জাকাত ইসলামের অন্যতম ফরজ বিধান। এটি স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক এমন মুসলিম নারী-পুরুষ আদায় করবে, যার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর অতিবাহিত হবে।
নেসাব হলো- নিত্যদিনের প্রয়োজন পূরণ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাদ দেওয়ার পর সাড়ে ৫২ তোলা পরিমাণ (৬১২ দশমিক ৩৬ গ্রাম) রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা (৮৭ দশমিক ৪৮ গ্রাম) পরিমাণ স্বর্ণ থাকা অথবা এর সমমূল্যের ব্যবসার মালের মালিক হওয়া।
বিজ্ঞাপন
জাকাত প্রযোজ্য হয়- এমন প্রধান প্রধান সম্পদগুলো হলো- স্বর্ণ ও রূপা, গবাদিপশু ও সবধরনের বাণিজ্যিক পণ্য।
দেশী-বিদেশী মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব নির্ধারণে সোনা-রুপা হলো পরিমাপক। এ ক্ষেত্রে ফকির-মিসকিন ও দরিদ্রদের জন্য যেটি বেশি লাভজনক হবে, সেটিকে পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করা শরিয়তের নির্দেশ।
বিজ্ঞাপন
তাই মুদ্রা ও পণ্যের ক্ষেত্রে বর্তমানে রুপার (২২ ক্যারেট বারের মূল্য) নিসাব পরিমাপক হিসেবে গণ্য হবে। তাই যার কাছে ৫২ দশমিক ৫ তোলা (৬১২ দশমিক ১৫ গ্রাম) রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ, নগদ অর্থের সাথে স্বর্ণ, বন্ড, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, ব্যাংকে জমা করা যেকোনো ধরনের টাকা ফিক্সড ডিপোজিট হলে মূল জমা টাকা অথবা সমমূল্যের ব্যবসার পণ্য থাকলে জাকাত আদায় করতে হবে।
চলতি মাসের (মার্চ-২০২৪) শুরুতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) রেট অনুযায়ী ৫২ দশমিক ৫ তোলা ২২ ক্যারেট রুপার বারের দাম হলো- ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। (এখানে অলঙ্কার হিসেবে দাম ধরা হয়নি। কারণ, এক্ষেত্রে অলঙ্কার তৈরির মুজুরি অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু জাকাত ফরজ হয় স্রেফ রুপার ওপর। এজন্য রুপার বিস্কুটের দাম ধরা হয়েছে)।
আর এ বছর জাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে পূর্ণ ৭৫ হাজার টাকা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আলেমরা।
সুতরাং এই পরিমাণ সম্পদের ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে তার ৪০ ভাগের এক ভাগ (২ দশমিক ৫০ শতাংশ) জাকাত দিতে হবে। শতকরা আড়াই টাকা বা হাজারে ২৫ টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কাপড়চোপড় বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও জাকাত আদায় হবে।
জাকাত মূলত হিজরি বা চান্দ্রবছর হিসেবে দিতে হয় আর হিজরি বা চান্দ্রবছর ৩৫৪ দিনে হয়। জাকাত ৩৫৪ দিন= ২ দশমিক ৫ শতাংশ আর যদি সৌরবছর হিসাবে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে এই হিসাব- জাকাত ৩৬৫ দিন= ২ দশমিক ৬ শতাংশ দিতে হবে।
কেউ যদি হিজরি বা চান্দ্রবছর হিসাব করতে না পারে বা ইংরেজি বা সৌরবছর হিসাবে দিতে চায়, তাহলে ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ সতর্কতামূলক ২ দশমিক ৬ শতাংশ দিতে হবে।
কারণ সেক্ষেত্রে ১০-১২ দিন বেশি হয়ে যায়। আর ওই বেশি দিনগুলোর জাকাতের পরিমাণ হয় ০ দশমিক ০৭ শতাংশ ০ দশমিক ০৭৫ শতাংশ, সতর্কতামূলক ০ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি করা ভালো।
ধন-সম্পদ মহান আল্লাহর দান। তাই ধন-সম্পদ ও তার নিরাপত্তা রক্ষায় আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার বিকল্প নেই। ধন-সম্পদ বৃদ্ধি ও তার নিরাপত্তা রক্ষার অন্যতম পদ্ধতি হলো- দয়াময় আল্লাহর দেওয়া সম্পদ সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, আমার প্রতিপালকই তার বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন আর যার জন্য ইচ্ছা সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু (সৎকাজে) ব্যয় করো, তিনি তার বিনিময় দেবেন। তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ -সুরা সাবা : ৩৯
