মক্কায় বাংলাদেশি হজযাত্রীর ওপেন হার্ট সার্জারি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মক্কার কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটি, ছবি: সংগৃহীত

মক্কার কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মক্কার কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটির বিশেষজ্ঞরা ওপেন হার্ট সার্জারি করে এক বাংলাদেশি হজযাত্রীর জীবন রক্ষা করেছেন।

সুবাক ওয়েবসাইটের খবরে বলা হয়েছে, ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশি হজযাত্রী হোটেলে অবস্থানকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন।

হোটেল কর্তৃপক্ষ রেড ক্রিসেন্টকে খবর দিলে বাংলাদেশি ওই হজযাত্রীকে দ্রুত আল নূর হাসপাতালের জরুরি ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়- তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা তাকে তাৎক্ষণিক অপারেশনের জন্য কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটিতে নিয়ে যান, যেখানে আরও উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, তার হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী তিনটি শিরা বন্ধ হয়ে গেছে। পরে কিং আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটির বিশেষজ্ঞরা তার ওপেন হার্ট সার্জারি করেন। অপারেশনের পর তাকে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।

উল্লেখ্য যে, হজের সময় হজযাত্রী সব ধরনের চিকিৎসা সৌদি সরকার বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। চলতি হজে হাজিদের চিকিৎসায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি আরব।

দেশটি জানিয়েছে, চলতি বছর হজের মৌসুমে হাজিদের চিকিৎসায় ড্রোন ব্যবহার করা হবে। গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হজের মৌসুমে চিকিৎসার জন্য ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূলত হাজিদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কাজে এ ড্রোন ব্যবহার করা হবে। ড্রোনগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করা হবে। এগুলোর মাধ্যমে মিনা ও আরাফাতের ময়দানের আশপাশের হাসপাতালে রক্ত ও ল্যাবের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। চলতি বছরের আসন্ন বার্ষিক হজের মৌসুমে এগুলোকে ব্যবহার করা হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের এমন পদক্ষেপের ফলে রক্ত ল্যাবে পৌঁছাতে মাত্র দুই মিনিটের মতো সময় লাগছে। যেখানে স্বাভাবিক ব্যবস্থায় এ জন্য অন্তত আড়াই ঘণ্টা ব্যয় করতে হতো।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজ উপলক্ষে মক্কা অঞ্চলে ১৬টি হাসপাতাল, ১২৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা দেওয়া হবে। এর বাইরে মক্কা ও মাশায়েরে হারাম এলাকায় ৫টি অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা হবে। এ ছাড়া আজইয়াদ ইমারজেন্সি হাসপাতাল, আল হারাম হাসপাতাল, মসজিদে হারামের ৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ মিসফালা রোডে দুটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাজিদের সেবার নিয়োজিত থাকবে। প্রস্তুত থাকবে ৮০টি ছোট অ্যাম্বুলেন্স, ৭৫টি বড় অ্যাম্বুলেন্স, ৩৩টি সহায়ক অ্যাম্বুলেন্স দল মসজিদে নামিরা ও জাবালে রহমত, মিনার তাঁবু, মুজদালিফা ও জামারাত এলাকায়।

উল্লেখ্য, চলতি বছর হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪২ হাজার ২০০ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। শনিবার (২৫ মে) দুপুর ১২টায় হজ পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

এদিকে, সৌদি আরবে হজপালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই পুরুষ। এর মধ্যে মক্কায় তিন জন এবং মদিনায় দুই জন।

   

ঢাকার বুকে কাবার আদলে মসজিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদ আল মোস্তফা, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদ আল মোস্তফা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর। এই শহরের অলি-গলিতে রয়েছে নতুন-পুরাতন অসংখ্য মসজিদ। কিন্তু রাজধানীর ভাটারা এলাকায় অবস্থিত মসজিদ আল মোস্তফা যেন সবার থেকে আলাদা।

অনিন্দ্যসুন্দর এই মসজিদের অবস্থান রাজধানীর মাদানি এভিনিউ সড়কে। ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির প্রবেশমুখে মসজিদটির অবস্থান। মসজিদের একদিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, অপরদিকে ইউনাইটেড প্রকল্প।

পবিত্র কাবার আদলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। দেখলে মনে হবে মসজিদটির নির্মাণ কাঠামোতে কাবা শরিফের ছোঁয়া লেগে আছে। চোখধাঁধানো এই মসজিদের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো, সামনের দিকে কালো রংয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পবিত্র কাবার আকৃতি। দেয়ালে সোনালী রং দিয়ে লেখা হয়েছে আল্লাহর নাম এবং তার প্রিয় বান্দা শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম। এর সৌন্দর্য দূর থেকেই অবলোকন করা যায়।

রাতের দৃশ্য, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদের ভেতরে মিম্বরের দেয়ালের ডিজাইনও একই। ওপরের দিকে বড় করে সোনালী রং দিয়ে লেখা হয়েছে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)।

ইউনাইটেড গ্রুপের আইকনিক এই প্রজেক্ট মসজিদ আল মোস্তফায় বেশ কিছু ভিন্নতা রয়েছে। নামাজের কাতারে বেশ কয়েকটি বেঞ্চ রাখা হয়েছে। যা অন্যকোনো মসজিদে দেখা যায় না। কেউ ক্লান্ত হলে বসতে পারেন। আবার কেউ হেলানও দিতে পারেন।

মসজিদটি রাজধানীর ১০০ ফিটে মাদানি এভিনিউয়ে ইউনাইটেড সিটিতে অবস্থিত। পাঁচতলা বিশিষ্ট এই মসজিদে আলাদা কোনো জানালা নেই। এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যা প্রাকৃতিক আলোয় ভরপুর। দেশের অন্যকোনো মসজিদের প্রতিটি ফ্লোর থেকে ইমাম-খতিবকে দেখা যায় না। কিন্তু মসজিদ আল মোস্তফার প্রতিটি ফ্লোর থেকেই ইমাম-খতিবকে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা নামাজের জায়গা। পুরুষ-নারী মিলিয়ে একসঙ্গে প্রায় ১১ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন।

নান্দনিক ডিজাইনের কারণে এটি এখন শুধুমাত্র মসজিদ নয়, পরিণত হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রে। দেশের বিভিন্ন এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন দেখতে আসেন এই মসজিদের অপরুপ সৌন্দর্য। মসজিদের চারপাশে চারটি খেজুর গাছ লাগানো হয়েছে। যার কোনোটিতে খেজুরও দেখা যায়। রয়েছে চোখজুড়ানো পানির ফোয়ারা। দর্শনার্থীরা বিমোহিত হয় এর গঠন কাঠামো আর চারপাশের সবুজেঘেরা প্রকৃতির ছোঁয়ায়।

মসজিদের ভেতরের দৃশ্য, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদ আল মোস্তফায় রয়েছে দুটি চলন্ত সিড়ি। লাগানো হয়েছে চমৎকার ঝাড় বাতি। যা এখনও চালু হয়নি। চীন থেকে আনা হয়েছে মেঝেতে বিছানোর কার্পেট। লাগানো হয়েছে উন্নত মানের সাউন্ড সিস্টেম। সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনের মাধ্যমে শীতল রাখা হয় মসজিদ। আকর্ষণীয় করে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের অজুখানা। যেখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি বেসিন। যারা গাড়ি নিয়ে নামাজে আসেন তাদের জন্য রয়েছে স্বস্তি। কারণ মসজিদের নিচে বিশাল পার্কিংয়ে ১০৫টি গাড়ি রাখা যায়। জনশ্রুতি রয়েছে, মসজিদ আল মোস্তফার নির্মাণ খরচ তিনশ’ কোটি টাকার বেশি।

সুউচ্চ বিশেষ ধরনের একটি গম্বুজ রয়েছে। যার রং সোনালী। গম্বুজ ও পাশে থাকা বিশাল উচ্চতার মিনারের কাজ এখনও শেষ হয়নি। গম্বুজ ও মিনারটি মসজিদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাতে যখন মসজিদের সব বাতি জ্বলে ওঠে, তখন তৈরি হয় বিমুগ্ধ এক অপার্থিব পরিবেশ। যে পরিবেশ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সৎ পথে চলতে, সততা আর বিবেক দিয়ে নতুন জীবন গড়তে।

মসজিদটি দেখতে হলে প্রথমে আসতে হবে রাজধানীর ভাটারা থানার সামনে। তারপর অটোরিক্সায় যেতে হবে একশফিট ইউনাইটড ইউনিভার্সিটির সামনে।

;

হাজিদের সেবায় বিশাল বহর, প্রয়োজনে খোঁজ মেলে না কারও



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
কংকর মারার স্থানে যাওয়ার সময় হাজিরা বেশি পথ হারান, ছবি: সংগৃহীত

কংকর মারার স্থানে যাওয়ার সময় হাজিরা বেশি পথ হারান, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এক সিনিয়র সাংবাদিক পবিত্র হজ পালন শেষে এখন মদিনায় অবস্থান করছেন। সোমবার (২৪ জুন) তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শরীর ব্যাথা ও ১০৩ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে গেলাম মদিনায় হজ মিশনে। পুরো বর্ণনা শোনার মতো সময় মনে হচ্ছে তাদের নেই। চিকিৎসক এজিথ্রোমাইসিন আর প্যারাসিটামল দিলেন। এক‌ই এন্টিবায়োটিক তারা হাতের ফোস্কার জন্য‌ও দিয়েছে এক রোগীকে। সবরোগের মহৌষধ এক এন্টি বায়োটিক! হজ মিশনের এই দূরবস্থা কবে কাটবে?’

ওই স্ট্যাটাসের নিচে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘মাকে নিয়ে গিয়েছিলাম অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু তারা একটুও কেয়ার করেনি; ওষুধও দেয়নি-নিদারুণ অবহেলা করেছে। তাদের কাজ নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘২০০০ সালে প্রথমবার যখন যাই, তখনও মিশনে কর্মকাণ্ড প্রত‍্যক্ষ করতে গিয়ে হতাশ হই।’

মদিনায় বাংলাদেশের হজ মিশন নিয়ে এমন অভিযোগ নতুন কিছু নয়, মক্কা হজ মিশন নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বিশেষ করে এবার হজের পাঁচ দিন মিনা-আরাফাত ও মুজদালিফায় হজ মিশনের লোকদের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। অথচ বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করার লক্ষে চলতি বছর ৪৫৩ জন ব্যক্তি সরকারি খরচে হজে গেছেন। এ জন্য সরকারের ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সময়ে এই বিশাল বহরের কারও দেখা মেলেনি বলে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপকালে অভিযোগ করেছেন সরকারি-বেসরকারি হাজিরা।

আরাফাতের ময়দান, মুজদালিফা ও বিশেষ করে মিনায় মানুষকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। মুজদালিফায় খোলা ময়দান থেকে জামারাত যাওয়া এবং জামারাত থেকে দলছুট হাজিদের নির্দিষ্ট তাঁবু চিনতে না পারার কারণে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়েছে। ছায়া ও পানিহীন গরম পরিবেশে সাহায্যের জন্য বিভিন্ন দেশের স্বেচ্ছাসেবকদের দেখা মিললেও বাংলাদেশি কোনো স্বেচ্ছাসেবকের দেখা মেলেনি।

এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার মিনার যে ম্যাপ হজপোর্টালে আপলোড করেছে, তাতে রয়েছে মারাত্মক ভুল। ৫৮ নম্বর ও ৫৯ নম্বর মক্তবের স্থান অদল-বদল হয়েছে। এই ম্যাপ দেখে আরও ঘুরতে হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে হজযাত্রীদের জন্য কোনো কার্যকারী হেল্পলাইন নেই, সবক্ষেত্রে হাজিদের প্রতি দায়সারা ভাব। সরকারি খরচে বিশাল বহরের হজসেবকদের থেকে সেবা পাওয়া নিতান্তই ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৌদি আরব থেকে এভাবেই নিজেদের অসহায়ত্ব ও কষ্টের কথা বলছিলেন এক হজযাত্রী।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে যাওয়া অবসরপ্রাপ্ত ওই আমলা অত্যন্ত সচেতনভাবেই নিজের কষ্টের বদলে অন্য হাজিদের কষ্টের কথা বলছিলেন। তার মতে, মিনা-আরাফাত-মুজদালিফা ও জামারাতেই তো হজের সব। এখানেই যদি কোনো স্বেচ্ছাসেবকের দেখা না মেলে, তাহলে এর চেয়ে দুঃখের আর কিছু নেই।

