দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে অধ্যয়নরত ৭৭ জন কোরআনের হাফেজকে সংবর্ধনা দিয়েছে মেডিকেল দাওয়াহ সোসাইটি অব বাংলাদেশ। একইসঙ্গে তাদের মধ্য থেকে সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদেরও পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাংলামোটর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা তুলে ধরার পাশাপাশি মানসম্মত চিকিৎসা প্রদানে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বৈশিষ্ট্যগুলো পূর্ণ অনুসরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিশিষ্ট ধর্মীয় আলোচক মাওলানা আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি পদচারণা, তার প্রতিটি বাণী হেদায়েতের স্নিগ্ধ কিরণ হয়ে আমাদের আলোকিত করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বেশি করে ছড়িয়ে দিতে হবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শকে।
ডা. এ বি এম আল আমিনের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রফেসর ডা. সাজেদ আবদুল খালেক, ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ডা. নুরুল্লাহ, ডা. হাফেজ রেজুয়ানুল হক ও ডা. হাফেজ মাহমুদুল বাশার।
অনুষ্ঠানে মেডিকেল ফিকহের গুরুত্ব, ডাক্তারদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা-বাস্তবতা এবং হাসপাতালে মুসলিম রোগীদের ইসলামি কনসেপ্টসহ নানা বিষয়ে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক ডিন ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সাধারণত সমাজে খুব সাধারণ একটি বিষয়, কিন্তু ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একজন মৃত্যু পথযাত্রী মুসলিম রোগীকে তালকিন (পাশে বসে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ) করা। অথচ আইসিইউ বা সিসিইউ বা জেনারেল বেডের কোনো রোগীকে কেউ তালকিন করার নেই। এসব বিষয়ে ডাক্তার নার্স বা ব্রাদারদের কোনো প্রশিক্ষণ বা কোনো হাসপাতালে ধর্মীয় প্রতিনিধি কী আছেন? নেই।
তারা বলেন, ক্যাপসুলে জেলোটিন ব্যবহার হয় এমনকি নানা ধরনের হালাল-হারামের মিশ্রণ হয়। এসব বিষয়ে কি আমাদের কোনো ধারণা আছে? আমরা এই বিষয়গুলো কতটুকু গুরুত্ব দেই? আমার মনে হয় আমাদের কাজ করার অসংখ্য জায়গা এবং প্রয়োজনীয়তা আছে।
অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা বলেন, কোরআন ও চিকিৎসা বিজ্ঞান অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কোরআন মাজিদ যথাযথভাবে অনুসরণ করলে এখানে নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে ইসলামি অনুশাসন অনুসরণে চিকিৎসা প্রদানের একটি রূপরেখাও তুলে ধরা হয়। এসময় একজন কোরআনের হাফেজ হিসেবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অধ্যয়নের পাশাপাশি কোরআনের সার্বজনীন শিক্ষা সবার পৌঁছে দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।
পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের প্রবর্তক হিসেবে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা মেডিকেল পড়াশোনায় চির প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে এ ধরনের আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে অধ্যয়নরত ৭৭ জন হাফেজে কোরআন সংবর্ধনা ও সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের নগদ অর্থ ও উপহার তুলে দেওয়া হয়।
মুসলিম বান্ধবীদের আচরণে মুগ্ধ কলম্বিয়ান তরুণী মারিয়া মেডিনার ইসলাম গ্রহণ তুরস্কে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ২০২২ সালের অক্টোবরে মারিয়া মেডিনা ইসলাম গ্রহণের পর জায়নাব নাম গ্রহণ করেন। এভাবে প্রায়ই দেশে-বিদেশে কলম্বিয়ার নাগরিকরা ইসলাম গ্রহণ করে থাকেন।
কলম্বিয়া প্রজাতন্ত্র দক্ষিণ আমেরিকার দেশ। যার একদিকে রয়েছে ক্যারিবীয় সাগর এবং অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগর। দেশটির পূর্বে ভেনিজুয়েলা ও ব্রাজিল, দক্ষিণে ইকুয়েডর ও পেরু এবং উত্তর-পশ্চিমে পানামা অবস্থিত। বোগোটা কলম্বিয়ার সর্ববৃহৎ শহর ও রাজধানী।
চির সবুজের দেশ কলম্বিয়ার অর্থনীতি অনেকটাই কৃষিনির্ভর। কফি, অ্যাবোকাডো, পামঅয়েল, আখ, কলা ও আনারস উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি কলম্বিয়া। তবে কয়লা ও খনিজ তেল রপ্তানি করেও দেশটি উল্লেখযোগ্য অর্থ উপার্জন করে থাকে। কলম্বিয়ার মোট আয়তন ১১ লাখ ৪১ হাজার ৭৪৮ বর্গকিলোমিটার।
২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে মোট জনসংখ্যা পাঁচ কোটি ২৬ লাখ ৯৫ হাজার ৯৫২ জন, যাদের বেশির ভাগ খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। ধারণা করা হয়, কলম্বিয়ায় মুসলমানের সংখ্যা ৮০ হাজার থেকে এক লাখ। তবে সরকারি পরিসংখ্যানে মুসলমানের সংখ্যা দেখানো হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার মাত্র।
গবেষকদের দাবি, খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০০-১২০০০ অব্দে কলম্বিয়ায় মানুষের বসবাস শুরু হয়। কেননা সেখানে খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ অব্দের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। খ্রিস্টীয় ১৬ শতকে কলম্বিয়ায় ইউরোপিয়ানদের আগমন ঘটে। ১৬ থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত কলম্বিয়া স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৮১৯ সালে কলম্বিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।
কলম্বিয়ার মানুষ স্প্যানিশ উপনিবেশের মাধ্যমের ইসলামের সঙ্গে পরিচিত হয়। স্পেন থেকে বাধ্যতামূলক নির্বাসনে পাঠানো মুসলিমদের কারো কারো কলম্বিয়ায় ঠাঁই হয়েছিল। এ ছাড়া দীর্ঘকাল মুসলিম শাসনাধীন থাকার কারণে স্পেনের সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে ইসলাম ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল।
মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি কলম্বিয়ানদের বিশেষ আগ্রহ ছিল। লেখক, কবি ও সাহিত্যিকদের কেউ কেউ ইসলামি সংস্কৃতির প্রতি নিজেদের আগ্রহও প্রকাশ করেন। যেমন ডন অ্যাজুকিয়াল ও অ্যারিকোশা। স্প্যানিশ উপনিবেশ শেষ হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর চার্চের প্রভাব কমে। তখন লেখক, কবি ও সাহিত্যিকদের অনেকেই ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির উচ্চ প্রশংসাও করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আরবিতে কথাও বলতেন। যেমন ডন অ্যাজুকিয়াল, ফিনো, জোসে কারভো প্রমুখ।
তবে ধর্ম হিসেবে ইসলামের বিস্তার ঘটে গত শতাব্দীর মধ্যভাগে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বাস্তুচ্যুত বহু আরব লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের মতো কলম্বিয়ায়ও আশ্রয় নেয়। তাদের বেশির ভাগ ছিল সিরিয়ার অধিবাসী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫১ সালে সিরিয়া, লিবিয়া ও ফিলিস্তিনের আরো একদল মুসলিম কলম্বিয়ায় আশ্রয় নেয়। আবার কলম্বিয়ানদের অনেকেও ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছে।
কলম্বিয়ান মুসলিমদের বেশির ভাগ রাজধানী বোগোটা, মাইকাও, বানকিনা, কালি, সান অ্যান্ড্রিস দ্বীপ ও সান্তামারতায় বসবাস করে। রাজধানী বোগোটার পর সবচেয়ে বেশি মুসলিম বসবাস করে মাইকাও শহরে। এখানে এক হাজারেরও বেশি মুসলিম বসবাস করে।
কলম্বিয়ান মুসলিমদের একদল আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। তাদেরকে স্পেন কাজের জন্য দাস হিসেবে এ দেশে নিয়ে এসেছিল। তাদের বেশির ভাগ বুবোনা বন্দরে বসবাস করে। কলম্বিয়ায় ইসলাম প্রচারে এসব আফ্রিকান দাসের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কলম্বিয়ান মুসলিমদের বেশির ভাগ ব্যবসা ও হালকা শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাই তাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো।
