তাসবিহে ফাতেমির অবাক করা ফজিলত
অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল তাসবিহে ফাতেমি, যা মুমিনরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমল করে থাকেন। তাসবিহে ফাতেমি হলো- বিশেষ কিছু জিকির, যা নবী কারিম (সা.) তার কলিজার টুকরা কন্যাকে শিক্ষা দিয়েছেন।
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, হজরত আলী (রা.) বলেন, একবার ফাতেমা (রা.) জাঁতা (গম পেষার যন্ত্র বিশেষ) ব্যবহারে তার হাতে যে কষ্ট পেতেন তার অভিযোগ নিয়ে নবী কারিম (সা.)-এর কাছে এলেন। কেননা তার কাছে নবী (সা.)-এর নিকট কিছু দাস আসার খবর পৌঁছে ছিল।
কিন্তু তিনি নবী (সা.)-কে পেলেন না। তিনি তার অভিযোগ আম্মাজান আয়েশা (রা.)-এর কাছে বলেন। নবী কারিম (সা.) ঘরে এলে হজরত আয়েশা (রা.) বিষয়টি তাকে জানালেন।
হজরত আলী (রা.) বলেন, রাতে আমরা যখন শুয়ে পড়েছিলাম, তখন তিনি (নবীজি) আমাদের কাছে এলেন। আমরা উঠতে চাইলাম, কিন্তু তিনি বলেন, তোমরা উভয়ে নিজ স্থানে থাকো। তিনি এসে আমার ও ফাতেমার মাঝখানে বসলেন। এমনকি আমি আমার পেটে তার দুই পায়ের শীতলতা উপলব্ধি করলাম। তারপর তিনি বললেন, তোমরা যা চেয়েছ তার চেয়ে কল্যাণকর বিষয় সম্পর্কে তোমাদের কি জানাবো না? তোমরা যখন তোমাদের শয্যাস্থানে যাবে, অথবা বললেন, তোমরা যখন তোমাদের বিছানায় যাবে, তখন তেত্রিশবার ‘সুবহানাল্লাহ’, তেত্রিশবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং চৌত্রিশবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। এটা খাদেম অপেক্ষা তোমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর। -সহিহ বোখারি : ৫৩৬১
সুবহানাল্লাহ, এই বিশেষ জিকিরগুলো, বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে করার নির্দেশনা হাদিসে পাওয়া যায়, প্রতিটিতেই এই আমলটির বিশেষ ফজিলত আছে। যেমন প্রতি নামাজের পর এই আমল করলে সাগরের ফেনা পরিমাণ গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি ওয়াক্ত নামাজের শেষে তেত্রিশবার আল্লাহর তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) বা পবিত্রতা বর্ণনা করবে, তেত্রিশবার আল্লাহর তামহিদ (আলহামদুলিল্লাহ) বা আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং তেত্রিশবার তাকবির বা আল্লাহর মহত্ত্ব (আল্লাহু আকবার) বর্ণনা করবে আর এভাবে নিরানব্বইবার হওয়ার পর শততম পূর্ণ করতে বলবে ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়াহুওয়া আলা-কুল্লি শাইয়িন্ ক্বাদির’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক ও তার কোনো অংশীদার নেই।
সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র তিনিই। সব প্রশংসা তারই প্রাপ্য। তিনি সব কিছু করতে সক্ষম- তার গোনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও ক্ষমা করে দেওয়া হয়। -সহিহ মুসলিম : ১২৩৯
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত কাব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন কতগুলো তাসবিহ রয়েছে যার পাঠকারী তার সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে না। প্রত্যেক নামাজের পর সে সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবর ৩৪ বার বলবে। -সুনানে নাসায়ি : ১৩৪৯