প্রাচীন ও দুর্লভ গ্রন্থের বিপুল সংগ্রহ মসজিদে নববির লাইব্রেরিতে

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মসজিদে নববির লাইব্রেরি, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে নববির লাইব্রেরি, ছবি: সংগৃহীত

মদিনার মসজিদে নববিতে অবস্থিত লাইব্রেরিটি জ্ঞান পিপাসুদের কাছে অজানা নয়। এখানে রয়েছে হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি, প্রাচীন উপাখ্যানসহ দুর্লভ গ্রন্থের বিপুল আয়োজন। এটি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শহর পবিত্র মদিনাবাসী ও আগত আশেকে রাসুলদের জন্য জ্ঞান আহরণের কেন্দ্র হিসেবে বিশ্ববিখ্যাত।

মদিনা এবং তার আশপাশের এলাকা থেকে প্রিয় নবীর রওজায় উপস্থিত লোকজন এখান থেকে নানাভাবে উপকৃত হন। এভাবেই মসজিদে নববির লাইব্রেরি জ্ঞানার্জন ও গবেষণার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

১৩৫০ হিজরিতে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ মসজিদে নববিতে একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পেশ করেন। তখন সাইয়্যেদ আহমদ ইয়াসিনের তত্ত্বাবধানে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। বাবে উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) সংলগ্ন ঘরকে তখন লাইব্রেরি ঘর বানানো হয়। এই দরজাটি মসজিদে নববির প্রথম সম্প্রসারণের স্মারক হিসেবে মসজিদের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত।

মসজিদে নববি দ্বিতীয়বার সম্প্রসারণের সময় লাইব্রেরির স্থান উত্তর-পশ্চিমে নির্ধারণ করা হয়। এ সময় লাইব্রেরির জায়গা আরও বড় করা হয় এবং মসজিদে নববির ১০ নম্বর প্রবেশ পথ থেকে লাইব্রেরি পর্যন্ত যেতে একটি বৈদ্যুতিক সিঁড়ি স্থাপন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

তবে ‘খাযাইনুল কুতুবিল আরাবিয়্যা’ গ্রন্থের লেখকের মতে, ৮৮৬ হিজরিরও আগে মসজিদে নববির গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটি মক্কা-মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পরিষদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

ইলম পিপাসুদের সুবিধার্থে সারাবছর ২৪ ঘন্টা এবং সপ্তাহের সাতদিনই লাইব্রেরিটি খোলা থাকে। সেখানে জিয়ারতকারী ও গবেষকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ১০ ধরনের ডিউটির ব্যবস্থা রয়েছে। লাইব্রেরির পরিচালনা অফিস ও শিশু বিষয়ক ইউনিটের অফিস একটি বিশাল হলরুম নিয়ে বেষ্টিত। সেখানে পর্যাপ্ত আলো, এয়ারকন্ডিশন, শীতকালে গরম, উন্নত মানের চেয়ার, টেবিল, জমজমের পানি ও কম্পিউটারসহ উন্নতমানের সব আধুনিক জিনিসপত্র রয়েছে।

মসজিদে নববির ৫১৬টি আলমারিতে বিশ্বের বহুল ব্যবহৃত ২১টি ভাষার অন্তত এক লাখ ৯৮ হাজার কিতাবের বিশাল ভাণ্ডার বিদ্যমান। সেগুলোর বড় একটি অংশই কেনা হয়েছে আর অনেকগুলো হাদিয়াস্বরূপ এসেছে। ঘন্টায় প্রায় ৩০০ জন মানুষ লাইব্রেরি দেখাশোনা করে এবং কিতাবগুলোর পরিচর্যা ও হিসাবের সুবিধার্থে ৭২ প্রকারে সেগুলোকে আলাদা আলাদাভাবে বিন্যাস করা হয়েছে।

এখানের অনেকগুলো বই আছে এমন-যেগুলো পাঠাগার নির্মাণের বহু আগে থেকেই মসজিদে নববিতে সংরক্ষিত ছিল। প্রাচীন বেশকিছু উৎস গ্রন্থের মূল পাণ্ডুলিপিও আছে এখানে। শিশুদের জন্য সিরাতে নববি, গল্প-কাহিনী ও তাদের উপযোগী প্রায় ১৩০টি বিষয়ের কিতাব বিদ্যমান রয়েছে। মাখতুতাত (হাতেলেখা পাণ্ডুলিপি) অংশে অসংখ্য প্রাচীন কিতাব ও বিভিন্ন যুগে লিখিত কোরআনের পুরোনো নুসখা (কপি), ডিজিটাল ছবি, আধুনিক বিভিন্ন যন্ত্র এবং কম্পিউটার রাখা আছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা কোরআনে কারিমের ৬০০টি নুসখা, ২৫০টি প্রকাশিত সহিফা, ১০৪০টি বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ, ১৫৫০টি শিরোনামে লিখিত বিষিয়ভিত্তিক পুস্তিকাসহ ও ২ লাখ ৬০ হাজার মাখতুতাত সংরক্ষিত আছে।

হজরত উসমান (রা.)-এর লিখিত কোরআনে কারিমের পাণ্ডুলিপি, ছবি: সংগৃহীত

লাইব্রেরির কিতাবসমূহ বার্ষিক হিসেবে মেরামত করা হয়। এ লাইব্রেরিতে প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার কিতাব বাঁধাই করা হয় অথবা নতুনভাবে ছাপানো হয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে মসজিদে নববিতে সমাগত মেহমানদের কাছে লাইব্রেরিটি অন্যতম দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। মেহমানরা মসজিদ জেয়ারতকালে পাঠাগার পরিদর্শনের জন্য স্বতন্ত্র সময় নির্ধারণ করেন। জ্ঞানানুরাগীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এখানে থাকা বইয়ের সান্নিধ্যে এসে সময় কাটান।

পাঠাগারটির অডিও সেকশনটিও বেশ চমৎকার। এখানে মসজিদে নববির ক্লাস, খুতবা এবং ইবাদতের অডিও ও বিশেষ বিশেষ ভিডিও ক্লিপ সংরক্ষণ করা হয়। অধ্যয়নের জন্য নারী-পুরুষের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা কক্ষ। এখানে সমাগত পাঠকের জন্য আধুনিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

আর আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থাপন করা ডিজিটাল সেকশনও বেশ সমৃদ্ধ। মসজিদে নববির লাইব্রেরির প্রশাসন বিভিন্ন ডিভাইসে অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের ই-বুকসহ নানা ডকুমেন্টরি দিয়ে সাজিয়েছেন ডিজিটাল অংশটি।