রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াতে সতর্ক থাকা



হুমায়ুন কবীর
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত অনেক সওয়াবের আমল, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত অনেক সওয়াবের আমল, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র রমজান মাস প্রায় চলে এসেছে। রমজান মাস সবর ও সংযমের মাস, ইবাদত-বন্দেগির মাস; কোরআন মাজিদ নাজিলের মাস। এ মাস বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা ও তেলাওয়াত শোনার মাস। রমজান মাসে মুমিন-মুসলমানরা অন্য মাসের তুলনায় বেশি ইবাদত-বন্দেগি করেন। অনেক বেশি নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকারে সময় কাটান। তাই পবিত্র রমজানকে বলা হয়- ইবাদতের বসন্তকাল।

রমজানের ফজিলত সম্পর্কে কোরআন মাজিদে অনেক আয়াত বর্ণিত হয়েছে। হাদিসে বহু ফজিলতের কথা উল্লেখ আছে। সেসব আয়াত ও হাদিস পড়ে এবং শুনে আমরা ইবাদত-বন্দেগির প্রতি আকৃষ্ট হই, বেশি বেশি ইবাদতে সময় কাটাই। কিন্তু আমাদের অসচেতনায় কিছু ভুল-ত্রুটির কারণে ইবাদতগুলো সুন্দর হয় না। তেমন কিছু বিষয় হলো-

কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে রমজানে কোরআনের সঙ্গে আমাদের আলাদা একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিয়মিত তেলাওয়াত করা, ঘরের সবাইকে তেলাওয়াতের প্রতি তাগিদ দেওয়া, রাতে তারাবির নামাজে তেলাওয়াত করা ও শোনা আমাদের সাধারণত হয়েই থাকে। তবে এক্ষেত্রে একটা ভুল হয়, সেটা হলো বেশি তেলাওয়াত করতে গিয়ে দ্রুত তেলাওয়াত করা। দ্রুততার কারণে মাঝে-মধ্যে আমাদের উচ্চারণ সুন্দর হয় না, অক্ষর ও শব্দের উচ্চারণ অশুদ্ধ হয়ে যায়, কখনও অস্পষ্ট হয়ে যায়- যা মোটেই কাম্য নয়।

অনেক মসজিদে তারাবির নামাজেও দেখা যায়, দ্রুত তেলাওয়াত করতে। দ্রুততার কারণে কোরআন মাজিদের হক আদায় হয় না। কখনও কখনও তো নামাজ ফাসেদ হওয়ার আশঙ্কা হয়ে যায়।

কোরআন কীভাবে তেলাওয়াত করতে হবে, তার নির্দেশনা আল্লাহতায়ালা কোরআনে আমাদেরকে দিয়েছেন। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে সেই তেলাওয়াতের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘কোরআন তেলাওয়াত করুন ধীরে ধীরে, সুস্পষ্টভাবে।’ -সুরা মুযযাম্মিল : ০৪

হজরত আনাস (রা.) কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কোরআন তেলাওয়াতের পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘নবী কারিম (সা.) শব্দগুলোকে টেনে টেনে পড়তেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ে বললেন যে, তিনি আল্লাহ, রাহমান এবং রাহিম শব্দকে টেনে পড়তেন।’ -সহিহ বোখারি : ৫০৪৬

হজরত উম্মে সালামা (রা.) কেও একই প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে তিনি বলেন, ‘নবী কারিম (সা.) প্রতিটি আয়াত আলাদা আলাদা করে পড়তেন এবং প্রতি আয়াতের পরে থামতেন। তিনি আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন বলে থামতেন। তারপর আর রাহমানির রাহিম বলে থামতেন। তারপর মালিকি ইয়াওমিদ্দিন বলে থামতেন।’ –সুনানে আবু দাউদ : ১৪৬৬

দ্রুত কোরআন তেলাওয়াতের বিষয়ে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। দ্রুত তেলাওয়াত করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা কোরআন তেলাওয়াত করছিলাম এমন সময় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এলেন। তখন আমাদের সঙ্গে কিছু গ্রাম্য মানুষ ছিলো, কিছু অনারব মানুষও ছিলো। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমরা কোরআন পড়ো, তোমরা প্রত্যেকেই উত্তম মানুষ। আর অচিরেই এমন সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে, যারা কোরআনকে সোজা করবে, যেভাবে তীর সোজা করা হয়। (তারা তাজবিদ নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করবে।) আর তারা কোরআন পাঠে খুব তাড়াহুড়া করবে, অপেক্ষা করে আস্তে ধীরে তেলাওয়াত করবে না।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৮৩০

