নামাজে অমনোযোগীদের প্রতি তিরস্কার
নামাজের প্রতি উদাসীন ও অমনোযোগী ব্যক্তিদের প্রতি তিরস্কার ও ভয়াবহ শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কোরআন মাজিদে ঘোষিত হয়েছে, ‘তারা জিজ্ঞাসাবাদ করবে অপরাধীদের সম্পর্কে যে, কোন জিনিস তোমাদের জাহান্নামে দাখিল করেছে? তারা বলবে, আমরা নামাজ আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।’ -সূরা মুদ্দাসসির : ৪১-৪৩
অপরদিকে যারা নামাজে উদাসীন ও অমনোযোগী থাকবে তাদের কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সেসব নামাজ আদায়কারী জন্য ওয়াইল বা ধ্বংস, যারা গাফিলতি করে নামাজের ব্যাপারে।’ -সূরা মাউন : ৪-৫
অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারপর তাদের স্থলাভিষিক্ত হলো- এমনসব লোক, যারা নামাজ নষ্ট করল এবং ইন্দ্রীয় চাহিদার অনুগামী হলো- অর্থাৎ মন যা চায়, তাই করতে লাগলো। সুতরাং তারা অচিরেই তাদের ‘গাঈ’ তথা পথভ্রষ্টতার মাঝে নিক্ষিপ্ত হবে, সাক্ষাৎ পাবে কঠিন গর্তওয়ালা জাহান্নামের।’ -সূরা মারইয়াম : ৫৯
আয়াতে উল্লিখিত ‘গাঈ’ শব্দের তাফসিরে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সেটা হলো জাহান্নামের একটি গর্ত, যার উত্তাপ অত্যন্ত বেশি, যদ্দরুন জাহান্নামের অন্যান্য গর্ত আল্লাহতায়ালার কাছে তার থেকে পানাহ চায়। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘গাঈ’ জাহান্নামের একটি গর্ত, এতে সমগ্র জাহান্নামের চাইতে অধিক আজাবের সমাবেশ রয়েছে। -তাফসিরে ফতহুল কাদির : ৩/২৪৪
সঠিকভাবে নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে নবী কারিম (সা.)-এর দেখানো পন্থাই একমাত্র সঠিক পথ। প্রিয় নবীজির (সা.) দেখানো তরিকা অনুসরণ করে নামাজের মাঝে গভীর মনোনিবেশ করতে হয়। নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে নবী কারিম (সা.) প্রদর্শিত পদ্ধতি ও তরিকা হুবহু অনুসরণ করতে হবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি যেভাবে নামাজ আদায় করি তা দেখে সেভাবেই তোমরা নামাজ আদায় করবে অর্থাৎ তোমরা সেভাবে নামাজ আদায় কর যেভাবে আমাকে নামাজ আদায় করতে দেখেছ।’ -সহিহ বোখারি
নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে তা আদায় করেও অনেকে পাপের ভাগী হবে। আর তা হবে ভয়াবহ জাহান্নাম।
কোরআন মাজিদ ও হাদিসে নামাজের ব্যাপারে মৌলিক কয়েকটি পরিভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। যথা- ক. ইকামতে সালাত বা নামাজ কায়েম করা, খ. হেফাজাতে সালাত বা নামাজ হেফাজত করা, গ. খুশু-খুজু বা নামাজে বিনয়ী হওয়া।
নামাজ কায়েম করা : কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াতে নামাজ কায়েমের ব্যাপারে বার বার উল্লেখিত হয়েছে। মুত্তাকিদের বিশেষ গুণাবলি আলোচনা করতে যেয়ে আল্লাহতায়ালা উল্লেখ করেন, ‘এই কোরআন মুত্তাকিদের জন্য সঠিক পথের দিশারী যারা নামাজ কায়েম করে...।’ -সূরা বাকারা : ৪
নামাজ কায়েমের কয়েকটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়-
১. নামাজের রুকু, সিজদা, বৈঠক ইত্যাদি ঠিকঠাক মতো আদায় করা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘জনৈক গ্রাম্য সাহাবি নবী কারিম (সা.)-এর নিকটে এসে তাড়াহুড়া করে নামাজ আদায় করছিলেন- রুকু, সিজদা ও বৈঠকাদি ঠিকমতো আদায় করেননি। নবীজি তাকে তিন তিনবার দাঁড় করিয়ে বললেন, তুমি দাঁড়াও, পুনরায় নামাজ আদায় করো; কারণ তুমি নামাজ আদায়ই করোনি।’ -সহিহ বোখারি
২. নামাজের বিভিন্ন নিয়মকানুন যথাযথভাবে আদায় করা। নামাজের মাঝে সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় কাজ ও বক্রতা মুক্ত রাখার নাম নামাজ কায়েম করা।
৩. ত্রুটি-বিচ্যুতিমুক্ত নামাজ আদায়ে সচেতন থাকা।
৪. সঠিক অর্থে নামাজ আদায় করা।
৫. জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা।
৬. নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা।
৭. নামাজে উদাসীন না থাকা।
৮. নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় করা।
হেফাজতে নামাজ : সফলকাম মুমিনদের গুণাবলি বর্ণনা করতে যেয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সফলকাম ঈমানদার তারা যারা পরস্পর নামাজ হেফাজত করে।’
নামাজে বিনয়ী হওয়া : সফল মুমিনদের গুণাবলী বর্ণনা করতে যেয়ে আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘নিশ্চিভাবে ওই মুমিনগণ সফল হয়েছেন, যারা নামাজের মধ্যে খুশু বা ভীতসন্ত্রস্ত ও বিনয়ী থাকে।’ -সূরা মুমিনূন : ২
নামাজে বিনয়ী, মনোযোগী ও যত্নবান হওয়ার মাধ্যমে সফল মুমিনের নিশ্চয়তা প্রমাণ করে। সঠিকভাবে নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে নবী কারিম (সা.)-এর দেখানো পন্থাই একমাত্র সঠিক পথ। তাই নবীজির (সা.) তরিকা অনুসরণ করে নামাজে গভীর মনোনিবেশ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ওপর আপনি সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতিগুলো খুঁজে পাবেন।
কোরআন-হাদিসে বর্ণিত আল্লাহতায়ালার বড়ত্ব, নামাজ আদায়ের ফজিলত ও নামাজ আদায় না করার ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা গভীরভাবে ভাবলে, চিন্তা-গবেষণা করলে প্রতিটি ব্যক্তির নামাজ আদায়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে।