নবীজিকে যে কূপের পানি দিয়ে শেষ গোসল দেওয়া হয়

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গারস কূপ, মদিনা, ছবি: সংগৃহীত

গারস কূপ, মদিনা, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র হজ শেষে মদিনায় আসা হাজিরা এখানকার ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করছেন। এসব স্থানের মাঝে হাজিদের বিশেষ আগ্রহ গারস কূপকে ঘিরে। দর্শনার্থীরা এই কূপের পানি সংগ্রহ করেন, স্মৃতি হিসেবে ছবি তোলেন।

১৫ শতাব্দী পুরোনো কূপটি কুবা মসজিদের প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে আল-আওয়ালি পাড়ায় অবস্থিত, জায়গাটি মসজিদে নববির দক্ষিণে। বর্তমানে কূপটি সংস্কার করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সংস্কারের পর কূপের চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ হাঁটার জন্য প্রশস্ত রাস্তা বানানো হয়েছে। রয়েছে অজু ও নামাজের জায়গা, এ ছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য পানির কল স্থাপন করা হয়েছে- যেন তারা সহজেই পানি সংগ্রহ করতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

কূপটি মালিক বিন আনা-নাহাত খনন করেন। তিনি ছিলেন সাহাবি সাদ বিন খাইছামার দাদা। তার ঘরেই (কুবায়) আল্লাহর রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকালে অবতরণ করেন। ওই সময় তিনি এই কূপের মালিক ছিলেন। গারস কূপের পানি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে পান করতেন। মৃত্যুর পর নবী করিম (সা.)-কে এই কূপের পানি এনে বরইপাতা মিশ্রিত করে পানি গরম করার পর গোসল দেওয়া হয়।

দর্শনার্থীরা গারস কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন, ছবি: সংগৃহীত

এখানে ইংরেজিতে সাইনবোর্ড টাঙানো আছে ‘গারস ওয়েল’ বা গারস কূপ। লোহার নেট দিয়ে আটকানো কুয়াটির চারদিক। এই কূপের পানি বেশ মিষ্টি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত এখানে আসতেন। এই কূপের পানি দিয়ে গোসল ও অজু করতেন। এই কূপের পানি পান করতেন। তিনি একসময় হজরত আলী (রা.)-কে ডেকে বলেন, মৃত্যুর পর যেন এই কূপের পানি দিয়ে তার শেষ গোসল করানো হয়। হজরত আলী (রা.) তার কথামতো এখানকার পানি দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে শেষ গোসল করিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

কূপের চারদিকে রয়েছে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং তার সাহাবিদের পদধূলি। এখনও প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী কূপটি দেখতে আসেন। কূপটি বর্তমানে সৌদি আরবের একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে বিবেচিত। সৌদি কমিশন ফর ট্যুরিজম এবং ন্যাশনাল হেরিটেজ বর্তমানে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করে।

এই কূপ ছাড়াও মদিনায় আরও বিখ্যাত দুটি কূপ আছে। একটি বিরে শিফা (শিফা কূপ) ও বিরে উসমান (উসমান রা.-এর কূপ)। বিরে শিফা ছিল মদিনার একটি দূষিত ও বিষাক্ত পানির কূপ। এটি মদিনা থেকে ১০২ কিলোমিটার দূরে বদর যাওয়ার পথে মূল সড়ক থেকে হাতের ডানে সাত কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত। বদর যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে পানির সংকট দেখা দিলে এই কূপে রাসুল (সা.) থুথু নিক্ষেপ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, পরে এর বিষাক্ত পানি সুপেয় পানিতে পরিণত হয়। এখান থেকেও দর্শনার্থীরা পানি সংগ্রহ করেন।

অন্যদিকে মদিনার অন্যতম সুপেয় পানির উৎস ছিল বিরে উসমান। শুরুতে এই কূপটি মদিনার এক ইহুদির মালিকানাধীন ছিল। সে চড়ামূল্যে কূপটির পানি বিক্রি করত। পরে হিজরতের পর হজরত উসমান (রা.) ইহুদির কাছ থেকে কূপটি কিনে নেন এবং সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য ওয়াকফ করে দেন। হজরত উসমান (রা.)-এর নামে এই কূপের নামকরণ করা হয় বিরে উসমান।

বিরে উসমান বা উসমানের কূপ এখনো বিদ্যমান। এই কূপের স্বচ্ছপানিও প্রবহমান। সৌদি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ওই কূপের চারপাশে গড়ে ওঠা খেজুর বাগানে আজও কূপের পানি দিয়েই সেচকার্য সমাধা করা হয়। প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকা হজরত উসমানের (রা.) এই কূপের আসল নাম ‘বিরে রুমা’ বা রুমা কূপ। কূপটির মালিক রুমা নামক এক ব্যক্তির নামানুসারে এটাকে রুমা কূপ বলা হতো। হজরত উসমান (রা.) ৩৫ হাজার দিরহামের বিনিময়ে কূপটি কিনে রাসুলকে (সা.) বলেন, আমি কূপটি কিনে নিয়েছি এবং আজ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত এই কূপের পানি সমস্ত মুসলমানের জন্য উন্মুক্ত করে দিলাম।