কলম্বিয়ায় ইসলাম আগমনের প্রায় ১০০ বছর অতিবাহিত হলেও সেখানে খুব বেশিদিন ইসলামি সংস্থা, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। গত শতকের আশির দশকে কলম্বিয়ায় আরব বিশ্বসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন মিশনারি দল, রাষ্ট্রদূত ও আলেমদের আগমন শুরু হয়। তাদের অনুপ্রেরণায় কলম্বিয়ান মুসলিমরা সংঘবদ্ধ হতে আরম্ভ করে। তারই ধারাবাহিকতায় মাইকাও শহরে ১৯৯০ সালে একটি মসজিদ ও মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।
দারুল আরকাম নামের এই স্কুলে বর্তমানে এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। মুসলিম শিক্ষকের অভাবে সেখানে অমুসলিম শিক্ষকও নিয়োগ দিতে হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, সেখানে আরবি ভাষা এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি শিক্ষা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত লোক নেই।
ইসলামিক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামক ইসলামি সেবা সংস্থার সদর দপ্তর মাইকাও শহরেই অবস্থিত। সংস্থাটি ১৪১০ হিজরি থেকে রমজানে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। শহরে একটি মুসলিম কবরস্থানও আছে। মাইকাওয়ে অবস্থিত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) মসজিদ লাতিন আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ।
কলম্বিয়ায় মুসলিমরা স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা করে থাকে। রাজধানীর বাইরেও শহরে মসজিদ ও পৃথক মুসলিম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
হজের খরচ কমানোর জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর নতুন সভাপতি ও মহাসচিব ছিলেন।
হাবের কার্যনির্বাহী পরিষদ পুনর্গঠন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ তারা নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। হাব নেতারা জানান, উড়োজাহাজ ভাড়া কমানো হলে হজের খরচ কমে আসবে। হজের খরচ কমলে হজযাত্রীর সংখ্যাও বাড়বে। অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান ইচ্ছা থাকা সত্তেও বেশি খরচের জন্য হজে যেতে পারেন না। আমরা চাই হজের খরচ কমানো হোক। এ সময় তারা সিভিল এভিয়েশনের অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে যৌক্তিক উড়োজাহাজ ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানান।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) হাবের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুফতি জুনায়েদ গুলজারের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার হাব কার্যনির্বাহী পরিষদের দশম সভায় উপস্থিত সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে কার্যনির্বাহী পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। কার্যনির্বাহী পরিষদ পুনর্গঠনে হাবের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফারুক আহমদ সরদার। তিনি আগে মহাসচিব ছিলেন। ফরিদ আহমেদ মজুমদারকে মহাসচিব করা হয়েছে। আর ইসি সদস্য হয়েছেন মেজবাহ উদ্দিন সাঈদ।
হাব কার্যনির্বাহী পরিষদের ২০২৪-২০২৬ মেয়াদের নির্বাচনে নির্বাচিত সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম অসুস্থতার কারণে গত ২২ আগস্ট পদত্যাগ করায় সভাপতির পদটি শূন্য হয়।
হজযাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এবং রাজকীয় সৌদি সরকারের অনুমোদিত হজ এজেন্সিগুলোর মালিকদের সংস্থা হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
বর্তমানে হাবের সদস্য সংখ্যা এক হাজার ১১৭২ জন। এ প্রতিষ্ঠানটি একটি প্রথম শ্রেণির বাণিজ্যিক সংগঠন যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধিত। বাণিজ্য সংগঠনের টিও রুল অনুযায়ী পরিচালিত হাব শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর অন্তর্ভুক্ত একটি অন্যতম প্রথম শ্রেণির অলাভজনক সেবামূলক সংস্থা, যা হজ ও উমরা যাত্রীদের কল্যাণে দেশে-বিদেশে সুনাম সুখ্যাতির সঙ্গে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা কাজে নিয়োজিত।
নবনির্বাচিত সভাপতি ফারুক আহমদ সরদার ও মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার নতুন দায়িত্ব পেয়ে সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আল্লাহর মেহমানদের খেদমতের মাধ্যমে হয়রানিমুক্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা উপহার দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। হজ ব্যবস্থাপনায় কোনো প্রকার অনিয়ম দুর্নীতির সুযোগ নাই। হাজিদের হয়রানি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
জুমার দিন একটি বিশেষ সময় আছে, বান্দা তখন যে দোয়া করবে; আল্লাহতায়ালা তাই কবুল করবেন। মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে যা চাইবে, আল্লাহতায়ালা তাই দান করবেন। অনেক হাদিসে এই সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন জুমার দিনের বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন বলেছেন, এইদিন একটা সময় আছে, কোনো মুসলিম যদি ওই সময়ে নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায় আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দান করবেন।
(হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন,) এরপর হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত দিয়ে ইশারা করেছেন যে, ওই মুহূর্তটা অতি অল্প সময়। -সহিহ বোখারি : ৯৩৫
মুসলিম শরিফের এক বর্ণনায় স্পষ্ট এসেছে, ওই মুহূর্তটি খুব সামান্য সময়। -সহিহ মুসলিম : ৮৫২
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুমার দিনের বারো ভাগ। (এর মধ্যে একটি সময় আছে, যাতে) মুসলিম বান্দা আল্লাহতায়ালার কাছে যা প্রার্থনা করবে আল্লাহতায়ালা তাকে তাই দান করবেন। সুতরাং তোমরা সে সময়টি অনুসন্ধান করো আসরের পর দিনের শেষ অংশটিতে। -মুস্তাদরাকে হাকেম : ১০৩২
জুমার দিনের যে সময়টিতে দোয়া কবুলের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে সেটা কোন্ সময়? ওপরের হাদিসটিতে আসরের পরের কথা বিবৃত হয়েছে। তবে অন্যান্য হাদিতস ও আছার থেকে আরও বিভিন্ন সময়ের কথা জানা যায়।
এ সব হাদিস ও আছারের ভিত্তিতে আলেমরা জুমার দিনের দোয়া কবুলের সময় সম্পর্কে অনেক মত বর্ণিত হয়েছে। হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) ৪৩টি মত উল্লেখ করেছেন। -ফতহুল বারী : ২/৪১৬-৪২১
সবগুলো মত উল্লেখ করার পর হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, এখানে হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) যা বলেছেন- এর সারমর্ম হলো- এই সব মতের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধতম মত দুইটি-
১. খতিব খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে ওঠার পর থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত। এ সময়ের কথা হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.)-এর হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে।
২. আসরের নামাজের পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। এ সময়ের কথা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)-এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
মুহিব্বুদ্দীন আবুল আব্বাস তবারি (রহ.) বলেছেন, হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ আর হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত মতটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। -ফতহুল বারী : ২/৪২১
সুতরাং উচিত হলো, জুমার দিন ওই দুই সময়েই দোয়ার গুরুত্ব দেওয়া।
ইমাম আবু উমর ইবনে আবদুল বার (রহ.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের উচিত, তার দ্বীন-দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ের জন্য কবুলের আশা নিয়ে এই দুই সময়ে গুরুত্বের সঙ্গে দোয়া করা। তাহলে ইনশাআল্লাহ সে আশাহত হবে না। -আততামহিদ : ১৯/২৪