সুমাইয়া নামের এক নারী পরিবারের ৭ জন সদস্যসহ হজ পালনে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। তার অভিজ্ঞতা আরও খারাপ। তার মতে, ‘আমি জানি না, এ বছর কি হয়েছে! এই কয়দিন অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হলো। সব হাজিদেরই কষ্ট পেতে হয়েছে। সৌদি সরকার, বাংলাদেশ সরকার কিংবা মোয়াল্লেমও ভালো আচরণ করেননি। ৪৫ ডিগ্রী গরমে ১ বোতল পানির জন্য রীতিমতো কান্নাকাটি করেছে লোকজন। চারদিকে মানুষ কাঁদছে। তীব্র গরমে সবাই একটু আশ্রয় ও ছায়ার সন্ধান করেছে। পাকিস্তান ও ভারতের প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক রাস্তায় নিজ নিজ দেশের হাজিদের সেবা দিয়েছে। কিন্তু কোনো বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবকের দেখা মেলেনি।’

চলতি বছর হাজি সেবার নামে সরকারি খরচে হজে যাওয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। সেই সিদ্ধান্ত মানেনি ধর্ম মন্ত্রণালয়। কারণ এবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৩০ কর্মকর্তা হজে গেছেন। আবার হজ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনসহ হজযাত্রীদের সহায়তার জন্য সরকারি খরচে হজে গেছে ১০ সদস্যের একটি গ্রুপ।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগের কর্মকর্তা ও কয়েকজন মিডিয়াকর্মী নানাভাবে তদবির করে রাষ্ট্রীয় অর্থে হজে যাওয়ার দলে যুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মন্ত্রী তাদের পছন্দের কয়েকজনকে এই দলে যুক্ত করেছেন। এই তালিকায় আছেন একাধিকবার হজে যাওয়া ব্যক্তিরাও। প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হলেও হাজিরা কোনোভাবেই উপকৃত হননি, সেটা হাজিদের কথাতেই বেশ স্পষ্ট।

যদিও হজযাত্রীদের সেবায় পাঠানোদের শর্ত দেওয়া হয়েছে, হজযাত্রীদের সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করা। কিন্তু কে কোন ধরনের সেবা প্রদান করবেন তা স্পষ্ট বলা হয়নি। আরও বলা হয়েছে, টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন মর্মে বিবেচিত হবেন। কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত খাওয়া-দাওয়া ও বিশ্রামের বিষয়ে কিছু বলা নেই। সরকারি খরচে হজে যাওয়ার তালিকায় অনেক ব্যক্তির হজ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই।

তালিকাভুক্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে বার্তা২৪.কমের কথা হয়েছে, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে না পারলেও ‘হাজি সাহেবদের সেবা’ করতে গেছেন- এমন একটি সাধারণ উত্তর পাওয়া গেছে।

আর ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে হাজি সেবা দলের সদস্যদের হজ করার কোনো সুযোগ নেই। তালিকাভুক্তরা বলছেন, প্রতিবছর বলা হয় হজ করা যাবে না। কিন্তু সবাই হজ করে আসেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার সরকারি খরচে হজে যাওয়া ব্যক্তিরা বিমানের টিকিট বাবদ এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রত্যেককে ৩৫ হাজার টাকা করে হজ অফিসে জমা দিতে হবে খাওয়ার খরচ বাবদ। মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিমানভাড়ার বাইরে সব খরচ সরকার বহন করবে। একেকজনের পেছনে সরকারের খরচ হবে চার লাখ টাকা।

হজপোর্টালে আপলোড করা মিনার ম্যাপ, ছবি: সংগৃহীত 

চলতি বছর হাজিদের সেবায় সৌদি আরবে অনেকগুলো দল গিয়েছে। ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের নেতৃত্বে হজ প্রতিনিধিদলে রয়েছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাতজন সচিব ও জ্যেষ্ঠ সচিব, দুজন অতিরিক্ত সচিব, দুজন সংসদ সদস্য এবং একজন নির্বাচন কমিশনার। ৫৫ সদস্যের হজ প্রশাসনিক দলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগের কর্মকর্তা আছেন ২২ জন এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ৩৩ জন। হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী ৭৪ সদস্যের দলে রয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ২২ পিয়ন এবং ১২ জন গাড়িচালক। ২৫ সদস্যের কারিগরি দলে আছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাতজন কম্পিউটার অপারেটর। সমন্বিত হজ চিকিৎসা দলে আছেন ২৮৯ জন। এর মধ্যে ৮৫ জন চিকিৎসক, ৫৫ জন নার্স, ২৪ জন ফার্মাসিস্ট, ২৫ জন ওটি/ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট। এখানেও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকল্প ইসলামিক মিশনে কর্মরতদের সংখ্যা অনেক। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এসব দলের অনেক কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট দলের কাজ সম্পর্কে কিছু জানেন না।

অন্যদিকে সরকারি খরচে হজে নিতে এবার সাংবাদিকদের নামে অসাংবাদিকদের নিয়ে দল গঠন করার অভিযোগ উঠেছে। ধর্মমন্ত্রী ও সচিব তাদের নিজ এলাকার তিনজন সাংবাদিকের নাম দিয়ে ১০ জনের একটি তালিকা করেন। এখানেও চালাকির আশ্রয় নেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। সাংবাদিকদের তালিকা প্রকাশের প্রজ্ঞাপনে কে কোন গণমাধ্যমে কর্মরত সেটা উল্লেখ না করে তাদের নাম ও পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। তাদের মক্কা, মদিনা, মিনা ও আরাফাতের ময়দানসহ বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনসহ হজযাত্রীদের সহায়তা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দুই একজন বাদে আর কারো কোনো সংবাদ পরিবেশন নজরে আসেনি।

গত বছর (২০২৩) হাজিদের সেবায় গিয়ে না জানিয়ে তায়েফ ভ্রমণ করার দায়ে ৭ জনকে শোকজ করা হয়। অন্যদিকে চলতি বছরের সমন্বিত হজ চিকিৎসক দলে নার্স না হয়েও নার্স হিসেবে তালিকাভুক্তি, বয়স বেশিসহ বিভিন্ন অনিয়ম করে এক বা একাধিকবার চিকিৎসক দলে নাম থাকা নয় নার্সের ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বহাল রাখে, ফলে তারা সৌদি যেতে পারেননি। এর আগে নানা অভিযোগে তালিকা সংশোধন চারজনের বাদ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।

এসব ঘটনায় সহজেই অনুমান করা হয়, সেবার নামে সৌদি আরবে যাওয়ার এত মরিয়া চেষ্টা কেন? অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ মিশনের একাধিক কর্তকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া মেলেনি।

;

দেশে মসজিদের সংখ্যা সাড়ে ৩ লাখ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মসজিদ রয়েছে, এসব মসজিদে প্রায় ১৭ লাখ ইমাম-মোয়াজ্জিন কর্মরত- বলে সংসদে জানিয়েছে ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্যের প্রশ্নে মন্ত্রী এই তথ্য জানান। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী।

তিনি জানান, দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে প্রায় ১৭ লাখ ইমাম-মোয়াজ্জিন কর্মরত।

মসজিদগুলোর মধ্যে বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদ, চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ এবং জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের তিনজন খতিব, ছয়জন পেশ ইমাম ও ছয়জন মোয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতভুক্ত সরকারিভাবে প্রদান করা হয়।

আর প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় একজন ইমাম, একজন মোয়াজ্জিন ও একজন খাদেমকে বর্তমানে পর্যায়ক্রমে সম্মানীর ভিত্তিতে নিয়োগ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ৫৬৪টি মডেল মসজিদের রাজস্ব খাতে পদ সৃজনের প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। পদ সৃজনের পর তাদের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতভুক্ত বেতন স্কেল থেকে প্রদান করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সারাদেশে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে ৪৯ হাজার ৭১৯ জন ইমাম ও মোয়াজ্জিন কর্মরত রয়েছেন। তাদেরকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা হারে সম্মানী প্রদান করা হয়। ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের পরিধি বাড়িয়ে দেশের অন্যান্য ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের পর্যায়ক্রমে সন্মানীর আওতায় আনা হবে- ইনশাআল্লাহ।

