গোনাহ হয়ে গেলে করণীয়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গোনাহের শাস্তি থেকে বাঁচার উপায় হলো- তওবা ও ইস্তেগফার, ছবি: সংগৃহীত

গোনাহের শাস্তি থেকে বাঁচার উপায় হলো- তওবা ও ইস্তেগফার, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পৃথিবীর কোনো মানুষই চায় না- তার জীবনে ব্যর্থতা নেমে আসুক। চায় না- তাকে দুঃখ স্পর্শ করুক কিংবা স্পর্শ করুক হতাশা ও দুশ্চিন্তা। কিন্তু অমোঘ বাস্তবতা রুখবে কে? তাই সফলতার পাশাপাশি মানুষকে ব্যর্থতাও দেখতে হয়। সুখের সঙ্গে মেনে নিতে হয় দুঃখকেও। না চাইলেও সয়ে যেতে হয় দুর্দশা ও দুশ্চিন্তা।

জীবনের এসব ক্ষেত্রে মানুষ সবসময়ই যে নীতি-আদর্শে অবিচল থাকতে পারে- এমন নয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে সে সরে যায় করণীয় থেকে। লিপ্ত হয়ে পড়ে নিষিদ্ধ কিংবা অনুচিত নানা কাজে। এক্ষেত্রে মানুষের স্বভাব দুর্বলতা তো আছেই। আরও আছে উদাসীনতা ও অবহেলা, প্রবৃত্তি ও মন্দপ্রবণতা, আছে দৃঢ়তা ও অবিচলতার অভাব। উপরন্তু ইবলিস শয়তান তো আছেই। আছে তার ওয়াসওয়াসা ও কুমন্ত্রণতা।

মানুষের এসব অবস্থা, স্বভাবজাত দুর্বলতা, অবহেলা, মন্দপ্রবণতা ও শয়তানের কুমন্ত্রণার কথা খুব ভালোভাবেই জানেন তিনি, যিনি সবার সৃষ্টিকর্তা ও স্রষ্টা এবং মালিক ও সর্বাধিকারী। তাই খুব সহজ ও সুন্দর প্রতিবিধানের ব্যবস্থা রেখেছেন তিনি। দিয়েছেন উদ্ধারকারী সহজ মাধ্যম এবং প্রতিষেধমূলক সহজ প্রক্রিয়া। তা হলো- গোনাহের প্রতিবিধানে তওবা করা।

জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃত গোনাহের প্রতিবিধান সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে কেউ কোনো মন্দ কাজ করবে অথবা নিজের প্রতি জুলুম করবে, তারপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে- সে আল্লাহকে পাবে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সূরা নিসা : ১১০

এখানে মন্দ কাজ তথা ছোট ছোট গোনাহ এবং নিজের প্রতি জুলুম তথা বড় ধরনের গোনাহ- উভয়টির ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার কথা। বলা হয়েছে, ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহকে পাবে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। অর্থাৎ বান্দা কোনো ভুল, অপরাধ বা সীমালঙ্ঘন করলেও তার প্রতি তিনি অত্যন্ত দয়ার আচরণ করেন। ক্ষমাগুণ প্রকাশ করেন। তাই দৃঢ় আশা করা যায় যে, তিনি বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন।

বাস্তবে সুস্থ বিবেকের অধিকারী কোনো মানুষই চায় না খারাপ হতে। চায় না মন্দ কাজ করতে কিংবা অপরাধী হতে। কিন্তু মানুষের স্বভাবজাত দুর্বলতা, আত্মনিয়ন্ত্রণে শিথিলতা এবং নফস ও শয়তানের প্রবঞ্চনা তাকে এসবে লিপ্ত করে ফেলে। তাছাড়া দুনিয়া যেহেতু পরীক্ষার জায়গা, এখানে ভালো ও মন্দ উভয় কাজের শক্তি দিয়ে মানুষকে পাঠানো হয়েছে। এরপর ভালো ও নেক কাজে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। মন্দ ও গোনাহের কাজে ঘোষণা করা হয়েছে শাস্তি। সেই শাস্তি থেকেই বাঁচার উপায় হলো- তওবা ও ইস্তেগফার।

