আল্লাহর রহমত থেকে কখনো নিরাশ হতে নেই
ঐশী গ্রন্থ আল কোরআনের একটি অম্লান বাণী মুসলমানদের হৃদয়েই শুধু নয়, বিশ্বের ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, অঞ্চল, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সকলের হৃদয় ও মনে আশাবাদের চেতনায় তীব্র দোলা দেয়। পদস্খলিত, পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী মানুষের সামনে জীবনের দিশা, মুক্তি ও কল্যাণের প্রেরণা জাগ্রত করে সূরা যুমারের ৫৩ নম্বর আয়াত, যেখানে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে নবী! আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দারা, তোমরা যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছো, তারা আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে কখনো নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহতায়ালা সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
রহমত, বরকত, মাগফেরাত, নাজাতের রমজান মাসে মুসলমানদের জন্য আল্লাহর দিকে ফিরে আসার ও তাওবা করার মহা সুযোগ সৃষ্টি হয়। নিজেদের ওপর জুলুম করার জন্য যে দুর্ভাগ্য ও ক্ষতির সম্মুখীন হয় মানুষ, তার কবল থেকে তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে পরিশুদ্ধি লাভের মহাসুযোগ ঘটে রমজানে। তওবা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে রমজান রোজাদারদের আল্লাহর দিকে এবং রহমতনও কল্যাণের দিকে ধাবিত করে।
ইসলামী জীবনধারায় রমজানের যে সাংস্কৃতিক আবহ, তার বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে খোদাপ্রেম, আত্মশুদ্ধি ও তাওবার প্রেরণা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, পবিত্র রমজানের রোজা মুসলমানদের আত্মশুদ্ধির পথ দেখায়। পাপাচার, অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন, অকল্যাণের অন্ধকার থেকে আলো ও কল্যাণে প্রত্যাবর্তনের পথ দেখায় রমজানের রোজা।
সন্দেহ নেই, আল্লাহর অফুরন্ত রহমত ও সীমাহীন ক্ষমার সুবিশাল ভাণ্ডারের দরজা খুলে যায় পবিত্র রমজান মাসে। রমজান মাসে দিনে রোজা আর রাতে নামাজের মাধ্যমে রহমত ও ক্ষমার সুযোগ লাভের সৌভাগ্য পায় রোজাদার মুসলমানগণ। রমজান মুসলমানদের জন্য অধিকতর কল্যাণ পাওয়ার অবারিত সুযোগ নিয়ে আসে প্রতিটি মুসলিম নর ও নারীর জীবনে।
মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস থেকে জানা যায়, ‘মহান আল্লাহ রাতের বেলা তার হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনের অপরাধীরা তওবা করতে পারে, আর তিনি অনুরূপ দিনে তার ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন, যাতে অপরাধীগণ তওবা করতে পারে। এমন চলতে থাকে যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হয়।’ -সহিহ মুসলিম: ২৭৫৯
আল্লাহতায়ালার ক্ষমাশীলতার সীমা-পরিসীমা নেই। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে আল্লাহর ক্ষমার মহাসমুদ্রের কথা বার বার উল্লেখিত হয়েছে। মহিম্বান্বিত সত্তা! আমাদের সর্বদা অপরাধ সত্ত্বেও আমাদের দান করেন, ক্ষমা করেন। বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধ করতে থাকে এবং অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করে, আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করতে থাকেন। ক্ষমা করার ক্ষমতা ও এখতিয়ার একমাত্র আল্লাহরই রয়েছে। কারণ তিনিই একমাত্র মালিক সারা জাহানের। অতএব তারই (মালিকের) রয়েছে ক্ষমার মহান গুণ ও ক্ষমা করার পূর্ণ এখতিয়ার ও ক্ষমতা।
অতএব অপরাধে আকীর্ণ মানুষের উচিত মহান সৃষ্টিকর্তা ও মালিক আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে ক্ষমা ভিক্ষা করে নেওয়া। কারণ, সঠিক ও প্রকৃত তাওবা, অনুতাপ বা ক্ষমা ভিক্ষা করার মাধ্যমেই পাপমুক্তি, প্রায়শ্চিত্ত এবং রহমত, সঠিক পথ পাওয়া সম্ভব হতে পারে। পবিত্র কোরআনের সূরা আলে ইমরানের ১৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘(ভালো মানুষ হচ্ছে তারা) যারা যখন কোনও অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে, সাথে সাথেই তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা, আল্লাহতায়ালা ছাড়া আর কে আছে যে গোনাহ ক্ষমা করতে পারে? তদুপরি এরা জেনে বুঝে এদের গোনাহের ওপর অটল হয়ে বসে থাকে না।’
অতএব অপরাধ ও ভুলের জন্য অতিদ্রুত অনুশোচনা ও তওবা কাম্য। এতে মানুষ ভুল থেকে শুদ্ধ হয়। পরিশুদ্ধি লাভ করে। পাপের বা ভুলে ওপর অটল থাকলে অজ্ঞতা ও গোমরাহি মানুষকে বেষ্টনি দিয়ে রাখবে। কিন্তু খালেস তওবা করা হলে নিষ্পাপ হওয়ার সুযোগ থাকে। সঠিক পথের দিশাও পাওয়া যায় তওবা, অনুশোচনার মাধ্যমে।
আল্লাহতায়ার অনুগত বান্দার লক্ষণ হলো, তারা কখনোই গোনাহে অটল হয়ে বসে থাকে না। ভুল করলেও ভুল বা অপরাধের স্বীকারোক্তি দিয়ে ক্ষমা চায়। অপরাধ করলে লজ্জিত হয়। আল্লাহ এসব অনুতপ্ত, লজ্জিত, তওবাকারীকে ভালোবাসেন, ক্ষমা করেন।
আর রমজানে ক্ষমা পাওয়া বা তওবা কবুলের আশা অনেক বেশি। কারণ, রমজানে রোজাদারদের প্রতি আল্লাহতায়ালা বিশেষ অনুগ্রহের ব্যবস্থা করেন। রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের পথ সহজ ও প্রশস্ত করা হয় রমজানে। অতএব, রমজানের পরিপূর্ণ হক আদায় করতে হবে যাবতীয় আমলে মশগুল হয়ে এবং বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট বা অকেজো না করে।
একটি হাদিসের শিক্ষা এই প্রসঙ্গে আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যা সুনানে তিরমিজির ৩৫৪৫ নম্বর হাদিস রূপে সংযোজিত রয়েছে, ‘সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে রমজান মাস পেলো, অথচ নিজের গোনাহ মাফ করাতে পারলো না।’
রমজানে এবং জীবনের সর্বক্ষণ আল্লাহতায়ালার অসীম রহমত ও ক্ষমার ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করাই হবে মুসলিমের প্রধান কর্তব্য। রমজান মাসে নেক আমল ও তওবার দ্বারা ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করাই হবে উত্তম। অতীত অপকর্ম ও গোনাহ মাফ করাতে পারার মধ্যেই রয়েছে নিজের সফলতা। এজন্য রমজানের প্রতিটি ক্ষণে এবং জীবনের সব সময় তওবা করার মাধ্যমে পরিশুদ্ধি লাভ করারই মুমিন-মুসলমানের লক্ষ্য হওয়া উচিত। এবং কখনোও নিরাশ না হয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহতায়ালার রহমত অন্বেষণ করাই প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর একান্ত কর্তব্য।