কোরআন পৃথিবীর বুকে সর্বাধিক পঠিত ও বিক্রিত কিতাব
কোরআনে কারিম। আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নাজিলকৃত সর্বশেষ কিতাব। কোরআন আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ফেরেশতা হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ২৩ বছরব্যাপী নাজিল হয়। পৃথিবীতে কোরআন একমাত্র কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই; এই কিতাবের সমকক্ষ কোনো কিতাব নেই। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমের সূরা বাকারার দ্বিতীয় আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘এটি সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, (এই কিতাব) মুত্তাকিদের জন্য আলোর দিশা।’
কোরআন মাজিদে যা আলোচনা করা হয়েছে তা, সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের জন্য। এই কিতাব উভয় জগতের জন্য আলোকবর্তিকা। কোরআন পৃথিবীর বুকে সর্বাধিক পঠিত ও বিক্রিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘এই কিতাবে সব মানুষের জন্য ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। আর পথনির্দেশ ও নসিহত রয়েছে মুত্তাকিদের জন্য।’ -সূরা আলে ইমরান: ২
কোরআন শরিফ থেকে আমরা বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকার্তা আল্লাহতায়ালার পরিচয়, তার রাসূলের পরিচয়, অন্য নবীদের পরিচয়, ফেরেশতাকুলের পরিচয়, তাকদিরের পরিচয়, ভালো-মন্দের পরিণাম, আখেরাতের পরিচয়, হালাল-হারামের পরিচয়, অভিশপ্ত শয়তানের পরিচয়, মানুষের সফলতা ও ব্যর্থতার কারণ, সমগ্র সৃষ্টিজগত এবং এমনকি অশরীরী জীব জিন জাতির অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারি।
আমাদের মৌলিক ইবাদত তথা- নামাজ, জাকাত, রোজা, হজ সম্পর্কিত নির্দেশ সরাসরি লাভ করি। জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে হলে কোরআন সবাইকে পাঠ করতে হবে। তবেই মানব জীবন সার্থক এবং আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য হাসিল হবে।
মুমিনদের কাছে কোরআন কেন এত প্রিয়?
১. কোরআন মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির দিকনির্দেশনা দেয়,
২. কোরআনের নির্ভুলতার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই, আজ পর্যন্ত কেউ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারেনি।
৩. কোরআন এমন এক ব্যক্তির ওপর অবতীর্ণ হয়েছে, যার তুলনা পৃথিবীতে কারো সঙ্গে হতে পারে না। তিনি হচ্ছেন সাইয়্যেদুল মুরসালিন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তার চরিত্রের অনুপম আদর্শের কথা কোরআনে বলা হয়েছে। যার সত্যবাদিতা ও আমানতদারিতার ব্যাপারে তার ঘোরতর শত্রুরাও ছিলেন শতভাগ বিশ্বাসী।
৪. কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ নিয়েছেন।
৫. কোরআনে কারিমের রচনাশৈলী, শৈল্পিক সৌন্দর্য এবং বর্ণনার বাচনভঙ্গী অন্যান্য বইয়ের চেয়ে পৃথক।
৬. কোরআনের পাঠক এবং মুখস্থকারী (হাফেজ) পৃথিবীর যেকোনো বইয়ের চেয়ে বেশি। অবশ্য অন্যান্য বইয়ের কোনো হাফেজ পাওয়া যায় কালেভদ্রে।
৭. কোরআন বাদে অন্য কোনো বই পাঠ করলে নেকি হবে- এমন কথা কোনো বইয়ে নেই। একমাত্র এই কিতাবের ব্যাখ্যাগ্রন্থ হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি এই কিতাবের (কোরআনের) একটি অক্ষর পাঠ করবে, তার জন্য রয়েছে বিশেষ নেকি। আর নেকি দেওয়া হবে ১০ গুণ। আমি (মুহাম্মদ সা.) বলছি না যে, ‘আলিফ-লাম-মিম’ একটি অক্ষর। বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর এবং মিম একটি অক্ষর।’
৮. কোরআন অপরিবর্তনীয়। এর কোনো সংস্করণ, সংযোজন এবং বিয়োজন চলবে না। কিয়ামত পর্যন্ত এই কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহতায়ালার কাছেই।
কোরআনে কারিমের মূল চরিত্র নবী করিম (সা.)। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কেন্দ্র করে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এর মূল আলোচ্য বিষয় মানুষ। মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য, মানুষের জীবনাচারকে পরিশুদ্ধ করার জন্য, মানুষকে হেকমত ও গঠনমূলক উপদেশ দেওয়ার জন্য। কোরআন বিশেষ বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রয়োজনানুসারে অবতীর্ণ হয়েছে। কোরআনের নবী মুহাম্মদ (সা.) সহ মোট ২৫ জন আল্লাহর প্রিয় নবী ও রাসূলের নাম উল্লেখ রয়েছে। যাদেরকে বিভিন্ন সময়ে মানুষকে সঠিক পথের দিশা দিতে আল্লাহ পাক পাঠিয়েছিলেন।
কোরআনে কারিমের আলোচ্য বিষয়সমূহ
১. এতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোচনা করা হয়েছে। ২. মানুষের যেকোনো সমস্যার যথাযথ সমাধান আছে। যেমন- বিয়ে-তালাক ও উত্তরাধিকার আইন। ৩. এতে শরিয়তে অনেক হুকুম-আহকাম আছে। ৪. দণ্ড প্রয়োগবিধি আলোচনা করা হয়েছে। ৫. যুদ্ধনীতি, শান্তি চুক্তি, বন্দী নীতি, কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আচরণবিধি প্রভৃতি বর্ণিত আছে। ৬. এতে হালাল, হারাম (আদেশ-নিষেধ) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, ৭. এতে সমাজ-সংগঠন, দেশ-পরিচালনা সম্পর্কিত বিধি আছে। ৮. এতে পারিবারিক নীতি, সামাজিক নীতি, নারী নীতি, অর্থনীতি, ভূমিনীতি সম্পর্কিত আলোচনা আছে। ৯. তাওহিদ, রিসালাত এবং আখেরাতের অতি সুন্দর বর্ণনা আছে। ১০. কী করলে জান্নাত পাবে এবং কী করলে জাহান্নাম অনিবার্য তা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১১. পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ধ্বংসের কাহিনী বর্ণিত আছে।
কোরআনের সমকক্ষ কোনো কিতাব নেই, এটা জ্ঞানের মহাসমুদ্র। ঈমান বা বিশ্বাস, আমল বা কর্ম এবং ইলম বা জ্ঞানের নিবিড়চর্চার সমন্বয়ে এই কিতাবটি থেকে জ্ঞানার্জন করে কল্যাণ লাভ করতে হবে।
কোরআন হলো- আল্লাহর রজ্জু, হিকমতপূর্ণ উপদেশ, সরল পথ। এখান থেকে জ্ঞানীরা প্রেরণা লাভ করে থাকেন। বারবার পাঠ করলে স্বাদ আরও বাড়তে থাকে এবং যার রহস্যের কোনো শেষ নেই। কোরআন পাঠ করলে অসাধারণ জ্ঞান লাভ করা যায়, কোরআনের বিধান মেনে চললে সম্মানিত হওয়া যায়, শিক্ষাদান কারীকে সর্বোত্তম ব্যক্তি বলে রাসূল (সা.) ঘোষণা করেছেন। কোরআন পাঠে রয়েছে পরকালে মুক্তির গ্যারান্টি, এই কিতাব হচ্ছে সমগ্র মানব জাতির জন্য আলোর মিনার।