এতিমখানায় রাগ দেখিয়ে যে শিক্ষা দিলেন জাকির নায়েক
সম্প্রতি এনডিটিভি, দ্য ডন ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে, ‘এতিমখানায় গিয়ে রেগে গেলেন জাকির নায়েক।’
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, ডা. জাকির নায়েক রেগে গেলেন কেন, তিনি তো রেগে যাওয়ার মতো মানুষ নন। বিশ্বনন্দিত এই ইসলামি বক্তার প্রশ্নোত্তর পর্ব যারা দেখেছেন, তারা নানা জটিল ও কঠিন প্রশ্ন এবং বাক্যবানের মধ্যেও লক্ষ্য করেছেন ডা. জাকির নায়েকের শান্ত ও ধৈর্যশীল অবয়ব। ফলে জানার আগ্রহ সৃষ্টি হয়, এতিমখানার মতো একটি শান্ত পরিবেশে তিনি রেগে গেলেন কেন?
খবরে বলা হয়, ডা. জাকির নায়েককে একটি ক্রেস্ট উপহার দেওয়ার জন্য কিছু মেয়ে মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন এতিমখানার জনৈক কর্মকর্তা একটি মেয়ের হাত ধরে টান দেন এবং তাদেরকে নিজের মেয়ে হিসেবে অভিহিত করেন।
এমন দৃশ্যে ডা. জাকির নায়েক রেগে যান এবং বলেন, এই এতিম মেয়েদের তিনি নিজের মেয়ে হিসেবে অভিহিত করতে পারেন না এবং তিনি তাদের এভাবে স্পর্শও করতে পারেন না। কারণ এই মেয়েগুলো বিয়ের উপযুক্ত এবং তারা তার জন্য ‘গায়রে মাহরাম।’ এরপর তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন জেগেছে, এমন কি হয়েছে যে, ডা. জাকির নায়েক রেগে গেলেন এবং নেমে গেলেন মঞ্চ থেকে? আসলে সেক্যুলার তথা ইহলৌকিকবাদী সমাজে বসবাস করতে করতে বহু মুসলিমই এখন ভিন্ন বিধান ও সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। যাপিত জীবনে কোনটা গ্রহণীয় আর কোনটা বর্জনীয়, সে সম্পর্কে মুসলমানরা এখন সচেতন নন। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে তারা পরাভূত। বিভিন্ন বিষয়ে মুসলমানরা এখন প্রচলন ও ধারণার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যে কোরআন ও সুন্নাহকে সামনে রাখতে হয়, সে বিষয়টি যেন এখন ভুলে গেছেন মুসলমানরা।
ফলে মঞ্চে রেগে গিয়ে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে হলো ডা. জাকির নায়েককে। একজন দাঈ শুধু মিষ্টি কথার মাধ্যমেই দায়িত্ব পালন করেন না, কখনো কখনো আচরণ বা অভিব্যক্তির মাধ্যমেও দায়িত্ব পালন করতে হয়।
সেক্যুলার সভ্যতার একটি বৈশিষ্ট্য হলো, কথা ও কাজে মিল না থাকা। ফলে কিশোরী ও তরুণীদের মেয়ে বা বোনের মতো দেখার উদার বাক্য ব্যবহারের পরও তাদের সঙ্গে হায়েনার মত আচরণ করতে ইহলৌকিকবাদীরা মোটেও কুণ্ঠিত নন। এ কারণেই নারীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান খুবই স্পষ্ট।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, সেক্যুলারদের এই ভ্রষ্টতা কোনো কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিষয়টি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ডা. জাকির নায়েককে ধন্যবাদ।
বর্তমানে সোশ্যাল মাধ্যমে ইসলামি জনপ্রিয় আলোচকদের তালিকায় অন্যতম জাকির নায়েক। পেশাগত জীবনে তিনি একজন ডাক্তার। প্রায় এক মাস থাকার পরিকল্পনা নিয়ে পাকিস্তানে এসেছেন ডা. জাকির নায়েক। এ সফরে তার সঙ্গে অন্যান্যদের মধ্যে তার ছেলে ফারিক নায়েকও রয়েছেন।
জাকির নায়েক ভারতের মুম্বাইয়ে ১৯৬৫ সালের ১৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯১ সাল থেকে জাকির নায়েক ইসলামের দাঈ বা ইসলাম-ধর্ম প্রচারক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেন এবং আইআরএফ প্রতিষ্ঠা করেন। ফারিক নায়েক, রুশদা নায়েক, জিকরা নায়েক নামে জাকির নায়েকের তিন সন্তান রয়েছে।
জাকির নায়েক ইসলাম বিষয়ক আলোচনার নতুন যে ধারার মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন, তা মূলত শুরু করেন তার গুরু ভারতীয় বংশোদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিক শায়খ আহমাদ দিদাত (১৯১৮-২০০৫)।
ইসলামের এই প্রখ্যাত দাঈর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা নিজেই এক বক্তৃতায় স্বীকার করেন জাকির নায়েক। ১৯৮৭ সালে আহমাদ দিদাতের সঙ্গে সাক্ষাতও করেন তিনি।