আশুরার রোজা কবে রাখতে হবে

  • মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আশুরার রোজা অত্যন্ত ফজিলতময়, ছবি: বার্তা২৪.কম

আশুরার রোজা অত্যন্ত ফজিলতময়, ছবি: বার্তা২৪.কম

ইসলামের প্রাথমিক যুগে আশুরার রোজা ফরজ ছিলো। হিজরি দ্বিতীয় সনে রমজানের রোজা ফরজের বিধান নাজিল হলে আশুরার রোজা নফল হিসেবে বিবেচিত হয়। আশুরা দিবসে রোজা পালনের জন্য হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘রমজানের পর সর্বাধিক উত্তম রোজা হলো- মহররম মাসের রোজা। আর ফরজের পরে সর্বাধিক উত্তম নামাজ হলো- তাহাজ্জুদের নামাজ।’ -সহিহ মুসলিম

উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘জাহেলি যুগে কুরাইশরা আশুরার দিনে রোজা পালন করতো। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সে সময় রোজা পালন করতেন। মদিনায় এসেও তিনি রোজা পালন করতেন এবং অন্যদেরও নির্দেশ দেন। রমজানের রোজার আদেশ নাজিল হলে আশুরার রোজা শিথিল করা হয়। এখন কেউ চাইলে তা পালন করুক, আর চাইলে তা বর্জন করুক।’ -সহিহ বোখারি

বিজ্ঞাপন

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘রমজানের রোজার পর মহররম মাসের রোজা আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে বেশি ফজিলতময়।’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

এভাবে হাদিসের প্রায় সব কিতাবে মহররম মাসের ফজিলত এবং এ মাসের ১০ তারিখ আশুরার রোজা সম্পর্কে হজরত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত একাধিক হাদিস রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

১০ মহররম আশুরার দিনে রোজার ফজিলত প্রসঙ্গে হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘এ আশুরার দিন রোজা রাখার কারণে আল্লাহতায়ালা বান্দার বিগত এক বছরের গোনাহসমূহ মাফ করে দেন।’ -সহিহ মুসলিম

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী আশুরার রোজা রাখার সময়টি ঘনিয়ে এসেছে। ১০ মহররম আশুরার দিন ঠিক রেখে আগের কিংবা পরের দিন মিলিয়ে ২ দিন রোজা রাখা উত্তম। সে হিসেবে এ বছর চাইলে ১৬-১৭ জুলাই মঙ্গলবার ও বুধবার রোজা রাখা যায়। আবার চাইলে ১৭-১৮ জুলাই বুধবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা যায়।

তবে আশুরার রোজার বিধান প্রসঙ্গে আলেমদের অভিমত হলো, কেউ যদি শুধু মহররম মাসের ১০ তারিখ রোজা রাখেন এবং এর আগে বা পরে একটি রোজা যোগ না করেন, তবে তা মাকরূহ নয়; বরং এতে মুস্তাহাব বিঘ্নিত হবে।

প্রকৃত সুন্নত হলো, আগের ৯ মহররম বা পরের দিনের সঙ্গে ১১ মহররম মিলিয়ে মোট ২ দিন রোজা রাখা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা মহররমের নবম ও দশম দিবসে রোজা রাখো।’ -জামে তিরমিজি

তবে যে এ আশুরার দিন রোজা রাখতে পারল না, তার জন্য কোনো সমস্যা কিংবা আশাহত হওয়ার কিছু নেই। আবার কেউ যদি যদি মহররমের ৯, ১০ এবং ১১ তারিখ মোট ৩ দিন রোজা রাখেন তবে তা সর্বোত্তম হিসেবে গণ্য হবে। ইমাম ইবনুল কাইয়ুম (রহ.) এ মত উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে আশুরার এ রোজা পালনের মাধ্যমে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ পালন করার তওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক