বিখ্যাত ৫ মুসলিম স্থাপত্য
হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও কিছু মুসলিম স্থাপত্যের সৌন্দর্য ও আকর্ষণে কোনো রদবদল হয়নি। এই স্থাপত্যকর্মগুলো শিল্পকলা-চারুকলা এবং স্থাপত্যকলা-অলঙ্করণকলার বিবেচনায় সেরা ও মান উত্তীর্ণ বলেই কাল থেকে কালান্তর স্মরণীয় হয়ে আছে এবং থাকবে। এমন ৫টি স্থাপত্য নিয়েই আজকের এ প্রতিবেদন।
সুলায়মানিয়া মসজিদ, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক: তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অবস্থিত সবচেয়ে বড় এই মসজিদটি ১৫৫০ থেকে ১৫৫৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে নির্মিত হয়। উসমানীয় স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসেবে এই স্থাপত্যটি আজও পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাদশাহ প্রথম সুলাইমান এই মসজিদটি নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন বলেই তার নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে মসজিদে একটি মিনার বসানো হওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। সুলায়মানি মসজিদই পৃথিবীর প্রথম মসজিদ, যেখানে প্রথমবারের মতো চারটি মিনার স্থাপন করা হয়। মসজিদটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ, আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত: সংযুক্ত আরব-আমিরাতের সবচেয়ে বড় মসজিদ এবং এটি পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম ও সুন্দরতম মসজিদ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে। মসজিদটি নির্মাণে মার্বেল পাথর, মূল্যবান স্ফটিক পাথর ও মৃৎশিল্প ব্যবহৃত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ স্বচ্ছ পাথরের দ্বারা তৈরি পৃথিবীর বৃহত্তম ঝাড়বাতিটি এই মসজিদে স্থাপিত রয়েছে। সাড়া বিশ্বের মুসলিম-অমুসলিম পর্যটকদের কাছে এই মসজিদটি অন্যতম জনপ্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান ও স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত।
নাসির আল মুলক মসজিদ, শিরাজ, ইরান: এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদ ইরানের শিরাজ নগরীতে অবস্থিত। ১৮৮৮ সালে নির্মিত এ মসজিদটি গোলাপী মসজিদ নামেও বেশ পরিচিত। স্থাপত্যটিতে ব্যবহৃত রঙিন গ্লাসের অলঙ্কার একটি বিশেষ আয়োজন এবং যখন এই জানালার মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে আলোকিত হয়, তখন পুরো স্থানটি মায়াবী এক রঙিন আলোয় পূর্ণ হয়ে যায়। ইরানি স্থাপত্যশৌলীতে নির্মিত এই মসজিদ ইরানসহ গোটা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সুন্দর একটি মুসলিম স্থাপত্য।
দ্য আল হামরা, আন্দালুসিয়া, স্পেন: এটি মূলত একটি প্রাসাদ এবং যৌগিক দুর্গ, স্পেনের আন্দালুসিয়ার গ্রানাডাতে যা অবস্থিত। ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে স্পেনের মুসলিম নাসরি রাজবংশের শাসনামল চলাকালীন অত্যাশ্চর্য এই প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এটির সৌন্দর্য অসাধারণ। প্রাসাদটির ভেতরে রয়েছে বাগান, ঝরনা ও চমৎকার শিল্পসম্মত অলঙ্করণ। ১৯৮৪ সালে ২ নভেম্বর ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান নির্বাচন কমিটি আল হামরাকে মানবতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। আল হামরা প্রাসাদটির নামের উৎপত্তি খুঁজতে গিয়ে অনেক তত্ত্ব ও কাহিনি পাওয়া যায়।
হাসান দ্বিতীয় মসজিদ, কাসাব্ল্যাংকা, মরক্কো: মরক্কোর উপকূলীয় শহর কাসাব্ল্যাংকায় অবস্থিত এই মসজিদটি ঐতিহাসিক মুসলিম স্থাপত্যের মাঝে অন্যতম নিদর্শন। আফ্রিকার সবচেয়ে বড় এ মসজিদটি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। মসজিদটিকে ভাসমান মসজিদও বলা হয়। কারণ, মসজিদটির তিন ভাগের এক ভাগ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। এই মসজিদের মিনারের উচ্চতা ২১০ মিটার। প্রায় ৬০ তলা ভবনের সমান উঁচু এ মিনারের ওপরে স্থাপিত হয়েছে একটি বিশেষ লেজার রশ্মি, যা সমুদ্রপথে চলমান নাবিকদের পবিত্র কাবার পথ প্রদর্শনে সহযোগিতা করে। বিশেষ এই রশ্মিটি ৩০ কিলোমিটার দূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যায়। এই মসজিদের মিনারটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মিনার হিসেবে স্বীকৃত।