লোক দেখানো কোরবানি নয়



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
কোরবানি হোক একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য, ছবি: সংগৃহীত

কোরবানি হোক একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরবানি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান ও মহিমান্বিত ইবাদত। ত্যাগ, নিষ্ঠা, প্রেম ও ভালোবাসার স্মারক। শর্তহীন আনুগত্যের আলোকবর্তিকা, অনুপম আদর্শ। সামর্থ্যবান মুমিন বান্দারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের জন্য শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় তাদের কোরবানির পশু দয়াময় আল্লাহর নামে জবেহ করবে এবং মহান প্রভুর উন্মুক্ত আপ্যায়ন গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করবে।

তাওহিদের ধর্ম ইসলাম। কোনো একটি আমল মহান মালিকের দরবারে কবুল হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত, ইখলাসের (একনিষ্ঠতার) সঙ্গে হওয়া এবং শিরকমুক্ত হওয়া। ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং যে কেউ নিজ রবের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক না করে।’ -সুরা কাহাফ : ১১০

শিরকের রয়েছে নানান রূপ এবং প্রকৃতি। রিয়া বা লোক দেখানোও এক প্রকার শিরক, যাকে ‘শিরকে আসগর’ বা ছোট শিরক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এমন আরও অনেক ছোট ছোট শিরক মিশে আছে আমাদের বিভিন্ন আচরণ-উচ্চারণে। মুমিনের দায়িত্ব, হক্কানি আলেমদের থেকে এ সব শিরকের বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা এবং সেগুলো থেকে বেঁচে থাকা।

কোরবানির ক্ষেত্রে ইখলাসের বিষয়টি আরও উজ্জ্বলভাবে প্রকাশিত। ইখলাসই যেন সব- কোরবানির আমলের ক্ষেত্রে। ইখলাস নেই, কোরবানি নেই। কোরবানি সংক্রান্ত এ আয়াত যেন এ আমলের ক্ষেত্রে আমাদের ইখলাসকে জাগ্রত করার জন্যই, ‘আল্লাহর নিকট এদের (কোরবানির পশুর) গোশত এবং রক্তের কিছুই পৌঁছে না, কিন্তু তার নিকট পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।’ -সুরা হজ : ৩৭

ইবাদতের আরেক বৈশিষ্ট্য ইহসান। সদা-সর্বদা আল্লাহর জিকির ও স্মরণ হৃদয়ে জাগ্রত থাকা। হাদিসের ভাষায়, ‘আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করা, যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ। তা যদি সম্ভব না হয়, তো এতটুকু অনুভূতি হৃদয়ে অবশ্যই জাগ্রত রাখ যে, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।’ -সহিহ বোখারি : ৫০

মুমিনের ইবাদত আল্লাহর দরবারে গৃহীত হওয়ার আরেকটি শর্ত, ইবাদতটি সুন্নাহসম্মত পন্থায় হওয়া। হজরত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ইবাদত যে পদ্ধতিতে আদায় করেছেন এবং সাহাবিদের শিখিয়েছেন সেই পদ্ধতিতেই ইবাদতটি সম্পন্ন হওয়া।

মোটকথা, ইখলাস, ইহসান ও সুন্নাহসম্মত ইবাদতই কেবল প্রাণবন্ত ইবাদত। বলাবাহুল্য, ইবাদতের উপরোক্ত শর্ত এবং বৈশিষ্ট্যসমূহ কোরবানির আমলে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাম্য।

আফসোস, বর্তমানে এই কোরবানিকে ঘিরে ইখলাস ও ইহসান পরিপন্থী, রিয়া ও লৌকিকতাসূলভ নানান জিনিসের বিস্তার ঘটছে সমাজে। একসময় ছিল, কেবল পশুর গলায় সুন্দর সুন্দর মালা পরানো হত এবং লোকের ঈর্ষাকাতর দৃষ্টি কামনা করা হত। তারপর আরেকটু অগ্রসর হলো- নামি-দামি হাঁটের সেরা পশুটি কিনে প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ঢাকঢোল পেটানো এবং লোকের ‘বাহবা’ কুড়ানো! এখন অবস্থা আরও শোচনীয়, পশুকে স্পর্শ করে তার ছবি, ভিডিও কিংবা সেলফি তোলা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা। এমনকি নিরীহ পশুটির একদম কাঁধে চড়ে ছবি তোলার মতো অমানবিক দৃশ্যও নজরে পড়ে! আরও দুঃখজনক বিষয় হলো, পশু জবাইয়ের সময় আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠা এবং জবাইয়ের ছবি-ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা! যা কখনও কখনও অমুসলিমদের জন্য ভুল বুঝাবুঝিরও কারণ হতে পারে।