প্রায় একই ধরণের হাদিস সাহাবি হজরত সাহাল (রা.) থেকেও বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত করছিলাম এমন সময় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এলেন। তিনি বললেন- ‘আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর কিতাব একটাই। আর তোমাদের কেউ লাল, কেউ সাদা আবার কেউ কালো। (তোমরা ভিন্ন ভিন্ন বর্ণ ও ভিন্ন ভিন্ন জাতির মানুষ।) তোমরা ওই সম্প্রদায়ের আবির্ভাবের পূর্বে কোরআন পড়ো, যারা কোরআন সোজা করবে যেভাবে তীর সোজা করা হয়। আর তারা কোরআন পাঠে খুব তাড়াহুড়া করবে, অপেক্ষা করে আস্তে ধীরে তেলাওয়াত করবে না।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৮৩১

কোরআন ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করা উত্তম, ছবি : সংগৃহীত

 

আমরা কোরআন মাজিদ দ্রুত তেলাওয়াত করি। অন্যান্য কিছু আমলও খু্ব দ্রুত করার চেষ্টা করি। আমরা মনে করি, দ্রুত তেলাওয়াত করে যত বেশি পড়তে পারব, তাড়াহুড়া করে যত বেশি আমল করতে পারব, ততো বেশি সওয়াবের অধিকারী হব। এবং কেয়ামতের দিন বেশি হওয়াটা আমাদের জন্য লাভজনক হবে। মনে রাখতে হবে, কেয়ামতের দিন আমল গণনা করা হবে না। কে কত পারা তেলাওয়াত করল, কত খতম শেষ করল বা কত রাকাত নামাজ পড়ল- এসব দেখা হবে না। বরং মিজানের পাল্লায় আমলগুলো পরিমাপ করা হবে। যেমন কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সঠিকভাবে আমলগুলো ওজন করা হবে, সুতরাং যাদের পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম ও কৃতকার্য হবে।’ -সুরা আরাফ : ০৮

এ জন্য তাড়াহুড়া করে আমলের সংখ্যা না বাড়িয়ে আস্তে-ধীরে আমল করে আমলের গুণগত মান বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যার পাল্লাসমূহ ভারী হবে, সে সন্তোষজনক জীবনে থাকবে।’ -সুরা কারিয়া : ৬-৭

আমাদের আমলের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন, না ওজন বাড়ানো প্রয়োজন- এ বিষয়ে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) অনেক সুন্দর বলেছেন- ‘আমলের ওজন ইখলাস তথা আন্তরিকতা ও সুন্নতের সঙ্গে সামঞ্জস্যতার কারণে বেড়ে যায়। যার আমল আন্তরিকতাপূর্ণ ও সুন্নতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সংখ্যায় কম হলেও তার আমলের ওজন বেশি হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সংখ্যায় অনেক আমল করবে, নামাজ, রোজা, দান-সদকা, হজ-ওমরা অনেক করবে, কিন্তু আন্তরিকতা ও সুন্নতের সঙ্গে সামঞ্জস্য কম হবে, তার আমলের ওজন কম হবে। মানুষ আমলের যে পুঁজি নিয়ে আল্লাহর আদালতে আসবে তা ভারী না হালকা, তার ভিত্তিতে সেখানে ফায়সালা অনুষ্ঠিত হবে।’ -মাজমুল ফাতাওয়া লিশায়খিল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া : ১০/৭৩৫–৭৩৬

সুতরাং কোরআন তেলাওয়াতসহ সকল প্রকার আমলের ব্যাপারে আমাদের আন্তরিক হতে হবে। আল্লাহর নির্দেশনা ও হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী আমল করতে হবে।

ইমাম গাজালি (রহ.) বলেছেন, ‘অনেক মানুষ এমন রয়েছে, তারা কোরআন তেলাওয়াত করে। কিন্তু কোরআন তাদেরকে অভিশাপ দিতে থাকে।’ -এহইয়া উলুমিদ্দীন : ১/৩২৪

এর ব্যাখ্যায় আলেমরা বলেছেন, যারা দ্রুত তেলাওয়াত করে, অক্ষরগুলো স্পষ্টভাবে পড়ে না, উচ্চারণ সুন্দর করে না কোরআন তাদেরকে অভিশাপ দেয়।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চায় সে আল্লাহ ও তার রাসুলকে বেশি ভালোবাসুক এবং বেশি ভালোবাসা পাক, সে যেন কোরআন মাজিদ দেখে তেলাওয়াত করে।’ -বায়হাকি, শোয়াবুল ঈমান : ২২১৯

অন্য হাদিসে হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, ‘তোমরা কোরআন পাঠ কর। কেননা, কেয়ামতের দিন কোরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আগমন করবে।’ -সহিহ মুসলিম : ১৯১

