বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগের দাবি জোরালো হচ্ছে

  • মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ছবি: সংগৃহীত

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ছবি: সংগৃহীত

বাস্তব ঘটনা উপলব্ধি করতে এবং দলিল-প্রমাণসহ তার শরয়ি বিধান বর্ণনা করতে সক্ষম ব্যক্তিকে মুফতি বলে। বাংলাদেশে রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত কোনো মুফতি বা ফতোয়া বোর্ড আমাদের নেই। নেই ধর্মীয় পরামর্শদাতা কোনো কর্তৃপক্ষও। অন্যদিকে ইসলামি আইনশাস্ত্র সম্পর্কে সুপন্ডিত এবং কারা ফতোয়া দেওয়ার যথাযোগ্য ব্যক্তি সে বিষয়ে উল্লেখ করার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান এখনও বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি। আমাদের কোনো কোনো মুফতির অর্জিত জ্ঞান, গবেষণা ও তার প্রসিদ্ধির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানের ব্যপ্তির ওপর নির্ভর করে চলছে ফতোয়া দেওয়ার কাজ। এ জাতীয় কিছু প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক সংগঠনও গড়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় মুফতিরা এখনও পিছিয়ে।

বিভিন্ন সময় দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে ফতোয়া বিষয়ে জানতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দারস্থ হতে হয়েছে। আবার দেশের উদ্ভুত নানা সমস্যায় সরকারকে পরামর্শ দিতে যেয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে দেশের নানামতের, নানা চিন্তার মুফতিদের স্মরণাপন্ন হতে হয়েছে। তাতেও অনেক সময় কাঙ্খিত ফলাফল মেলেনি। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ধর্মীয় সমাধানের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে মনে করা হলেও সংস্থাটি সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি। তার পরও তাদের তত্ত্বাবধানে ধর্মীয় বিষয়গুলোর একটা সমাধান দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু সম-সাময়িক ধর্মীয় বিষয়ে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে দায়িত্ব নিয়ে মতামত দেওয়ার মতো উপযুক্ত কোনো কর্তৃপক্ষ আমাদের দেশের নেই। ফলে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মোটামুটি পরিচিত আলেমরা মন্তব্য ও মতামত দিয়ে থাকেন নিজ নিজ জানাশোনা মোতাবেক। ফলে সমাজে নানাবিধ বিতর্ক দেখা দিচ্ছে। এমতাবস্থায় তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে, সর্ব্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বা অভিভাবকের।

প্রাজ্ঞ, যোগ্য ও বিতর্কহীন কাউকে সর্ব্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা কিংবা ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

গ্র্যান্ড মুফতি, প্রধান মুফতি হবে সর্বোচ্চ ধর্মীয় পদ। তিনি সব ধরনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ইসলামি আইনশাস্ত্রের বিশদ ব্যাখ্যা এবং ফতোয়া প্রদান করবেন। বিদেশে ধর্মীয় বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। সম-সাময়িক কোনো ইস্যুতে রাষ্ট্রকে ধর্মীয় পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ জনগণ ধর্মের ব্যাখ্যা দেবেন, সঠিক পথ দেখাবেন। গ্র্যান্ড মুফতি কর্মপরিধি থাকবে একেবারে স্বাধীন। তিনি রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রধান মুফতির পদ রয়েছে। তিনি ওই দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃত্বধারী হিসেবে গণ্য হন। তার পরামর্শ মোতাবেক ওইসব দেশের ধর্মীয় কার্যাদি সম্পন্ন হয়।

একটা সময় ছিলো, বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.) বিভিন্ন ধর্মীয় ইস্যু ও সঙ্কটে ধর্মীয় সমাধান দিতেন। সরকার, প্রশাসন ও জনগণ তা মেনে নিতেন। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা না থাকলেও খতিব সাহেবকে দেশের মানুষ সর্বোচ্চ ধর্মীয় অভিভাবক হিসেবে মানতেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় বিধান পালনের কোনো কোনো বিষয় নিয়ে আলেম-উলামারা একমত হতে পারছেন না। কার্যকরি কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় সরকারকে এটা নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে যথাযথ কোনো কর্তৃপক্ষ না থাকায় গণমাধ্যমে মতামত-মন্তব্য দিচ্ছেন অনেকেই যার যার মতো করে। দিন দিন এটা নিয়ে জটিলতা বাড়ছে বৈ কমছে না।

প্রায়ই দেখা যায়, উদ্ভুত ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলেম-উলামাদের কাছ থেকে পৃথক ও একাধিক সিদ্ধান্ত আসছে। ওইসব মতামতের পক্ষে আলাদা আলাদা দলিল-প্রমাণ থাকলেও মানুষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে, ক্ষেত্রবিশেষ বিরক্ত হয়। একজন গ্র্যান্ড মুফতি থাকলে মানুষ বিভ্রান্তির শিকার হতো না- এতে জাতি যেমন উপকৃত হতো, তেমনিভাবে আলেমদের প্রতি তাদের সম্মানবোধ ঠিক থাকতো।

এমতাবস্থায় বার্তা২৪.কম ‘বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগের দাবি’র প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদ, গবেষক, আলেম-উলামা ও ইসলামবিষয়ক জনপ্রিয় কয়েকজন লেখকের মতামত জানতে চায়। ওইসব মতামতে ওঠে আসে, বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগের দাবির প্রয়োজনীয়তা।

তাদের সেসব মতামত বার্তা২৪.কম এর পাঠকের জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে।