অন্যের জন্য দোয়া করার লাভ

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামের শিক্ষা হলো, ব্যাপকভাবে সবার জন্য দোয়া করা, ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের শিক্ষা হলো, ব্যাপকভাবে সবার জন্য দোয়া করা, ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক স্ক্রল করছেন, হঠাৎ দেখলেন আপনার কোনো বেকার বন্ধু ভালো একটি চাকরি পেয়ে গেছে। আপনি মনে মনে বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহুম্মা বারিক! হে আল্লাহ, তার আয়-রোজগারে বরকত দিন এবং কর্মজীবনে অনেক উন্নতির তওফিক দান করুন।’ সঙ্গে সঙ্গে আপনার পাশে থাকা ফেরেশতা বলে উঠলো, আমিন, তোমার জন্যও এমনটাই হোক।

কোনো বন্ধুর বিয়ের দাওয়াত পাওয়ার পর মন থেকে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! তার দাম্পত্য জীবন সুখ-শান্তিতে পরিপূর্ণ করুন।’ সঙ্গে সঙ্গে আপনার পাশে থাকা ফেরেশতা বলে উঠলো, আমিন, তোমার জন্যও এমনটাই হোক।

বিজ্ঞাপন

পার্কে বা রাস্তায় হাঁটছেন, দেখলেন ফুটফুটে একটি বাচ্চা খেলা করছে। আপনি বাচ্চাটির উদ্দেশ্যে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! শিশুটিকে সুস্থ-সবল রেখে নেক হায়াত দান করুন।’ সঙ্গে সঙ্গে আপনার পাশে থাকা ফেরেশতা বলে উঠলো, আমিন, তোমার জন্যও এমনটাই হোক।

বাসায় ফেরার সময় দেখলেন এক বৃদ্ধ ভিক্ষুক অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। আপনি তাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার পর তার জন্য দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি লোকটিকে সুস্থতা দান করুন এবং তার জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিন।’ সঙ্গে সঙ্গে আপনার পাশে থাকা ফেরেশতা বলে উঠলো, আমিন, তোমার জন্যও এমনটাই হোক।

বিজ্ঞাপন

এগুলো কোনো কাল্পনিক কথা নয়, আমাদের সঙ্গে ঠিক এমনটাই করা হয়। এই মর্মে একটি হাদিস আছে, হজরত সাফওয়ান ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সাফওয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার অপর ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করলে তা কবুল হয়। তার মাথার নিকট একজন ফেরেশতা তার দোয়ার সময় আমিন বলতে থাকেন। যখনই সে তার কল্যাণ কামনা করে দোয়া করে, তখন ফেরেশতা বলেন, আমিন, তোমার জন্যও অনুরূপ কল্যাণ।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৮৯৫

অপরের জন্য দোয়া করার মধ্যে শুধু ওই ব্যক্তিরই কল্যাণ নয়, বরং যে তার জন্য দোয়া করছেন তাকেও আল্লাহ সে রকম দান করবেন। বরং তার দোয়াটা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। কেননা সে যখন অপরের জন্য দোয়া করবে তখন একজন ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করবে। আর ফেরেশতার দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আমাদের পূর্বসূরি পীর-বুজুর্গরা নিজেদের কোনো প্রয়োজন হলে তখন কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য সেই দোয়া করতেন এই আশায় যে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন। সাহাবায়ে কেরামের মাঝেও এই আমল পাওয়া যায়।

কোরআন মাজিদের এই আয়াত থেকেও বোঝা যায় যে, অপরের জন্য দোয়া করার গুরুত্ব। জীবিত মৃত সবার জন্য দোয়া করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, ক্ষমা করো আমাদের এবং আমাদের সেই ভাইদেরও, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে এবং আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোনো হিংসা-বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি অতি মমতাবান, পরম দয়ালু।’ -সুরা হাশর : ১০

এ জন্য বুদ্ধিমানরা নিজের একান্ত কোনো প্রয়োজনের ক্ষেত্রে হলে ওই জিনিস অন্যের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে থাকে। তখন আল্লাহ তার সেই প্রয়োজন পূরণ করে দেন।

দেখুন, বর্তমান সমাজ হিংসা-বিদ্বেষে ভরে গেছে। আমরা অন্যের ভালো সহ্য করতে পারি না। কারও ভালো দেখলে দোয়া করা তো দূরের কথা বরং অনেকে অন্যের সুখ নষ্ট করার জন্য নানা পন্থা এমনকি জাদু-টোনার আশ্রয়ও নেয় কেউ কেউ। অথচ আল্লাহর দেওয়া বিধান কতই না চমৎকার! অন্যের ভালো চাইলে, অন্যের জন্য ভালো দোয়া করলে, তাতে বরং নিজেরই উপকার হয়। কেননা, ফেরেশতাদের দোয়া কখনও বিফল হয় না।

আরেকটি কথা, আমাদের কাছে নানা সময় নানা ব্যক্তি দোয়া চেয়ে থাকেন। বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে একান্ত দোয়ার জন্য আবেদন করে অনেকে। তাত্ক্ষণিক অনেকে তার জন্য কিছু দোয়া করে দেয়। কিন্তু নীরবে নিভৃতে যখন আমরা আল্লাহর কাছে হাত তুলি, ব্যাপকভাবে আমরা সবার জন্য দোয়া করি সাধারণত; কারও জন্য বিশেষভাবে তার প্রয়োজনের জন্য দোয়া করার প্রবণতা, আমাদের খুব কমই রয়েছে।

আমরা শুধু নিজের জন্যই আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করি। অথচ একজন মুসলমানের অনন্যতা এখানেই যে, সে অন্যের জন্য ওই জিনিস পছন্দ করবে যারা সে নিজের জন্য ভালোবাসে।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা যা পছন্দ করো, তা অন্য ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করবে। আরও বর্ণনায় আছে, প্রতিবেশীর জন্যও পছন্দ করবে।’ -সহিহ মুসলিম : ৭৪