দুঃখ-কষ্টে মুমিন ভেঙে পড়ে না

  • সাকী মাহবুব, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অর্থ : বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন, ছবি : সংগৃহীত

অর্থ : বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন, ছবি : সংগৃহীত

দয়াময় আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আমি তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়-ভীতি, ক্ষুধা, জান-মাল ও ফসলের ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের। যারা তাদের ওপর বিপদ এলে বলে আমরা তো আল্লাহরই। আর নিশ্চয়ই আমরা তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’ -সুরা বাকারা : ১৫৫-১৫৬

দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ, পাওয়া না পাওয়া, সফলতা, ব্যর্থতা নিয়েই মানুষের জীবন। দুঃখ-কষ্ট মানব জীবনেরই অংশ। দুঃখ-কষ্টে হতাশ হওয়া যাবে না, ভেঙে পড়া যাবে না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ যার ভালো চান, তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।’ -সহিহ বোখারি

বিজ্ঞাপন

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যদি কারো ওপর কোনো কষ্ট আসে, আল্লাহতায়ালা এর কারণে তার গোনাহসমূহ ঝরিয়ে দেন, যেমনভাবে গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ে।’ -সহিহ বোখারি

মানুষের প্রতিটি কষ্টের সঙ্গে সুখ মিশে আছে। ধৈর্যশীল মানুষ সেই সুখের অপেক্ষা করেন। তারা জানেন, জীবনে যত ঘোর আঁধার আসুক না কেন, একসময় তা কেটে যাবে। কষ্টের এ সময়গুলোতে ধৈর্যের সঙ্গে অবিচল থাকাই মুমিনের গুণ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘প্রতিটি কষ্টের সঙ্গে অবশ্যই কোনো না কোনো দিক থেকে স্বস্তি রয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই, অবশ্যই প্রতিটি কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি আছেই।’ -সুরা আল ইনশিরাহ : ৫-৬

রাত যত গভীর হয়, ভোর তত নিকটবর্তী হয়। চিরদিন কারও দুঃখ-কষ্ট থাকে না। মনে করতে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে এটা একটা পরীক্ষা। হতে পারে বান্দার দোয়া ও আহাজারি শোনার জন্যই মহান আল্লাহ এ পরীক্ষা দিয়েছেন। কারণ বিপদের সময় বান্দার দোয়ায় থাকে সর্বোচ্চ বিনয়, নিষ্ঠা ও আনুগত্য। মহান আল্লাহ বান্দার কাছে এটাই চান। মনে করতে হবে, অন্যদের তুলনায় আমার এ পরীক্ষা সহজ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ নবী-রাসুলগণ। পৃথিবীতে তারাও বহু দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন।

হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনের কুণ্ডলিতে ফেলা হয়েছিল। হজরত জাকারিয়া (আ.)-কে জীবন্ত অবস্থায় করাত দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছিল। হজরত ইউসুফ (আ.)-কে মরুভূমির গভীর কুয়োর মধ্যে ফেলা হয়েছিল। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে এতিম করে, ক্ষুধা দারিদ্র্য, অভাব-অনটন দিয়ে, কাফেরদের অন্যায়-অত্যাচারে রক্তাক্ত করে, হিজরত দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাহলে কেন এত দুশ্চিন্তা? কেন এত হতাশা?

বিপদ সাময়িক। এই আসে এই চলে যায়। সুখের পরেই দুঃখ, দুঃখের পরেই সুখ। সুখতো দুঃখের সঙ্গেই মিশ্রিত। জীবনতো শুধু দুঃখের জন্য নয়। জীবনে বিপদাপদ আসা মানেই আল্লাহর আজাব নয়, আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের বেশি পরীক্ষা করেন। হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বিপদ যত তীব্র হবে, প্রতিদানও অনুরুপ বিরাট হবে।’ -ইবনে মাজাহ

যারা মুমিন, তাদের হারানোর কিছু নেই। শত্রু ও হিংসুকরা তাদের আঘাত দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। কিন্তু মহান আল্লাহ ওই আঘাতগুলোর বিনিময়ে তাদের মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দেন। তাই যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদে বিচলিত না হয়ে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিৎ। ধৈর্যধারণ করা উচিৎ। কারণ মুমিনের হারানোর কিছু নেই।

প্রতিটি কষ্ট তার জন্য সফলতার দ্বার খুলে দেবে। তার মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দেবে। মহান আল্লাহ সবাইকে বিপদাপদ থেকে মুক্ত রাখুন। কেউ বিপদে পড়ে গেলে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করার তওফিক দান করুন। আমিন।