মাফুসি দ্বীপ মালদ্বীপের রাজধানী মালে থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। অল্প সময়ে যাওয়া যায় বিধায় দ্বীপটি অনেকেরই পছন্দের স্থান। এখানে রোমাঞ্চের স্বাদ মিলবে উইন্ড সার্ফিং, কায়াকিং, স্কুবা ডাইভিং ও প্যাডেল নৌকার মাধ্যমে। এর আছে হোয়াইট স্যান্ডি সৈকত ও স্পার্কলিং ওয়াটার। এই নির্জনতার স্বাদ পেতে তীরের অদূরে মাঝে মধ্যে চলে আসে তিমি ও হাঙর। স্পীড বোর্ড বা ফেরিতে দূর থেকে এই দ্বীপটিকে দেখতে অসাধারণ লাগে। যতই কাছাকাছি পৌঁছা যায় ততই যেন এর সৌন্দর্য বাড়তে থাকে।
তবে দ্বীপটির যে বিষয়টি সবার চোখ আটকায়, তা হচ্ছে- জলযান থেকে নামতেই চোখে পড়বে একটি সাইনবোর্ড। তাতে বড় করে ইংরেজিতে লেখা- ATTENTION, NO BIKINI। অর্থাৎ দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন তবে বিকিনি পরিধান করা যাবে না।
জানা গেছে, শুধু মাফুসি দ্বীপেই নয়, মালদ্বীপের অধিকাংশ দ্বীপেই বড় বড় সাইনবোর্ডে লেখা, সাঁতারের ড্রেসে লোকাল এরিয়ায় চলাফেরা নিষেধ, অথবা নো বিকিনি বা আপত্তিকর আচরণ নিষেধ। তবে শুধুমাত্র প্রাইভেট রিসোর্টের প্রাইভেট বীচ এবং কয়েকটি হাতেগোনা কয়েকটি সৈকতে গেলেই বিকিনি পরার অনুমতি মেলে। এখানেও বীচ থেকে উঠে এই পোশাকে লোকাল এরিয়ায় চলাফেরা করা যাবে না। দেশটির সরকারের এমন নির্দেশনা সাবলীলভাবেই মেনে চলে পর্যটকরা। যাদের অধিকাংশই ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ স্বল্প কাপড় পরিধান করা দেশ থেকে আসেন। তারা মালদ্বীপে এসে শতভাগ মুসলিম অধ্যূষিত এলাকার নিয়মকানুন মেনেই দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
নানাবিধ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ মোকাবেলা করেই পর্যটনকে এগিয়ে নিচ্ছে মালদ্বীপ সরকার। স্বচ্ছ সবুজ পানিতে সাঁতার, বালুময় সৈকতে সূর্যস্নান, প্রবালদ্বীপের বিলাসবহুল রিসোর্টে ছুটিযাপন, স্নোরকেলিং ও স্কুবা ডাইভিংয়ের মতো নানা রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ড বলা যায় পর্যটকদের চাহিদা পূরণে সমস্ত সম্ভার নিয়ে বসে আছে মালদ্বীপ। তাই তো রোমাঞ্চপ্রিয় ও নিরিবিলি আয়েশি অবকাশযাপন সন্ধানী ভ্রমণপিপাসুদের কাছেও পছন্দের এক গন্তব্য ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্র। দেশটির সহজ ভিসানীতি, নিরাপত্তা আর নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
মালদ্বীপে সহস্রাধিক দ্বীপ আছে, এই দ্বীপগুলোকে দুই নামে ডাকা হয়- লোকাল আইল্যান্ড আর রিসোর্ট আইল্যান্ড। লোকাল আইল্যান্ডে স্থানীয় জনগণ থাকে, তবে পর্যটকদের থাকারও ব্যবস্থা আছে। আর রিসোর্ট আইল্যান্ডে শুধুই রিসোর্ট। ১৯৭২ সালে এমনই একটি দ্বীপে দুটি রিসোর্ট নিয়ে পর্যটনশিল্পের গোড়াপত্তন করে মালদ্বীপ। বর্তমানে দেশটিতে রিসোর্টের সংখ্যা ১৮০। এ ছাড়া আছে হোটেল, গেস্টহাউস ও সাফারি জাহাজসহ নানা কিছু।
মালদ্বীপের পর্যটনের সঙ্গে অনেক দেশেরই কোনো তুলনা চলে না। একসময় মালদ্বীপের মানুষের মূল আয় ছিল মাছ ধরা। সেখান থেকে তারা আজ কোন পর্যায়ে এসেছে সেটা দৃশ্যমান। বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করে তারা নিজেদের পর্যটন অবকাঠামো তৈরি করেছে। বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে তারা এ পর্যায়ে এসেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের একটি বড় মিল রয়েছে, দুই দেশই মুসলিম অধ্যুষিত। তবে এই ধর্ম পরিচয় তাদের উন্নয়নের পথে বাধা হয়নি। তারা রক্ষণশীলতা পাশে রেখেই পর্যটনকে এগিয়ে নিয়েছে। তাদের পর্যটন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ এখন ৯৫ ভাগ। যারা বিনিয়োগ করেছে তারাই এর প্রচার করছে। সরকার কখনোই অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। তারা পুরো বিষয়টি পেশাদারদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে।
মালদ্বীপে মূলত এককেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। সেটি সমুদ্রকেন্দ্রিক পর্যটন। তারা (মালদ্বীপ) এগিয়ে আছে বিদেশি পর্যটকের কারণে। শতভাগ মুসলিম অধ্যূষিত হবার পরও বেশ কিছু ধর্মীয় বিধি নিষেধ থাকার পরও সেখানে পর্যটকরা আসেন। তবে লোকাল এরিয়ার বাইরে তারা বিদেশীদের জন্য কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না। বিশেষ করে বীচ এলাকায় নির্বিঘ্নে পর্যটকরা তাদের সময় ব্যয় করতে পারেন। সেগুলোতে স্থানীয়দের সেভাবে যেতেও দেখা যায় না।
মালদ্বীপ শতভাগ মুসলিম একটি দেশ। এখানে স্থানীয় অধিবাসীরা যেসব দ্বীপে বাস করেন সেখানে ধর্মীয় বিষয়গুলোতে তারা বেশ সচেতন। এরপরেও তারা ধর্মীয় শ্রদ্ধার জায়গাটিকে অটুট রেখেই পর্যটন খাতকে উন্নত করেছে। রিসোর্ট আইল্যান্ডগুলোতে আপনি বিনোদনের জন্য সব করতে পারেন, কিন্তু স্থানীয় দ্বীপগুলোতে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে। এ জন্য এখানে লাখ লাখ পর্যটক আসছেন। বিশ্বসেরা যত হোটেল রিসোর্ট ব্র্যান্ড আছে, তাদের প্রত্যেকেরই রিসোর্ট এখানে আছে। প্রত্যেকটি রিসোর্টেই নিজেদের মতো করে পর্যটন ব্যবস্থাপনা রাখার অধিকার রয়েছে। সেখানে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করে না।
মালদ্বীপের সৌন্দর্যে সবাই মুগ্ধ। আর এ কারণে তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই মালদ্বীপ ভ্রমণে ভিড় করেন। বর্তমানে মালদ্বীপ সবারই স্বপ্নের গন্তব্য হয়ে উঠেছে। সারা বছরই এ দেশে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। তবে অত্যন্ত সুন্দর এই স্থানে গিয়েও কিন্তু মানতে হবে কিছু নিয়ম-কানুন। না হলে আপনি বিপদে পড়তে পারে। তাই মালদ্বীপে যাওয়ার কথা পরিকল্পনা করলে প্রথমেই জেনে নিন সেখানে ঘোরাঘুরির সময় কোন কাজগুলো করলে বিপদে পড়বেন। মালদ্বীপের রাস্তায় এমন কাজ করা নিষেধ, যা মানুষকে বিব্রত করবে। এমনকি রাস্তায় হাঁটার সময় গালে চুম্বন করাকেও সেখানে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
মুসলিম দেশ হওয়ায় মালদ্বীপে প্রকাশ্যে মদ খাওয়া নিষিদ্ধ। যদি কোনো দ্বীপের হোটেল বা রিসোর্টে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। মুসলিম দেশ হওয়ায় মালদ্বীপ গিয়ে জনসমক্ষে বিকিনি বা অতিরিক্ত খোলামেলা পোশাক পরার সুযোগ একেবারেই কম।
শতভাগ মুসলমানের এই দেশের মনেপ্রাণে ধর্মপালন করেন। রাজধানী মালেসহ পাশের বিলিকিলি, হুনহুমালে বা আরেকটু দূরের মাফুশি দ্বীপে গেলেই দেখা মেলে মাথায় স্কার্ফ কিংবা হিজাব পরা মালদ্বীপের মেয়েদের। ভারতীয় মহাসাগরের এই দেশে প্রায় ৯৬ ভাগ নারীই হিজাব পরে রাস্তায় বের হন। মালদ্বীপের নারীদের মধ্যে কেউ পুরো শরীর কালো বোরকায় ঢাকা। কেউ শরীরের ওপরের অংশ ঢেকে রাখেন। কেউবা শরীরের সঙ্গে লেগে থাকা পোশাকের সঙ্গে শুধু মাথায় স্কার্ফ পরেন। শুধু নারীরাই নয়, মালদ্বীপের পুরুষরাও ব্যাপকহারে মসজিদমুখী। মালেতে নামাজের সময় হলেই সব দোকানপাঠ বন্ধ রাখা হয়। আজান হলেই দোকানি দরজার সামনে ‘ক্লোজড’ (বন্ধ) প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে মসজিদে চলে যান।
মালে শহরে কিছু নারী আধুনিক পোশাক পরলেও দ্বীপগুলোতে হিজাব ছাড়া কোনো নারী তেমন দেখা যায় না। মালদ্বীপের মেয়ে বা মায়েরা সমুদ্র বিচে নামলেও বোরকা পরেই নামেন। পশ্চিমা দেশের পর্যটকরা এই দেশে এসে স্বল্প পোশাক পরেই নেমে পড়েন সাগরে। তবে মালেতে এই স্বল্প পোশাক পরে কেউ বিচে যেতে পারবে না। বিশেষ করে নারীরা। বিচের পাশে লেখা সাইনবোর্ডে- ‘নো বিকিনি’।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের পাশাপাশি মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগির জন্য মালদ্বীপে রয়েছে ছোট বড় অনেক মসজিদ। তবে রাজধানি মালেতে মসজিদের সংখ্যা বেশি। ২০১৮ সালে মালেতে উদ্বোধন করা হয় মালদ্বীপের সবচেয়ে বড় মসজিদ কিং সালমান মসজিদ। নান্দনিকতায়ও এটি অদ্বিতীয়। এ মসজিদে একসঙ্গে ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।