ব্রুনাইয়ের স্বর্ণ মসজিদ পরিদর্শনে মোদী

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: সংগৃহীত

সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: সংগৃহীত

মসজিদ পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে ব্রুনাই সফরের সূচনা করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওই দ্বীপরাষ্ট্রের বিখ্যাত সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদে যান তিনি। সেখানে তাকে স্বাগত জানান ব্রুনাইয়ের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী পেহিন দাতো উস্তাজ হাজি আওয়াং বদরউদ্দিন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাতো হাজি মোহাম্মদ ইশাম।

বিজ্ঞাপন

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ২০১৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে গিয়ে আবু ধাবির শায়খ জায়েদ মসজিদে যান মোদী।

সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদ, ছবি: ব্রুনাই

ছোট্ট দেশ ব্রুনাই আয়তনে ভারতের সিকিম বা ত্রিপুরার থেকেও ছোট। সুলতানের বিপুল সম্পদ ও বিলাসবহুল জীবনযাত্রা গোটাবিশ্বের কাছে আকর্ষণীয়। ব্রুনাইয়ের সুলতানের রাজপ্রাসাদটি বিশ্বের বৃহত্তম প্রাসাদ। ২০ লাখ বর্গফুট এলাকায় বিস্তৃত ১৭০০ কক্ষ বিশিষ্ট প্রাসাদটির অন্যতম আকর্ষণ ২২ ক্যারেট স্বর্ণখচিত গম্বুজ।

বিজ্ঞাপন

মোদী ব্রুনাইয়ের যে মসজিদ সফর করেছেন, তা বিশ্বজুড়ে আলোচিত। এটি ব্রুনাইয়ের রাজধানী বান্দর সেরি বেগাওয়ানে অবস্থিত একটি রাজকীয় মসজিদ। ক্ল্যাসিক্যাল ও আধুনিক স্থাপত্যের সমন্বয়ে নির্মিত বিশ্বের অনন্য সুন্দর মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। মসজিদটি এশিয়া ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলের স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে প্রথম সারির স্থাপনা ও এশিয়া মহাদেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।

মুঘলিয়ান ও ইতালিয়ান আর্কিটেকচার এবং মালয় স্টাইল সামনে রেখে এই মসজিদের নকশা করেন ইতালির বিখ্যাত স্থপতি রডলোফ নোলি। পাঁচ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই মসজিদের কাজ শুরু হয় ১৯৫৪ সালে, শেষ হয় ১৯৫৮ সালে। এখানে একসঙ্গে তিন হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে।

মসজিদের সোনার গম্বুজটি ৫২ মিটার উঁচু। দ্বীপের যেকোনো জায়গা এটি দেখা যায়। মূল মিনারটি এই মসজিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের নান্দনিকতা ও প্রাচীন ইতালিয়ান আর্কিটেকচারের মুগ্ধতার সমন্বয়ে এটি নির্মিত।

মসজিদের ভেতরের অংশটি শুধুমাত্র নামাজের জন্য নির্দিষ্ট। অভ্যন্তরের পরিপাটি দৃশ্য হৃদয়ছোঁয়া। প্রায় নির্মাণসামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত মার্বেল পাথর, গ্রানাইট, ঝাড়বাতি এবং রঙ্গিন কাঁচ ইত্যাদি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং অন্যরা মসজিদ ইতিহাস নিয়ে নির্মিত একটি ভিডিও দেখছেন, ছবি: সংগৃহীত


মিনারের ওপরে ওঠার একটি লিফট রয়েছে। লিফটে ছড়ে নগরীর প্যানোরামিক দৃশ্য উপভোগ পর্যটক ও মুসল্লিরা। লেকের পাশে দাঁড়িয়ে দেখলে মনে হয়- মসজিদটি যেন ভাসছে। যার চারদিকে সাজানো ফুলের বাগান। আকাশে ঝকমক করছে গম্বুজের স্বর্ণের দ্যূতি।

মসজিদের বিশালাকায় গম্বুজটি সম্পূর্ণ খাঁটি সোনা দিয়ে মোড়া। আলোকসজ্জার কারণে রাতের বেলায় দূর থেকে পুরো মসজিদটিকে মনে হয় স্বর্ণনির্মিত। যেন স্বর্ণের এক বিশাল পাহাড়। তাই এটি স্বর্ণ মসজিদ নামেও পরিচিত।

ব্রুনাই নদীর তীরে একটি কৃত্রিম দ্বীপের কোলঘেঁষে এটি নির্মিত হয়। বিশাল মার্বেল আকৃতির মসজিদ স্থাপনা, চতুর্দিকে দৃষ্টিনন্দক মিনার, সোনার গম্বুজ ও চারপাশে নানা বর্ণের গাছগাছালি এবং ফুল গাছের বাগান ও পার্ক মুগ্ধ করে পর্যটকদের।

সুদৃশ্য ফোয়ারাও রয়েছে, মসজিদের সামনে। মসজিদকে ঘিরে থাকা সবুজ গাছের প্রাচুর্য আর ফুলবাগানের মায়া-সৌন্দর্য বেশ অপূর্ব। ইসলামিক স্থাপত্যের গৌরব আর ফুলের সৌরভে একাকার যেন এক স্বপ্নিল জগৎ।

মসজিদ থেকে মার্বেল আকৃতির একটি সেতু দিয়ে লেকের মধ্যে নির্মিত সুলতান বলকিয়াহ মাহরিগের স্থাপনায় যাওয়া যায়, যেটি নৌকা আকৃতিতে নির্মিত। ১৯৬৭ সালে নৌকা আকৃতির স্থাপনাটি নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। কোরআন নাজিলের ১৪০০ বছর উৎযাপন উপলক্ষ্যে ব্রুনাইয়ে আয়োজিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা এখানে অনুষ্ঠিত হয়।