জেনে নিন কোরবানি বিষয়ক প্রয়োজনীয় মাসয়ালা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরবানির মাসয়ালা, ছবি: সংগৃহীত

কোরবানির মাসয়ালা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না- তার ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যার কোরবানির সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ -মুস্তাদরাকে হাকেম : ৩৫১৯

যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নেসাব হলো- স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হলো- এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। - ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১৭/৪০৫

কোরবানি করতে না পারলে
কেউ যদি কোরবানির দিনগুলোতে ওয়াজিব কোরবানি দিতে না পারে তাহলে কোরবানির পশু ক্রয় না করে থাকলে তার ওপর কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করেছিল, কিন্তু কোনো কারণে কোরবানি দেওয়া হয়নি তাহলে ওই পশু জীবিত সদকা করে দেবে। - ফাতাওয়া কাজিখান : ৩/৩৪৫

যেসব পশু দ্বারা কোরবানি করা যাবে
উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। -বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৫

কোরবানির পশুর বয়সসীমা
উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কোরবানি করা জায়েজ। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৫-২০৬

উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। অর্থাৎ কোরবানির পশুতে এক সপ্তমাংশ বা এর অধিক যেকোনো অংশে অংশীদার হওয়া জায়েজ। এক্ষেত্রে ভগ্নাংশ- যেমন, দেড় ভাগ, আড়াই ভাগ, সাড়ে তিন ভাগ হলেও কোনো সমস্যা নেই। -সহিহ মুসলিম : ১৩১৮

কোরবানির পশুতে আকিকার অংশ
কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তে শরিক হতে পারবে। এতে কোরবানি ও আকিকা দুটোই সহিহ হবে। -রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৬২

শরিকানা কোরবানির নিয়ম

শরিকদের কারও পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারও কোরবানি সহিহ হবে না।

যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কোরবানি দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরিক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কোরবানি করাই শ্রেয়। শরিক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। -ফাতাওয়া কাজিখান : ৩/৩৫০-৩৫১

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কোরবানি
এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। -জামে তিরমিজি : ১/২৭৫

দাঁত নেই এমন পশুর কোরবানি
গরু-ছাগলের অধিকাংশ দাঁত না থাকলেও যে কয়টি দাঁত আছে তা দ্বারা যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে তবে সেটি দ্বারা কোরবানি সহিহ। কিন্তু দাঁত পড়ে যাওয়ার কারণে যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে না পারে তবে ওই পশু কোরবানি করা যাবে না। -ফাতাওয়া আলমগীরী : ৫/২৯৮

যে পশুর শিং ভেঙে বা ফেটে গেছে
যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। কিন্তু শিং ভাঙার কারণে মস্তিষ্কে যদি আঘাত না পৌঁছে তাহলে সেই পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ। তাই যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙে গেছে বা শিং একেবারে উঠেনি, সে পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। -জামে তিরমিজি : ১/২৭৬

কান বা লেজ কাটা পশুর কোরবানি
যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। আর যদি অর্ধেকের কম হয় তাহলে তার কোরবানি জায়েজ। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিজি : ১/২৭৫

মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি
মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি করা জায়েজ। মৃত ব্যক্তি যদি অসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে। কোরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কোরবানির অসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমাদ : ১/১০৭

অন্যের ওয়াজিব কোরবানি আদায় করতে চাইলে
অন্যের ওয়াজিব কোরবানি দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি নিলে এর দ্বারা ওই ব্যক্তির কোরবানি আদায় হয়ে যাবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কোরবানি আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কোরবানি করে তাহলে তাদের কোরবানি আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।

গোশত, চর্বি বিক্রি করা
কোরবানির গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েজ নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান : ১৭/২৫৯

বিদেশে থাকা ব্যক্তির কোরবানি অন্যত্র করা
বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কোরবানি করা জায়েজ।

কোরবানিদাতা এক স্থানে আর কোরবানির পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কোরবানিদাতার ঈদের নামাজ পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে।

কোরবানির পশুর হাড় বিক্রি
কোরবানির মৌসুমে অনেকে কোরবানির হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কোরবানিদাতার জন্য নিজ কোরবানির কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েজ নয়। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনেশুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩০১

কাজের লোককে কোরবানির গোশত খাওয়ানো
কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েজ নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদের গোশত খাওয়ানো যাবে। -আল বাহরুর রায়েক : ৮/৩২৬

জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া
কোরবানির পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েজ। তবে কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতি : ৮/২৬৫

   

উমরা ভিসা দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় হজ-পরবর্তী মৌসুমের জন্য উমরা ভিসা দেওয়া শুরু করেছে। ভিসা পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হবে এবং আগের সব আইন কার্যকর রয়েছে। তবে ভিসা পেলেও এখনই সৌদি আরব যাওয়া যাবে না। ১ মহররম থেকে বিদেশিরা উমরার জন্য দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সৌদি প্রেস এজেন্সি এসব তথ্য জানিয়েছে।

সৌদি প্রেস এজেন্সির খবরে বলা হয়, হজের পর ১ মহররম থেকে নতুন উমরা মৌসুম শুরু হবে। এদিন আরবি নববর্ষ, শুরু হবে হিজরি ১৪৪৬ সাল।

সদ্য সমাপ্ত হজের অভিজ্ঞতার আলোকে সৌদি কর্তৃপক্ষ আগামী উমরা ও হজ মৌসুম আরও সহজ, গতিশীল এবং মসৃণ করতে চায় বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সৌদির তরফে।

এসপিএ আরও জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সৌদি নেতৃত্বের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে এবং উমরা যাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা এবং তাদের চাহিদা পূরণের জন্য সেবা প্রদানের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে।

বেশ কয়েক বছর ধরে সৌদি আরব উমরা ভিসা সহজ করেছে। উমরা ভিসার মেয়াদ তিন মাস এবং উমরা ভিসায় সৌদি আরবের দর্শনীয় সব স্থানে যাতায়াতের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মূলত সারা বিশ্ব থেকে আসা হজযাত্রীদের ভ্রমণকে সহজ করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২০২৩ সালে এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মুসলিম উমরা পালন করেছেন। এটা সৌদি আরবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী উমরা মৌসুমে দুই কোটির বেশি মুসল্লি উমরা পালন করবেন।

আর চলতি বছর সৌদি সরকারের হিসাব অনুসারে, ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৪ জন পবিত্র হজ পালন করেছেন। এর মধ্যে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩১০ জন বিদেশি এবং দুই লাখ ২১ হাজার ৮৫৪ জন সৌদি নাগরিক ও দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসী রয়েছেন।

;

সন্তানের কাঁধে চড়ে মায়ের হজ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সন্তানের কাঁধে চড়ে মায়ের হজ, ছবি: সংগৃহীত

সন্তানের কাঁধে চড়ে মায়ের হজ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছর হজের দিন অর্থাৎ আরাফাতের ময়দান এক হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছে। এক হজযাত্রী তার বৃদ্ধ মাকে কাঁধে নিয়ে ছায়ার খোঁজে পথ চলছেন। এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

সৌদি গণমাধ্যম আল-আখবারিয়ায় প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, আরাফাতের ময়দানের এক রাস্তায় একজন হজযাত্রী গরম থেকে বাঁচতে তার মাকে কাঁধে নিয়ে পথ চলছেন। অন্য একজন হজযাত্রী ওই বয়স্ক নারীকে সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা করার জন্য তার ওপর ছাতা ধরে হাঁটছেন।

এমনিতে এবার হজের দিন অস্বাভাবিক গরম ছিলো। ফলে হজযাত্রীর বৃদ্ধ মা তীব্র গরমে ক্লান্তবোধ করছিলেন এবং হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল। এ সময় তিনি মাকে কাঁধে বসিয়ে পথচলা শুরু করেন।

প্রকাশিত ভিডিওটি মায়ের প্রতি প্রেম এবং ভক্তির একটি স্বতঃস্ফূর্ত চিত্রকে মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। মায়ের প্রতি ছেলের অটল আনুগত্যের প্রতীক এই ছবি। যদিও ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। কিন্তু গলায় থাকা পরিচয়পত্রের ফিতার রঙ দেখে অনুমান করা হচ্ছে, তারা ভারতীয়। তবে ভিডিওতে দেখা গেছে, মাকে কাঁধে নিয়ে তার চোখে মুখে আনন্দের ছাপ ছিলো স্পষ্ট।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়রা ওই ব্যক্তির কাজের প্রশংসা করে এটিকে মা-বাবার প্রতি সম্মানের একটি সুন্দর অভিব্যক্তি বলে অভিহিত করেছেন। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। অনেকেই ব্যক্তির নিঃস্বার্থ কাজের জন্য তাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন।

কিছু মানুষ জানিয়েছেন, ছেলের সদয় আচরণ দেখে আল্লাহতায়ালা তাকে রহমত দান করবেন।

আবার কেউ লিখেছেন, অন্তর থেকে ভালোবাসা এমন ভাগ্যবান সন্তানদের জন্য। এমন সন্তান শুধু পরিবারেরই নয়, সমাজের আলোকিত দর্পন। আল্লাহ এই সন্তানের চেষ্টাকে তুমি কবুল করো।

;

আলোচিত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক স্ত্রীর বদলি হজ আদায় করলেন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আল জাজিরার ফিলিস্তিন প্রতিনিধি ওয়ায়েল হামদান ইবরাহিম আদ-দাহদুহ, ছবি: সংগৃহীত

আল জাজিরার ফিলিস্তিন প্রতিনিধি ওয়ায়েল হামদান ইবরাহিম আদ-দাহদুহ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের রাজকীয় মেহমান হিসেবে স্ত্রীর বদলি হজ আদায় করলেন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ফিলিস্তিন প্রতিনিধি ওয়ায়েল হামদান ইবরাহিম আদ-দাহদুহ। আরব বিশ্বে তিনি ‘আবু হামজা’ নামে পরিচিত।