আমাদের ভেবে দেখা উচিত, এসব আচরণের দ্বারা নিজের ইবাদত-বন্দেগিটা বিনোদনে পরিণত করা হয়ে গেল কি না? বা ইবাদতটা হাস্যরস ও ক্রীড়া-কৌতুকে পর্যবসিত হয়ে গেল কি না? অথচ পবিত্র কোরআন ইবাদতকে বিনোদনে পরিণত করা কাফের এবং জাহান্নামীদের স্বভাব বলে চিহ্নিত করেছে। কোরআনে কারিমের ভাষায়, ‘যারা নিজেদের দ্বীনকে তামাশা এবং ক্রীড়া-কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছিল এবং পার্থিব জীবন ওদের ধোঁকায় ফেলেছিল। সুতরাং আজ আমি তাদেরকে ভুলে যাব যেভাবে তারা এই দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিল।’ -সুরা আরাফ : ৫১

কাজেই মুমিনের জন্য কখনও সমীচীন নয়- ইবাদতকে বিনোদন ও খেল-তামাশার বস্তুতে পরিণত করা।

সত্য কথা হলো, সেলফি তোলা, ভিডিও করা, কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা ইত্যাদি- এর মাধ্যমে ইবাদতের মূল আবেদনটাই ক্ষুণ্ণ হয়ে যায়। এটা বোঝার জন্য খুব বেশি বোধ-বুদ্ধির প্রয়োজন হয় না।

আলেমরা বলেন, কোরবানির পশু জবাইয়ের ছবি নয়, হৃদয়ে জাগ্রত হোক পিতা-পুত্রের ত্যাগ ও সমর্পণের ছবি! কারণ, কোরবানি-হজ এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল ইবাদত। যদিও আজ আত্মপ্রচার প্রবণতার উন্মাদনা থেকে হজ ও কোরবানির মতো ইবাদতগুলো রক্ষা পাচ্ছে না!

আমরা যদি একটি বারের জন্যও ভেবে দেখি, এতে আমার হজ-কোরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ আমল ইখলাস ও তাকওয়াশূন্য হয়ে পড়ছে না তো? একথা তো সবারই জানা, কোরবানির এ সুন্দর সুঠাম পশুর রক্ত-গোশত কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছবে না; পৌছবে কেবল আমাদের নেক নিয়ত ও অন্তরের তাকওয়া। হাদিসেও এ মর্ম বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের চেহারা-আকৃতি ও সম্পদের দিকে তাকান না। তিনি তাকান তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে। -সহিহ মুসলিম : ২৫৬৪

লোকের ‘বাহবা’ কুড়ানোর মানসিকতা ইখলাস ও তাকওয়া পরিপন্থী কাজ। আমাদের সবকিছু তো আল্লাহর জন্য; মানুষের বাহবা দিয়ে আমাদের কী লাভ! শুনুন কোরআন মাজিদের ঐশী বাণীতে মুমিনের ভাষ্য, ‘নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মরণ আল্লাহরই জন্য। যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক।’ -সুরা আনআম : ১৬২

কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় দোয়া হিসেবে ওপরের বাক্যগুলো আমরা উচ্চারণ করি। অথচ এর শিক্ষা ও মর্ম থেকে আমরা অনেকেই গাফেল থাকি।