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যা কিছু ব্যয় করো, আল্লাহতায়ালা স্বীয় অদৃশ্য ভাণ্ডার থেকে তোমাদেরকে তার বিনিময় দিয়ে দেন। এই বিনিময় কখনো দুনিয়ায়, কখনো পরকালে এবং কখনো উভয় জাহানে দান করা হয়।
নিয়মিত দান-সদকা করার একটি উপকারিতা হলো- এর মাধ্যমে ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায়। সদকাকারীর নিরাপত্তার জন্য ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অন্যজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। -সহিহ বোখারি : ১৪৪২
এ ছাড়া নিয়মিত সদকাকারীর সম্পদ রক্ষায় আল্লাহর পক্ষ থেকে আসমানি সাহায্য আসে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে নবী কারিম (সা.) বলেন, একদিন এক লোক কোনো এক মরুপ্রান্তরে সফর করছিল। এমন সময় অকস্মাৎ মেঘের মধ্যে একটি আওয়াজ শুনতে পেল যে অমুকের বাগানে পানি দাও। সঙ্গে সঙ্গে ওই মেঘখণ্ডটি একদিকে সরে যেতে লাগল। এরপর এক প্রস্তরময় ভূমিতে বৃষ্টি বর্ষিত হলো।
ওই স্থানের নালাসমূহের একটি নালা ওই পানিতে সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ হয়ে গেল। তখন সেই লোকটি পানির অনুগমন করে চলল। চলার পথে সে এক লোককে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেল, যে কোদাল দিয়ে পানি বাগানের সব দিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এটা দেখে সে তাকে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার নাম কী? সে বলল, আমার নাম অমুক, যা সে মেঘখণ্ডের মাঝে শুনতে পেয়েছিল। তারপর বাগানের মালিক তাকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার নাম জানতে চাইলে কেন? উত্তরে সে বলল, যে মেঘের এই পানি, এর মাঝে আমি এই আওয়াজ শুনতে পেয়েছি, তোমার নাম নিয়ে বলছে যে অমুকের বাগানে পানি দাও। এরপর বলল, তুমি এই বাগানের ব্যাপারে কী করো? মালিক বলল, যেহেতু তুমি জিজ্ঞেস করছ তাই বলছি, প্রথমে আমি এই বাগানের উৎপন্ন ফসলের হিসাব করি। অতঃপর এর এক-তৃতীয়াংশ সদকা করি, এক-তৃতীয়াংশ আমি ও আমার পরিবার-পরিজনের জন্য রাখি এবং এক-তৃতীয়াংশ বাগানের উন্নয়নের কাজে খরচ করি। -সহিহ মুসলিম : ৭৩৬৩
সদকা যে শুধু দুনিয়ার বিপদ-আপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করে তা-ই নয়, পরকালেও সদকার সুফল ভোগ করা যায়। কেয়ামতের কঠিন দিন সদকাকারীরা তার কৃত সদকার ছায়ায় আশ্রয় পাবে বলে হাদিস শরিফে পাওয়া যায়। হজরত উকবা ইবনে আমির (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, হাশরের ময়দানে বিচারকালে প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজের দানের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে থাকবে। -আত তারগিব ওয়াত তারহিব : ১২৯৫
বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) দ্বি-বার্ষিক (২০২৫-২০২৭) নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কাকরাইল ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) মিলনায়তনে ভোটগ্রহণ করা হবে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) হাব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হাবের প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন।
নির্বাচনে কেন্দ্রীয় কমিটির ২৭টি পদ, ঢাকা আঞ্চলিক কমিটির ১৩টি, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সাতটি এবং সিলেট আঞ্চলিক কমিটির সাতটি পদে নেতা নির্বাচনে ভোট দেবেন এজেন্সি মালিকরা।
তফসিল মতে, ২ জানুয়ারি প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ, ১২ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, ১৫ থেকে ২০ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল, ২১ জানুয়ারি প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ, ৩০ জানুয়ারি বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ, ৫ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহার, ৬ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা প্রকাশ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফিরোজ আল মামুনকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের অপর দুই সদস্য হলেন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাম্মী ইসলাম ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মেহেদী হাসান।
আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুর্শেদা জামান চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের নির্বাচন আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের অপর দুই সদস্য হলেন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তানিয়া ইসলাম ও তরফদার সোহেল রহমান।
জানা যায়, হাবের নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে এজেন্সি মালিকরা প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এবার পূর্ণাঙ্গ দু’টি প্যানেলে এবং প্যানেলের বাইরে বেশ কয়েকজন নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। ভেতরে ভেতরে প্যানেল গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নানা উপলক্ষ করে নেতৃত্বে আসতে আগ্রহীরা এজেন্সির মালিকদের একত্রিত করে শক্তির জানান দিচ্ছেন।
‘বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সি ঐক্য পরিষদ’ নামে একটি প্যানেলের নেতৃত্ব দিতে পারেন সাবেক মহাসচিব লায়ন এম এ রশিদ শাহ সম্রাট। তার সঙ্গে রয়েছেন মো. আখতারুজ্জামান ও মোহাম্মদ আলীসহ অন্যরা।
এ ছাড়া হাবের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ সরদারের নেতৃত্বে আরেকটি প্যানেল হতে পারে। এ প্যানেলে সাবেক সহসভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান, সাবেক মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার, হাফেজ নুর মোহাম্মদ, জুনায়েদ গুলজার, জাহিদ আলম, শাহ আলম (চট্টগ্রাম), আবদুল মালেক (চট্টগ্রাম), জহিরুল ইসলাম শিরু (সিলেট) সহ বেশ কিছু পরিচিত এজেন্সির মালিক থাকতে পারেন।
গুঞ্জন রয়েছে তৃতীয় আরেকটি প্যানেলের। ওই প্যানেলের নেতৃত্বে থাকবেন সৈয়দ গোলাম সরওয়ার। তিনি হাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সহসভাপতি। তার সঙ্গে ইবরাহিম (ওয়ার্ল্ড লিংক), মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, হাবিবুল্লাহ মোহাম্মদ কুতুবুদ্দিন, কাবার পথের মুহাম্মদ মিজান, জামাল হোসাইন ও মো. আবু তাহের (চট্টগ্রাম)। তাদের সবাই বিগত সময়ে হাবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
সরকার পরিবর্তনের পর হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম ২২ আগস্ট পদত্যাগ করেন। পরে হাবের কার্যনির্বাহী পরিষদ পুনর্গঠনে ফারুক আহমদ সরদার সভাপতি ও ফরিদ আহমেদ মজুমদারকে মহাসচিব করা হয়। কিন্তু হাবের কার্যনির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করে ‘বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকবৃন্দ।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে এফবিসিসিআই প্রতিনিধি, জয়েন্ট স্টক কোম্পানির প্রতিনিধি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের মহাপরিচালকের প্যানেলে হাব কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও অভিযোগকারীদের উপস্থিতিতে শুনানি হয়। শুনানিতে হাব সন্তোষজনক জবাব ও কাগজপত্র উত্থাপনে ব্যর্থ হলে গত ১৫ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিল করে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ দাউদ উল ইসলামকে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।
১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করার জন্য তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পরে হাবের ভেঙে দেওয়া কমিটির নেতারা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন। শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রিটটি খারিজ করে দেয়। রিট খারিজ হওয়ার পর দাউদ উল ইসলাম হাব অফিসে গিয়ে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, হজযাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এবং রাজকীয় সৌদি সরকারের অনুমোদিত হজ এজেন্সিগুলোর মালিকদের সংস্থা হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। বর্তমানে হাবের সদস্য সংখ্যা এক হাজার ১১৭২ জন।
মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববির পরিচালনা কর্তৃপক্ষ রিয়াজুল জান্নাতে নারী ও পুরুষদের নামাজ আদায়ের সময় নির্ধারণ করেছে।
হারামাইন অ্যাফেয়ার্স ইনস্টিটিউটের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নারী হাজিরা ফজরের পর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত এবং এশার নামাজের পর থেকে রাত ২টা পর্যন্ত রিয়াজুল জান্নাতে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অবলম্বন করে নামাজ আদায়ের জন্য যেতে পারবেন।
আর পুরুষ হাজিরা রাত ২টা থেকে ফজরের নামাজ পর্যন্ত এবং সকাল সাড়ে ১১টা থেকে এশার নামাজ পর্যন্ত রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশ ও নামাজ আদায় করতে পারবেন।
হারামাইন প্রশাসন আরও জানিয়েছে, ‘নুসুক’ বা ‘তাওয়াক্কালানা’ অ্যাপে নিবন্ধন করে রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি নিতে হবে।
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রুম থেকে নিয়ে মসজিদে নববির মিম্বর পর্যন্ত যে জায়গাটুকু রয়েছে, তাকে রিয়াজুল জান্নাত বলা হয়। এ জায়গাটুকুর আয়তন ৩৩০ বর্গমিটার (দৈর্ঘে ২২ মিটার, প্রস্থে ১৫ মিটার)। এখানে ঘণ্টায় ৮০০ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। এক দর্শনার্থী গড়ে দশ মিনিট সময় পান।
রিয়াজুল জান্নাতে হজযাত্রীদের প্রবেশের সুবিধার্থে প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রথমে নুসুক ও তাওক্কালনা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিত করতে হয়। নিবন্ধনের সময় দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ে মসজিদে নববিরে গেটে উপস্থিত হলে কর্তৃপক্ষ ই-ডিভাইস থেকে কিউআর কোড স্ক্যান করে সনাক্ত শেষে জিয়ারতকারীদের কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়।
নিবন্ধন ছাড়া রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশ করা যায় না। অতিরিক্ত ভিড় কমাতে এবং অনিয়ম বন্ধ করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইতিহাস, ঐতিহ্য, সুফিবাদ এবং রহস্যময়তার পীঠস্থান হলো ভারতের রাজস্থানের খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর দরগাহ। ধর্ম, সম্প্রদায় ও ভৌগলিক সীমানার চৌকাঠ পেরিয়ে বিশ্বের দরবারে এটি এমন এক স্থান অর্জন করেছে, যা পরিদর্শন করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে যায়।
শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মাবলম্বী নন, হিন্দুরা দর্শনার্থীও আজমীরের দরগাহে উপস্থিত হয়। সেখানে নারীরাও প্রবেশ করতে পারে। বহু হিন্দু নারীই এই দরগাহে যায় মানত পূরণ করতে।
বর্তমান সময়ে খবরের শিরোনাম আজমীরের দরগাহ, তবে সেটা ভিন্ন কারণে। শিব মন্দিরের ওপরে এই দরগাহ বানানো হয়েছিল বলে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন হিন্দু সেনা নামে এক সংগঠনের সভাপতি ভিষ্ণু গুপ্তা।
তার দাবির স্বপক্ষে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক হরবিলাস সারদারের বইয়ের তথ্যসহ তিনটি কারণ উল্লেখ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি এবং সেখানে হিন্দুদের পূজা করার অনুমতির জন্যও আবেদন জানিয়েছেন। ভিষ্ণু গুপ্তার দাবি, মন্দিরের অস্তিত্বের ঐতিহাসিক প্রমাণ রয়েছে।
অন্যদিকে, আজমীর দরগাহের প্রধান উত্তরাধিকারী এবং খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর বংশধর সৈয়দ নাসিরুদ্দিন চিশতী ওই দাবিকে ‘সস্তা প্রচার পাওয়ার জন্য স্টান্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
আগামী ২০ ডিসেম্বর আজমীরের খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর দরগাহ-সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে। অন্যদিকে, জানুয়ারি মাসের ৮ তারিখ খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর উরস। উরস উপলক্ষে প্রতিবছর দুই সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানে শামিল হন কয়েক লাখ মানুষ। বেশ আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই দরগাহকে ঘিরে যে দাবি ও পাল্টা দাবির ঝড় উঠেছে তাকে কেন্দ্র করে আজমীরের পরিস্থিতি অন্যবারের তুলনায় বেশ আলাদা।
আজমিরের খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর দরগাহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত দরগাহগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে শুরু করে সুদূর যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে মানুষ এই দরগাহ পরিদর্শনে আসে। দেশ-বিদেশের বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এবং রাজনীতিবিদরা এখানে চাদর দেন।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ রাজস্থানের এই দরগাহ যার নামে তৈরি, তিনি হলেন রহস্যবাদী দার্শনিক ও সুফি সাধক খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ‘গরিবে নেওয়াজ’ নামে পরিচিত।
বলা হয়, মোহময়ী সাধক ছিলেন মুঈনুদ্দীন চিশতী। উন্নত ও অতুলনীয় জীবনাদর্শ বিখ্যাত করে তুলেছিল তাকে। খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী মনে করতেন, মানুষ শান্ত থেকেও কারও অত্যাচারকে প্রতিহত করতে পারে। কথিত আছে, বহুদিনই তিনি নিজে একটা রুটি খেতেন কিন্তু ক্ষুধার্তদের জন্য সবসময় লঙ্গর প্রস্তুত থাকত। অসহায় এবং ক্ষুধার্ত দরিদ্রদের প্রতি তার আতিথেয়তার কথা কারোরই অজানা ছিল না।
ঐতিহাসিক রানা সাফভি লিখেছেন, ‘খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর বক্তৃতা রাজা ও কৃষক উভয়কেই আকৃষ্ট করেছিল। আজমিরের নাম শুনলেই খাজা গরিব নেওয়াজ ও তার দরগাহের ছবি মনে ভেসে ওঠে। এই সাধক সমুদ্রের মতো উদার এবং তার অতিথিপরায়ণতা ছিল বিশ্বের মতো ব্যাপক।’
খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর মৃত্যুর পর তার সমাধিতে এই দরগাহের নির্মিত হয় যা ত্রয়োদশ শতাব্দীতে দিল্লির সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। মান্ডুর সুলতান মাহমুদ খিলজি ও তার পরে গিয়াসউদ্দিন সেখানে সমাধিসৌধ এবং সুন্দর একটা গম্বুজ নির্মাণ করেন। মুহাম্মদ বিন তুঘলক সম্ভবত প্রথম সম্রাট ছিলেন, যিনি ১৩২৫ সালে এই দরগাহ পরিদর্শন করেন।
আর তুঘলক শাসক জাফর খান দরগাহ পরিদর্শন করেছিলেন ১৩৯৫ খ্রিষ্টাব্দে। সফরকালে সময় দরগাহের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বহু উপহার দিয়েছিলেন তিনি।
