আজান ও ইকামতের মাঝের সময়ে দোয়া কবুল হয়
কুয়ালালামপুরের স্থানীয় এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত ছিল, তাদের বাসায় যাওয়ার পর এক রুমে একটা আশ্চর্য জিনিস দেখি, তাহলো- রুমের দেয়ালের সঙ্গে বড় আকারে নামাজের জামাতের টাইমটেবিল টানানো।
আমি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, নামাজের সময়সূচি তো মসজিদে থাকে; তোমার বাসায় কেন?
আমার বন্ধু উত্তরে বলল, এটা দেখে আমি আর আমার আম্মা দোয়া করি! কারণ হাদিসে আছে, আজান ও ইকামতের মাঝখানে দোয়া করলে তা ফেরত দেওয়া হয় না! বাবা মসজিদ থেকে জামাতের সময় দেখে এখানে বদলে দেয়, আর আজান দিলেই আমি আর আম্মা দোয়া করতে বসে যাই। এতদিন যত দোয়া এই সময়ের মধ্যে করেছি, তার অধিকাংশই কবুল হয়েছে।
এটা শুনে আমি খুব অনুপ্রাণিত হলাম এবং একটি নামাজের সময়সূচি সংগ্রহ করলাম। আমার ভার্সিটির ক্যাম্পাসের দক্ষিণপাশে বড় এক মসজিদ আছে, সেখান থেকে জেনে নেই, সাধারণ নিয়মে আজানের ১৫ মিনিট পরে এখানে জামাত শুরু হয়। এর পর থেকে এই ১৫ মিনিট সময় আমি দোয়া করতে থাকতাম।
আজান ও ইকামতের মাঝখানে একাগ্রচিত্তে আপনিও দোয়া করে দেখতে পারেন, ইনশাআল্লাহ- দোয়া কবুল হবে।
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আজান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৫২১
অনেক বোনের জিজ্ঞাসা, ইকামত কী? আমরা কীভাবে বুঝব কখন ইকামত হচ্ছে?
সাধারণত মসজিদে আজান হওয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর জামাতে নামাজ শুরু হয়। জামাতে নামাজ শুরুর পূর্ব মুহূর্তে আজানের বাক্যগুলো দিয়ে মসজিদে আবার আজান দেওয়া হয়, যাতে সবাই জামাতে এসে শামিল হয়। এটাকেই ইকামত বলে। এটি আজানের মতো দীর্ঘ ও উচ্চ আওয়াজে (মাইকে) বলা হয় না, বরং একটু দ্রুত বলা হয়। ইকামত শেষ হওয়া মাত্রই জামাতের সঙ্গে নামাজ শুরু হয়ে যায়।
আজানের কতক্ষণ পর ইকামত শুরু হয়?
১. সাধারণত ফজরের আজানের ৩০ মিনিট পর ইকামতের মাধ্যমে জামাত শুরু হয়।
২. দেশের অধিকাংশ মসজিদে জোহরের আজান ১টায় হয় এবং দেড়টায় ইকামতের মাধ্যমে জামাত শুরু হয়। অনেক স্থানে আবার সোয়া একটায়ও জামাত শুরু হয়।
৩. আসরের আজানের ১৫ মিনিট পর ইকামতের মাধ্যমে জামাত শুরু হয়।
৪. মাগরিবের আজানের ২ থেকে ৫ মিনিট পর জামাত শুরু হয়।
৫. এশার আজানের ১৫ মিনিট পর জামাত শুরু হয়।
এ হিসেবে সাধারণভাবে আজান থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে দোয়া করতে পারেন। কারণ ১৫ মিনিট আগে কোথাও ইকামত শুরু হয় না, মাগরিব বাদে। এ সময় বেশি বেশি দোয়া করুন।
দোয়ার শুরুতে দয়াময় আল্লাহর প্রশংসা করবেন। সেটা হতে পারে সুরা ফাতেহার প্রথম আয়াত বা আয়াতুল কুরসির প্রথম লাইন কিংবা পুরোটা। এরপর দরুদে ইবরাহিম (যেটা নামাজের শেষ বৈঠকে পড়ি) পড়বেন। এর পর নিজের মতো করে, মন খুলে করে দোয়া করবেন। দোয়ার মাঝে একটু পর পর-ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু এবং দোয়া ইউনুস পড়বেন (লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন)।
দোয়া শেষ করবেন আল্লাহর প্রশংসা, এর পর দরুদ এবং আমিন বা ইয়াজাল জালালি ওয়াল ইকরাম বলে দোয়া শেষ করবেন। কিংবা আল্লাহর কোনো গুণবাচক নাম দিয়ে।
অজু অবস্থায় দোয়া করবেন। অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করবেন। এটাই উত্তম পদ্ধতি। মহান রব সবার নেক দোয়াসমূহ কবুল করুন। আমিন।