স্বেচ্ছাসেবার প্রতিদান নিয়ে নবী কারিম (সা.) যা বলেছেন
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পুনর্গঠনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। তারই অংশ হিসেবে দেশজুড়ে রাস্তাঘাট পরিষ্কার, দেয়ালে রং, গ্রাফিতি আঁকা, রাতে পাহারা দেওয়া ও বাজার মনিটরিংসহ সড়কে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তরুণরা হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক পরে ঝাড়ু-বেলচা নিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করছে। বড়দের দেখাদেখি ছয়-সাত বছরের শিশুরাও হাতে ঝাড়ু নিয়ে নেমেছে। তাদেরকে সহায়তায় নেমেছেন অভিভাবকরাও।
রাস্তা ও অলি-গলির ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ডিপোতে ফেলছেন তারা। পানি ছিটিয়ে ধুলোবালিমুক্ত রাখছেন এলাকা। নোংরা দেয়াল পরিষ্কার করে নান্দনিক রূপ দিচ্ছেন।
এর মাধ্যমে এক নতুন বাংলাদেশ দেখছে জাতি, যেখানে প্রতিটি মানুষের চোখেমুখে দেশ গড়ার স্বপ্ন। সবাই তাদের স্বপ্নের সোনার দেশটাকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ফলে স্বেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছে রাষ্ট্র মেরামতের কাজে। ছাত্রসমাজের পাশাপাশি আলেমসমাজেরও বহু মানুষকে দেখা গেছে রাস্তার শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করতে।
অনেকে আবার পরিবারসহ রাস্তার শৃঙ্খলা রক্ষা, রাস্তা পরিষ্কারের কাজে নেমে পড়েছে। কিছু দুষ্কৃতকারী ছাড়া দল-মত-নির্বিশেষে সবাই এখন নিজেদের দেশটাকে সাজাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে। রাত জেগে এলাকা পাহারা দিচ্ছে। স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছে সানন্দে।
সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় মানুষের কল্যাণে স্বেচ্ছায় শ্রম দেওয়া ইবাদত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এই কাজকে কল্যাণের কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর।’ -সুরা বাকারা : ১৮৪
এই কাজগুলো করতে গিয়ে মানুষের মধ্যে নতুন করে সামাজিক সম্প্রীতি তৈরি হয়েছে। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি হয়েছে, যা প্রতিটি মুসলিমসমাজে থাকা অত্যন্ত জরুরি।
আমাদের নবীজি (সা.) তার উম্মতকে সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষার ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহ দিয়েছেন। হজরত নুমান ইবনে বাশির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের মতো, যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার পুরো দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৪৮০
ঠিক এমনভাবে নতুন এই বাংলাদেশে আমাদের উচিত, প্রত্যেকে প্রত্যেককে ভালোবাসা। একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসা। একে অন্যকে কল্যাণের পথে ডাকা, কোথাও কোনো অসৎ কাজ হলে তাতে বাধা প্রদান করা এবং কল্যাণের কাজগুলোতে একে অন্যকে সহযোগিতা করা। কারণ মহান আল্লাহ কল্যাণের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কল্যাণকর কাজে একে অন্যকে সহযোগিতা করো, পাপে তোমরা একে অন্যকে সহযোগিতা করো না।’ -সুরা মায়েদা : ২
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মানুষের উপকার করার চেষ্টা করা। কারণ যে অন্যের উপকারে আসে আমাদের নবীজি (সা.) তাকে উত্তম মানুষ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে উত্তম তারা, যারা অন্যের উপকার করে।’ -তিবরানি
আমরা যদি এভাবে একে অন্যকে দেশ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে সহযোগিতা করতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের দরবারে একটি শান্তিপূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ ও উন্নত দেশ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবে।