জায়গা নেই ইজতেমা ময়দানে
বিশ্ব ইজতেমা ময়দান থেকে: একদিন আগেই আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়েছে। ইজতেমার ময়দানে আসা তাবলিগি সাথী ও মুসল্লিদের সমাগম বেশি হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমা শুরুর কথা ছিল শুক্রবার (১০ জানুয়ারি)। কিন্তু বুধবার থেকেই মানুষের ঢল নামতে থাকে ইজতেমা মাঠে। বৃহস্পতিবার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মাঠ। তাই মাঠে আসা বিপুল সংখ্যক মুসল্লিদের আমলের সঙ্গে জুড়ে রাখতে আম বয়ান, কিতাবের তালিম ও অন্যান্য কার্যত্রম শুরু করা হয়েছে। ফলে অলস সময় না কাটিয়ে বয়ান শুনে, কোরআন তেলাওয়াত ও নফল ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন মুসল্লিরা।
বৃহস্পতিবার (৯) সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা। পশলা বৃষ্টি হয়েছে কয়েকবার। সেই সঙ্গে শীতের প্রকোপ কিছুটা বাড়তি। রাস্তাঘাটে প্রচণ্ড যানজট। এসব কিছু উপেক্ষা করে ময়দানে আসতে থাকেন তাবলিগি সাথী ও সাধারণ মুসল্লিরা।
এবার ইজতেমা মাঠের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে নতুন ১৪টি খিত্তা যুক্ত করার মাধ্যমে মাঠের পরিধি বাড়ানো হলেও টঙ্গীর তুরাগ তীরে ১৬০ একর বিস্তৃত বিশ্ব ইজতেমা ময়দান প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। তার পরও দলে দলে ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা। এবার পুরো ইজতেমাকে ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। ৬৪ জেলার মুসল্লিরা মাঠে এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত জায়গায় (খিত্তা) অবস্থান করবেন। কিন্তু মাঠে মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান হচ্ছে না।
ইজতেমায় মুসল্লিদের রেকর্ড পরিমাণ উপস্থিতির কারণে অনেকে রাস্তায় নিজ ব্যবস্থাপনায় তাঁবু টানিয়ে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে ময়দানের আশপাশের মসজিদ-মাদরাসা, স্কুল-কলেজের মাঠে মুসল্লিদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তায় মাইক সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মঞ্চ থেকে আহ্বান করা হচ্ছে, সবরের সঙ্গে দুইদিন কাটাতে। প্রত্যেকেই অন্যকে প্রাধান্য দিয়ে সুযোগ করে দিতে এবং ইজতেমার পূর্ণ কামিয়াবির জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে।
এক মুসল্লির মৃত্যু
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে ইজতেমা ময়দানে ইয়াকুব আলী শিকদার (৮৫) নামে এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। ইয়াকুব আলী শিকদার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার লাখিরপাড় এলাকার মৃত হাসেম আলীর ছেলে। ইজতেমার মুরব্বি হাজি রেজাউল করিম জানিয়েছেন, সকালে সাড়ে ৬টার দিকে ইয়াকুব আলী শিকদার নিজ খিত্তায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও মাঠের প্রস্তুতি
পুরো ইজতেমা ময়দানে ৪৫০টি সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। মুসল্লিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। মাঠে, মাঠের প্রবেশপথে ও আশপাশের এলাকায় রয়েছে সাদাপোশাকের পুলিশ। দায়িত্বপালনে প্রস্তুত জেলা প্রশাসনের ৩০টির মতো ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাঠে নিয়োজিত থাকবে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল। তুরাগ নদীতে স্পিডবোট, ড্রোন ও হেলিকপ্টারে টহলের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এ ছাড়া তাবলিগের নিজস্ব কর্মীরা মাঠে নিয়োজিত রয়েছেন।
মুসল্লিদের ব্যবহারের জন্য ৩১টি ভবনে আছে ৮ হাজার ৩৩১টি শৌচাগার। ১৭টি গভীর নলকূপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনটি গ্রিড থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে মাঠে। এ ছাড়া ৪টি শক্তিশালী জেনারেটর প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মুসল্লিদের পারাপারের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তুরাগ নদীতে সাতটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছেন। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১০টি বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছে, সেই সঙ্গে সব ট্রেন টঙ্গী রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে।
নজরদারিতে সামাজিকমাধ্যম
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সামাজিকমাধ্যমে গুজব ছড়ানো এবং মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়। যে কারণে বড় ধরনের ঘটনা এড়াতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
র্যাব ডিজি বলেন, বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে কোনো গুজব যাতে না ছড়ানো হয়, সে জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং করা হচ্ছে। ফেক এবং গুজব নিউজের কারণে অনেক সময় বড় বিপদ চলে আসতে পারে। এ জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো মনিটরিং করা হবে। যাচাই না করে কোনো নিউজ শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বেনজির আহমেদ বলেন, বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে কোনো ঝুঁকি নেই। তার পরও আমরা সতর্ক রয়েছি। কোথাও কোনো ঝুঁকি প্রতীয়মান হলে সঙ্গে সঙ্গে যেন মোকাবেলা করতে পারি, সে বিষয়ে আমরা প্রস্তুত।