শেষ কথা, মুসলিমের কোনো আমলই আচারসর্বস্ব নয়। কোরবানিও তেমন নিছক আচার-অনুষ্ঠান নির্ভর কোনো আমল নয়। এতে রয়েছে তাওহিদ ও আল্লাহর বড়ত্ব-মহত্বের প্রকাশ। তার স্মরণ ও আনুগত্যের শিক্ষা, সর্বোচ্চ সমর্পণের দীক্ষা। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম কীভাবে আল্লাহর হুকুমের সামনে নিঃশর্ত আনুগত্যের নজরানা পেশ করেছেন! কীভাবে ছোট্ট শিশু ইসমাইল মহান প্রভুর নির্দেশের সামনে মাথা পেতে দিয়েছেন! কীভাবে মহান শিশু-নবীর পরিবর্তে জান্নাতি পশু কোরবানি হলো! এসব কার কারিশমা? আমরা যদি কোরবানির সময় নবীদ্বয়ের স্মৃতিচারণ করি। পিতা-পুত্রের সেই ত্যাগ ও সমর্পণের শিক্ষা অন্তরে জাগ্রত করি, ছবি-সেলফি নিয়ে ব্যস্ত না হয়ে যদি আমরা মহান আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করি এবং মনে মনে দোয়ায় মগ্ন থাকি তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহতায়ালা আমাদের কোরবানি কবুল করবেন। সুতরাং পশু জবাইয়ের ছবি নয়, হৃদয়ে জাগ্রত হোক পিতা-পুত্রের ত্যাগ ও সমর্পণের ছবি!

   

মদিনার সেরা ৪ দর্শনীয় স্থান



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মদিনার সেরা ৪ দর্শনীয় স্থান

মদিনার সেরা ৪ দর্শনীয় স্থান

  • Font increase
  • Font Decrease

মদিনা মোনাওয়ারা মুসলমানদের প্রাণের ভূমি, নবীজির (সা.) শহর; শান্তির নগর। রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব। তিনি আরও বলেন, যে হজ করল- কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না, সে আমার প্রতি জুলুম করল।’

দুনিয়ার সব মুমিনের আবেগ-উচ্ছ্বাসের কেন্দ্রস্থল মদিনা। আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদে মদিনাকে অনেক নামে সম্বোধন করেছেন। আরদুল্লাহ বা আল্লাহর ভূমি, আরদুল হিজর বা হিজরতের ভূমি। দুনিয়ার বুকে মদিনার মতো এত অধিক নাম বিশিষ্ট জনপদ আর দ্বিতীয়টি নেই।

মসজিদে নববির পরে মদিনার ৪টি সেরা দর্শনীয় স্থান হলো-

রওজা শরিফ
মসজিদে নববির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান নবী কারিম (সা.)-এর রওজা মোবারক। হজরত আয়েশা (রা.)-এর হুজরার (কামরা, বাসস্থান) মধ্যে তার রওজা শরিফ অবস্থিত। এটি বর্তমানে মসজিদে নববির অন্তর্গত। এরই পাশে হজরত আবু বকর (রা.) এবং তার পাশে হজরত ওমর (রা.)-এর কবর। এর পাশে আরেকটি কবরের জায়গা খালি আছে, এখানে হজরত ঈসা (আ.)-এর কবর হবে।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা

রওজা শরিফের ওপর সবুজ গম্বুজ অবস্থিত। তার পাশেই মসজিদে নববির মিহরাবের ওপরে রয়েছে সাদা গম্বুজ। যে মসজিদের সবুজ গম্বুজের ছায়ায় ঘুমিয়ে আছেন শেষ নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)। মসজিদে নববির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের প্রবেশপথকে বাবুস সালাম বলা হয়। মসজিদে নববির পূর্ব পাশের বহির্গমন দরজাকে বাবে জিবরাইল বলা হয়। রওজা শরিফ ও এর থেকে পশ্চিম দিকে রাসুল (সা.)-এর মিম্বার পর্যন্ত স্থানকে রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগিচা বলা হয়।

মসজিদে নববিতে রাসুল (সা.) যে স্থানে দাঁড়িয়ে নামাজের ইমামতি করতেন সেই মিহরাবকে মিহরাবুন নবী বলা হয়। হজরত জিবরাইল (আ.) যে স্থানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছেন সেটি মিহরাবে জিবরাইল নামে পরিচিত। জিয়ারতকারীরা প্রাণভরে, মন উজাড় করে রাসুলের রওজায় দরুদ ও সালাম পেশ করেন।

জান্নাতুল বাকি
মসজিদে নববির পূর্ব দিকে অবস্থিত এই কবরস্থানে নবী কন্যা হজরত ফাতেমা (রা.), রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অধিকাংশ স্ত্রীসহ অসংখ্য সাহাবি, তাবেয়িন, আউলিয়া, পীর-বুজুর্গ ও ধার্মিক মুসলমানের কবর রয়েছে। এর একপাশে নতুন নতুন কবর হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এখানে শুধু একটি পাথর দিয়ে চিহ্নিত করা আছে একেকটি কবর।

