বন্যাকবলিত এলাকায় জানাজা ও দাফনের নিয়ম

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ বেশ কয়েকটি জেলা, ছবি: সংগৃহীত

ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ বেশ কয়েকটি জেলা, ছবি: সংগৃহীত

ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ বেশ কয়েকটি জেলা। বন্যা কেড়ে নিয়েছে সবকিছু। এর ভেতর যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের বেদনার ভয়াবহতা হৃদয়বিদারক। সব তলিয়ে যাওয়ায় মাটির অভাবে মৃত মানুষটির দাফনের সুযোগ না পেয়ে ভাসিয়ে দিতে হচ্ছে কলাগাছের ভেলায়। স্বজনের মরদেহ যেন একটু মাটির ছোঁয়া পায় সে আশায় অনেকে মরদেহের সঙ্গে কাগজে দাফন কিংবা জানাজার অনুরোধ লিখে দিচ্ছেন। জীবনের এমনই ভয়াবহতা ছুঁয়ে যাচ্ছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষকে।

মৃত্যু স্বাভাবিক মেনেই কেউ মারা গেলে অন্যরা তার দাফন, কাফনের ব্যবস্থা করেন। এটা স্বাভাবিক নিয়ম।

বিজ্ঞাপন

তবে কিছুর মৃত্যুর কারণে মৃত ব্যক্তিকে স্বাভাবিক নিয়মে দাফন করা যায় না। অনেক সময় লাশ পাওয়া যায় না। কখনো কখনো লাশ কবরস্থ করার জায়গাও পাওয়া যায় না। এমন মৃত্যুগুলো ঘটে থাকে জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, লঞ্চডুবি, ট্রলারডুবি, নৌকাডুবির কারণে। এসব ব্যক্তির মরদেহ গোসল, কাফন, দাফন ও জানাজায় করণীয় বিষয়ে ইসলামের বিধান হলো-

পানিতে ডুবে কোনো মুসলিম মারা গেলে তাকে গোসল করাতে হবে স্বাভাবিক মৃতদের মতোই। মৃতের শরীর পবিত্র থাকলেও গোসল করাতে হবে। তবে কোনো কারণে মৃতকে দ্বিতীয়বার গোসল দিতে না পারলে এমতাবস্থায় ওই মৃতব্যক্তির জানাজা পড়া যাবে, কিন্তু জীবিত ব্যক্তিরা গুনাহগার হবেন।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু পানি থেকে উঠানোর সময় যদি একবার অথবা দু’বার অথবা তিনবার গোসলের নিয়তে নেড়ে উঠানো হয়, তাহলে গোসল করানোর দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে।

কোনো কারণে যদি লাশ এতটুকু ফুলে যায় যে, হাত লাগানোর উপযুক্ত না থাকে অর্থাৎ গোসলের জন্য হাত লাগানোর দ্বারা লাশ ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে এ ধরনের নরম লাশে শুধু পানি ঢেলে দেওয়াই যথেষ্ট। ওই অবস্থায় সাধারণ লাশের গোসলের মতো ডলাডলি জরুরি নয়। এরপর নিয়মমতো কাফন দিয়ে জানাজার নামাজ পড়ে দাফন করা হবে।

তবে জানাজার নামাজ পড়ার পূর্বেই যদি লাশ ফেটে যায় তাহলে নামাজ পড়া ছাড়াই দাফন করে দিতে হবে।

যদি লাশের অর্ধাংশের বেশি পাওয়া যায় গোসল দিতে হবে এবং জানাজা পড়তে হবে। এমনিভাবে মাথাসহ অর্ধেক পাওয়া গেলেও তার গোসল দিতে হবে এবং জানাজা পড়তে হবে। যদি শুধু মাথা পাওয়া যায় তবে দাফন করা হবে; গোসল এবং জানাজা লাগবে না। -ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ১/১৫৯

লাশ যদি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায় কিন্তু ফেটে না যায় তাহলেও তার জানাজার নামাজ পড়তে হবে। আর লাশ ফুলে গিয়ে ফেটে গেলে জানাজার নামাজ পড়তে হবে না। -মারাকিল ফালাহ : ১/৪১০

দাফন-কাফন ও জানাজার নামাজ পড়ে কোনো মুসলমানকে কবরস্থ করা অন্য মুসলমানদের ওপর ফরজে কেফায়া। মৃতের ওয়ারিস, অভিভাবক ও তার আত্মীয়-স্বজন থাকলে কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব প্রথমত তাদের ওপর বর্তায়। যদি মৃতের কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করার কেউ না থাকে, তাহলে তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা মুসলমানদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। কেউ এই দায়িত্ব পালন না করলে সবাই গুনাহগার হবে।

লাশ গোসল করানোর পর অন্যান্য যথানিয়মে জানাজা পড়তে হবে। শুকনো জায়গা না পাওয়া গেলে পানির মধ্যে দাঁড়িয়েও জানাজা পড়ে নেওয়া যায়। জানাজার জন্য একাধিক মৃত ব্যক্তির লাশ উপস্থিত হলে, প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা জানাজার নামাজ আদায় করা উত্তম। তবে লাশগুলো একত্র করে একসঙ্গে জানাজা পড়াও জায়েজ। এ ক্ষেত্রে সবগুলো লাশ ইমামের সামনে পশ্চিম দিকে একের পর এক অথবা উত্তর-দক্ষিণে সারিবদ্ধভাবে রাখবে।

প্রত্যেক লাশকে ভিন্ন ভিন্নভাবে কবর দেওয়াই শরিয়তের নিয়ম। অবশ্য জায়গার সংকট কিংবা লাশের সংখ্যা বেশি আর ব্যবস্থাপনা অপ্রতুল হওয়ার দরুন পৃথক পৃথক কবর দেওয়া অধিক কষ্টকর হলে এক কবরে একাধিক লাশ দাফন করা জায়েজ আছে।

এ ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, লাশগুলো পাশাপাশি রেখে প্রত্যেকটি লাশকে মাটি দ্বারা অন্যটি থেকে আড়াল করে দেবে। একটি লাশের ওপর অন্য আরেকটি লাশ রাখবে না।

লাশ কবর দেওয়ার জন্য শুকনো জায়গা পাওয়া গেলে ওই জায়গায় স্বাভাবিক নিয়মে দাফন করতে হবে অথবা শুকনো অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি লাশ কবর দেওয়ার মতো শুকনা জায়গা না পাওয়া যায়, শুকনো অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থাও না থাকে এবং বন্যার পানি চলে যাওয়ার অপেক্ষা করলেও লাশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে, কাফন পরিয়ে জানাজার সম্পন্ন করে লাশ ভাসিয়ে দিতে হবে।

পানিতে ডুবে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তিনি শহীদের মর্যাদা পাবেন। এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন- পানিতে ডুবে, কলেরায়, প্লেগে ও ভূমিধসে বা চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তিরা শহীদ। -সহিহ বোখারি : ৭২০