অন্য একটি আয়াতে আরও উদারব্যপ্ত ঘোষণা এসেছে। এসেছে অভয় ও আশ্বাসবাণী। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি বলে দিন, হে আমার সেই বান্দারা! যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ! আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সূরা যুমার : ৫৩

গোনাহ হয়ে গেছে! নিজের প্রতি অবিচার করেছ! সীমালঙ্ঘন করেছ! তবু নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। এমন অভয় ও আশ্বাসবাণী পাওয়ার পর একজন মুমিনের হৃদয়ে কী আস্থা ও শক্তি অনুভূত হয় তা খুব সহজেই অনুমেয়।

শুধু তাই নয়। তওবা ও ইস্তেগফারের প্রতি তিনি আলাদাভাবেও উৎসাহ দিয়েছেন। নির্দেশ করেছেন ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং দ্রুত অগ্রসর হও তোমার রবের ক্ষমার দিকে এবং জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আসমানসমূহ ও জমিনের (প্রশস্ততার) ন্যায়। যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য।’ -সূরা আলে ইমরান : ১৩৩

অর্থাৎ যদি আল্লাহতায়ালার ক্ষমা লাভ করতে পার এবং যদি আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানী জুটে যায় তাহলে সেই জান্নাত পেতে পার, যার প্রশস্ততা আসমানসমূহ ও জমিনের (প্রশস্ততার) ন্যায়। যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য। মোটকথা, আল্লাহর ক্ষমা লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হল তওবা। আর সেটা তো মুত্তাকিদেরই পরিচয়-বৈশিষ্ট্য।

তওবা-ইস্তেগফারের বিভিন্ন ফায়েদার কথাও উল্লেখিত হয়েছে কোরআন মাজিদে। যেমন হজরত নুহ আলাইহিস সালামের ভাষায় ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি বলেছি, তোমরা আপন রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তোমাদেরকে ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধ করবেন। তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন উদ্যানরাজি আর তোমাদের জন্য প্রবাহিত করবেন নদ-নদী।’ -সূরা নুহ : ১০-১২

অর্থাৎ ইস্তেগফার ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে এসব বিষয় লাভ হবে। আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করবেন। আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধ করবেন এবং বাগ-বাগিচা ও নদ-নদীর ব্যবস্থা করে দেবেন।

স্পষ্ট কথা হলো- এগুলোর প্রত্যেকটিই এমন, যা ছাড়া মানুষের জীবন ও জগৎ প্রায় অচল। সেগুলোই খুব সহজে লাভ হতে পারে ইস্তেগফারের মাধ্যমে।

কোরআন তেলাওয়াতে শান্তি খুঁজছে গাজার নারীরা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
তাঁবু মসজিদে কোরআন তেলাওয়াত করছেন নারীরা, ছবি: সংগৃহীত

তাঁবু মসজিদে কোরআন তেলাওয়াত করছেন নারীরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম আর অবিরাম দখলদার ইসরায়েলি হামলার ভয়াবহতায় জর্জরিত গাজার নারীরা এখন শান্তি খুঁজে নিচ্ছেন কোরআনে কারিমের পবিত্র বাণীতে। বারবার হামলা, প্রিয়জনদের মৃত্যু, বাস্তুচ্যুতি, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাদের জীবনকে করে তুলেছে অসহনীয়। এমন পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া নারীরা কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত ও মুখস্থ (হেফজ) করাকে বেছে নিয়েছেন আত্মার শান্তি ও শক্তির অবলম্বন হিসেবে।

গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী শায়মা আবুলাত্তা (২০) কিংবা ইসলামিক আইনে ডিগ্রিধারী ইমান আসেমের (৩৪) এখন আর পড়াশোনা কিংবা কর্মজীবনের স্বপ্ন নেই। বারবার হামলায় বাস্তুচ্যুত হওয়ার হিসেব তারা রাখতে পারেন না। ৫০-৬০ জন করে প্রিয়জনকে হারিয়ে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তাও খুঁজে পান না তারা।

এমন মর্মন্তুদ অবস্থায় শায়মা, আসেমের মতো অনেক নারী শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন শিশুদের কোরআন মাজিদ শিক্ষা দেওয়ার। মধ্য গাজার দেইর আল বালাহ এলাকায় একটি তাঁবু মসজিদ স্থাপন করে তারা শুরু করেন কোরআন মাজিদ শিক্ষাদান।

যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝেই এই তিন নারী কোরআনের হাফেজ হয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

শায়মা বলেন, একানে নেই বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, খাবার, গরম থেকে সুরক্ষার কোনো কিছুই। বিমান হামলা, বোমা বিস্ফোরণ এবং প্রিয়জন হারানো রুটিনে পরিণত হয়েছে আমাদের।’

ইসরায়েলি বোমা হামলার ধ্বংসাবশেষ আর নোংরা পানিতে প্লাবিত রাস্তা পেরিয়ে মধ্য গাজার বাস্তুচ্যুত নারীরা এই তাঁবুর মসজিদে নিয়মিত মিলিত হন, তাদের একমাত্র সঙ্গী কোরআন।

গত ৪ জুন এই তাঁবু মসজিদে ছয়জন নারী পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হয়েছেন। ঘটনাটি সবার মধ্যে এক নতুন আশার জাগিয়ে তোলে। এরপর থেকেই আরও বেশি নারী কোরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থ করার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

‘তারা যখন কোরআন মাজিদের শেষ অংশটি তেলাওয়াত করলো, আমরা সবাই আনন্দে কেঁদে দেই। প্রথমে অবিশ্বাস মনে হচ্ছিল, এই কঠিন সময়ে কোরআন মুখস্থ নিশ্চয়ই স্মরণীয় বিষয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবেশ, বাঁচার নিশ্চয়তা নেই। আমাদের হাতে কিছুই নেই। এমন অবস্থায় আমাদের শক্তি জোগাচ্ছে কেবল আল কোরআন,’ বলেন শায়মা।

প্রথমে ছোট পরিসরে কোরআন মাজিদ শিক্ষা শুরু হলেও পরে শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায় তাঁবু দিয়ে মসজিদ তৈরি করা হয়। মসজিদের নাম রাখা হয় ‘প্রেয়ার হল অব দ্য সার্কেল অব দ্য গুড ওয়ার্ড।’ মসজিদের ফটকে কোরআনের একটি আয়াত লেখা হয়- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।’

বর্তমানে এই মসজিদে ৩ বছর বয়সী শিশু থেকে শুরু করে ৭০-৮০ বছর বয়সী নারীরাও কোরআন শিখতে আসছেন। প্রায় একশ নারী নিয়মিত এখানে কোরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থ করেন।

মসজিদের সামনে লেখা কোরআনের আয়াত, নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে অন্তর প্রশান্তি লাভ করে, ছবি: সংগৃহীত

‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারি। এ অবস্থায় আমরা শেষ যে কাজটি করতে চাই, সেটি হলো কোরআন মুখস্থ করে মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করা,’ বলেন শায়মা।

যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তারা বিশ্বাস করেন, তাদের এই কোরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থকরণের সওয়াব চলে যাবে তাদের প্রিয়জনদের কাছে। ফলে তারা দিন দিন আরও বেশি করে কোরআনের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে নিচ্ছেন।

শায়মা যোগ করেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা কোরআন মাজিদের যত কাছাকাছি হবো এবং যত বেশি মুখস্থ করব, ততই আমরা যুদ্ধ এবং দুঃখকষ্টের অবসান ঘটাতে পারব- ইনশাআল্লাহ।’

;

মাতাফ ও মসজিদে হারামের নিচতলা উমরাকারীদের জন্য সংরক্ষিত



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: পবিত্র কাবা তাওয়াফ করছেন উমরাকারীরা।

ছবি: পবিত্র কাবা তাওয়াফ করছেন উমরাকারীরা।

  • Font increase
  • Font Decrease

আগের নিয়মে ফিরছে পবিত্র কাবার মাতাফ। এখন থেকে স্বাভাবিক পোশাকে আর মাতাফে (কাবার চার পাশের উন্মুক্ত জায়গাকে মাতাফ বলে) তাওয়াফ করা যাবে না। মাতাফ ও মসজিদে হারামের নিচতলা শুধুমাত্র উমরাকারীদের জন্য সংরক্ষিত। তবে স্বাভাবিক পোশাকে নফল তাওয়াফ মসজিদের হারামের অন্যান্য ফ্লোরে করা যাবে।