জান্নাতুল বাকি

এক কথায়, জান্নাতুল বাকি যেখানে ঘুমিয়ে নুরানি কাফেলা। কবর জিয়ারত অন্তরকে নরম করে এবং পরবর্তী জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়।

মসজিদে কুবা
মুসলমানদের প্রথম মসজিদ হচ্ছে- মসজিদে কুবা। মসজিদে নববি থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এই মসজিদ। ধবধবে সাদা রঙের অনন্য নির্মাণশৈলীর এই মসজিদের নাম রাখা হয়েছে একটি কূপের নামানুসারে।

মসজিদে কুবা

হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসার পর সাহাবিদের নিয়ে নিজের পবিত্র হাতে এই মসজিদ তৈরি করেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ঢুকে শহরের প্রবেশদ্বার কুবায় নামাজ পড়েন। এই মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায়ে এক উমরার সওয়াব পাওয়া যায়।

উহুদ পাহাড়
ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় যুদ্ধ হয় এই পাহাড় ঘিরে। দুই মাথাওয়ালা একটি পাহাড়, মাঝে একটু নিচু। তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে উহুদ যুদ্ধ হয়। উহুদ পাহাড় মদিনার সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। পাথরের এই পাহাড়ের উচ্চতা ৩৫০ মিটার। পূর্ব থেকে পশ্চিমে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পাহাড়টির প্রস্থ ১০০ থেকে ৩০০ মিটার।

উহুদ পাহাড়

উহুদের রণ প্রান্তরে হজরত হামজা (রা.) সহ ৭০ জন সাহাবি শহীদ হয়েছিলেন। এই উহুদ প্রান্তরে বিধর্মীরা নির্মমভাবে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দন্ত মোবারক শহীদ করে। এখানে একটি মসজিদ আছে।

যদিও মদিনার জিয়ারত হজের রোকন নয়, তথাপি যারা মদিনাওয়ালার আশেক তারা মদিনার জিয়ারতে থাকে আত্মহারা পাগলপারা। মসজিদে নববি এবং রওজায়ে আতহার মদিনার অন্যতম আকর্ষণ। এ ছাড়া মদিনায় অসংখ্য খেজুরবাগান রয়েছে।

আরও পড়ুন : নবী কারিম (সা.)-এর রওজা জিয়ারতের গুরুত্ব

এর বাইরে মদিনার দর্শনীয় স্থানের অন্যতম হলো- মসজিদে নববির পাশে অবস্থিত কোরআন মিউজিয়াম, মসজিদে আবু বকর, মসজিদে উমর, মসজিদে আলী, গামামা মসজিদ, বিলাল মসজিদ, মসজিদে কিবলাতাইন, জুমা মসজিদ, উসমান ইবনে আফফান মসজিদ, ইমাম বোখারি মসজিদ, খন্দক এলাকা, ওসমানীয় আমলের আল হেজাজ রেল স্টেশন জাদুঘর, সালমান ফারসির কথিত বাগান, এটা মসজিদে নববির দক্ষিণে অবস্থিত খেজুরবাগান, ইজাবা মসজিদ, কেন্দ্রীয় খেজুর মার্কেট ও আল শাজারাহ মসজিদ।

;

নবী কারিম (সা.)-এর রওজা জিয়ারতের গুরুত্ব



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা, ছবি: সংগৃহীত

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মদিনা নবীর শহর। মসজিদে নববি এবং রওজায়ে আতহার এই শহরের অন্যতম আকর্ষণ। এই মদিনায়ই প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুয়ে আছেন।

আর কি গুরুত্ব আছে এই শহরের? আছে। এই শহরের মানুষ দুর্দিনে নবী কারিম (সা.)-কে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এই শহরে আল্লাহর রাসুল (সা.) জীবনের শেষ ১০টি বছর কাটিয়েছেন। আগে মদিনার নাম ছিল ইয়াসরিব। নবীর আগমনে আনন্দে উদ্বেলিত জনতা নিজ শহরের নাম বদলে ফেলে রাখলেন মদিনাতুন নবী, অর্থাৎ নবীর শহর।

ইসলামের বিধানে নবী কারিম (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ঈমানের অংশ। অন্তরে তার প্রতি ভালোবাসা ধারণ করা ছাড়া কেউ পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না। আর হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা জিয়ারত নিঃসন্দেহে সওয়াব ও মর্যাদাপূর্ণ কাজ।