মান্ডুর খিলজি ১৪৫৫ সালে আজমিরের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন। ওই সময় এই দরগাহ তার ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। তার শাসনকালে দরগাহের প্রাঙ্গণে বিশাল ফটক, বুলন্দ দরওয়াজা এবং মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এর আগে পর্যন্ত তেমন মজবুত কোনো নির্মাণ ছিল না সেখানে।
ঐতিহাসিকদের মতে, আদি দরগাহ ছিল কাঠের তৈরি। পরে এর ওপর একটা পাথরের ছাউনি নির্মাণ করা হয়।
ইতিহাসবিদ রানা সাফাভির মতে, ‘দরগাহ পরিসরে নির্মাণের প্রথম মজবুত প্রমাণ হলো- তার গম্বুজ, যা ১৫৩২ সালে অলঙ্কৃত করা হয়েছিল। এটা সমাধির উত্তর দেয়ালে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটা শিলালিপি থেকে স্পষ্ট। এই সেই সুন্দর গম্বুজ যা আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি। ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গম্বুজকে পদ্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে এবং রামপুরের নবাব হায়দার আলী খানের দেওয়া একটা সোনার মুকুট এর ওপরে স্থাপন করা হয়েছে।’
ঐতিহাসিক আবুল ফজল লিখেছেন, ‘আকবর প্রথম মোগল শাসক যিনি ১৫৬২ সালে প্রথমবার দরগাহ পরিদর্শন করেছিলেন। দরগাহের সঙ্গে যুক্ত লোকদের উপহার ও অনুদান দিয়েছিলেন।
তার মতে, ১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে আকবর তার প্রথমবারের মানত পূরণের জন্য পায়ে হেঁটে দরগাহে এসেছিলেন। তখন আকবর দেখেছিলেন যে, হাজার হাজার দরিদ্র ও তীর্থযাত্রীদের জন্য লঙ্গরের আয়োজন করা হয়েছিল। তাই তিনি আজমীর, চিতোর এবং রণথম্ভোরের ১৮টা গ্রাম দিয়ে দেন।
আকবর ১৫৬৯ সালে আজমিরে একটা মসজিদ ও খানকা নির্মাণের নির্দেশ দেন। সেই আদেশ অনুযায়ী তৈরি হয় লাল বেলেপাথরের আকবরী মসজিদ। শাহজাহান ১৬৩৭ সালে একটা সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন যা দরগাহের পশ্চিমে শাহজাহানী দরওয়াজার সঙ্গে অবস্থিত।
আজমিরের এই দরগাহ পরিদর্শনে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা আসে এবং এই পরম্পরা শত শত বছর ধরেই চলে আসছে। বার্ষিক উরস উৎসবের সময় লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হয় এবং এই রীতি এখনো চলে আসছে। এখানে নারীদের অবাধ প্রবেশ রয়েছে। হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী নারীরাও এই দরগাহ দর্শনের জন্য আসে, কেউ বা নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্য মানত করে।
প্রায় ৮০০ বছরের ইতিহাসে দিল্লির সুলতান, মোগল সম্রাট, রাজপুত, মারাঠা, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং স্বাধীন ভারতের বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী থেকেছে খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর দরগাহ। তবে এর আগে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে কেউ আদালতের দ্বারস্থ হননি যেমনটা এখন হয়েছে।
তবে আজমীর শরীফের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা আঞ্জুমান কমিটি বিষ্ণু গুপ্তার দাবি খারিজ করে দিয়েছে। আঞ্জুমান কমিটির সেক্রেটারি সৈয়দ সরওয়ার চিশতী বলেন, ‘আমরা বংশানুক্রমিক খাদেম, যারা গত ৮০০ বছর ধরে দরগাহের সঙ্গে সম্পর্কিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য কাজ করছি। কিন্তু এক্ষেত্রে (মামলায়) আমাদের কোনো পক্ষই করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আঞ্জুমান কমিটি খাদেমদের প্রতিনিধিত্ব করে, আর দরগাহ কমিটি শুধু তদারকির কাজ করে। এটা ষড়যন্ত্র, যা আমরা হতে দেবো না। আমরা আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছি। আমরা আদালতে যাব।