যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয়ে যায়

  • মুফতি মো. আবদুল্লাহ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রোজার মাসয়ালা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

রোজার মাসয়ালা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র মাহে রমজানের ফরজ রোজা আদায় করছেন। কিন্তু কি কারণে রোজার পবিত্রতা নষ্ট হয়, কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কি কারণে ভঙ্গ হয় না, তা অনেকের কাছে অজানা। আজকে এ জাতীয় মাসয়ালা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

রোজা নষ্ট হওয়ার কারণসমূহ
১. কানে ও নাকে ঔষধ ঢেলে দেওয়া।
২. ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করা।
৩. কুলি করার সময় গলার ভেতরে পানি চলে যাওয়া।
৪. কোনো নারীর সঙ্গে আলিঙ্গন বা মাখামাখিতে বীর্যপাত হয়ে যাওয়া।
৫. এমন কোনো বস্তু গিলে ফেলা যা সাধারণত খাওয়া হয় না। যেমন কাঠ, লোহা, কাঁচা গম ইত্যাদি।
৬. লোবান বা উদ কাষ্ঠ ইত্যাদির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাক দিয়ে বা কণ্ঠনালীর ভেতরে টেনে নেওয়া; বিড়ি, সিগারেট ও হোক্কা পান করারও একই বিধান।
৭. ভুলে পানাহার করার পর এমনটি ধারণা করে যে, আমার রোজা নষ্ট হয়ে গেছে; অতপর পানাহার করা।
৮. রাত বাকী আছে মনে করে সুবহে সাদেকের পর পানাহার করা।
৯. সূর্য ডুবে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করা। উল্লেখ্য, এসব ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যায় এবং শুধু রোজা কাজা করতে হয়; কাফফারা আবশ্যক হয় না।
১০. ভুলে নয়, জেনে-বুঝে সুস্থ-সবল অবস্থায়, কোনো ওজর-সমস্যা ব্যতীত দিনের বেলায় পানাহার করলে অথবা স্ত্রী-সঙ্গম করলে, সেই রোজার কাজাও করতে হয় এবং কাফফারাও প্রদান করতে হয়। ‘কাফফারা’ হলো, একটি ক্রীতদাস মুক্তকরণ; অথবা একাধারে ৬০টি রোজা পালন করা। আর যদি রোজা রাখার শক্তি না থাকে, সেক্ষেত্রে ৬০জন মিসকিনকে দু’বেলা পেটপুরে খাবার খাওয়াতে হবে। এ যুগে যেহেতু শরিয়তসম্মত ক্রীতদাস বাস্তবে নেই, সে কারণে কাফফারার ক্ষেত্রে শেষোক্ত দু’টির যেকোনো একটি পালন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

যেসব কারণে রোজা মাকরূহ হয়
১. রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় অপ্রয়োজনে কোনো বস্তু চিবানো অথবা লবণ ইত্যাদি জিহবায় দিয়ে থু থু ফেলে দেওয়া; টুথপেস্ট বা মাজন বা কয়লা দ্বারা দাঁত মাজা বা পরিস্কার করা।
২. সারাদিন গোসল ফরজ অবস্থায় অপবিত্র কাটিয়ে দেওয়া।
৩. একান্ত প্রয়োজন ছাড়া শিঙ্গা লাগানো এবং দূর্বল হয়ে পড়ার ভয় থাকলে নিজ শরীর থেকে অন্যের জন্য রক্তদান করা মাকরূহ; কিন্তু তাতে রোজা নষ্ট হয় না।
৪. রোজা অবস্থায় গীবত করা তথা কারও অবর্তমানে তার দোষ বর্ণনা করা রোজার ক্ষেত্রে মাকরূহ বটে; কিন্তু এ গীবত কর্মটি অন্যতম একটি হারাম কাজ ও কবিরা গোনাহ বটে। মাহে রমজানে এর পাপ আরও অনেক গুণ বেড়ে যায়।
৫. রোজা অবস্থায় ঝগড়া-বিবাদ, গালি-গালাজ করা; হোক তা কোনো মানুষের সঙ্গে বা কোনো জীবজন্তুকে বা কোনো প্রাণহীন জড় বস্তুকে; এসব কারণেও রোজা মাকরূহ হয়ে যায়।

যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয় না, মাকরূহও হয় না
১. মিসওয়া করা।
২. মাথায় বা মোচ-দাড়িতে তেল ব্যবহার করা।
৩. চোখে ঔষধ বা সুরমা দেওয়া।
৪. আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৫. গরম ও পিপাসার কারণে গোসল করা।
৬. যেকোনো রকম ইনজেকশন বা টিকা দেওয়া।
৭. ভুলবশত পানাহার করা।
৮. অনিচ্ছাবশত গলায় ধোঁয়া বা ধুলোবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করা।
৯. কানে পানি দেওয়া (২/১ ফোটা) অথবা অনিচ্ছাকৃত প্রবেশ করা।
১০. অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়া।
১১. শোয়া অবস্থায় স্বপ্নদোষ হয়ে যাওয়া।
১২. দাঁত হতে রক্ত বের হওয়া এবং তা গলা অতিক্রম না করা।
১৩. ঘুমের মধ্যে বা সহবাসের কারণে রাতে গোসল ফরজ হয়েছিল, অথচ সুবহে সাদেকের পূর্বে গোসল করা হয়নি; আর এমতাবস্থায় রোজার নিয়ত করে নেওয়া হয়েছে; তাতেও রোজার কোনো ক্ষতি নেই।

বিজ্ঞাপন

লেখক : মুফতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, গবেষণা বিভাগ।