প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ের বাসনা থাকে, নবী কারিম (সা.)-এর রওজার পাশে দাঁড়িয়ে তার প্রতি দরুদ ও সালাম প্রেরণ করা। এখন হজের মৌসুম হওয়ায় মুসল্লিদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এত মানুষের ভিড়েও মহান আল্লাহর রহমতে হাজিরা খুব বেশি কষ্ট ছাড়াই রওজা জিয়ারতের সুযোগ পাচ্ছেন।

নবী কারিম (সা.)-এর রওজা জিয়ারতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদিসে হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে আমার ওফাতের পর আমার (রওজা) জিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করল।’ -দারাকুতনি: ২৬৯৪

আরও পড়ুন : এবারের হজে এত মানুষের মৃত্যু কেন?

কোরআনে কারিমে রওজায়ে আতহার জিয়ারতের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘(হে মাহবুব!) যদি তারা নিজেদের আত্মার ওপর জুলুম করে তাহলে যেন তারা আপনার দরবারে আসে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও যদি তাদের জন্য ক্ষমা চেয়ে সুপারিশ করেন তবে তারা অবশ্যই আল্লাহকে তওবা কবুলকারী ও দয়ালু হিসেবে পাবে।’ -সূরা নিসা: ৬৪

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার রওজা জিয়ারত করল তার জন্য আমার শাফায়াত (সুপারিশ) ওয়াজিব (আবশ্যক) হয়ে গেল।’ -বায়হাকি

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ শরিফ হজ করল অথচ আমার জিয়ারত করল না, মূলত সে আমার ওপর জুলুম করল।’ -ইবনে হিব্বান

;

এবারের হজে এত মানুষের মৃত্যু কেন?



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মুজদালিফায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

মুজদালিফায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৮ লাখের বেশি মানুষ এ বছর পবিত্র হজ পালন করেছেন, যাদের অধিকাংশই প্রথমবারের মতো এই সুযোগে ধন্য হয়েছেন। অন্যদিকে করোনা পরবর্তী সময়ে এবার হজযাত্রীদের বয়সের বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেক বয়স্ক মানুষ হজের সুযোগ পেয়েছেন।

সুষ্ঠুভাবে হজ শেষ হলেও হজ-পরবর্তী সময়ে হাজিদের মৃত্যুর খবর থামছে না। হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের পাঁচ দিনসহ হজ-পরবর্তী সময়ে এবার ১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনও অনেকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সেখানেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। হজে এত মানুষের মৃত্যু কেন হলো- এ বিষয়ে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি, আরও সৌদি কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেয়নি।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, চলমান তাপপ্রবাহ ও অসহনীয় গরমে এবার এত হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সৌদি সরকার বারবার সতর্ক করেছে, হাজিরা যেন রোদে চলাচল না করেন- তার পরও অনেকে বাসের বদলে মিনা-আরাফাত-মুজদালিফা-মিনা ও মক্কায় হেঁটে চলাচল করে অসুস্থ হয়ে গেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টকে আহমদ বাহা নামের এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘হতাহতের সংখ্যা কেমন সেটা জানি না। তবে গরমের কারণে আমরা শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারছিলাম না।’

৩৭ বছর বয়সী আহমদ বাহা মিসরের নাগরিক। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার বাহা সৌদি আরবে থাকেন। এবার তিনি হজে অংশ নিয়েছিলেন।

বাহা জানিয়েছেন, মাশায়েরে মোকাদ্দাসায় ‘ভয়ঙ্কর দৃশ্য’ দেখেছি। বাস থাকা সত্ত্বেও মিনার তাঁবু থেকে অনেকে হেঁটে আরাফাতে রওয়ানা দিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। পথে রোদের তাপ আর তীব্র গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ কাউকে সাহায্য করবে- সেই অবস্থা খুব একটা ছিলো না। এরপর একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স অব্যাহতভাবে চলছিল। ডান-বাম সবদিক থেকে অসুস্থ মানুষকে তুলে নিচ্ছিল। ক্লান্ত মানুষ রাস্তায় বিশ্রামের জন্য বসেছিল। কিন্তু গরমে সেটাও সম্ভব হয়নি। আমি বাস থেকে একজনকে ঢলে পড়ে যেতে দেখেছি। এরপর তিনি আর নড়াচড়া করতে পারছিলেন না।’

