ভালোবাসায় যত সওয়াব

  • সাকী মাহবুব, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুমিনকে ভালোবাসা ও একসঙ্গে কাজ করা ঈমানের দাবি, ছবি : প্রতীকী

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুমিনকে ভালোবাসা ও একসঙ্গে কাজ করা ঈমানের দাবি, ছবি : প্রতীকী

চারটি বর্ণ দ্বারা গঠিত একটি শব্দের নাম ভালোবাসা। ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র অনুভূতি। সর্বাধিক চর্চিত ও অন্তরে দোলা দেওয়া শব্দ। ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোনো মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে- ভালোবাসা।

তবে এই ভালোবাসা যদি হয় নিঃস্বার্থ ও একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, তবে এর পুরস্কার অফুরন্ত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামত দিবসে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করবেন, যারা আমার সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবেসেছিল, তারা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দান করব।’ -সহিহ মুসলিম

বিজ্ঞাপন

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহর জন্য যারা পরস্পর ভালোবাসার সম্পর্ক রাখে, কেয়ামতের দিন তাদের জন্য নুরের মিম্বর স্থাপন করা হবে, যা দেখে নবী এবং শহীদরা ঈর্ষা করবেন। -জামে তিরমিজি

শান্তির ধর্ম ইসলামে একে অপরের প্রতি ভালোবাসার গুরুত্ব এত বেশি যে, এর ওপর ঈমানের ভিত্তি রাখা হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা জান্নাতে যেতে পারবে না যতক্ষণ না মুমিন হবে। আর তোমরা মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন আমলের কথা বলে দেব না, যা করলে তোমাদের মধ্যে সহজেই ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। আর তা হলো সালামের প্রসার ঘটানো।’ -সহিহ মুসলিম

বিজ্ঞাপন

আরেক হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা একে অপরকে উপহার দাও। তাহলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও হৃদ্যতা তৈরি হবে।’ -আল আদাবুল মুফরাদ

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রিয় স্ত্রীদের সঙ্গে গল্প করেছেন। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে দৌঁড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। হজরত আয়েশা (রা.) যেখানে কামড় দিয়ে গোশত খেয়েছেন ঠিক সেখানেই নিজের ঠোঁট লাগিয়ে রাসুল (সা.) গোশত চিবিয়েছেন।

নবী কারিম (সা.) শিশুদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাদের গালে স্নেহের চুমু এঁকে দিতেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। উপহার দিতেন। কখনও কখনও তাদের সঙ্গে খেলাধুলায় অংশ নিতেন। সালাম দিতেন। সুতরাং রাসুল (সা.)-এর সুন্নত পালনার্থে স্ত্রী ও শিশুদের ভালোবাসা আল্লাহর জন্য ভালোবাসা বলে বিবেচিত হবে।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা সাত শ্রেণির লোককে তার সুশীতল ছায়াতলে স্থান দেবেন, যেদিন তার ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না। তাদের এক শ্রেণি হলো- ওই লোক যারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালোবাসে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। -সহিহ বোখারি

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুমিনকে ভালোবাসা ও একসঙ্গে কাজ করা ঈমানের দাবি। তাছাড়া পরস্পর ভালোবাসা সাহাবিদের বৈশিষ্ট্য। এ থেকে বুঝা যায় যে, ইসলামে ভালোবাসার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু তা হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং শরিয়তসম্মতভাবে।

বিবাহপূর্ব ছেলেমেয়েদের ভালোবাসা ইসলামের দৃষ্টিতে অবৈধ ও অন্যায়। এর ফলে চারিত্রিক পবিত্রতা বিনষ্ট হয়। বর্তমান বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালনের নামে যে অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে, তা যুবসমাজকে অন্যায়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দিবসটির কুপ্রভাব দিনদিন এতই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, সমাজ থেকে বিদায় নিচ্ছে লজ্জা, শরম, শালীনতা ও নীতিবোধ। মূলতঃ মুসলমানদের চরিত্র বিনষ্ট করার অসৎ উদ্দেশ্যে দিবসটি আমদানি করা হয়েছে। তাই সচেতন সব নাগরিকের কর্তব্য, এ অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, যুব সমাজের চরিত্র পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।