সুতরাং আমাদের উচিত, রমজানে এবং রমজানের বাইরে, যখনই আমরা কোরআন তেলাওয়াত করব- এমনভাবে তেলাওয়াত করব, যে তেলাওয়াত আমাদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসুলের নৈকট্য লাভের মাধ্যম হবে। ভালোবাসা পাওয়ার উপায় হবে। মিজানের পাল্লা ভারী হওয়ার কারণ হবে। যে তেলাওয়াত আমাদের জন্য সুপারিশকারী হবে। আমাদের তেলাওয়াত করা ও তেলাওয়াত শোনা যেন কোনোভাবেই অভিশাপ না হয়, সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

   

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

সরকারি কাজে হিজাব পরা ছবির অনুমোদন দিল রাশিয়া, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাশিয়ার সরকার হিজাব সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা শিথিল করেছে। ফলে এখন থেকে বিদেশি নাগরিকরা রাশিয়ার নাগরিকত্ব আবেদন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাসপোর্ট ও বিভিন্ন সরকারি নথিতে হিজাব পরা ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় এই সংবাদ নিশ্চিত করেছে।

রাশিয়ার বার্তা সংস্থা আরটি জানিয়েছে, আগামী ৫ মে থেকে এই আইন কার্যকর হবে। এর দশ দিন আগে এই আইনের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে জানানো হয়, যেসব মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে অপরিচতদের সামনে মাথা খোলা রেখে আসতে পারেন না, তারা শুধুমাত্র মুখমন্ডলের ছবি দিলেই চলবে।

তবে রাশিয়ায় ইতোমধ্যেই স্থানীয় মুসলিম নারীরা ওয়ার্ক পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা অন্যান্য সরকারি নথিতে হিজাব পরিহিত ছবি ব্যবহার করতে পারেন।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বিইসুলতান খামাজেইভ বলেন, এই নতুন আইনের মাধ্যমে বিশ্বাসীরা তাদের ধর্মীয় অনুশাসন সহজেই মানতে পারবেন। সেই সঙ্গে মুখমন্ডলের ছবির মাধ্যমেই মনিটরিং সিস্টেমে তাদের তথ্য রাখতে পারবে সরকার।

ইউরোপের সব দেশের বিবেচনায় রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলমানের বসবাস। দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে ইহুদি, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি ইসলামকেও রাশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি রুশ নাগরিকের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। শুধু মস্কোতেই ১০ লাখ মুসলমানের বসবাস। বর্তমানে ‘ইসলাম’ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।

বিগত দুই দশক রাশিয়ায় নতুন করে প্রায় আট হাজার মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানী মস্কোতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে চারটি বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স। মস্কো ক্যাথিডাল মসজিদ তো এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এতে রয়েছে গ্রন্থাগার, হল রুম, মুসলিম মিউজিয়াম ও প্রদর্শনী গ্যালারি, যাতে ১০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। এখানে ঈদের নামাজে প্রায় তিন লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।

;

অবৈধ হজযাত্রী ঠেকাতে যে উদ্যোগ নিচ্ছে সৌদি আরব



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর হাতে নুসুক কার্ডের একটি কপি তুলে দিচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বৈধ ও অবৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈধ হজযাত্রীদের চিহ্নিত করতে এবারের হজ মৌসুমে প্রত্যেককে আলাদা করে একটি ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হবে। মূলত, অনুমোদন ছাড়া হজপালন নিরুৎসাহিত করতেই দেশটির এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে।

অত্যাধুনিক এ কার্ড ছাড়া হজের পবিত্র স্থানগুলোতে চলাফেরায় কঠোর নিয়ম করা হচ্ছে। মক্কার হজের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে প্রবেশকালে কার্ডটি বহন করা বাধ্যতামূলক। হজবিষয়ক জরুরি দুটি অ্যাপ ‘নুসুক’ ও ‘তাওয়াক্কালনা’-এর মধ্যে কার্ডটির ডিজিটাল ভার্সন পাওয়া যাবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি হজযাত্রীদের প্রথম দলটি সৌদি আরবে পৌঁছাবে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে। ঠিক তার আগেই অবৈধ বিদেশি হজযাত্রীদের রুখতে এই উদ্যোগ নিল দেশটি।

সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়া গত ৩০ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নুসুক’ কার্ড দেওয়ার প্রকল্প শুরু করেন। এ সময় তিনি ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকুত কালিল কওমাসকে ‘নুসুক’ কার্ডের একটি কপি তুলে দেন।

এ বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে দুই লাখ ৪১ হাজারের বেশি হজযাত্রী হজপালন করবেন। প্রতিবারের মতো এবারও দেশটির হজযাত্রীরা প্রথম হজ কাফেলা হিসেবে সৌদি আরবে প্রবেশ করবেন।

