মদিনার কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্সে বছরে ১০ লাখ দর্শনার্থী

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মদিনার কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্সে দর্শনার্থীদের কোরআন উপহার দেওয়া হয়, ছবি: সংগৃহীত

মদিনার কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্সে দর্শনার্থীদের কোরআন উপহার দেওয়া হয়, ছবি: সংগৃহীত

মদিনায় অবস্থিত কিং ফাহাদ কমপ্লেক্স ফর দ্য প্রিন্টিং অব দ্য হলি কোরআন সৌদি সরকারের অধীন একটি প্রকাশনা সংস্থা। এখানে পবিত্র কোরআন ও বিভিন্ন ভাষার তাফসিরসহ বিভিন্ন ইসলামি গ্রন্থাদি ছাপানো হয়। গত এক বছরে কারখানাটি পরিদর্শন করেছেন ১০ লাখের বেশি মানুষ।

সৌদি আরবের সরকারি বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই থেকে চলতি মাসের ৬ জুলাই পর্যন্ত হজ পালনকারী, উমরাযাত্রী এবং সাধারণ পর্যটক মিলিয়ে বিভিন্ন দেশের ১০ লাখ ১৯ হাজার ৪৯৪ জন দর্শনার্থী বাদশাহ ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

দর্শনার্থীরা কমপ্লেক্সে পবিত্র কোরআন মুদ্রণের বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে জানার সুযোগ পান। এখান থেকে বছরে দুই কোটি কপি কোরআন ছাপানো হয়। মসজিদে হারাম, মসজিদে নববিসহ সৌদি আরবের সব মসজিদ এবং সারা বিশ্বের মসজিদে মসজিদে বিতরণ করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের সব ভাষায় পবিত্র কোরআন ছাপানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ৭৬ ভাষায় পবিত্র কোরআনের অনুবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে বিশেষ অ্যাপ, যেখান থেকে সহজে কোরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি স্মার্টফোনে কোরআন তেলাওয়াত শোনা অনেক সহজ।

বিজ্ঞাপন
কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, ছবি: সংগৃহীত

কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স থেকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন ভার্সনে কোরআন তেলওয়াতের রেকর্ড করা হয়। বিশ্বে প্রথমবারের মতো ব্রেইল পদ্ধতির কোরআন মাজিদের কপিও এখান থেকে প্রকাশিত হয়। এছাড়া শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য পবিত্র কোরআনের অডিও সংস্করণ তৈরি করা এই কমপ্লেক্স থেকে। ইতোমধ্যেই ডিজিটাল মাধ্যমে ১২টি ভাষার কোরআন প্রকাশ করা হয়েছে।

বর্তমানে সারাবিশ্বে ছাপা হওয়া পবিত্র কোরআনের কপিসমূহের অধিকাংশই এই ছাপাখানা থেকে ছাপানো। কমপ্লেক্সে প্রায় দুই হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারি কর্মরত। বর্তমানে এখান থেকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিতরণের জন্য ধর্মীয় বই ছাপা হয়। বিশেষ বিশেষজ্ঞদের একটি দল কোরআন মাজিদের কপি ও অনুবাদসমূহ পরীক্ষনের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে নিযুক্ত রয়েছেন।

কিং ফাহাদ কমপ্লেক্স থেকে ছাপা হওয়া কোরআন মাজিদের পান্ডুলিপিগুলো ‘মাসহাফে মদিনা’ লিপিতে লিখিত, যার সঙ্গে আরবি ক্যালিগ্রাফির নাসখ রীতির বিশেষ মিল রয়েছে। বিখ্যাত সিরিয় ক্যালিগ্রাফার উসমান তালহার হাতে এই লিপিটি বিকশিত হয়, তিনি এই কমপ্লেক্সে শুরু থেকে বিশ বছরেরও অধিক কাজ করেন। তার হাতে লিখিত কোরআন মাজিদের পান্ডুলিপি হাইরেজুলেশনে স্ক্যান করে বিভিন্ন আকৃতির পান্ডুলিপি এখান থেকে ছাপানো হয়।

১৯৮৪ সালের ৩০ অক্টোবর সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজের উদ্যোগে কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মিনিস্ট্রি অব ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স, ওয়াকফ, দাওয়া অ্যান্ড গাইডেন্সের নিয়ন্ত্রণাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত মোট প্রায় ৪ শ’ মিলিয়নের মতো কোরআন মাজিদের কপি প্রকাশ করেছে।

কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্সে ছাপানো পবিত্র কোরআনের কপি উমরা ও হজযাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। কমপ্লেক্স পরিদর্শনে দেখতে আসা দর্শনার্থীদের উপহার দেওয়া হয়।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারেন। দেখতে পারেন কোরআন মুদ্রণ প্রক্রিয়া। এছাড়া বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত কোরআনের কপিও পরিদর্শন করতে পারেন অতিথিরা।

কমপ্লেক্সে রয়েছে একটি মসজিদ, প্রশাসনিক ভবন, ছাপাখানা, গুদাম, পরিবহন সুবিধা, আবাসন, ক্লিনিক, গ্রন্থাগার, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য পরিষেবা।