেন খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)-এর সাহেবজাদা। এই খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) আবার ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরীর (রহ.) উত্তরসূরি।

মসজিদটির প্রাঙ্গণে আছে দুটি গেস্টহাউস এবং একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। এই চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহের ছয় দিন গরিব মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এখানে আছে একটা হেলিপ্যাড। গেস্টহাউসটি মূলত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য ব্যবহৃত হয়।

মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে কবরস্থানের জায়গা। শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকরা একবার হলেও এখানে এসে ঘুরে যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর ২৪ নভেম্বর এ মসজিদ ঘিরে আয়োজন করা হয় বার্ষিক ওরস মাহফিলের।

এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি দেখতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে আসতে হয় এখানে। সিলেট শহর থেকে কিংবা গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে সিএনজি বা ইজিবাইক রিজার্ভ করে যেতে পারেন। শহর থেকে যাওয়া-আসা ভাড়া প্রায় তিন থেকে চারশ টাকা। গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে গেলে ভাড়া কিছু কম পড়বে। অটোরিকশা দিয়েও যেতে পারেন। চারপাশের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌঁছতে পারবেন।

;