পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক আয়াত

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক আয়াত, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক আয়াত, ছবি: সংগৃহীত

‘আর আপনি নামাজ কায়েম করুন দিনের দুই প্রান্তভাগে ও রাতের প্রথমাংশে। নিশ্চয় সৎকাজ অসৎকাজকে মিটিয়ে দেয়। উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটা এক উপদেশ।’ -সুরা হুদ : ১১৪

আয়াতটিকে ‘পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক’ বলে উল্লেখ করেছেন অনেক ইসলামি স্কলার। আয়াতে বলা হয়েছে, ভালো কাজগুলোর প্রভাবে পাপ ও মন্দ কাজগুলোর প্রভাব দূর হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

আশা ও প্রশান্তি হচ্ছে- মানুষের জীবনের প্রাথমিক ভিত্তি। আশা ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকার প্রেরণা পায় না। এখানে মানুষকে আশার বাণী শোনানো হচ্ছে, ‘দিনের দুই প্রান্তে নামাজ ঠিক রাখবে এবং রাতের প্রান্তভাগে। (মনে রাখবে) পুণ্য কাজ অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহাস্মারক।’

আয়াতে স্পষ্টভাবে মহান আল্লাহ বলছেন, ‘ভালো কাজগুলো মন্দ কাজগুলোকে তাড়িয়ে দেয় এবং এমনকি পাপের প্রভাব কিংবা কুফলগুলোও দূর করে দেয় এমনভাবে, যেন সে অতীতে কোনো পাপই করেনি। অর্থাৎ ভালো কাজগুলো মন্দ কাজগুলোকে ঢেকে দেয় তথা আগের কাজগুলোকে ঠেকিয়ে দেয়। এভাবে এ আয়াতের সর্বোচ্চ আশাব্যঞ্জকতার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইসলামি স্কলারদের মতে, ভালো কাজ মন্দ কাজকে বিলোপ করে ও পাপগুলো ঢেকে দেয়- এমন সুসংবাদ মানুষের মধ্যে ভালো কাজ করার প্রেরণা জাগিয়ে তোলে ও মন্দ কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আর সবচেয়ে ভালো কাজ হলো- দিন-রাতের অবশ্য পালনীয় নামাজগুলো, যা এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।

নামাজ পাপের প্রভাব ধ্বংসের পাশাপাশি প্রশান্তি ও আশার নিয়ামক। আয়াতে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে তাকে ও তার সমস্ত উম্মতকে নামাজ কায়েমের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আয়াতে নামাজ দ্বারা উদ্দেশ্য ফরজ নামাজ।

আলোচ্য আয়াতে নামাজ কায়েমের নির্দেশ দানের সঙ্গে সঙ্গে তার উপকারিতার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘পুণ্যকাজ অবশ্যই পাপকে মিটিয়ে দেয়।’ এখানে পুণ্যকাজ বলতে অধিকাংশ আলেমদের নিকট নামাজ বোঝানো হয়েছে। যদিও নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, সদকা ও সদ্ব্যবহারসহ প্রভৃতি যাবতীয় সৎকাজই উদ্দেশ্য হতে পারে। -তাফসিরে কুরতুবি

তবে নিঃসন্দেহে এর মধ্যে নামাজ সৰ্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। অনুরূপভাবে পাপকাজের মধ্যে সগিরা ও কবিরা যাবতীয় গোনাহ শামিল। কিন্তু কোরআন মাজিদের বর্ণনা এবং হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিভিন্ন হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে, এখানে পাপকাজ দ্বারা সগিরা গোনাহ বুঝানো হয়েছে। এমতাবস্থায় আয়াতের মৰ্ম হচ্ছে, যাবতীয় নেক কাজ, বিশেষ করে নামাজ সগিরা গোনহসমূহ মিটিয়ে দেয়। এ হিসেবে ইমাম কুরতুবি বলেন, আয়াতটি পুণ্যকাজের ব্যাপারে ব্যাপক হলেও গোনাহ ক্ষমা করার ব্যাপারে বিশেষভাবে বিশেষিত। অর্থাৎ সগিরা গোনাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

উল্লেখ, সৎকাজ দ্বারা পাপ ক্ষমা হয়- এ কথা কোরআন-হাদিসের অন্যান্য স্থানেও বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা যদি বড় (কবিরা) গোনাহসমূহ হতে বিরত থাকো, তাহলে তোমাদের ছোট ছোট (সগিরা) গোনাহগুলো মিটিয়ে দেব।’ -সুরা নিসা : ৩১

হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং এক রমজান দ্বারা পরবর্তী রমজান পর্যন্ত মধ্যবর্তী যাবতীয় সগিরা গোনাহ মিটিয়ে দেওয়া হয়, যদি সে ব্যক্তি কবিরা গোনাহ থেকে বিরত থাকে।’ -সহিহ মুসলিম : ২৩৩

অর্থাৎ কবিরা গোনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না, কিন্তু সগিরা গোনাহ নামাজ, রোজা, দান-সাদকা ইত্যাদি পুণ্যকর্ম করার ফলে আপনা-আপনি মাফ হয়ে যায়।

আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, নেক কাজের ফলে অনেক গোনাহ মাফ হয়ে যায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের থেকে কোনো মন্দ কাজ হলে পরে সঙ্গে সঙ্গে নেক কাজ করো, তাহলে সেটার ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে।’ -জামে তিরমিজি : ১৯৮৭

তবে সৎকাজ দ্বারা শুধুমাত্র সগিরা গোনাহ মাফ হয়। কবিরা গোনাহের জন্য তওবা জরুরি। হাদিসে বলা হয়েছে, যদি সে ব্যক্তি কবিরা গোনাহ থেকে বিরত থাকে। -সহিহ মুসলিম : ২৩৩