রবিবার (৩০ জুন) থেকে এই নিয়ম কার্যকর হয়েছে বলে সৌদি আরবের জননিরাপত্তা অধিদপ্তর ও হারামাইন পরিচালনা পরিষদ ঘোষণা দিয়েছে।

আরব নিউজের খবরে বলা হয়, মাতাফ ও মসজিদে হারামের নিচতলায় এখন থেকে শুধুমাত্র উমরা পালনকারীরা প্রবেশ করতে পারবেন।

এর মাধ্যমে নতুন উমরা মৌসুম শুরু কথা বলা হয়েছে। ঘোষণায় বলা হয়, এর ফলে উমরা পালনকারীরা স্বাচ্ছন্দে কাবা তাওয়াফ করাতে পারবেন।

উল্লেখ, ২০২৪ সালের হজ মৌসুম শেষ হওয়ার পর সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় উমরা ভিসা দেওয়া শুরু করেছে।

করোনার পর থেকে মাতাফে ইহরাম পরিধান ছাড়া কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না। অর্থাৎ যারা উমরা পালন করবেন, শুধুমাত্র তারাই মাতাফে গিয়ে পবিত্র কাবা তওয়াফ করতে পারেন।

যদিও স্বাভাবিকভাবে নফল তাওয়াফ মসজিদে হারামের বিভিন্ন ফ্লোরে করার ব্যবস্থা রয়েছে। এমতাবস্থায় অনেকে ইহরামের কাপড় পরিধান করে মাতাফে নামেন এবং নফল তাওয়াফ করেন। এভাবে উমরার নিয়ত ছাড়া ইহরামের কাপড় পরিধান করে নফল তাওয়াফ করতে ইসলামি স্কলাররা নিরুৎসাহিত করেছেন।

তাদের মতে, উমরার নিয়ত ছাড়া ইহরামের কাপড় পরিধান করে নফল তাওয়াফ করা জায়েজ আছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা না মেনে উল্লিখিত কৌশল অবলম্বন করা ঠিক নয়। বরং এটি প্রতারণার মাধ্যমে নিজের আত্মসম্মান বিপন্ন করার মতো একটি বিষয়। তাই এই ধরনের তাওয়াফ করা থেকে বিরত থাকা চাই।

;

হাজিরা মদিনায় যেসব কাজ করেন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে নববি থেকে বের হচ্ছেন হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে নববি থেকে বের হচ্ছেন হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম মদিনাতে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদকে কেন্দ্র করে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পারস্পরিক সহাবস্থানের নীতি ঘোষণা করে একটি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে এক জাতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলে মদিনায় শান্তি স্থাপিত হয়।

চার খলিফার আমলে মদিনাই ছিল দারুল খিলাফত বা রাজধানী (৬৫৬ খ্রি. পর্যন্ত)। হাদিস শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবেও মদিনার সুখ্যাতি ছিল। বায়তুল্লাহ শরিফ জিয়ারত করার পর হাজিদের মদিনায় যেতে হয়।

ফরজ হজ আদায়ের পর বা আগে হাজিরা মদিনায় যান, তারা মসজিদে নববিতে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ ও রওজায়ে আতহারে সালাম পেশ করেন। অবসর সময়ে মদিনার ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখেন।

ফজর নামাজের পরে বের হলে সবকিছু ভালোভাবে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। মসজিদে নববির সামনে ও শহরের অন্যান্য রাস্তায় চালকেরা ‘জিয়ারা, জিয়ারা’ বলে হাজিদের ডাকাডাকি করেন ট্যাক্সি ড্রাইভাররা। জিয়ারা মানে ‘ভ্রমণ’। সেখান থেকে দলবেঁধে কিংবা একা যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

উহুদ যুদ্ধের প্রান্তর, ছবি: সংগৃহীত

সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, হজের পর বিপুল সংখ্যক হাজি মদিনায় এসেছেন। মদিনায় হাজিরা ঐতিহাসিক কুবা মসজিদ, দুই কিবলার মসজিদ, খন্দক যুদ্ধের স্থান এবং উহুদ পাহাড় দেখার পাশাপাশি স্থানীয় ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, কেনাকাটা ও মসজিদে নববিতে নামাজ আদায় করে সময় কাটাচ্ছেন।

