ইজতেমায় আগতদের জন্য বিশেষ পরামর্শ

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্ব ইজতেমা মানচিত্র, এভাবেই ময়দানে জেলাওয়ারী মুসল্লিরা অবস্থান করবেন, ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব ইজতেমা মানচিত্র, এভাবেই ময়দানে জেলাওয়ারী মুসল্লিরা অবস্থান করবেন, ছবি: সংগৃহীত

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে আলমি শুরার সাথীদের বিশ্ব ইজতেমা। শুক্রবারে শুরু হলেও ইতোমধ্যে ইজতেমার মাঠে মুসুল্লি আসা শুরু করেছেন।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন জেলার দায়িত্বশীল তাবলিগের সাথীরা ইজতেমার মাঠে চলে এসেছেন। বৃহস্পতিবার ফজরের পরে নজম তথা ব্যবস্থাপনাগত বিষয়ে তাদের উদ্দেশে জরুরি আলোচনা হবে।

বিজ্ঞাপন

মাঠের এক জিম্মাদার মাওলানা আহমদ আলী বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন, দেশব্যাপী আলমি শুরার সাথীদের ইজতেমা একসঙ্গে হওয়ায় অনেক মানুষের সমাগমের বিষয়টি বিবেচনা করে এ বছর তাবলিগের মুরব্বিরা ইজতেমার ময়দানের জায়গা সম্প্রসারণের চিন্তা করেছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ, সেই ব্যবস্থা হয়েছে। এ বছর বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাশে, বাটা কোম্পারির মাঠে ও হুন্ডা ভবনের খালি অংশ ইজতেমার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

তাবলিগের মুরব্বিরা বলেছেন, ইজতেমা কেবল কোনো সমাবেশ নয়। ইজতেমা একটি মেহনতের নাম। এখান থেকে জামাতবদ্ধ হয়ে দ্বীনের মেহনতের জন্য সাড়া দুনিয়াতে ছড়িয়ে পড়বে মেহনতের জামাত। ইজতেমার মূল লক্ষ্য হলো- আল্লাহর রাস্তায় খুরুজ (জামাত) বাড়ানো। যেন অন্তত প্রত্যেক মসজিদ থেকে একটি চিল্লার জামাত হয়, সেভাবে কাজ করা। নিজে যেতে না পারলেও প্রিয়ভাজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি ও বন্ধু-বান্ধবদের একজনকে তৈরি করে দেওয়া। বিশেষ করে যুবকদের জামাতে বেশি বেশি পাঠানোর চেষ্টা করা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ইজতেমায় আগত সাথীদের জন্য বিশেষ পরামর্শ দিয়েছেন মাঠের জিম্মাদার ও তাবলিগের পুরনো সাথীরা। পরামর্শে তারা বলেছেন-

এক. ইজতেমার তিনদিন অপ্রয়োজনে ফেসবুক চালানো থেকে বিরত থাক। ময়দানের বয়ান মনোযোগ দিয়ে হেদায়েতের নিয়তে শোনা।

দুই. ইজতেমায় জামাতবদ্ধ হয়ে আসা, একাকি না আসা।

তিন. ছোটো বাচ্চাদের না আনা। মোনাজাতে অংশ নিতে নারীদের আসতে বারণ করা।  

চার. যারা তিনদিনের জন্য মাঠে আসবেন, তারা মনোযোগ সহকারে বয়ান শোনার জন্য মোবাইল বন্ধ রাখবেন।

পাঁচ. যারা মাঠে আসবেন ফিরতি গাড়ি ভাড়া করে আনবেন না যাওয়ার টিকিট ক্রয় করবেন না। কারণ মাঠের বয়ান কিংবা কারগুজারি শুনে আপনার দিল তৈরি হতে পারে, চিল্লার সফরে নাম লিখিয়ে দিতে পারেন।

ছয়. ইজতেমার ময়দানের ভেতরে-বাইরে কোনোরূপ ভিডিও করার চেষ্টা করবেন না।

সাত. শুধু লোক দেখতে, ঘুরতে অথবা জুমার নামাজ আদায় করতে কিংবা দোয়ায় অংশ নিতে ইজতেমার মাঠে আসবেন না। আসলে কমপক্ষে ভোর থেকে এশা পর্যন্ত আসবেন, মনোযোগ দিয়ে বয়ান শুনবেন।

আট. ময়দানে কিছু হারিয়ে গেলে বা পেলে হারানো-প্রাপ্তির কামরায় যোগাযোগ করবেন।

নয়. কোনো সমস্যা তৈরি হলে দ্রুত স্বেচ্ছাসেবক, জামাতের আমির, খিত্তার জিম্মাদার অথবা আইনশৃংখলা বাহিনীকে জানাবেন।

দশ. অসুস্থ হলে দ্রুত খিত্তায় অবস্থানরত চিকিৎসক, মাঠের পার্শ্বে স্থাপতি মেডিকেল ক্যাম্প অথবা চিকিৎসক টিমের স্মরণাপন্ন হবেন।

এগারো. শুকনো খাবার ও পানি সঙ্গে রাখবেন।

বারো. স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ছাত্র, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শিক্ষক, আলেম ও রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে আলাদা আলাদা গুরুত্বপূর্ণ বয়ান হবে ইজতেমার ময়দানে। এসব বয়ান কখন হবে তা জানতে সংশ্লিষ্ট খিত্তায় খোঁজ নিন।

তেরো. রাতে যারা ময়দানে থাকবেন, প্রয়োজনীয় বিছানা ও শীতের কাপড় সঙ্গে আনবেন এবং মাঠের ম্যাপ দেখে আপনার এলাকার সাথীদের সঙ্গে থাকবেন।

চৌদ্দ. প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখবেন। গ্যাস সিলিন্ডার ও রান্নার সরঞ্জামাদি সাবধানে রাখবেন।

পনেরো. সম্মিলিত মাল-সামানা, হাড়ি-পাতিল, রান্নার সামগ্রী ইত্যাদি যথাসম্ভব গুছিয়ে অল্প জায়গায় রাখবেন। যেনো সাথী ভাইদের বেশি জায়গা দেওয়া যায়, তাদের চলাচলে কষ্ট না হয়।

ষোলো. অজু-বাথরুম শেষে হাতে করে জুতা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করলে, জুতার পানি মানুষ কিংবা অন্যের মাল-সামানার ওপর পরে, আর জুতা হারায়ও বেশি। তাই বাড়ি থেকে পলিথিন বা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে যাওয়া জুতা রাখার জন্য।

সতেরো. নামাজের সময় কাতার সোজা করা জরুরি। এক কাতার থেকে পরের কাতারের দূরত্ব ৬ ফুট। এর মধ্যে ৪ ফুট নামাজের জন্য এবং ২ ফুট সামান রাখার জন্য। কিছু কিছু ভাইকে দেখা যায় কাতারের দাগের ওপর সামান রেখেছেন ফলে কাতার বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এজন্য নামাজের ৫/১০ মিনিট আগেই সাথীদের খেয়াল রাখা, কাতারের ওপর সামানা রাখা হলে তা সরিয়ে কাতার সোজা রাখার ব্যবস্থা করা।

আঠারো. নামাজের জামাতের সময় কাতারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। কোনো অবস্থাতেই খণ্ড খণ্ড কাতার না করা।

ঊনিশ. ইজতেমা মাঠের খোপগুলো ১৮ ফুট×১৮ ফুট। প্রতি খোপে ৩০ জন কিংবা বেশি মানুষকে ঘুমাতে হয়। এক্ষেত্রে অন্যের সুবিধাকে প্রধান্য দেওয়া, নিজে একটু কষ্ট-মোজাহাদা করে হলেও নতুন সাথীদের একরাম করা।

বিশ. যারা খুরুজ (জামাতে যাবেন) হবেন, তারা সরাসরি খিত্তার তাশকিলের জায়গায় যাবেন।

সেই সঙ্গে মনে মনে নিয়ত রাখবেন, আল্লাহতায়ালা যেনো ইজতেমার উসিলায় হেদায়েত দান করেন, ইজতেমাকে হেদায়েতের উসিলা বানান। আল্লাহ যেন ইজতেমাকে কবুল করেন। সারা দুনিয়ার মানুষের হেদায়েতের জন্য, ঈমান তাজা করার জন্য মকবুল এই দাওয়াতি মেহনতকে কবুল করেন।