মসজিদে শিশুর স্বাধীনতা

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মসজিদে শিশুদের শিশুসুলভ আচরণ সহ্য করাই কাম্য, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে শিশুদের শিশুসুলভ আচরণ সহ্য করাই কাম্য, ছবি: সংগৃহীত

হজরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন এশার নামাজের সময় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের দিকে বের হয়ে এলেন। তখন তিনি হজরত হাসান অথবা হুসাইন (রা.)-কে বহন করে আনছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সামনে অগ্রসর হয়ে তাকে রেখে দিলেন। এরপর নামাজের জন্য তাকবির বললেন ও নামাজ শুরু করলেন। নামাজের মধ্যে একটি সিজদা দীর্ঘ করলেন। (হাদিস বর্ণনানাকারী বলেন) আমার পিতা (শাদ্দাদ) বলেন, আমি আমার মাথা তুললাম এবং দেখলাম, ওই ছেলেটা রাসুল (সা.)-এর পিঠের ওপর রয়েছেন। আর তিনি সিজদারত অবস্থায় আছেন।

অতঃপর আমি আমার সিজদায় গেলাম। রাসুল (সা.) নামাজ শেষ করলে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আপনার নামাজের মধ্যে একটি সিজদা এত দীর্ঘ করলেন এতে আমরা মনে করলাম, হয়তো কোনো ব্যাপার ঘটে থাকবে। অথবা আপনার ওপর অহি নাজিল হচ্ছে। তিনি বললেন, এর কোনোটাই ঘটেনি, বরং আমার ওই (অধস্তন) সন্তান আমাকে সাওয়ারি (বাহন) বানিয়েছিল। আমি তাড়াতাড়ি উঠতে অপছন্দ করলাম, যাতে সে তার কাজ সমাধা করতে পারে। -সুনানে নাসায়ি : ১১৪১

বিজ্ঞাপন

আল্লাহর রাসুল (সা.) এভাবেই মসজিদে শিশুসুলভ আচরণ সহ্য করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদা আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে এশার নামাজ পড়ছিলাম। রাসুল (সা.) যখন সিজদা দিতেন তখন হাসান-হুসাইন (রা.) লাফ দিয়ে রাসুল (সা.)-এর পিঠে উঠতেন। আর রাসুল (সা.) সিজদা থেকে মাথা তোলার সময় পেছন থেকে হাত দিয়ে তাদের নামিয়ে দিতেন। এভাবে রাসুল আবার সিজদা দিলে তারাও (হাসান-হুসাইন) আবার রাসুল (সা.)-এর পিঠে চড়তেন। এভাবে রাসুল (সা.) নামাজ শেষ করতেন। -মুসনাদে আহমদ : ১০৬৫৯

অন্য বর্ণনায় আছে, রাসুল (সা.) যখন সিজদা দিতেন তখন হাসান-হুসাইন (রা.) লাফ দিয়ে রাসুল (সা.)-এর পিঠে উঠতেন। তখন সাহাবারা তাদের নিষেধ করতে চাইলে রাসুল (সা.) সাহাবাদের হাতের ইশারায় বোঝালেন তারা যেন তাদের (হাসান হুসাইন)-কে ছেড়ে দেয়। এভাবে তিনি নামাজ শেষ করলেন। -সহিহ ইবনে খুজাইমা : ৮৮৭

উল্লিখিত হাদিস দুটি আমাদের সামনে মসজিদে নববির দুটি চিত্র বর্ণনা করছে। ফুঠে উঠেছে মসজিদে নববিতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে শিশুদের এক মধুর মুহূর্ত। প্রথম হাদিসে দেখা যায়, হাসান অথবা হুসাইন (রা.) কেউ একজন রাসুল (সা.)-এর পিঠে চড়ার কারণে তিনি নামাজে সিজদাকে দীর্ঘ করলেন। আর বললেন, ‘আমি তাড়াতাড়ি উঠতে অপছন্দ করলাম, যাতে সে তার কাজ সমাধা করতে পারে।’

আমাদের সমাজে ওয়াক্তিয়া নামাজের সময় মসজিদে শিশুদের সঙ্গে নিয়ে অভিভাবকরা খুব একটা আসেন না। কিন্তু জুমার দিন অনেক শিশু তাদের বাবা-দাদা কিংবা বড়দের হাত ধরে মসজিদে আসে। নবী কারিম ( সা.)-এর সময়েও এই রীতি ছিল। হজরত বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের খুতবা দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় হাসান ও হুসাইন (রা.) চলে এলো। তাদের গায়ে ছিল দুটি লাল জামা, তারা হোঁচট খেতে খেতে চলছিল। রাসুল (সা.) মিম্বর থেকে নেমে তাদের উঠালেন এবং সামনে রাখলেন। এরপর বললেন, আল্লাহতায়ালা সত্য বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের সম্পদ ও সন্তান ফিতনা।’ আমি এ দুটি বাচ্চাকে দেখলাম তারা হাঁটছে আর হোঁচট খাচ্ছে। আমি আর ধৈর্যধারণ করতে পারলাম না।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১১০৯

উল্লিখিত ঘটনাগুলো মসজিদে নববিতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গেই ঘটেছে। বর্ণিত ঘটনাগুলোর মাধ্যমে তিনি তার উম্মতকে এ বার্তা দিচ্ছেন যে, মসজিদ হলো তরবিয়াতের (শিক্ষা-দীক্ষা) অন্যতম পাঠশালা। এ মসজিদ থেকেই ছোটরা ঈমান-আমলের শিক্ষাগ্রহণ করবে। তারা বড়দের থেকে দেখে দেখে শিখবে। শৈশবে তারা মসজিদে এলে ইবাদতের প্রতি উৎসাহী ও অভ্যস্ত হবে। একজন আদর্শ মানুষ গঠনে মসজিদের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং ছোটদের মসজিদে নিয়ে আসার বিষয়টি কেউ যাতে ভিন্ন চোখে না দেখে। এতে তাদের জন্য কল্যাণকর দিক রয়েছে।

তবে ইসলামি স্কলাররা বলেন, শিশু কিছুটা বুঝমান হওয়ার পরই মসজিদে আনা উত্তম।

বর্ণিত হাদিসগুলো থেকে এটাও বোঝা যায় যে, শিশুদের বহন করে নামাজ আদায় করা যাবে। এটি নামাজ ভঙ্গের অনুঘটক নয় বা এটি নামাজে নিষিদ্ধ কোনো বিষয়ও নয়। যদি না আমলে কাসিরের (এমন কাজ যা করলে মনে হয় তিনি নামাজ পড়ছেন না) পর্যায়ে না পৌঁছায়।

অনেকে মসজিদে ছোট বাচ্চারা দুষ্টুমি করলে তাদের রূঢ় ভাষায় ধমক দিয়ে থাকেন। তাদের বকাঝকা করেন। এটি শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাদের মসজিদ থেকে বিমুখ করে। এটি নবী কারিম (সা.)-এর আদর্শ ও সুন্নতের বিপরীত।