হাজিরা সাধারণত মসজিদে নববিতে নামাজ শেষে রওজা শরিফে সালাম পেশ করে নফল আমল, জিকির-আজকার ও কোরআন তেলাওয়াত শেষে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনের জন্য রওয়ানা হন।

মদিনার ব্যবস্থাপনা নিয়ে হাজিরা জানান, চমৎকার আয়োজনের কারণে তাদের কোনো সমস্যা হয় না। এখানকার মানুষজন অত্যন্ত বন্ধুবৎসল। বিভিন্ন স্থান দেখার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে থাকে মসজিদে কুবা। এখানে দুই রাকাত নফল আদায়ের পর, অনেকেই মসজিদ কিবলাতাইনে যান। এ ছাড়া মসজিদে কুবার কাছে রয়েছে মসজিদে জুমা। যেখানে মদিনায় হিজরতের পর প্রথম জুমার নামাজ পড়া হয়।

একমাত্র আল্লাহতায়ালাকে রাজি-খুশি করার জন্য তাকওয়ার ভিত্তিতে নির্মিত হয়েছে মসজিদে কুবা। আল্লাহতায়ালা স্বয়ং এ মসজিদের পক্ষে সাক্ষী দিয়েছেন ও এখানে যারা নামাজ আদায় করতেন তাদের প্রশংসা করেছেন।

কেনাকাটা করছেন হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী কারিম (সা.) প্রতি শনিবার, পায়ে হেঁটে অথবা বাহনে চড়ে, মসজিদে কুবায় আসতেন। সহিহ বোখারি : ১১৯৩

এই হাদিসের অনুসরণে অনেকেই মসজিদে নববি থেকে হেঁটে মসজিদে কুবায় যান। হেঁটে যাওয়ার জন্য প্রশস্ত রাস্তার ব্যবস্থা রয়েছে। পথে রয়েছে ছোট ছোট দোকান, যেখানে খাবার ছাড়াও বিভিন্ন স্যুভেনির বিক্রি করা হয়, আরও রয়েছে প্রচুর খেজুরের দোকান। সেখান থেকে হাজিরা তাদের প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার জন্য খেজুর, টুপি, তাসবিহসহ বিভিন্ন জিনিস কেনেন।

মদিনায় হাজিরা উহুদ পাহাড় এবং উহুদ যুদ্ধের স্থান এবং শহিদদের কবর জিয়ারত করেন। হাজিদের পরিদর্শনের জায়গা থেকে বাদ যায় না, মদিনার খেজুরের বাগানও। হাজিরা এসব স্থান পরিদর্শনের পাশাপাশি স্মৃতি হিসেবে ছবি তুলেন। সেই সঙ্গে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি হিসেবে মসজিদে নববিকে ঘিরে গড়ে ওঠা বাজারগুলো থেকে প্রয়োজনমতো কেনাকাটা করেন। এভাবে নির্ধারিত আট দিন কেটে যায় হাজিদের।

;

নবীজিকে যে কূপের পানি দিয়ে শেষ গোসল দেওয়া হয়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গারস কূপ, মদিনা, ছবি: সংগৃহীত

গারস কূপ, মদিনা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র হজ শেষে মদিনায় আসা হাজিরা এখানকার ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করছেন। এসব স্থানের মাঝে হাজিদের বিশেষ আগ্রহ গারস কূপকে ঘিরে। দর্শনার্থীরা এই কূপের পানি সংগ্রহ করেন, স্মৃতি হিসেবে ছবি তোলেন।

১৫ শতাব্দী পুরোনো কূপটি কুবা মসজিদের প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে আল-আওয়ালি পাড়ায় অবস্থিত, জায়গাটি মসজিদে নববির দক্ষিণে। বর্তমানে কূপটি সংস্কার করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সংস্কারের পর কূপের চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ হাঁটার জন্য প্রশস্ত রাস্তা বানানো হয়েছে। রয়েছে অজু ও নামাজের জায়গা, এ ছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য পানির কল স্থাপন করা হয়েছে- যেন তারা সহজেই পানি সংগ্রহ করতে পারেন।

