অধিক ফজিলতময় শেষ দশক শুরু
বাংলাদেশে রোববার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যার পর শুরু হবে রমজানের শেষ ভাগ- নাজাতের দশক। সেই সঙ্গে শেষভাগের প্রথম বেজোড় রাত শুরু হবে। ২১ থেকে ৩০ রমজানের রাত পর্যন্ত শবেকদর অন্বেষণ ও ইতিকাফের আমল শুরু হবে।
অনেকেই ভাবেন, সাতাশের রাতই হচ্ছে- পবিত্র শবেকদর। এই ধারণা ঠিক নয়। সহিহ হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কদর কোন রাত, তা জানানো হয়েছিল। তিনি তা সাহাবিদের জানানোর জন্য আসছিলেন, কিন্তু ঘটনাক্রমে সেখানে দুই ব্যক্তি ঝগড়া করছিল। তাদের ওই ঝগড়ার কারণে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট থেকে ওই রাতবিষয়ক জ্ঞান উঠিয়ে নেওয়া হয়। এ কথাগুলো সাহাবিদের জানানোর পর নবী কারিম (সা.) বললেন, হতে পারে- এতেই তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। এখন তোমরা এ রাত (অর্থাৎ তার বরকত ও ফজিলত) রমজানের শেষ দশকে অন্বেষণ করো। -সহিহ বোখারি : ২০২০
অন্য হাদিসে বিশেষভাবে বেজোড় রাতগুলোতে শবেকদর তালাশ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। -সহিহ মুসলিম : ১১৬৫
তাই সাতাশের রাতকে সুনির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল কদর বলা উচিত নয়। খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে, এ রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার অধিক সম্ভবনা রয়েছে।
রমজানের শেষ দশকের ফজিলত সবচেয়ে বেশি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। -সহিহ মুসলিম : ১১৭১
অন্য হাদিসে বিশেষভাবে বেজোড় রাতগুলোতে তালাশ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। -মুসনাদে আহমাদ
প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, আজকাল আমাদের সমাজে এক আশ্চর্য অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সেটা হলো, রমজানের শুরুতে মানুষ ব্যাপক আগ্রহ-উদ্দীপনার সঙ্গে দলে দলে মসজিদে আসে। এটা অত্যন্ত ভালো দিক। কিন্তু যতই দিন যেতে থাকে মুসল্লির সংখ্যা ততই হ্রাস পেতে থাকে। এমনকি শেষ দশকে মুসল্লি সংখ্যা প্রায় অন্যান্য মাসের মতোই হয়ে যায়। এটা খুব আফসোসের বিষয়।
রমজানের প্রথম দিকে যে আগ্রহ-উদ্দীপনা ছিল, শেষ দিকে তা আরও বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। কেননা রমজানের শেষ দশকের ফজিলতই সবচেয়ে বেশি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অভ্যাস এই ছিল যে, শেষ দশকে তিনি পুরো রাত জাগতেন, পরিবারের লোকদেরকে জাগিয়ে দিতেন এবং ইবাদতের জন্য কোমর বেঁধে নিতেন। -সহিহ মুসলিম
রমজানের প্রথম দিকে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার যে উৎসাহ-উদ্দীপনা, তা অত্যন্ত মোবারক বিষয়, এটা মোটেই নিন্দার বিষয় নয়, নিন্দার বিষয় হলো- ধীরে ধীরে তা হ্রাস পেতে থাকা।
আরেকটি বিষয় হলো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা শুধু রমজান মাসের ফরজ নয়, সব সময়ের ফরজ। তদ্রুপ জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার বিধানও রমজানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা সারা বছরের বিধান। আল্লাহতায়ালা সবাইকে রমজানের পুরো ফজিলত লাভের তওফিক দান দরুন। আমিন।