ডিজিটাল এই নুসুক কার্ডে সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীর প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকবে এবং হজের জন্য পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে চাইলে এই ডিজিটাল কার্ড অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে। এ ছাড়া হজের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনেও বিভিন্ন জায়গায় এই ডিজিটাল কার্ড দেখাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট দেশের হজযাত্রীদের জন্য ভিসা ইস্যুর পর কার্ডটি সংশ্লিষ্ট হজ অফিস বিদেশি হজযাত্রীদের কাছে হস্তান্তর করবেন এবং হজ পারমিট ইস্যুর পর স্থানীয় সৌদি হজযাত্রীরা দেশটির সংশ্লিষ্ট সরকারি কার্যালয় থেকে এই কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

এর আগে গত মাসে এক বিবৃতিতে হজ করার ক্ষেত্রে অনুমোদনকে বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করেছে সৌদি আরবের শীর্ষ আলেমদের একটি সংগঠন। ‘সিনিয়র কাউন্সিল অব উলামা’ নামে সংগঠনটি জানিয়েছে, যারা অনুমতি ছাড়া হজ করতে যাবেন তাদেরকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও যারা হজ করবেন তারা এরমাধ্যমে পাপ করবেন।

এ ছাড়া সৌদি সরকার দেশটির সব হজ পালনকারীদের জন্য ‘সেহাতি’ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কোভিড, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিসের টিকার রেকর্ড উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করেছে।

সরকারি আদেশে বলা হয়, ২০২৪ সালে এই সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনের অন্তত এক ডোজ ও গত ৫ বছরের মধ্যে মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিনের একটি ডোজের রেকর্ড উল্লেখ করতে বলেছে।

আসন্ন হজের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৬ জুনের (২৯ জিলকদ) মধ্যে উমরা যাত্রীদের সৌদি আরব ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষণা অনুসারে, দেশটি গত ১ মার্চ থেকে হজের ভিসা ইস্যু করা শুরু করে গত ২৯ এপ্রিল (২০ শাওয়াল) এ কার্যক্রম শেষ করেছে।

আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

অপরূপ প্রকৃতির মাঝে দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজ বনানী, পাহাড় আর চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এখানে। শ্রীমঙ্গলে অনেকেই দেখতে আসনে পাহাড়ের মাঝে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ।

শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে সামনে দিকে গেলেই দেখা মিলবে মসজিদটির। জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে প্রথমে খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর পর সুযোগ মিলবে তা পরিদর্শনের।

শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ, নেই কোনো কোলাহল। দূর থেকে দেখা যায়, সবুজের মাঝে সিঁড়ির লাল আর সাদা রঙের মিশ্রণ। শতাধিক সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে। চারদিকে সবুজ পাহাড়ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ। রয়েছে সারি সারি চা বাগান। গুনে গুনে ১৫০ সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে তবেই পৌঁছতে হবে মসজিদে।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামে পরিচিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)। ‘মসজিদটি নিয়ে মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে, এর স্থাপত্যশৈলী আর অবস্থান।

প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি। সমতল থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদটি। চারপাশে রয়েছে, নানা রকমের গাছগাছালি। আছে লেবু ও আনারস বাগান। সবুজের সমারোহ চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে মসজিদ ঘিরে। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর নাম না-জানা পাখিদের কিচিরমিচির এক অন্যরকম পরিবেশের তৈরি করেছে।

খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এই মসজিদটিতে প্রায় ৮০০ লোক একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনে এর চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। এর গঠনশৈলীও চমৎকার। তুর্কি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক ঝাড়বাতি, যা আনা হয় সুদূর চীন থেকে।

মসজিদের সামনের অংশ

দর্শনীয় এই মসজিদটি নির্মাণ করেন খাজা টিপু সুলতান। টিপু সুলতান ছিলেন খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)-এর সাহেবজাদা। এই খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) আবার ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরীর (রহ.) উত্তরসূরি।

মসজিদটির প্রাঙ্গণে আছে দুটি গেস্টহাউস এবং একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। এই চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহের ছয় দিন গরিব মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এখানে আছে একটা হেলিপ্যাড। গেস্টহাউসটি মূলত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য ব্যবহৃত হয়।

মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে কবরস্থানের জায়গা। শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকরা একবার হলেও এখানে এসে ঘুরে যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর ২৪ নভেম্বর এ মসজিদ ঘিরে আয়োজন করা হয় বার্ষিক ওরস মাহফিলের।

এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি দেখতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে আসতে হয় এখানে। সিলেট শহর থেকে কিংবা গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে সিএনজি বা ইজিবাইক রিজার্ভ করে যেতে পারেন। শহর থেকে যাওয়া-আসা ভাড়া প্রায় তিন থেকে চারশ টাকা। গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে গেলে ভাড়া কিছু কম পড়বে। অটোরিকশা দিয়েও যেতে পারেন। চারপাশের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌঁছতে পারবেন।

;