ইমাম ও মোয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় প্রতিবছর ন্যূনতম ৫৫০০ জনকে ৪ হাজার টাকা হারে মোট ২ কোটি ২০ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়। তবে ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আর্থিক সাহায্য গ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া ইমাম ও মোয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় প্রতিবছর ৬০০ জনকে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার ও ২৫ হাজার-এই তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে সর্বমোট ১ কোটি ২০ লাখ টাকা সুদবিহীন ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ইমাম ও মোয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টের আয়বর্ধক কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। ট্রাস্টের আয় বৃদ্ধি পেলে ভবিষ্যতে দেশের সব ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের অনুদানের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে দেশের সব মসজিদের ডেটাবেইস তৈরির কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

;

কাবার চাবি রক্ষকের দায়িত্বে শায়খ আবদুল ওয়াহাব জাইন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
শায়খ আবদুল ওয়াহাব আল-শায়বির কাছে পবিত্র কাবার চাবি হস্তান্তর করা হচ্ছে, ছবি: সংগৃহীত

শায়খ আবদুল ওয়াহাব আল-শায়বির কাছে পবিত্র কাবার চাবি হস্তান্তর করা হচ্ছে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কাবা ঘরের নতুন চাবি রক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন শায়খ আবদুল ওয়াহাব আল-শায়বি। তিনি ৭৭তম চাবিরক্ষক ও সিনিয়র তত্ত্বাবধায় ড. শায়খ সালেহ বিন জয়নুল আবেদিন আল-শায়বির ভাই। গত শুক্রবার (২১ জুন) দিবাগত রাতে শায়খ সালেহ ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর তাদের বংশের প্রবীণতম সদস্য হিসেবে শায়খ আবদুল ওয়াহাব আল-শায়বি এ দায়িত্ব পেলেন। তার নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে সৌদি রাজকীয় আদালত।

সোমবার (২৪ জুন) রাতে ৭৮তম চাবি রক্ষক হিসেবে শায়খ আবদুল ওয়াহাব বিন জাইন আল আবিদিন আল শায়বির হাতে পবিত্র কাবাঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়।

দায়িত্ব পাওয়ার পর তার প্রথম কাজ হলো- আগামী মহররমের ১ তারিখ কাবাঘরের নতুন গিলাফ (কিসওয়াহ) গ্রহণ ও পরিবর্তনের সময় পবিত্র কাবার দরজা খুলে দেবেন। এ ছাড়া তিনি কাবা ঘর ধৌত করার সময় এবং বিদেশি অতিথিদের জন্য কাবা ঘরের দরজা খুলে দেবেন।

পবিত্র কাবা ঘরের নতুন চাবি রক্ষক 

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মক্কা বিজয়কাল থেকে ৭৮তম এবং তার পূর্বপুরুষ কুসাই বিন কিলাবের যুগ থেকে ১১০তম চাবিরক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন শায়খ আবদুল ওয়াহাব। তিনি বিখ্যাত সাহাবি উসমান ইবনে তালহা (রা.)-এর বংশধর। হজরত তালহার বিষয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘হে তালহার বংশধর, তোমরা এ চাবি গ্রহণ করো। তোমাদের কাছে তা থাকবে। অত্যাচারি ছাড়া কেউ তা ছিনিয়ে নেবে না।

মূলত জাহেলি যুগ থেকেই কাবাঘরের চাবি শায়বা গোত্রের কাছে থাকত। অষ্টম হিজরি তথা ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের দিন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই ওই গোত্রের হজরত উসমান ইবনে তালহার (রা.) কাছে চাবি হস্তান্তর করে তাকে সম্মানিত করেন। এরপর থেকে তার বংশধরেরা ওই চাবি সংরক্ষণ করছেন।

বর্তমান সময়ে তাদের কাছ থেকে চাবি নিয়েই বিভিন্ন সময় সৌদি আরবের বাদশাহ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পবিত্র কাবা ঘরে প্রবেশ করে থাকেন।

;