নেতৃত্ব ও মর্যাদার লোভ
লোভ মানুষের অন্তরের মারাত্মক ব্যাধি। অর্থ-বিত্ত, যশ-খ্যাতি আর পদের লোভ মানুষের অন্তরের ঈমানের রং ধূসর করে দেয়। দ্বীনের প্রদীপ প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের মতো ছিন্নভিন্ন করে এবং অন্ধকারে ছেড়ে দেয় উদ্বাস্তুর মতো।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলপালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া বেশি ধ্বংসকর নয়, যত না বেশি সম্পদ ও মর্যাদার লোভ মানুষের দ্বীনের জন্য ধ্বংসকর।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৭৬
সীমাহীন অর্থের লোভ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি লোপ পায় এবং দুর্নীতি ও পাপের পথে পরিচালিত করে। প্রাচুর্যের লোভ মানুষকে বিপদের মধ্যে ফেলে। কথায় আছে, লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি কখনো প্রসারিত করো না তোমার দুই চোখ সে সবের প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে দুনিয়ার জীবনের উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি; যাতে আমি সে বিষয়ে তাদের পরীক্ষা করে নিতে পারি। আর তোমার রবের প্রদত্ত রিজিক সর্বোৎকৃষ্ট ও অধিকতর স্থায়ী।’ -সুরা ত্বহা : ১৩১
বলা হয়, সম্পদের লোভের চেয়ে ভয়াবহ হলো- নেতৃত্ব ও মর্যাদার লোভ। অথচ অনেক মানুষ নেতৃত্ব ও মর্যাদার লোভে দুই হাতে মুষলধারে বৃষ্টির মতো অর্থ ব্যয় করে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সত্বর নেতৃত্বের লোভী হয়ে পড়বে। অথচ সেটি কেয়ামতের দিন লজ্জার কারণ হবে। অতএব কতই না সুন্দর দুগ্ধ দায়িনী ও কতই না মন্দ দুগ্ধ বিচ্ছিন্নকারিনী।’ -সহিহ বোখারি : ৭১৪৮
আমাদের দেশে পদপ্রার্থী হয়ে অর্থের বিনিময়ে নির্বাচকদের প্রভাবিত করার ঘটনা নতুন কিছু নয়। অনেকে পদ পেয়ে অহংকারবোধ এবং মানুষের কাছে প্রশংসা কামনা করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা তাদের কৃতকর্মের প্রতি খুশি হয় এবং যা তারা করেনি তা নিয়ে প্রশংসিত হতে পছন্দ করে, তুমি তাদের আজাব থেকে মুক্ত মনে করো না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৮৮
ভোগবাদী সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে, ‘একদিন তো মরেই যাব, খাওদাও ফুর্তি করো।’ লোভ-লালসা মানুষকে পরকালের কথা ভুলিয়ে রাখে। আসলেই রং-রসে পূর্ণ পৃথিবীর সফর শেষ হবে মুসাফিরের। তবে আল্লাহভীতি ও পরকালে জবাবদিহির ভয় মানুষকে অল্পে তুষ্ট হতে শেখায়।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আদম সন্তানকে পাঁচটি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এক কদমও নিজের জায়গা থেকে সামনে নড়তে দেওয়া হবে না। তাহলো তার জীবনকাল কিভাবে অতিবাহিত করেছে, যৌবনের সময়টা কিভাবে ব্যয় করেছে, ধনসম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে, এবং তা কিভাবে ব্যয় করেছে, সে দ্বীনের (ইসলাম) যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে সেই অনুযায়ী আমল করেছে কি না বা কতটুকু করেছে।’ -জামে তিরমিজি : ২৪১৬
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! হে আমাদের রব! তুমি আমাদের দুনিয়াতে মঙ্গল দাও ও আখেরাতে মঙ্গল দাও এবং আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচাও।’ -সহিহ বোখারি : ৪৫২২