হজ প্যাকেজ ৪ লাখ করার দাবি
আগামী হজের জন্য নিবন্ধন চলছে। এরই মাঝে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে পবিত্র হজের খরচ কমানোর। দাবির অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের কাছে হজের খরচ কমানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন জামিয়াতুল ইসলামিয়া ইদারাতুল উলুম আফতাবনগরের প্রিন্সিপাল, জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশের মহাসচিব ও কওমি মাদরাসার নিয়ন্ত্রক সংস্থা আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের সদস্য মুফতি মোহাম্মাদ আলী।
চিঠিতে তিনি হজের খরচ ৪ লাখ কমানোর দাবি উত্থাপন করেন এবং কোন খাতে কত টাকা খরচ হয়, তারও একটি নমুনা পেশ করেন।
চিঠিতে মুফতি মোহাম্মাদ আলী দাবি করেন, ‘বাংলাদেশের মুসলমান অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ। তাই নামাজ-রোজা আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে হজ পালনের প্রতি তারা অধীর আগ্রহী ও আবেগপ্রবণ। কিন্তু হজের খরচ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি হওয়ার কারণে, অনেকের জন্য হজপালন কঠিন হয়ে পড়েছে। সুতরাং যদি হজের খরচ কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়, তাহলে অনেকের জন্য হজপালন করা সহজ হবে।’
ধর্ম উপদেষ্টাকে সম্বোধন করে লেখা চিঠিতে ‘যৌক্তিকভাবে হজের খরচ কমিয়ে আল্লাহপ্রেমিকদের হজ আদায়ের পথ সুগম করতে অনুরোধ জানানো হয়।’
হজের খরচ কমানোর বিষয়ে চিঠি যেসব সুপারিশ দেওয়া হয়, সেগুলো হলো-
১. বর্তমানে সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে উমরার ভাড়া ৮০ হাজার টাকা। আর হজের সময়ের ভাড়া হয় ২ লাখ টাকা। এটা অস্বাভাবিক ও অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হয়। ভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয় যে, যাওয়ার সময় ফ্লাইট পূর্ণ যাত্রী নিয়ে যায়, আসার সময় খালি আসে।
এর উত্তরে বলা যায়, যে সব হজযাত্রীদের সিডিউল ফ্লাইটে বহন করা হয়; তাদের থেকে কিন্তু সিডিউল ভাড়া ৮০ হাজার টাকা নেওয়া হয় না। বরং ২ লাখ টাকাই নেওয়া হয়, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
সিডিউল ফ্লাইট সাধারণত শতভাগ যাত্রী পায় না। কোনো কোনো ফ্লাইটে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ যাত্রী হয়। কিন্তু হজের সময় এই ফ্লাইটে শতভাগ যাত্রী যায়। সুতরাং এভাবে তাদের ফিরতি ফ্লাইটের ক্ষতিপূরণ হতে পারে।
ফ্লাইট যখন খালি আসে তখন ফুয়েল কম খরচ হয়, ফুডের খরচ হয় না, এয়ার হোস্টেসদের খরচ নেই। এসব দিক বিবেচনা করলে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে সিডিউল ভাড়াই রাখা সম্ভব। এ ছাড়া সৌদি প্রবাসীদের মাঝে যদি ঘোষণা করা হয় যে, হজের সময় দেশে আসলে ভাড়া হ্রাস করা হবে, তাহলে ফিরতি ফ্লাইটেও যাত্রী পেয়ে যাবে। এর দ্বারা ভারসাম্যতা রক্ষা হতে পারে।
২. এরপরও যদি সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ভাড়া কমাতে সম্মত না হয়, তাহলে হজ-২০২৫ এর জন্য উড়োজাহাজ ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত টেন্ডার আহ্বান করা যতে পারে। তাহলে আশা করা যায়, প্রতিযোগিতার কারণে ন্যায্য ভাড়া মিলবে।
৩. মোয়াল্লিমরা হাজিদের থেকে বাসা ভাড়া ও খাবার বাবদ স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। এক্ষেত্রেও যদি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে দেওয়া যায়, তাহলে এখানেও খরচ কমে আসতে পারে।
আমাদের পর্যালোচনা অনুযায়ী একজন হজযাত্রীর ন্যূনতম খরচ নিম্নরূপ হতে পারে- সৌদি আরব কর্তৃক নির্ধারিত মুয়াল্লিম ফি : ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, বিমান ভাড়া: ১ লাখ টাকা, বাসা ভাড়া, খাবার ইত্যাদি বাবদ: ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সর্বমোট: ৪ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য যে, হাজিদের পরিবহনে থার্ড ক্যারিয়ারকে সুযোগ দিলে হজ প্যাকেজের সময় কমে আসবে। ফলে বাসা ভাড়া ও খাবারের খরচও কমে আসবে।
চিঠির বিষয়ে মুফতি মোহাম্মাদ আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা হজের খরচ কমানোর দাবি করেছি। এ জন্য একটা নমুনা দেওয়া হয়েছে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি, খাতওয়ারি ধরে ধরে হজের খরচ কমানোর জায়গাগুলো চিহ্নিত করে ধর্ম উপদেষ্টার কাছে আবারও যাবো। এটা নিয়ে কাজ করছি।