কূপটি মালিক বিন আনা-নাহাত খনন করেন। তিনি ছিলেন সাহাবি সাদ বিন খাইছামার দাদা। তার ঘরেই (কুবায়) আল্লাহর রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকালে অবতরণ করেন। ওই সময় তিনি এই কূপের মালিক ছিলেন। গারস কূপের পানি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে পান করতেন। মৃত্যুর পর নবী করিম (সা.)-কে এই কূপের পানি এনে বরইপাতা মিশ্রিত করে পানি গরম করার পর গোসল দেওয়া হয়।

দর্শনার্থীরা গারস কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন, ছবি: সংগৃহীত

এখানে ইংরেজিতে সাইনবোর্ড টাঙানো আছে ‘গারস ওয়েল’ বা গারস কূপ। লোহার নেট দিয়ে আটকানো কুয়াটির চারদিক। এই কূপের পানি বেশ মিষ্টি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত এখানে আসতেন। এই কূপের পানি দিয়ে গোসল ও অজু করতেন। এই কূপের পানি পান করতেন। তিনি একসময় হজরত আলী (রা.)-কে ডেকে বলেন, মৃত্যুর পর যেন এই কূপের পানি দিয়ে তার শেষ গোসল করানো হয়। হজরত আলী (রা.) তার কথামতো এখানকার পানি দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে শেষ গোসল করিয়েছিলেন।

কূপের চারদিকে রয়েছে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং তার সাহাবিদের পদধূলি। এখনও প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী কূপটি দেখতে আসেন। কূপটি বর্তমানে সৌদি আরবের একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে বিবেচিত। সৌদি কমিশন ফর ট্যুরিজম এবং ন্যাশনাল হেরিটেজ বর্তমানে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করে।

এই কূপ ছাড়াও মদিনায় আরও বিখ্যাত দুটি কূপ আছে। একটি বিরে শিফা (শিফা কূপ) ও বিরে উসমান (উসমান রা.-এর কূপ)। বিরে শিফা ছিল মদিনার একটি দূষিত ও বিষাক্ত পানির কূপ। এটি মদিনা থেকে ১০২ কিলোমিটার দূরে বদর যাওয়ার পথে মূল সড়ক থেকে হাতের ডানে সাত কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত। বদর যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে পানির সংকট দেখা দিলে এই কূপে রাসুল (সা.) থুথু নিক্ষেপ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, পরে এর বিষাক্ত পানি সুপেয় পানিতে পরিণত হয়। এখান থেকেও দর্শনার্থীরা পানি সংগ্রহ করেন।

অন্যদিকে মদিনার অন্যতম সুপেয় পানির উৎস ছিল বিরে উসমান। শুরুতে এই কূপটি মদিনার এক ইহুদির মালিকানাধীন ছিল। সে চড়ামূল্যে কূপটির পানি বিক্রি করত। পরে হিজরতের পর হজরত উসমান (রা.) ইহুদির কাছ থেকে কূপটি কিনে নেন এবং সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য ওয়াকফ করে দেন। হজরত উসমান (রা.)-এর নামে এই কূপের নামকরণ করা হয় বিরে উসমান।

বিরে উসমান বা উসমানের কূপ এখনো বিদ্যমান। এই কূপের স্বচ্ছপানিও প্রবহমান। সৌদি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ওই কূপের চারপাশে গড়ে ওঠা খেজুর বাগানে আজও কূপের পানি দিয়েই সেচকার্য সমাধা করা হয়। প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকা হজরত উসমানের (রা.) এই কূপের আসল নাম ‘বিরে রুমা’ বা রুমা কূপ। কূপটির মালিক রুমা নামক এক ব্যক্তির নামানুসারে এটাকে রুমা কূপ বলা হতো। হজরত উসমান (রা.) ৩৫ হাজার দিরহামের বিনিময়ে কূপটি কিনে রাসুলকে (সা.) বলেন, আমি কূপটি কিনে নিয়েছি এবং আজ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত এই কূপের পানি সমস্ত মুসলমানের জন্য উন্মুক্ত করে দিলাম।

;