এবার হজের আনুষ্ঠানিকতা ১৪ জুন শুরু হয়ে পরবর্তী পাঁচ দিন পর্যন্ত চলেছে। এই সময়টায় মক্কায় অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বিরাজ করছিল। একটা সময় সেখানে তাপমাত্রা উঠেছিল ৫১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সৌদি সরকার বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে আগত হজযাত্রীদের সম্ভাব্য সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করে। বছরের পর বছর ধরে সৌদি সরকার হজ মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘাটতি ও ত্রুটি-বিচ্যুতি মূল্যায়ন করে পরবর্তী বছর কীভাবে আরও উন্নত সেবা দেওয়া যায়- তার ব্যবস্থা নেয়।

এবারও হজ শেষ হওয়ার পর পর মক্কায় হজ মন্ত্রণালয় ১৪ জিলহজ মূল্যায়ন সভার আয়োজন করে। ওই সভায় ওঠে আসে, মাত্রাতিরিক্ত গরমের সময় হাজিদের চলাচলের বিষয়টি। এ কারণে প্রচুর হজযাত্রী অসুস্থ হয়ে যান। এটাই হজযাত্রীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

আরও পড়ুন

দেশে ফিরে হাজিদের করণীয়

আগামীবারও হজের সময় গরম থাকবে

এ বছর হজ মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত গরম ছিল। এ ব্যাপারে আবহাওয়া দফতর বারবার হজযাত্রীদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আসছিল। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে ক্রমাগত তাপমাত্রা এবং আবহাওয়ার সতর্কতা বিজ্ঞপ্তি জারি করে হজযাত্রীদের গরমের কারণে ছাতা ব্যবহার করতে বলেছিল। আরও পরামর্শ দিয়েছিল দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করতে।

আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান এবং শারীরিকভাবে সুস্থ প্রত্যেক মুসলমানের ওপর হজ ফরজ। হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের স্থানগুলো হলো- মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দান। এই তিন জায়গার আয়তন সীমিত হওয়ায় ভিড়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রশাসনিক ও অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাছাড়া একই সময়ে লাখ লাখ মানুষকে এক জায়গায় পরিচালনা করা খুব কঠিন।

;

সাপ-বিচ্ছুসহ বিষাক্ত প্রাণী থেকে রক্ষার দোয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সাপ-বিচ্ছুসহ বিষাক্ত প্রাণী থেকে রক্ষার দোয়া, ছবি: সংগৃহীত

সাপ-বিচ্ছুসহ বিষাক্ত প্রাণী থেকে রক্ষার দোয়া, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিষাক্ত সব প্রাণীর কামড়, দংশন, আক্রমণ ও ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকতে সর্বদা সতর্ক থাকতে হয়। সেই সঙ্গে কিছু আমল ও দোয়া পড়া। আল্লাহর রাসুল (সা.) অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সবকিছুর মতো বিষাক্ত কীট-প্রতঙ্গ, সাপ-বিচ্ছু কিংবা হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচার দোয়াও শিখিয়েছেন।

নবী কারিম (সা.)-এর শেখানো এই দোয়া যারা নিয়মতি সকাল-বিকাল আমল করবে, আল্লাহতায়ালা তাদের বিষাক্ত পোকা-মাকড় ও যাবতীয় হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে হেফাজত করবেন- ইনশাআল্লাহ।

দোয়াটি হলো-

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

উচ্চারণ: আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা।

অর্থ: আমি দয়াময় আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি।

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা এই দোয়া তিনবার পড়বে, আল্লাহতায়ালা তাকে সমস্ত প্রাণী, বিশেষ করে সাপ, বিচ্ছু প্রভৃতি বিষাক্ত ও কষ্টদায়ক প্রাণীর অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন।’ -জামে তিরমিজি: ৩৬০৪

আলেমরা বলেছেন, এটা সকল বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া। এই দোয়ার মাধ্যমে সকল অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা চাওয়া হয়েছে।

সুতরাং, শুধু বিষাক্ত পোকা ও সাপ-বিচ্ছু নয়, যেকোনো অকল্যাণ থেকে বাঁচার জন্য সকাল-সন্ধ্যা এই দোয়া পড়া উচিত। এটি সহিহ হাদিসের মধ্যে এসেছে।

;