হজ প্যাকেজ ঘোষণা এ মাসেই
২০২৫ সালের হজ প্যাকেজ চলতি মাসেই ঘোষণা করা হবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেল পর্যন্ত পবিত্র হজপালনের জন্য প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন এক হাজার ৫১০ জন। তার মধ্যে ৮৮৯ জন সরকারি মাধ্যমে, ৬২১ জন বেসরকারি মাধ্যমে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করেছেন। আগের প্রাক নিবন্ধিত কিংবা নতুন প্রাক-নিবন্ধিত যেকোনো ব্যক্তি তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে পারেন। হজ প্যাকেজ মূল্যের অবশিষ্ট টাকা প্যাকেজে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ বছরের হজ প্যাকেজ মূল্য সৌদি পর্বের ব্যয় ও বিমান ভাড়া নির্ধারণ সাপেক্ষে ঘোষণা করা হবে চলতি মাসেই।
জানা যায়, আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে পবিত্র হজের নিবন্ধন না করলে মিনা ও আরাফাতের ময়দানে কাঙ্ক্ষিত জোনে তাঁবু বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। এতে জামারা থেকে অনেক দূরে, পাহাড়ি এলাকায় ও নিউ মিনা এলাকায় অবস্থান করতে হবে। ফলে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে প্রখর রোদ ও গরমের মধ্যে দীর্ঘপথ হাঁটার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এমন সতর্কতার পরও হজ নিবন্ধনে কাঙ্খিত সাড়া মিলছে না।
সরকারি-বেসরকারি দুই মাধ্যমেই হজের নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না। হজ পোর্টালের দেওয়া তথ্যমতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সরকারি মাধ্যমে প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রী রয়েছে ২ হাজার ৮৪৮ জন, বেসরকারি যাত্রী রয়েছে ৫৪ হাজার ৮৯৮ জন। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জন্য হজযাত্রীর কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এই কোটা পূর্ণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাথমিক নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
কমতে পারে প্যাকেজ মূল্য
গত ৭ অক্টোবর ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা, সচিব এবং হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৌদি আরব সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন। সৌদি সফরে তারা হজযাত্রীদের বাড়িভাড়া এবং হজের খরচে সৌদি পর্বের খরচ কমানো নিয়ে সৌদি আরবের হজ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দফতর ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন।
২০২৫ সালের সাধারণ হজ প্যাকেজের মূল্য চলতি বছরের চেয়ে কমানোর চেষ্টা করা হবে বলে ইতোমধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে গত ২৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ধর্ম মন্ত্রণালয়কে যৌক্তিক পর্যায়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করতে বলা হয়েছে।
কিন্তু প্যাকেজের ধরণ কি হবে, মোট কয়টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। তবে সৌদি আরবে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে ধর্ম উপদেষ্টা জানান, কম খরচে হজপালনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। দুই ক্যাটাগরির প্যাকেজে হাজি আসতে পারবেন বাংলাদেশ থেকে। এছাড়া সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠানোর জন্য সৌদি সরকারকে অনুরোধ জানানো হবে। সৌদি আরবের হজ ও ওমরা বিষয়ক মন্ত্রী ড. তাওফিক ফাউযান আল রাবিয়া ‘বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ’ করা সাপেক্ষে সমুদ্রপথে বাংলাদেশ থেকে হাজি গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।
