নবীর স্মৃতিধন্য মদিনার কিছু জায়গা
ইসলামের কেন্দ্রভূমি হিসেবে মদিনা ভিন্নমাত্রায় সম্মানিত। মদিনার বিভিন্ন পথে, অলিতে-গলিতে হেঁটেছেন আমাদের প্রিয় নবী। এই শহরের মসজিদ প্রিয় রাসূলের সিজদার সাক্ষী। মদিনার পাহাড়, গুহা, বাগান, কূপ থেকে শুরু করে রাস্তার বালুকণাও অনেক কিছুই প্রিয় নবীর সান্নিধ্যে ধন্য।
তাই মদিনা, মদিনার মাটি, মদিনার পাহাড় থেকে শুরু করে এখানকার নবীর স্মৃতিধন্য স্থানগুলোর সঙ্গে মিশে আছে সবার ভালোবাসা। মদিনার বিখ্যাত কিছু স্থান বা ঐতিহাসিক জায়গা সাধারণ মানুষের কাছে দর্শনীয় স্থান হলেও মদিনায় রয়েছে আরও অনেক স্থান। আজকে তেমন কিছু স্থান নিয়ে আলোচনা করা হলো-
বিরে রুমা বা বিরে উসমান: হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উৎসাহের প্রেক্ষিতে হজরত উসমান (রা.) কূপটি এক ইহুদির কাছ থেকে কিনে জন সাধারণের পানি খাওয়ার জন্য ওয়াকফ করে দেন। তখনকার সময় এর মূল্য ছিল পয়ত্রিশ হাজার দিরহাম। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে বিশ বা চব্বিশ হাজার দিরহাম বলা হয়েছে।
গারুস সাজদাহ: একদা হজরত মুয়াজ (রা.) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে খুঁজতে খুঁজতে এসে দেখেন তিনি এখানে সিজদারত। সিজদার কারণ জিজ্ঞাসা করলে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার কাছে হজরত জিবরাইল (আ.) আমার উম্মতের ব্যাপারে সুসংবাদ সম্বলিত অহি নিয়ে এসেছেন। তাই আমি আমার রবের শোকর আদায় করছি।
জাবালে আইর: বর্তমান আবইয়ারে আলী বা জুলহুলায়ফা মিকাত মসজিদের পাশে অবস্থিত। স্থানটি হারামে মদিনার দক্ষিণ দিকের সীমান্ত।
মসজিদে আতেকা: তখনকার বনু সালেম গোত্রের আবাসস্থল। বর্তমানে এটি মসজিদে জুমা নামে বেশি প্রসিদ্ধ। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম এখানে জুমার নামাজ আদায় করেন।
মসজিদে ফাতহ: খন্দকের যুদ্ধে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাবু ছিল এখানে। বর্তমানে সাবয়া মসজিদ (৭ মসজিদ) নামে প্রসিদ্ধ মসজিদের প্রথম মসজিদ এটি।
খন্দক যুদ্ধে এখানে হজরত আলী (রা.)-এর তাঁবু ছিল। বর্তমানে এটি ৭ মসজিদের ৬ষ্ঠ মসজিদ।
খন্দক যুদ্ধে এখানে হজরত উমর (রা.)-এর তাঁবু ছিল। সাত মসজিদ নামে প্রসিদ্ধ স্থানের ৪র্থ মসজিদ এটি।
কাহফে খুজায়া: কাহফ অর্থ গুহা। এখানে উহুদ যুদ্ধে আহত অবস্থায় হজরতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু সময় বিশ্রাম নেন। এখানে মাথা মোবারক থেকে শিরস্ত্রাণ খোলা হয়।
জামে খন্দক: সাত মসজিদ এলাকায় নামাজের জন্য নির্মিত মসজিদ।
জাবালে বারকান: কিয়ামতের আলামত হিসেবে এই পাহাড়ের ভেতর থেকে আগুন বের হবে।
কুখ্যাত ইহুদি কাব বিন আশরাফের আবাসস্থল। ইসলাম, নবী ও মদিনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের তাকে এখানে বধ করা হয়।
বিরে গারস: হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসিয়ত অনুযায়ী এই কূপের পানি দিয়ে ইন্তেকালের পরে গোসল দেওয়া হয়।
সানিয়্যাতুল ওয়াদা: হিজরত করে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় প্রবেশ করার সময় এখানে অভ্যর্থনা জানানো হয়। স্থানটি মসজিদে কুবার পাশে অবস্থিত। এখানে সেই বিখ্যাত কবিতা, তালায়াল বাদরু আলাইনা... পড়তে পড়তে রাসূলকে স্বাগত জানানো হয়।
উতুমুল মাযাদ: ছোট্ট একটি টিলা। এখান থেকে খন্দক যুদ্ধের সময় পরিখা খনন শুরু করা হয়।
খন্দক যুদ্ধের সময় হজরত সালমান ফারসি (রা.)-এর তাঁবু ছিল এখানে। বর্তমান সাত মসজিদ নামে প্রসিদ্ধ এলাকার দ্বিতীয় মসজিদ এটি।
উহুদ যুদ্ধের সময় হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন।
মাকবারায়ে শুহাদায়ে উহুদ: এখানে উহুদের যুদ্ধে শহীদদের কবর অবস্থিত।
মসজিদে বনি হারাম: হজরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা.)-এর এলাকা। খন্দক যুদ্ধের সময় হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে দাওয়াতে এসেছিলেন। খানায় বরকত প্রকাশের মুজিযা এখানে প্রকাশ পায়।
হামিদুর রহমান: শিক্ষার্থী, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা মোনাওয়ারা, সৌদি আরব