সৌদি সংবাদমাধ্যমকে জানান, এ নিয়ে দুই বার হজ পালন করেছেন তিনি।

যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনের গাজায় দায়িত্ব পালনকালে তিনি পরিবারের অধিকাংশ সদস্য হারিয়েছেন।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালে আমি আমার স্ত্রীকে হারিয়েছি। আমার স্ত্রীর রয়ে যাওয়া ফরজ হজ আদায় করতে পেরে আমি আনন্দিত। স্ত্রীকে দেওয়া ওয়াদা রক্ষা করাটা আমার হজে বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে। আনন্দের আরেকটি কারণ হলো, এটি পৃথিবীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গণ-জমায়েত। মুসলমানদের অধিকাংশই এক স্থানে একই সময়ে হজের উদ্দেশ্যে একত্রিত হোন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা শুরুর পর অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে সর্বশেষ আপডেট বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য তিনি পৃথিবীব্যাপী প্রসিদ্ধি লাভ করেন।

বিশ্ববাসীর সামনে গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা তুলে ধরার জন্য তিনি একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকি পান। এমনকি একবার তার অবস্থান লক্ষ্য করে হামলাও চালায় ইসরায়েলি সেনারা। গুরুতর আহত হলেও ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। এরপর লোকজন তাকে ‘গাজী’ উপাধিতে ভূষিত করে।

গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় তিনি বেঁচে গেলেও হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনির ন্যায় পৃথক পৃথক ইসরায়েলি হামলায় শহীদ হয়- তার ২ ছেলে, মেয়ে, নাতনি এবং স্ত্রী।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে তার পরিবারের সদস্যদের লক্ষ্য করে ধারাবাহিক হামলা শুরু হলে তার বড় সন্তান সাংবাদিক হামজা আদ-দাহদুহ (২৭), ভাতিজা আহমদ (৩০) ও মুহাম্মদ আদ-দাহদুহ নির্মমভাবে প্রাণ হারান।

১৬-১৭ জানুয়ারিতে কাতার ও মিসরীয় সাংবাদিকদের সিন্ডিকেটের তৎপরতায় ওয়ায়েল আদ-দাহদুহকে গাজা থেকে প্রথমে মিসর তারপর কাতারে সরিয়ে আনা হয়। এর আগে তার অন্য ৪ সন্তানকে মিসর নেওয়া হয়।

;

দেড় শতাধিক স্বজন হারানো ফিলিস্তিনি নারীকে হজ করালো সৌদি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজযাত্রীরা জামারা থেকে কংকর নিক্ষেপ করে ফিরছেন, ছবি: সংগৃহীত

হজযাত্রীরা জামারা থেকে কংকর নিক্ষেপ করে ফিরছেন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ফিলিস্তিনের নারী মাইশা হাসান। গাজায় দখলদার ইসরায়েলি হামলায় পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়সহ প্রায় দেড় শতাধিক স্বজন হারিয়েছেন তিনি। শতাধিক স্বজন হারানোর কষ্ট বুকে বয়ে বেড়ানো এই নারী সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের আমন্ত্রণে পবিত্র হজ পালন করেছেন।

হজ পালনের সুযোগ পেয়ে তিনি স্বস্তি ও শান্তি পেয়েছেন। স্বজন হারানো ব্যাথা ও কষ্ট আগের থেকে অনেকটাই কষ্ট কমে এসেছে তার। সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানের আমন্ত্রণে এক হাজার ফিলিস্তিনি এবার হজ পালনের সুযোগ পেয়েছেন। তাদের অন্যতম হলেন- মাইশা।

মাইশা জানান, তাদের বাড়িতে বোমা ফেলেছিল ইসরায়েল। এ কারণেই এত সংখ্যক স্বজনের প্রাণহানি হয়েছে। বাড়িটিও মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

বর্তমানে মাইশা হাসান গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একজন শরণার্থী। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত বিচ্ছিন্ন। টেলিভিশনের খবর থেকে তিকি শতাধিক স্বজনের মৃত্যু সম্পর্কে জানতে পারেন। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে মাত্র ২৫ জনের দাফন হয়েছে। বাকিরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন। তাদেরকে উদ্ধার করা যায়নি।

এ বছর পবিত্র হজ পালনের পর স্বজন হারানোর বেদনা কিছুটা কমেছে বলে জানান মাইশা। তিনি নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়েছেন। হজে গিয়ে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংসতার বিচার চেয়েছেন।

মাইশা হাসান তাকে হজে আমন্ত্রণের জন্য সৌদি বাদশাহকে ধন্যবাদ জানান। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, হজ তার দুঃখ-বেদনার চক্র ভেঙে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, এ বছর প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি হজ পালন করেছেন। এর মধ্যে ১ হাজার হলেন গাজার সেসব পরিবারের সদস্য- যারা ইসরায়েলি হামলায় নিহত বা আহত হয়েছেন কিংবা ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি আছেন। তাদের হজের যাবতীয় ব্যয় সৌদি সরকার বহন করছে।

;