বিশ্ব ইজতেমার জন্য প্রস্তুত তুরাগ তীর
![বিশ্ব ইজতেমার জন্য প্রস্তুত তুরাগ তীর, ছবি: বার্তা২৪.কম](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2020/Jan/04/1578135823324.jpg)
বিশ্ব ইজতেমার জন্য প্রস্তুত তুরাগ তীর, ছবি: বার্তা২৪.কম
ইজতেমা ময়দান থেকে ফিরে: টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) শুরু হতে যাচ্ছে তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমাকে সফল করতে নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে জোরেসোরে। বিশাল ইজতেমা ময়দানে সামিয়ানা টাঙানো, রাস্তাঘাট মেরামত, মাইক ও গ্যাস লাইন সংযোগ, অজু-গোসল, বাথরুম ও পানির হাউজ পরিস্কারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় থাকছে কঠোর নিরাপত্তা-ব্যবস্থা। মাঠের প্রবেশপথ ও বিদেশি অতিথিদের নির্ধারিত খিত্তায় লাগানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তুরাগ নদীতে বেশ কয়েকটি ভাসমান সেতু স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের বিবাদের কারণে এবার বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদা আলাদাভাবে । গত ২৮ অক্টোবর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাওলানা সাদ বিরোধীরা (আলমি শুরাপন্থিরা) ইজতেমা করবেন ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি। আর মাওলানা সাদ অনুসারীদের (এতায়াতিরা) ইজতেমা হবে ১৭, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি।
সরেজমিনে শনিবার দেখা গেছে, তুরাগ তীরের প্রায় ১৬০ একর জমি বিস্তৃত ইজতেমা ময়দানে প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিদের অংশগ্রহণে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে চলছে ময়দানের প্রস্তুতির কাজ। বিশাল ময়দানে চটের সামিয়ানা টাঙানো হচ্ছে, কেউ বাঁশ পুঁতছেন, কেউ সুতলি দিয়ে বাঁশ বাঁধছেন। ইজতেমার জিম্মাদারদের অধীনে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে মুসল্লিরা এসব কাজ করছেন।
ইতোমধ্যে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ময়দানের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ইজতেমা সূত্র জানিয়েছে।
গাজীপুরের মাওনা থেকে আসা শিহাব বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তারা ইজতেমা ময়দানে স্বেচ্ছায় কাজ করতে এসেছি। এখানে কোনো টাকা-পয়সার বিনিময় নেই। দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির বয়ান শোনা ও ইবাদত-বন্দেগির সুবিধার জন্য ইজতেমা ময়দানে কাজ করছি।’
এবার ইজতেমায় মুসল্লিদের সমাগম অনেক বেশি হবে। এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে ইজতেমার এক মুরব্বি বলেন, এবারের ইজতেমা সুষ্ঠু ও সফল করার জন্য আলেম-উলামাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মেহনত করছেন। মানুষের সমাগম বেশি হবে, তাই ইজতেমার মাঠ অন্যবারের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। এ বছর বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাশে, বাটা কোম্পানির মাঠ ও হুন্ডা ভবনের খালি অংশও ইজতেমার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। যাতে আগত মুসল্লিদের মাঠে অবস্থানে বিঘ্ন না ঘটে। ময়দানের সার্বিক প্রস্তুতিতে স্থানীয় প্রশাসন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও সরকারের বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সর্বাত্মক সহায়তা করছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইজতেমার মুরব্বিদের সূত্রে জানা গেছে, ১০ জানুয়ারি হওয়া ইজতেমায় ৬৪ জেলার সাধারণ তাবলিগের সাথী, জিম্মাদাররা ও আলেম-উলামারা অংশ নেবেন। বিদেশ থেকে অংশ নেবেন ১০২টি দেশের মুসল্লি। ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে মাওলানা সাদবিরোধী আলমি শুরাপন্থীদের ইজতেমা। এরপর ইজতেমা ময়দান জেলা প্রশাসনের জিম্মায় দেওয়া হবে। পরে ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে দিল্লির মাওলানা সাদপন্থিদের ইজতেমা। ১৯ জানুয়ারি বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে সাদপন্থিদের ইজতেমাও।
সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ইজতেমা সম্পন্নের জন্য ইতোমধ্যে ময়দানের আশপাশে সিসিটিভি বসানোসহ ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে পুরো ইজতেমা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে থাকে। ময়দানে ৪৫০টি সিসিটিভি স্থাপন করার জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ চলছে। ময়দানের ভেতরে ও বাইরে সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে। এছাড়া র্যাবের মোবাইল টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকবে।
ইজতেমার ময়দানের প্রয়োজনীয় সব সেবা নিশ্চিতের জন্য যা যা করা দরকার তার জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন কাজ করছে। এ বিষয়ে মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বার্তা২৪.কমকে টেলিফোনে বলেন, ইতোমধ্যে মাটি ভরাট করে ইজতেমা ময়দানকে সমতল করা হয়েছে। ধূলোবালি নিয়ন্ত্রণ ও মশা নিধনে কাজ শুরু করা হচ্ছে। মহাসড়কে ধূলোবালি যাতে না ওঠে সেজন্য প্রয়োজনে বিআরটি প্রকল্পের কাজ যেন বন্ধ রাখা হয় সেজন্য ঠিকাদারকে বলা হবে।
আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৬ হাজার সদস্য ইজতেমা উপলক্ষে মোতায়েন করা হবে। আর ইজতেমার সময় পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত ও ভেজালবিরোধী অভিযানসহ যেকোনো অপরাধের তাৎক্ষণিক সাজা দেওয়ার জন্য ইজতেমা এলাকায় মোবাইল কোর্ট নিয়োজিত থাকবে। অন্যবারের চেয়ে এবার বেশি সংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছাড়াও নানা নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ইজতেমার মাঠ ও এর আশাপাশের এলাকার নিরাপত্তার জন্য গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, বিজিবি আমাদের পাশে থাকবে। ইতোমধ্যে ময়দানে তারা কাজ শুরু করেছেন। ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করছেন। সেই সঙ্গে র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য বিভাগ, সিটি করপোরেশন ও পুলিশের আলাদা আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে।
৪ নভেম্বর স্থানীয় সংসদ সদস্য, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের উপস্থিতিতে ২০২০ সালের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি কাজের উদ্বোধন করা হয়। এর পর পর্যায়ক্রমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজন ইজতেমার মাঠ পরিদর্শন করেন।
১৯৬৩ সাল থেকে টঙ্গীতে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সে হিসেবে এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫৭ তম ইজতেমা। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইজতেমা তিন দিন ধরে অনুষ্ঠিত হতো। পরে মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ২০১০ সাল থেকে দুই দফায় অনুষ্ঠিত হতো ইজতেমার আয়োজন। কিন্তু বিরোধের কারণে ২০১৯ সাল থেকে দুই পক্ষ পৃথক তারিখে আয়োজন করতে শুরু করে। তার ধারাবাহিকতায় এবারও দুই পক্ষ পৃথক তারিখে ইজমেতায় অংশ নেবে।