মেহমানদারির খেজুর রেখে দিয়েছেন মদিনার ফায়েজ আহমদি

  • নাজমুল হুদা, মক্কা মোকাররমা থেকে
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মেহমানদারির খেজুর রেখে দিয়েছেন মদিনার ফায়েজ আহমদি, ছবি: সংগৃহীত

মেহমানদারির খেজুর রেখে দিয়েছেন মদিনার ফায়েজ আহমদি, ছবি: সংগৃহীত

আতিথেয়তা আরবদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। আগের দিনে সেই গ্রাম্য বেদুইনও রাতের আঁধারে আলো জ্বালিয়ে রাখতেন, যাতে কোনো পথচারী পথ হারিয়ে এ আলোর কাছে এসে পৌঁছতে পারে। কিংবা বেদুইন তার মেহমানদারি করে নিজেকে সৌভাগ্যশীল করতে পারে।

পথচারীদের খাবার ও বাহন দিয়ে সহযোগিতা করার কথা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ আছে।

বিজ্ঞাপন

ইসলাম আগমনের পর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জবানে আরবদের মেহমানদারির আলাদা এক চিত্র অঙ্কিত হলো। গুরুত্ব বেড়ে গেলো আতিথেয়তার কাজের, আরবদের প্রথা পরিণত হলো সওয়াবের কাজে।

কালের আবর্তে তা আজও বহাল। সওয়াবের কাজ তো অনেক বিষয়ই। কিন্তু আরব্য সংস্কৃতির মিশেলে এই পুণ্যময় কাজের কিছুটা দেখা মেলে রমজান কিংবা হজের মৌসুমে।

করোনার বৈশ্বিক থাবায় পুরো পৃথিবী বদলে গেছে। কোটি কোটি মানুষ এখন ঘরবন্দী। সৌদি আরবের চিত্রও তেমন। ফলে আরব্য সংস্কৃতির এসব স্মৃতি এখন ইতিহাস। করোনার থাবায় বায়তুল্লাহর চত্বর ও মসজিদে নববী প্রাঙ্গনের রমজান উপলক্ষে আরবদের মেহমানদারির স্নিগ্ধ পরিবেশের দেখা নেই।

বিজ্ঞাপন

পবিত্র রমজান মাসে ইফতার পরিবেশনের কাজ মক্কা-মদিনার স্থানীয়দের দায়িত্বে থাকে।

ইফতারের সুষ্ঠু বন্টন ও পরিবেশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ধনাঢ্যরা নিজে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি এ জন্য চাহিদামতো লোকবলও নিয়োগ করেন। সামর্থ্য অনুযায়ী স্থান বরাদ্দ করা হয় তাদের জন্য। সেখানে নিজেদের আয়োজনে সুশৃঙ্খলভাবে ইফতারের আয়োজন করা হয়।

এভাবে বছরের পর বছর ইফতারের আয়োজন ও মেহমানদারি তাদের নেশা হয়ে গেছে। রমজানের আগত উমরা পালনকারী, ইতেকাফকারী কিংবা জিয়ারতকারীদের ইফতার পরিবেশনে নিজেদের অংশ ব্যয় করাকে পরম সৌভাগ্য হিসেবে মনে করেন তারা।

সেই সৌভাগ্যবানদের একজন মদিনার বাসিন্দা বয়োবৃদ্ধ ফায়েজ আল আহমদি।

দীর্ঘ ত্রিশ বছর যাবৎ তিনি মসজিদে নববীতে ইফতারের আয়োজন করে আসছেন। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতি কারণে অপ্রত্যাশিতভাবে সব কিছু থেমে যাওয়ায় ইফতারের আয়োজন নেই। মেহমানদারি করার সুযোগ না পেয়ে তিনি কিছুটা হতাশ।

বলেন, আমি রমজানে পরিবেশনকৃত খেজুরগুলোকে খুব যত্নের সঙ্গে রেখে দিয়েছি। যখন করোনা পরিস্থিতি কেটে যাবে, তখন আমি সপ্তাহের প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এবং আইয়াম বিজের সময়ের রোজাগুলোতে এসব খেজুর পরিবেশন করবো।

তিনি আরও বলেন, আমি ইফতার আয়োজন স্থগিতের সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই।

ফায়েজ আল আহমদি জানান, প্রতি রমজানের প্রাত্যহিক ইফতারে দেড় শতাধিক মেহমান অংশ নিতেন। কিন্তু আজ পরিস্থিতির কারণে সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজ ঘরেই ইফতার করছি। আমার স্মৃতি, আমার আবেগ, আমার মন সব পড়ে থাকে মসজিদে নববী প্রাঙ্গনে। আমি সেই স্নিগ্ধ ও নুরানি পরিবেশকে প্রচণ্ডভাবে অনুভব করছি। আমরা আল্লাহতায়ালার দরবারে প্রার্থনা করছি, যেন খুব শীঘ্রই আমাদের এই মহামারি হতে মুক্তি দেন। অতি দ্রুতই যেন নববীর প্রিয় আঙ্গিনায় সপ্তাহের প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এবং আইয়ামে বিজের সময়ের ইফতার আয়োজন করতে পারি।