বিশ্বকাপের হিজাবি ক্রিকেটার স্কটল্যান্ডের আবতাহা
শুরু হয়েছে নারীদের আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। উদ্বোধনী ম্যাচে নজর কেটেছেন স্কটল্যান্ডের ক্রিকেটার আবতাহা মাকসুদ। তিনি বিশ্বকাপে হিজাব পরে মাঠে নামেন। যদিও এদিন তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স অনুজ্জ্বল ছিল, দুই বল খেলে দুই রানে ছিলেন নটআউট, আর বোলিংয়ে ৪ ওভারে দিয়েছেন ২৪ রান।
নারীদের ফুটবলে হিজাব পরে মাঠে নামার বহু উদাহরণ রয়েছে। ফরাসি ফুটবল দলের ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা একটা সময়ে হিজাব পরেই মাঠে পায়ের জাদু দেখাতেন। বছর কয়েক আগে অবশ্য এই ইস্যুতে কড়া সিদ্ধান্ত নেয় ফ্রান্সের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। মেয়েদের হিজাব পরে ফুটবল খেলা নিষিদ্ধ করেছে ইউরোপের এই দেশ।
এছাড়া সৌদি আরবের বেশ কিছু নারী ফুটবলারকেও হিজাব পরে খেলতে দেখা গেছে। ক্রিকেটে সেই নজির খুব বেশি নেই। ইসলাম ধর্মাবলম্বী পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের হিজাব পরে খেলতে দেখা যায়নি। ফলে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আবতাহা মাহিন মাকসুদ যে অনন্য নজির তৈরি করতে চলছেন, তা বলাই বাহুল্য।
পাকিস্তানি শরণার্থী পরিবারের সন্তান আবতাহা স্কটল্যান্ডের জাতীয় দল ছাড়াও খেলেন মিডলসেক্স, সানরাইজার্স ও বার্মিংহাম ফিনিক্সের হয়ে। মাত্র ১১ বছর বয়সে ক্লাব ক্রিকেটে অভিষেক হয় এই ডানহাতি লেগ স্পিনারের।
জাতীয় দলের হয়ে মাকসুদ যখন প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন, তখন ১২ বছরে পা দিয়েছেন তিনি। তার আগের বছরই তিনি বাবা-মার সঙ্গে পবিত্র হজপালন করেন।
আবতাহা বলেন, আমার বয়স যখন ১১, তখন পিতামাতার সঙ্গে হজে যাই। তখন থেকেই আমি হিজাব পরার শিক্ষা পাই। ওই সময় আমার কাছে হিজাব পরা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এখনও তেমনই আছে এবং আমি হিজাব ছেড়ে দেইনি।
ক্রিকেট ছাড়াও তাইকোন্ডোতে আগ্রহ রয়েছে স্কটিশ এই ক্রিকেটারের। দক্ষিণ কোরিয়ার মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট পেয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালের গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে দেশের পতাকা বহনকারী ছিলেন আবতাহা।
দন্তচিকিৎসার এই শিক্ষার্থী ক্রিকেট মাঠ দাঁপিয়ে বেড়ালেও ধর্মপালনে দেন না বিন্দুমাত্র ছাড়। নিজের আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে চান অসংখ্য মানুষকে; হতে চান রোল মডেল। একজন ক্রিকেটারের পক্ষেও যে ধর্মপালন সঠিকভাবে করা যায়, তার অন্যতম উদাহরণ তিনি।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী ম্যাচে স্কটল্যান্ডের জার্সিতে খেলেন মাকসুদ। এরপরের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী ম্যাচেও জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।
২০১৮ সালের ৭ জুলাই দেশের হয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন মাকসুদ। উগান্ডার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে জাতীয় দলে খেলছেন এই নারী ক্রিকেটার।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে সবাইকে চমকে দিয়ে ধূমকেতুর মতো ওপরে উঠে এসেছে স্কটল্যান্ড। ইউরোপে বাছাই পর্বের ছয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতে জিতে যায় মাকসুদের দল। এই জয়গুলোর নেপথ্যে হিজাব পরিহিতা লেগ স্পিনার যে বড় ভূমিকা নিয়েছেন, তা বলাই বাহুল্য।
প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাওয়ায় রীতিমতো উচ্ছ্বসিত মাকসুদ। তার কথায়, ‘সত্যি কথা বলতে গত কয়েক মাস ধরে জীবনের সেরা সময় কাটাচ্ছি। এটা একটা স্বপ্নের মতো। দল হিসেবে মাঠে আমরা সেরাটা দিতে পেরেছি। যা আমাদের পতাকা নিয়ে দৌড়তে সাহায্য করেছে। সেই অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না।’
প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জনকে ১০ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম বলে উল্লেখ করেছেন মাকসুদ। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক লড়াই করেছি। অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। শেষে এখানে যে আসতে পেরেছি, তার জন্য দারুণ লাগছে।’
তিনি বলেন, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মানুষ প্রথমবারের মতো আমাকে হিজাব পরিহিত দেখছে। সুতরাং হিজাবের গুরুত্ব নিয়ে মানুষ কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক। আমার সময় আমার মতো কাউকে সামনে পায়নি অনুসরণ করার। এটাই আমার হিজাব পরিধানের মানসকিতাকে আরও শক্তি যোগায়। সুতরাং আমি আশা করি, তরুণীরা আমাকে অনুসরণ করবে হিজাবের ব্যাপারে।
ক্রিকেটে যখনই ধর্মপালনের আলোচনা আসে, সবার আগে যেই দুইটি নাম মাথায় আসে তারা হলেন ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার মইন আলি এবং সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা। বর্তমান প্রজন্মের জন্য দুজনই রোল মডেল।
কে জানে! একদিন হয়তো এরকমই কোনো তালিকায় উচ্চারিত হবে আবতাহা মাহিন মাকসুদের নামও। তার নিজের স্বপ্নটাও যে এমনই!