যে আমলের অবহেলায় এসেছে কঠোর হুঁশিয়ারি
আমাদের কাছে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বড় হক হচ্ছে, তার শানে দরুদ ও সালাম নিবেদন করা। কখনও কখনও এ হক আরও জোরালো হয়। বিশেষ করে যখন নবী কারিম (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হয় তখন নবীজীর প্রতি দরুদ পড়া খুবই জরুরি।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, নবীজী (সা.) বলেন, ওই ব্যক্তির জন্য ধিক, যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত হয় আর সে আমার প্রতি দরুদ পড়ে না। ওই ব্যক্তির জন্য ধিক, যে রমজান পেল অতঃপর তার গোনাহ মাফ হওয়ার পূর্বেই তা গত হয়ে গেল। ওই ব্যক্তির জন্য ধিক, যে পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল অথচ তাদের (সেবা ও দোয়া নেওয়ার) মাধ্যমে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। -মুসনাদে আহমাদ : ৭৪৫১
অতএব নবী কারিম (সা.)-এর নাম শুনলে দরুদ পড়ার আমল করা খুবই জরুরি। এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কৃপণ ওই ব্যক্তি, যার নিকট আমার নাম আলোচিত হলো, অথচ সে আমার প্রতি দরুদ পড়ল না।’ -জামে তিরমিজি : ৩৫৪৬
নবী কারিম (সা.) এ ধরনের ব্যক্তিকে কৃপণ বলেছেন এবং যথার্থই বলেছেন। সাধারণত কৃপণ ওই ব্যক্তিকে বলা হয়, যে কাউকে কিছু প্রদানের ক্ষেত্রে সঙ্কুচিতবোধ করে কিংবা প্রয়োজনের ক্ষেত্রে খরচ করতে পিছপা থাকে। কিন্তু নিজের আয়, সুবিধা এবং উন্নতির ক্ষেত্রেও যদি কেউ পিছিয়ে থাকে তাহলে এর চেয়ে বোকা এবং কৃপণ আর কে হতে পারে!
আলেমরা বলেন, নবীজীর প্রতি দরুদ পাঠে তো নিজের ফায়দা এবং অনেক ফায়দা। এমতাবস্থায় যে নিজের ফায়দা গ্রহণের ক্ষেত্রে কার্পণ্য করে, আল্লাহর রহমত ও করুণা গ্রহণে উদাস থাকে তার চেয়ে কৃপণ কে হতে পারে!
এক বর্ণনায় এসেছে, যে আমার প্রতি দরূদ পেশ করতে ভুলে গেল সে জান্নাতের পথ থেকে বিচ্যুত হল। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ৯০৮
অর্থাৎ জান্নাতে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ঈমানের সঙ্গে সঙ্গে নেক আমল, যদি আল্লাহর মেহেরবানী হয়। আর নেক আমলের মাঝে শ্রেষ্ঠ আমলগুলোর একটি হচ্ছে দরুদ শরিফ। যে দরুদের কথাই ভুলে গেল, সে জান্নাতের স্বপ্ন দেখে কী করে! জান্নাতে যাওয়ার জন্য তো আমরা নবীজীর সুপারিশের মুখাপেক্ষী।
সুতরাং কোনো জান্নাতপ্রত্যাশী মুমিন দরুদ থেকে গাফেল হয়ে কি সুপারিশের আশা করতে পারে! অতএব নিজেদের প্রয়োজনেই আমাদেরকে যত্নবান হতে হবে দরুদ শরিফের আমলের প্রতি।
বস্তুত দরুদ শরিফের আমল এমন একটি মহিমান্বিত আমল, যাতে নিহিত রয়েছে প্রভূত কল্যাণ। এতে আল্লাহতায়ালার খাস রহমত লাভ হয়। আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়। নিজের দ্বীন ঈমানের উন্নতি হয়। আত্মিক উৎকর্ষ সাধিত হয়। পেরেশানি লাঘব হয়। সমস্যার সমাধান হয়। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রুহানি ফয়েজ হাসিল হয়। নবীজীর প্রতি ঈমানি মহব্বত বৃদ্ধি পেতে থাকে। নবীজীর সুপারিশ লাভের আশা করা যায়। সর্বোপরি পরকালীন সফলতার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে দরুদ শরিফের।
দরুদের আমল একজন মুমিনের মৌলিক অজিফার (তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার) অন্তর্ভুক্ত। এর মাধ্যমে সে হাসিল করতে পারে দুনিয়া-আখেরাতের খায়ের ও কল্যাণ এবং রহমত ও বরকত। তাই দৈনন্দিন জীবনে সকাল-সন্ধ্যায় আদায় করি দরুদের আমল। জীবনের টুকরো টুকরো মুহূর্তগুলোতে দরুদ শরিফ পাঠ করি। হেলায় খেলায় সময় না কাটিয়ে দরুদ ও সালাম নিবেদন করতে থাকি নবীজীর খেদমতে।
দেড় হাজার বছর পরের আমরা। সেই পবিত্র হেজাজভূমি থেকে হাজার হাজার মাইল পুবে। মাঝে পর্বত সমুদ্র ও মরু বিয়াবান। বন জঙ্গল আরও কত কী! আমাদের যাদের নসিবে জুটেনি চর্মচক্ষে তাকে দেখার, পাইনি তার ছোঁয়া, দরুদ আমাদের জন্য অনেক বড় সম্বল।