আজানের পর ঘরে নামাজের আহ্বান মুয়াজ্জিনের
যথাসময়ে আজান হচ্ছে সব মসজিদেই। কিন্তু আজানের পর পরই মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, ঘরে নামাজ আদায়ের জন্য।
সোমবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে সব ধরনের ধর্মীয় গণজমায়েত নিষিদ্ধ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা জারির পর আসরের নামাজের সময় থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার মসজিদের মাইক থেকে মুসল্লিদের মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামাজ পড়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
মসজিদের জামাতে অংশ নিতে মুসল্লিদের যেতে বারণ করা হলেও যথানিয়মে আজান অব্যাহত রয়েছে এবং সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের অংশগ্রহণে জামাত চালু রয়েছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে জনসমাগম এড়াতে ধর্ম মন্ত্রণালয় এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে সব ধরনের ধর্মীয় গণজমায়েত নিষিদ্ধ করে। নির্দেশনায় মুসল্লিদের মসজিদ না গিয়ে ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের অংশগ্রহণে মসজিদে আজান ও জামাত অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়।
নির্দেশনা জারির পর অনেক এলাকায় মাইকিং করে বিষয়টি জনগণকে জানানো হয়।
ঘরে নামাজ আদায়ের সরকারি সিদ্ধান্তকে যথার্থ ও সঠিক বলে তা মেনে চলার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন আল্লামা আহমদ শফী। তিনি এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। অন্য আলেমরাও সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মুসল্লিদেরও এ বিষয়ে একাত্মতা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। অনেকে এই সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিলো বলে মন্তব্য করেছেন।
ইসলামি ফাউন্ডেশনের বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক শীর্ষস্থানীয় আলেম বার্তা২৪.কম-এর কাছে বলেন, তারা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে বৈঠকে নিজেদের মতামত দিলেও সরকার প্রয়োজনে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন মতও দিয়েছিলেন। মসজিদে জামাত সীমিত রাখার ব্যাখ্যায় অনেকে ইমাম-মুয়াজ্জিন ও স্বল্পসংখ্যক মুসল্লির অংশগ্রহণে জামাত চালু রাখার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিষয়গুলো ওইভাবে প্রচার না হওয়ায় মানুষ জানতে পারেনি।
একাধিক মুফতির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে চলা ইসলাম সমর্থন করে। আর মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া সুন্নতে মোয়াক্কাদা, যা ওয়াজিবের কাছাকাছি। আর জামাত চালু রাখা ফরজে কেফায়া, পরিবর্তিত অবস্থায় যেহেতু মসজিদে জামাত চালু থাকছে, তাতে কারও কোনো গোনাহ হবে না।
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মসজিদ বন্ধের জন্য মনে কষ্ট না পেয়ে তার মাঝে অনেককে সান্তনা খুঁজতেও দেখা গেছে। ওই হাদিসে বলা হয়েছে, ‘কিয়ামতের কঠিন দিবসে সাত ব্যক্তি আরশের নিচে ছায়া পাবে। তাদের অন্যতম হচ্ছে- যার অন্তর আল্লাহর ঘর মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকবে।’
সরকারি নির্দেশে মসজিদে জামাত দেখে যাদের চোখের জলে বুক ভাসছে, ইনশাআল্লাহ- কাল কিয়ামত দিবসে তারা আরশের নিচে ছায়া পাবেন।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় সৌদি আরবের প্রধান দুই মসজিদ ছাড়া সকল মসজিদে জামাত বন্ধ রয়েছে। কুয়েত, আবু ধাবী, মালয়েশিয়া, মরক্কো ও তুরস্কসহ বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশেও মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে উমরা বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: মসজিদ বিষয়ে সরকারের আদেশ সঠিক ও যথার্থ: আল্লামা শফী
আরও পড়ুন: মসজিদে না যেয়ে ঘরেই ইবাদত পালনের নির্দেশ