২০২৪ সালে সরকারি ও বেসরকারি দুই খাতেই ২০২৩ সালের তুলনায় প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার সর্বনিম্ন প্যাকেজ পাঁচ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ধার্য করা হয়। আর, বেসরকারিভাবে সর্বনিম্ন প্যাকেজ নির্ধারণ করা পাঁচ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ থেকে ২০২৩ সালে সরকারিভাবে হজ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছিলো ছয় লাখ ৮৩ হাজার টাকা। বেসরকারি প্যাকেজে খরচের সর্বনিম্ন সীমা ছয় লাখ ৭২ হাজার টাকা স্থির করা হয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার হজের দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। একটি মসজিদে হারামের আশপাশের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বাড়িসহ একটি প্যাকেজ। এর মূল্য একটু বেশি হতে পারে। আর অপরটি হবে আজিজিয়া প্যাকেজ। এটি মক্কা থেকে দুই-তিন কিলোমিটার দূরে আজিজিয়ায় হাজিদের রাখা হবে। সেখান থেকে মসজিদে হারামে যাতায়াতের জন্য বাস বা যানবাহন থাকবে। এই প্যাকেজের বাড়ি ভাড়া কম হওয়ায় প্যাকেজমূল্যও কম হবে। সাধারণ প্যাকেজের বাড়ি কিংবা হোটেলে একরুমে সর্বোচ্চ ৬ জন থাকবেন। তবে বাড়তি অর্থ পরিশোধ সাপেক্ষে ২ সিটের রুম সুবিধা নেওয়া যাবে। মদিনায় মসজিদে নববির বহিঃপ্রান্ত থেকে এক/দেড় কিলোমিটার দূরে বাড়ি হবে।
কোন খাতে অর্থ খরচ হয়
হজ প্যাকেজে ৩০ থেকে ৪৮ দিনের মেয়াদ থাকে। এতে হজযাত্রীরা ৫ থেকে ৮ দিন মদিনায় অবস্থান করেন। আর হজের আনুষ্ঠানিকতার জন্য ৫ দিন থাকতে হয়, মিনা-আরাফাত ও মুজদালিফা হয়ে মিনার তাঁবুতে। বাকি দিনগুলো মক্কায় থাকেন।
হজের খরচের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাড়িভাড়া ও উড়োজাহাজের টিকিটের হজের বড় খরচ হয়। গত বছর উড়োজাহাজ ভাড়া ছিল এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা, যা ২০২৩ সালে ছিল এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা।
মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া এক লাখ ৬৯ হাজার ৪১০ টাকা। এই খাতে ২০২৩ সালে হাজিদের দুই লাখ ৪ হাজার ৪৪৫ টাকা ব্যয় করতে হয়েছিলো।
২০২৩ সালে মিনা-আরাফায় তাঁবু, ম্যাট্রেস, বিছানা, চাদর, বালিশ কম্বল, খাবার সরবরাহে মোয়াল্লেম সেবার সার্ভিস চার্জ এক লাখ ৬০ হাজার ৬৩০ টাকা। ২০২৪ সালে এই সার্ভিস চার্জ ও অন্যান্য চার্জের মোট অংক এক লাখ ২৬ হাজার ৩৮৪ টাকা। এর বাইরে পরিবহন ব্যয় (প্রায় ৩৭ হাজার টাকা) বা ভিসা ফি, স্বাস্থ্যবিমা, গ্রাউন্ড সার্ভিস ক্যাম্প ফির (৬৪ হাজার টাকা) মতো খরচগুলো প্রায় অপরিবর্তিত ছিল।
হজে আগ্রহ কমে উমরায় বাড়ছে
খরচ বৃদ্ধির জন্য হজের তুলনায় উমরাপালনে আগ্রহ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে হজে বাংলাদেশের কোটা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। কিন্তু ২০২৩ সালে কোটার চেয়ে ৩ হাজার ৯৮০ জন এবং ২০২৪ সালে ৪১ হাজার ৯৪১ জন কম মানুষ হজপালন করেন।
অতিরিক্ত খরচের কারণে হজ করা অনেকের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আলাপচারিতায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবারের যে লক্ষ্যমাত্রা সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। যেকোনো কারণেই হোক এ বছর হজযাত্রীদের আগ্রহ কিছুটা কম।
হজের খরচ কমানো কতটা সম্ভব, এমন প্রশ্নের জবাবে বেসরকারি এক হজ এজেন্সির মালিক নাম প্রকাশ না করে বার্তা২৪.কমকে বলেন, হজের অনেকগুলো খরচ আছে যেগুলো নির্ধারিত। যেমন- উড়োজাহাজ ভাড়া। সরকার যেটা নির্ধারণ করে দেন, সেটাই দিতে হয়। আর সৌদি আরবে কিছু চার্জ আছে; যেগুলো সৌদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত। কিছুটা কমানো যায়, মক্কা-মদিনার হোটেল বা বাড়ি ভাড়ায়। আর, মিনা ও আরাফাতের ময়দানে যে তাঁবু আছে সেগুলোর ক্যাটাগরি আছে। এ, বি, সি বা ডি ক্যাটাগরি নেওয়া যায়।
তার মতে, হাজিদের কাছে হোটেলের মানের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কোন হোটেল মক্কা-মদিনায় মসজিদে হারাম ও নববির কাছাকাছি। আর খাবারের ক্ষেত্রে পরিচিত খাবার হওয়া। এই দুই ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করলে তো হাজিদের কষ্ট হবে।
যাদের হজের নিবন্ধন না করার অনুরোধ
ক্যান্সার, অ্যাডভান্সড কার্ডিয়াক, লিভার সিরোসিস, কিডনি রোগ, সংক্রামক যক্ষা, ডিমেনশিয়া প্রভৃতি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং গর্ভবতী নারী ও চলাচলে অক্ষম ব্যক্তিদেরকে হজের নিবন্ধন না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।